সর্বশেষ

সর্বশেষ সংবাদ
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলির ঘটনায় তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। এই হামলার পর সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও। সরকার নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী।   নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার ফলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা অবস্থায় তাকে মাথায় গুলি করে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কার মধ্যেই এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তফসিল ঘোষণার পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে এসব ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে চোরাগোপ্তা হামলা, জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হবে এবং নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আবারও এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা আসে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন মাত্রার। এটি সরাসরি হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে বলে তারা মনে করছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে একটি আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। ওসমান হাদির ওপর হামলার পর নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছে। অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই হামলাকে নির্বাচন বানচালের একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সাবেক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি এবং যেখানে শক্ত প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের ধরতে নতুন করে বিশেষ অভিযান শুরুর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, অতীতের শাসনামলে যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ছিল বা যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ ও অর্থের উৎস চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি গত বছর পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা এবং লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না এই দুই বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।   উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের যেকোনো মূল্যে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময় প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকি আগেভাগেই চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। কোথায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব বিষয়েও প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

২ মিনিট আগে
ওসমান হাদিকে গুলি : দুই দিন পর পল্টন থানায় মামলা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার এক আত্মীয় বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।   সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছে এবং এর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়াকে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এর বেশি তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য এবং সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অপর এক নারী। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।   চিকিৎসকদের মতে, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

৬ মিনিট আগে
হাদিকে গুলি : ভারতে গিয়ে সেলফি তুললেন মাসুদ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনায় জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের একটি সেলফি ছবি ও ব্যবহৃত ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।   রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ফয়সাল করিম মাসুদ একটি সেলফি তুলে তা কয়েকটি নম্বরে পাঠান। ওই ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী মোটরবাইকচালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর ফয়সাল করিম মাসুদের জন্য একটি ভারতীয় মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়, যা তিনি যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করছিলেন। ওই নম্বর থেকেই সেলফিটি পাঠানো হয়। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, যেসব নম্বরে ছবিটি পাঠানো হয়েছিল, তার একটি ইন্টারসেপ্ট করার মাধ্যমে ছবিটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় রোববার রাত পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী এবং সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, শ্যালক ও এক নারী সহযোগী।   ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান জোরদার করেছে।

৯ মিনিট আগে
তিন বিষয়ে মহাব্যস্ত বিএনপি

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘ্ন দেশে প্রত্যাবর্তন এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা এই তিনটি বিষয়ই বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি ও কর্মকৌশলের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এসব ইস্যু ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ও সক্রিয় সময় পার করছেন।   এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত করা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ছয় দিনের টানা কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। সেখানে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার মধ্য থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়গুলো সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে সেগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ, অন্যদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণায় দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা ও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, ওই দিন তারেক রহমানকে এমনভাবে বরণ করে নিতে, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার বক্তব্যে উঠে আসে, যখন দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, ঠিক সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর বিএনপির জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করছে। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। বিএনপির আরেকটি বড় উদ্বেগের জায়গা হলো দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন এবং বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত তার চিকিৎসা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের রাজনৈতিক সংহতি ও আবেগী ঐক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তার আরোগ্য কামনায় দেশ-বিদেশে দোয়া মাহফিল, বিশেষ ইবাদত ও বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এটি দলীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লড়াই’ হিসেবে দেখছে। দলটি ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক মহলের ইতিবাচক মনোভাবকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এবারের নির্বাচন বিজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। সাধারণ ভোটার, বিশেষ করে নতুন ভোটার ও তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবার জন্য সমান সুযোগের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে। শরিকদের ক্ষোভ ও মতপার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। দলীয় সূত্রগুলোর প্রত্যাশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সন্তোষজনক সমঝোতা হবে এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠবে।   বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ঐতিহ্য, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সৃষ্ট নতুন সাংগঠনিক শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশাকে একত্রিত করতে পারলে বিএনপি আগামী দিনে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। বর্তমান এই ত্রিমুখী ব্যস্ততা প্রমাণ করে, বিএনপি এখন আর কেবল একটি প্রতিবাদী দল নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

