দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৪৯০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯১ জনে, আর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৬ হাজার ৬৭ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে, মোট ১০৪ জন। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। অগাস্টে ৩৯ জন, জুলাইয়ে ৪১ জন, জুনে ১৯ জন, মে মাসে তিনজন, এপ্রিলে সাতজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন এবং জানুয়ারিতে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ মাসে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। আক্রান্তের দিক থেকে জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন এবং মে মাসে ১,৭৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জুন মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫,৯৫১ জনে দাঁড়ায়, অগাস্টে ১০,৪৯৬ জন, সেপ্টেম্বরে ১৫,৮৬৬ জন, অক্টোবরে ২২,৫২০ জন এবং নভেম্বরে ২৪,৫৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। ক্রমাগত সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই বৃদ্ধি দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
গলার ঠিক নিচে প্রজাপতির মতো আকৃতির যে ছোট গ্রন্থিটি রয়েছে, সেটিই থাইরয়েড। শরীরের হার্ট রেট, রক্তচাপ, তাপমাত্রা থেকে শুরু করে পুরো মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণে রাখে এই ক্ষুদ্র অঙ্গটি। কিন্তু যখন এর কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে, তখনই দেখা দেয় থাইরয়েড ক্যানসার। সমস্যা হলো এই ক্যানসারের লক্ষণগুলো সাধারণ অসুস্থতার মতোই হওয়ায় অনেকেই মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছরও বুঝতে পারেন না যে শরীরের ভেতরে নীরবে এক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। যাদের লক্ষণ দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ সময় এসবকে অ্যাসিডিটি, ভাইরাল সংক্রমণ, থাইরয়েড ইনফ্লামেশন বা স্রেফ গলার সাধারণ সমস্যা ভেবে ভুল করা হয়। ফলে দেরিতে হয় রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো লক্ষণগুলো নজরে আনতে পারলে থাইরয়েড ক্যানসার খুব সহজেই শনাক্ত ও চিকিৎসা করা সম্ভব। তাই নিচের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি লক্ষণ দীর্ঘদিন থাকলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত— ১) গলার সামনে গাঁট বা ফোলাভাব থাইরয়েড ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো গলার ঠিক সামনের দিকে একটি গাঁট বা অস্বাভাবিক ফোলাভাব দেখা দেওয়া। এটি সাধারণত ব্যথাহীন হয়, এজন্য অনেকেই সর্দিজনিত লিম্ফ নোড ভেবে ভুল করেন। তবে গাঁটটি যদি শক্ত হয়, স্থায়ী থাকে এবং সময়ের সঙ্গে বড় হতে থাকে, তাহলে অবহেলা করা বিপজ্জনক। ২) গলায় বা কানের দিকে ব্যথা গলার সামনে চাপ, ধরা ধরা ব্যথা বা অস্বস্তি, যা কখনো কানের দিকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এটি ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম লক্ষণ। এটি সাধারণ পেশির ব্যথার মতো নয়; বরং থাকে দীর্ঘসময়। ৩) স্বরভঙ্গ বা কণ্ঠস্বর পরিবর্তন থাইরয়েড গ্রন্থি স্বরযন্ত্রের খুব কাছাকাছি হওয়ায় কোনো টিউমার তৈরি হলে স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে এবং কণ্ঠস্বর বদলে যেতে পারে। ঠান্ডা-কাশি বা চিৎকার ছাড়া তিন সপ্তাহের বেশি স্বরভঙ্গ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করা জরুরি। ৪) গিলতে বা শ্বাস নিতে অসুবিধা খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া, গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি বা শ্বাস নিতে হালকা সমস্যা এসবই হতে পারে টিউমার বড় হওয়ার লক্ষণ। টিউমার খাদ্যনালি বা শ্বাসনালির ওপর চাপ ফেললে এ সমস্যা দেখা দেয়, যা অনেকেই অ্যাসিডিটি বা গলার প্রদাহ ভেবে এড়িয়ে যান। ৫) স্থায়ী শুকনো কাশি কোনো সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জি ছাড়াই দীর্ঘসময় শুকনো কাশি থাকা থাইরয়েড ক্যানসারের আরেকটি সম্ভাব্য লক্ষণ। টিউমার শ্বাসনালির ওপর চাপ দিলে বা থাইরয়েডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে এই কাশি দেখা দিতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু জ্বরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬১০ জন নতুন রোগী। এতে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৪ জনে এবং মোট শনাক্ত রোগী সংখ্যা হয়েছে ৯৫ হাজার ১২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৫২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২২ জন, ঢাকা বিভাগে ৮১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৭১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০২ জন, খুলনা বিভাগে ৩১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রয়েছেন। মৃত্যুবরণ করা দুজনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা। এ সময়ে ৫৯৩ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। ফলে চলতি বছর মোট সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৬১৮ জনে। তুলনামূলকভাবে দেখা যায়, ২০২৪ সালে দেশে মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০৫ জনের।
বিশ্ব এইডস দিবস প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে এ দিবসটি এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতা এবং এই রোগে মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণ করার উদ্দেশ্যে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হলো বাধা অতিক্রম করা, এইডস প্রতিক্রিয়া রূপান্তর করা। এইডস হলো হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস বা এইচআইভি দ্বারা সৃষ্ট একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ভাইরাসটি টি-কোষ আক্রমণ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে এবং পর্যায়ক্রমে দেহ বিভিন্ন সংক্রমণ ও জটিল রোগ প্রতিরোধে অক্ষম হয়ে পড়ে। যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যায়, তখনই এইডসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক, দূষিত রক্ত বা রক্তজাত পণ্য গ্রহণ, মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে একই সুচ পুনঃব্যবহার, এবং আক্রান্ত মা থেকে গর্ভাবস্থা, প্রসব কিংবা বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ। তবে দৈনন্দিন সামাজিক আচরণ যেমন আলিঙ্গন, হাত মেলানো, একই টয়লেট বা থালাবাসন ব্যবহার করা কিংবা মশা বা পোকামাকড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না। গবেষণায় ধারণা করা হয়, ১৯২০ এর দশকে পশ্চিম আফ্রিকার শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষের মধ্যে প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। শিকার করা এবং মাংস খাওয়ার মাধ্যমে এই আন্তঃপ্রজাতি সংক্রমণ শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে ভাইরাসটি আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এবং পরে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যদিও দীর্ঘ সময় ধরে এটি চিকিৎসকদের নজরের বাইরে ছিল। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১২,৪২২ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে এবং এ সময়ে ২,২৮১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৬,৮৬৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১,৪৩৮ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৫ জন। সাধারণ জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণের হার ০.১ শতাংশের নিচে থাকলেও কিছু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে এ হার তুলনামূলকভাবে বেশি। উন্নত চিকিৎসা ও সচেতনতার কারণে মৃত্যুহার কমছে। বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এইডসকে একটি মানবিক ও জনস্বাস্থ্য বিষয় হিসেবে দেখা হয়। ধর্মীয় নেতারা বৈষম্যহীন আচরণ, সঠিক তথ্য প্রচার এবং আক্রান্তদের সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেন। আজ রক্ত সঞ্চালনের আগে বাধ্যতামূলক রক্ত পরীক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে গেছে। এইচআইভি/এইডস বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সচেতনতা এবং নিরাপদ জীবনধারা অনুসরণই এই ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আক্রান্তদের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতা তাদের চিকিৎসা ও সুস্থ জীবনে ফিরে যাওয়ার পথ সহজ করে তোলে।
বাংলাদেশে সকাল-বিকেলের আড্ডা, বাসার অতিথি আপ্যায়ন কিংবা অফিসের বিরতি— প্রায় সবকিছুতেই চায়ের উপস্থিতি অবধারিত। শুধু পানীয় নয়, চা আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস এবং সংস্কৃতিরও অংশ। অনেকেই চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, টোস্ট, সামোসা বা পকোড়া খেয়ে থাকেন। তবে জানেন কি— চায়ের সঙ্গে সব খাবার মানানসই নয়? কিছু খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে, আবার কিছু খাবার চায়ের স্বাদ-গন্ধও নষ্ট করে দেয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, চায়ের সঙ্গে নিচের ৫ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো— ১. অতিরিক্ত ঝাল বা তীব্র স্বাদের খাবার যেসব খাবারে বেশি মসলা, ঝাল বা গন্ধ থাকে— সেগুলো চায়ের সূক্ষ্ম স্বাদকে ঢেকে ফেলে। রসুন, পেঁয়াজ, অত্যধিক মসলাদার ভাজি কিংবা চিলি ফ্লেভারড খাবার চায়ের আরামদায়ক স্বাদ-সুগন্ধ নষ্ট করে দেয়। ২. অতিরিক্ত টক বা অ্যাসিডিক খাবার লেবু, কমলা, আনারসের মতো অ্যাসিডিটিসমৃদ্ধ খাবার চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (ক্যাটেচিন) শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। চায়ের স্বাস্থ্যগুণ পেতে চাইলে এই ধরনের খাবার একসঙ্গে না খাওয়াই ভালো। ৩. ডেইরি আইটেম দুধ বা ক্রিম চায়ের পলিফেনলকে নিরপেক্ষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যদিও কালো চায়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি কম প্রভাব ফেলে এবং অনেকেই দুধ চা উপভোগ করেন, তবু স্বাস্থ্যের দিক থেকে এটি খুব ভালো সমন্বয় নয়। ৪. অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার কেক, চকলেট, বিস্কুট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার চায়ের সঙ্গে মানালেও অতিরিক্ত চিনি শরীরে ইনস্ট্যান্ট শর্করার ঝাঁকুনি দেয়, যা দ্রুত ক্লান্তি বা ‘এনার্জি ক্র্যাশ’ তৈরি করে। তাই মিষ্টি খাবার খেলে পরিমাণে সংযম জরুরি। ৫. ভাজাপোড়া বা তেল-চর্বিযুক্ত খাবার সিঙ্গারা, পিঁয়াজু, ফুচকা বা পকোড়া— এসব খাবার সুস্বাদু হলেও খুব তেল-চর্বিযুক্ত। এগুলো হজমে বেশি সময় নেয় এবং চায়ের সঙ্গে খেলে শরীরে বাড়তি অস্বস্তি ও ভারীভাব তৈরি করতে পারে। সঠিক সমন্বয় কী হতে পারে? চায়ের সঙ্গে খুব ভারী বা তীব্র খাবারের বদলে হালকা স্ন্যাকস, লো-সুগার বিস্কুট, হোল-গ্রেইন টোস্ট অথবা ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি উপযোগী। এগুলো চায়ের স্বাদও বজায় রাখবে এবং ক্যাফেইনের প্রভাবও ব্যালান্স করবে। সবশেষে, চায়ের সঙ্গে কী মানাবে আর কী মানাবে না— এটি ব্যক্তিগত পছন্দের ওপরও নির্ভর করে। তবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করলে উপরের পাঁচ ধরনের খাবার চায়ের সঙ্গে না খেলেই ভালো।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৫৭২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু না হওয়ায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭৭ জনেই স্থির রয়েছে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৯৩ হাজার ৭৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গু জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩৭৭ জনের। এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং ওই বছর মোট ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সকালের অভ্যাস গড়তে অনেকেই জটিল রুটিন বা দামি খাবারের দিকে ঝোঁকেন। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতনদের মতে, সুস্থ থাকতে শুরুটা হতে পারে খুবই সাধারণ কিছু দিয়ে। ঠিক তেমনই একটি সহজ অভ্যাস হলো— খালি পেটে প্রতিদিন ২টি করে খেজুর খাওয়া। ভারতীয় পুষ্টিবিদ এশাঙ্কা ওহি বলছেন, এই ছোট্ট রুটিনটি ব্যস্ত জীবনের মাঝেও সহজে অনুসরণ করা যায় এবং এর প্রভাব শরীরে টের পাওয়া যায় বেশ দ্রুত। তিনি বলেন, খেজুরে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রাকৃতিক চিনি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা একসঙ্গে শরীরে কাজ করে হজম আর শক্তি দুটোকেই সমর্থন দেয়। সকালবেলা দুটি খেজুর খেলে শরীরকে ক্যাফেইন ছাড়া নরমভাবে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। নিচে জানুন, প্রতিদিন ২টি খেজুর খেলে শরীরে যেসব পরিবর্তন ঘটে— ১. প্রাকৃতিকভাবে সকালের এনার্জি বাড়ায় অনেকেই দিনের শুরুতে চা-কফির ওপর ভরসা করেন। কিন্তু ক্যাফেইনের এনার্জি দ্রুত ওঠানামা করে, ফলে কিছুক্ষণ পরেই ক্লান্তি বা ঝিমুনি দেখা দেয়। সমালোচকধর্মী জার্নাল Critical Reviews in Food Science and Nutrition-এ উল্লেখ আছে, খেজুরে থাকা গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ শরীর খুব সহজে ব্যবহার করতে পারে। পুষ্টিবিদ এশাঙ্কা জানান, এসব প্রাকৃতিক চিনি ধীর-স্থিরভাবে শক্তি দেয়। ফাইবার ও মিনারেল থাকায় এই এনার্জি টেকসই হয়। ফলে সকালজুড়ে সতর্ক, স্থির ও চাঙা থাকা যায় কোনো হঠাৎ ‘হাই-ক্র্যাশ’ ছাড়াই। ২. ক্ষুধা ও অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করে সকালে দ্রুত ক্ষুধা পাওয়া বা মিষ্টি খাওয়ার তীব্র ইচ্ছে দিনের খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে ফেলতে পারে। এশাঙ্কা বলেন, খেজুরের ফাইবার হজম ধীর করে, ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি থাকে। এতে অযথা স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। খেজুরের হালকা মিষ্টি স্বাদ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাকে মেটায়, কিন্তু প্রক্রিয়াজাত চিনি বা ডেজার্টের মতো ক্ষতি করে না। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ বা কমানোর লক্ষ্যে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এটি স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর উপায়। ৩. হজমশক্তি উন্নত করে এবং গাট-হেলথ ভালো রাখে খেজুরে আছে ডায়েটারি ফাইবার এবং অ্যামিনো অ্যাসিড, যা পরিপাকতন্ত্রকে নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। Journal of Food and Nutrition-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই উপাদানগুলো খাবার ভেঙে নিতে শরীরকে আরও সহায়তা করে। পুষ্টিবিদ এশাঙ্কা জানান, প্রতিদিন ২টি খেজুর খাওয়া নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে এবং হজম ধীরগতির সমস্যা বা খাবার পর অস্বস্তি কমাতে ভূমিকা রাখে। National Library of Medicine-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেজুরে থাকা উপাদান অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যা সহায়ক জীবাণুগুলোকে মসৃণ হজম, পুষ্টির শোষণ ও সারাদিন পেটের আরাম উন্নত করতে কাজ করে। ৪. রোগ প্রতিরোধশক্তি শক্তিশালী করে খেজুরে আছে তিন ধরনের উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট— ফ্লাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও ফেনলিক অ্যাসিড। Nutrition and Food Sciences Department-এর রিপোর্ট বলছে, এগুলো শরীরকে দৈনন্দিন ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ থেকে সুরক্ষা দেয় এবং কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়। পুষ্টিবিদ এশাঙ্কা বলেন, নিয়মিত খেজুর খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। সব বয়সের মানুষই নিরাপদে খেতে পারে এই সুপারফুড। তবে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
ঝাল খাবার খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও দেখা যায়, কে কতটা ঝাল খেতে পারে, তা নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ চলছে। অনেকেই অন্যদের দেখে কিংবা নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে অনেক বেশি ঝাল বা মশলাদার খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ঝাল খাবার শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে তৈরি করতে পারে নানা সমস্যা। কেন ঝাল খাবার ঝাল লাগে? মরিচে থাকে ক্যাপসাইসিন নামের একটি উপাদান, যেটিই ঝাল অনুভূতি তৈরি করে। যত বেশি ক্যাপসাইসিন, তত বেশি ঝাল। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের জরুরি সেবা বিভাগের ডাক্তার অ্যালান ক্যাপিন জানান, সবাই ক্যাপসাইসিন একভাবে সহ্য করতে পারেন না। কারও জন্মগতভাবেই ঝাল সহ্য করার ক্ষমতা বেশি থাকে। আবার কেউ সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে বেশি ঝাল সহ্য করতে পারেন। অতিরিক্ত ঝাল খাবারের ঝুঁকি কী? যারা ঝাল খাবারে অভ্যস্ত নন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। অতিরিক্ত ঝাল খেলে শরীর ক্যাপসাইসিনকে ‘বিষাক্ত’ হিসেবে ধরে নিতে পারে এবং শরীর তা বের করে দিতে চেষ্টা করে। এতে দেখা দিতে পারে- পেটব্যথা, বুকজ্বালা, তীব্র জ্বালা, মাথাব্যথা ও বমি বা ডায়রিয়া। বমির কারণে গলা ও খাদ্যনালি ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। ড. ক্যাপিন উদাহরণ দিয়ে বলেন, হালকা ঝাল খাওয়া মানে আগুনের পাশে হাত রাখা - হালকা তাপ লাগবে। কিন্তু অতিরিক্ত ঝাল মানে আগুনের খুব কাছে হাত নিয়ে যাওয়া— যেখানে পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে ‘ওয়ান চিপ চ্যালেঞ্জ’-এর মতো অতিমাত্রায় ঝাল খাবার হঠাৎ খেলে শরীরে বিস্ফোরণের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ঝাল খাবার কি আলসার সৃষ্টি করে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো একেবারেই না। এটা পুরোনো ভুল ধারণা। গবেষণায় দেখা গেছে, ঝাল খাবার বরং এইচ. পাইলরি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে, যা আলসারের মূল কারণ। তবে যাদের আগে থেকেই আলসার রয়েছে, তাদের ঝাল খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো, কারণ তা অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে। ঝাল