১২ মিনিট আগে
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
ইনশাআল্লাহ নির্বাচন হবে, কোনো শঙ্কার কারণ নেই : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তরুণ ভোটাররা এই যাত্রায় কমিশনের পাশে থাকবে। তরুণরা শুধু নিজেরাই ভোট দেবে না, বরং অন্যদেরও ভোটদানে উৎসাহিত করবে।   সিইসি বলেন, তরুণরা সাহস, শক্তি ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক। তাদের উদ্যম, চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা ছাড়া দেশ গড়া সম্ভব নয়। দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা ভাবলেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আরও আশাবাদী হন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত ‘ইউথ ভোটার’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন। কারণ এই প্রথমবারের মতো পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গত ৫৪ বছরে কখনো হয়নি। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা আগে ভোট দিতে পারতেন না, তাদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া কারাবন্দী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসব সরকারি কর্মচারী নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে কর্মরত আছেন, তাদের জন্যও ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে একই দিনে দেশব্যাপী গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যা নির্বাচনটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন সাহসিকতার সঙ্গে এই উদ্যোগ নিয়েছে। তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে ইনশাআল্লাহ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে। তবে এটি শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয় সবার সম্মিলিত সহযোগিতাই সফলতার চাবিকাঠি।   সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইনশাআল্লাহ নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়েই তা সম্পন্ন করা হবে। তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, যত ধরনের দুশ্চিন্তাই থাকুক না কেন, সেগুলো ঝেড়ে ফেলে এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি, যাতে সবাই মিলে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা যায়।

মো: দেলোয়ার হোসাইন ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫ 0
ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি : দুই দিন পর পল্টন থানায় মামলা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনার দুই দিন পর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার এক আত্মীয় বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।   সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে পল্টন থানার ডিউটি অফিসার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছে এবং এর তদন্তভার দেওয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইয়াসিন মিয়াকে। তবে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এর বেশি তথ্য দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য এবং সন্দেহভাজন শুটার ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও অপর এক নারী। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যায় তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।   চিকিৎসকদের মতে, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি : ভারতে গিয়ে সেলফি তুললেন মাসুদ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনায় জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের একটি সেলফি ছবি ও ব্যবহৃত ফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে।   রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ফয়সাল করিম মাসুদ একটি সেলফি তুলে তা কয়েকটি নম্বরে পাঠান। ওই ছবিটি ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে তোলা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী মোটরবাইকচালক আলমগীর হোসেন গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর ফয়সাল করিম মাসুদের জন্য একটি ভারতীয় মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়, যা তিনি যোগাযোগের কাজে ব্যবহার করছিলেন। ওই নম্বর থেকেই সেলফিটি পাঠানো হয়। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, যেসব নম্বরে ছবিটি পাঠানো হয়েছিল, তার একটি ইন্টারসেপ্ট করার মাধ্যমে ছবিটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় রোববার রাত পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত চক্রের দুই সহযোগী এবং সন্দেহভাজন শুটার ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী, শ্যালক ও এক নারী সহযোগী।   ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান জোরদার করেছে।


ছবি: সংগৃহীত
ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলির ঘটনায় তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। এই হামলার পর সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও। সরকার নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী।   নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার ফলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা অবস্থায় তাকে মাথায় গুলি করে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কার মধ্যেই এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তফসিল ঘোষণার পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে এসব ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে চোরাগোপ্তা হামলা, জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হবে এবং নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আবারও এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা আসে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন মাত্রার। এটি সরাসরি হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে বলে তারা মনে করছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে একটি আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। ওসমান হাদির ওপর হামলার পর নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছে। অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই হামলাকে নির্বাচন বানচালের একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সাবেক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি এবং যেখানে শক্ত প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের ধরতে নতুন করে বিশেষ অভিযান শুরুর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, অতীতের শাসনামলে যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ছিল বা যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ ও অর্থের উৎস চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি গত বছর পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা এবং লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না এই দুই বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।   উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের যেকোনো মূল্যে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময় প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকি আগেভাগেই চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। কোথায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব বিষয়েও প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ছবি: সংগৃহীত
তিন বিষয়ে মহাব্যস্ত বিএনপি

দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘ্ন দেশে প্রত্যাবর্তন এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা এই তিনটি বিষয়ই বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি ও কর্মকৌশলের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এসব ইস্যু ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ও সক্রিয় সময় পার করছেন।   এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত করা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ছয় দিনের টানা কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। সেখানে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার মধ্য থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়গুলো সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে সেগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ, অন্যদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণায় দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা ও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, ওই দিন তারেক রহমানকে এমনভাবে বরণ করে নিতে, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার বক্তব্যে উঠে আসে, যখন দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, ঠিক সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর বিএনপির জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করছে। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। বিএনপির আরেকটি বড় উদ্বেগের জায়গা হলো দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন এবং বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত তার চিকিৎসা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের রাজনৈতিক সংহতি ও আবেগী ঐক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তার আরোগ্য কামনায় দেশ-বিদেশে দোয়া মাহফিল, বিশেষ ইবাদত ও বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এটি দলীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লড়াই’ হিসেবে দেখছে। দলটি ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক মহলের ইতিবাচক মনোভাবকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এবারের নির্বাচন বিজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। সাধারণ ভোটার, বিশেষ করে নতুন ভোটার ও তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবার জন্য সমান সুযোগের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে। শরিকদের ক্ষোভ ও মতপার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। দলীয় সূত্রগুলোর প্রত্যাশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সন্তোষজনক সমঝোতা হবে এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠবে।   বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ঐতিহ্য, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সৃষ্ট নতুন সাংগঠনিক শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশাকে একত্রিত করতে পারলে বিএনপি আগামী দিনে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। বর্তমান এই ত্রিমুখী ব্যস্ততা প্রমাণ করে, বিএনপি এখন আর কেবল একটি প্রতিবাদী দল নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের একেবারে প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের এই দিনে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।   পাকিস্তানি বাহিনীর নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যেই এই সুপরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী নিধনের ছক কষা হয়েছিল। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণীতে গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই দিন পর, ১৬ ডিসেম্বর, জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে একাত্তরে শহীদ হওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছে। এ উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সকাল ৭টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।   এ ছাড়া সকাল থেকেই রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ

৭ কোটি জনসংখ্যা যুক্তরাজ্যে ৯০ লাখ মানুষই রয়েছে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে। অর্থাৎ নিজের ব্রিটিশ পরিচয় হারাতে পারেন দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যের দুই মানবাধিকার ও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রানিমেড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।   ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, সরকার যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি অন্য দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে তার নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে। এমনকি সেই ব্যক্তি ওই দেশে কখনও না গেলেও পরতে পারেন এই সিদ্ধান্তের আওতায়। বিতর্কিত এই আইনের অপব্যবহার নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।    গবেষণা প্রতিষ্ঠান দু'টির প্রতিবেদন বলছে, বৈষম্যের শিকার অশেতাঙ্গরা। শেতাঙ্গদের তুলনায় তারা রয়েছেন ১২ গুণ বেশি নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে। আদমশুমারির তথ্য, বার্ষিক জনসংখ্যা জরিপ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন। বলা হয়েছে, ১৬ লাখ কৃষ্ণাঙ্গ, ৩৩ লাখ এশিয়ান ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হতে পারে। একই ঝুঁকিতে থাকা শ্বেতাঙ্গ নাগরিকের সংখ্যা ২৪ লাখ হলেও তা মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ ভাগ।   নিজের ব্রিটিশ পরিচয় হারানোর ঝুঁকিতে থাকাদের মধ্যে বড় অংশই মুসলিম। যারা মূলত দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি প্রায় ১০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছে পরিচয় হারানোর শঙ্কায়। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান আর তৃতীয় অবস্থান রোমানিয়া। সাত নম্বরে থাকা বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত ২ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক হারাতে পারেন নাগরিকত্ব।   নাগরিকত্ব বাতিলের এই আইনকে উদ্বেগজনক আখ্যা দিচ্ছে রানিমেড ও রিপ্রিভ। মুসলিম ও অশেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য এটি পদ্ধতিগত হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে বলেও মত তাদের।

নিউজ ক্লিপস

খেলাধুলা

  • অন্যান্য খেলা
  • হকি
  • ফুটবল
  • ক্রিকেট

জনপ্রিয় সংবাদ

মতামত

আন্তর্জাতিক

আরও দেখুন
ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় মেসির সফর ঘিরে বিশৃঙ্খলা, ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে আয়োজক শতদ্রু দত্ত
আক্তারুজ্জামান ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে লিওনেল মেসির সফর ঘিরে তৈরি হওয়া চরম বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনার জেরে অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ও প্রোমোটার শতদ্রু দত্তকে বিমানবন্দর থেকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে তাকে।    আয়োজক শতদ্রু দত্তের জামিন আবেদন এরইমধ্যে নামঞ্জুর হয়েছে। কলকাতার পুলিশ ও প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শক ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়েও নজর রাখা হচ্ছে।   এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মতে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা রাজ্য সরকার, সাধারণ মানুষ এবং স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকেও ব্যর্থ করেছে। তার মন্তব্য, ক্রীড়াপ্রেমী কলকাতাবাসীর কাছে এই দিনটি একটি ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। \ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে রাজ্য সরকারকে একাধিক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। তার নির্দেশের মধ্যে রয়েছে—অনুষ্ঠান আয়োজক ও স্পনসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার, টিকিট কেটে প্রতারিত দর্শকদের টাকা ফেরত, স্টেডিয়াম ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তির ক্ষতির জন্য আয়োজকদের উপর জরিমানা আরোপ। পাশাপাশি গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং দায়িত্বে গাফিলতি করা পুলিশ আধিকারিকদের সাসপেনশনের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।   উল্লেখ্য, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে মেসিকে দেখতে না পেরে ব্যাপক ভাঙচুর করে দর্শকরা। অভিযোগ, মাঠে মেসির সঙ্গে প্রচুর ভিড় থাকায়, মেসিকে দেখতেই পাননি দর্শকরা। ক্ষুব্ধ দর্শকরা আসন থেকে ছোড়েন পানির বোতল। ফলে, নির্ধারিত সময়ের আগেই মাত্র ২০ মিনিটেই মাঠ ছাড়েন মেসি।   মেসি সফরের এই কাণ্ড সামাজিক ও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় ১২৩ কারাবন্দিকে মুক্তি দিলো বেলারুশ
আক্তারুজ্জামান ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের পর মিনস্কের পটাশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় অন্তত ১২৩ কারাবন্দিকে মুক্তি দিলো বেলারুশ। এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়।    মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এলেস বিয়ালিয়াটস্কি, বেলারুশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ মারিয়া কোলেসনিকোভা, ম্যাক্সিম জ্যাঙ্কসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীদের।    মুক্তি পেয়েছে ইউক্রেনের অন্তত ১১৪ বন্দি। মুক্তিপ্রাপ্তদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।    বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) লুকাশেঙ্কোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।   ট্রাম্পের বিশেষ দূত জন কোয়ালে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

ছবি: সংগৃহীত
হামাসের অন্যতম শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
আক্তারুজ্জামান ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

গাজা সিটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে হামাসের সামরিক শাখার অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার রায়েদ সাদকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে করা এক পোস্টে এ দাবি করে আইডিএফ। খবর আল-জাজিরা।   তবে হামাসের পক্ষ থেকে এখনও এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। সাদের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আইডিএফের হাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হামাস নেতা নিহতের ঘটনা হবে এটি।   এদিকে, শনিবার গাজা সিটির নাবলুসি জংশনে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এই অভিযানে অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। আর গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ায় আইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনাসহ নিহত ৩
আক্তারুজ্জামান ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরও ৫ মার্কিন সেনা ও সিরিয়ান সেনাসদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।   শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশটির পামিরা শহরে এই ঘটনা ঘটে।    পেন্টাগন জানায়, শনিবার পামিরা শহরে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে জঙ্গিগোষ্ঠীর এক সদস্য হামলা চালায়। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় সেনাসদস্যদের পাল্টা গুলিতে হামলাকারী নিহত হন।   এদিকে এ ঘটনায় আইএসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ

আমাদের অনুসরণ করুন

ট্রেন্ডিং

হাইকোর্টের রুল জারি, কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি কেন অবৈধ নয়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে। 

অক্টোবর ২২, ২০২৫
বিনোদন
অন্যান্য
সর্বশেষ
জাতীয়

অর্থনীতি
সারাদেশ
টেলিকম ও প্রযুক্তি
প্রবাসী