খাবার খেয়ে কি মৃত্যু হতে পারে? বিশেষজ্ঞের মতে, তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে সেটা অত্যন্ত অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৫০ পাউন্ড ওজনের একজন মানুষকে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে প্রায় ৩ পাউন্ড ভূত ঝাল বা ‘জায়ান্ট মরিচ’ খেতে হবে, যা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। ঝাল খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয়। তবে যারা অতিরিক্ত ঝাল বা চ্যালেঞ্জ ধরনের খাবারে অংশ নেন, তাদের সাবধান হওয়া জরুরি। শরীরের সহনক্ষমতা বোঝা এবং সীমার মধ্যে থাকা- এই দুটোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
শীতকাল শুরু হওয়ায় মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই সময়ে স্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। বর্তমানে বাজারে মৌসুমি ফল হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে আপেল ও কমলা, যা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। কমলায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৫৩.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে। অন্যদিকে খোসাসহ ১০০ গ্রাম আপেলে থাকে মাত্র ৪.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’। তবে উভয়ই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং শরীরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। শীতে ছোট ছোট রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রশ্ন naturally ওঠে আপেল নাকি কমলা, কোনটি বেশি কার্যকর? দুটি ফলই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, হাইড্রেশন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে। কমলা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ হওয়ায় দ্রুত ঠান্ডা ও সংক্রমণ থেকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করে। অন্যদিকে আপেল অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘সি’ সংক্রমণ প্রতিরোধে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমলা উল্লেখযোগ্যভাবে ভিটামিন ‘সি’ সরবরাহ করে, তাই তা দ্রুত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত। আপেলে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বিশেষত কোয়ারসেটিন, যা প্রদাহবিরোধী এবং ভাইরাস প্রতিরোধী কার্যকলাপে সহায়তা করে। অন্যদিকে কমলায় থাকে হেস্পেরিডিন ও ভিটামিন ‘সি’ যা শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। হিলিং ফুডস বইয়ে উল্লেখ আছে, আপেলের ফ্রুকটোজ ও পলিফেনল রক্তে চিনির শোষণ ধীর করে, যা স্থিতিশীল শক্তি দেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কমলা দ্রুত শক্তি দেয়, যা কিছু মানুষের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। আপেল প্রতিদিনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শক্তি সরবরাহ করে। শীতকালে উভয় ফলই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে কোনটি আপনার জন্য বেশি কার্যকর তা নির্ভর করে প্রয়োজনের ওপর। দ্রুত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কমলা খাওয়া যেতে পারে, আর দীর্ঘমেয়াদী অন্ত্রভিত্তিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও সারাদিন স্থিতিশীল শক্তির জন্য আপেল খাওয়া উপকারী। অনেকেই শীতে উভয়ই খান, যা সর্বোত্তম বিকল্প।
শীতের রঙিন সবজি—বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, মুলা, সর্ষে শাক—দেখতেও সুন্দর, খেতেও দারুণ। কিন্তু অনেকের জন্য এগুলো খাওয়ার পর শুরু হয় পেট ভার, গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজম। তখন প্রশ্ন জাগে—শাকসবজি খেয়েও গ্যাস হয় কেন? আসলে শীতের বেশ কিছু সবজি হজমে ভারী। বিশেষ করে ক্রুসিফেরাস সবজি—বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, মুলা, সর্ষে শাক, ব্রাসেলস স্প্রাউটস—অনেকেরই গ্যাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেন গ্যাস হয়? ১. বেশি ফাইবার এই সবজিগুলোতে ফাইবার থাকে বেশি। উপকারী হলেও গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা IBS–এ ভোগা মানুষের জন্য এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। তাই হয় পেট ভার, পেট ফাঁপা ও গ্যাস। ২. কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট (রাফিনোজ) এসব সবজিতে থাকে রাফিনোজ—যা সহজে হজম হয় না। অন্ত্রে না ভেঙে কোলনে গেলে ব্যাকটেরিয়া তা ভাঙতে গ্যাস তৈরি করে। ফলে ঢেঁকুর, ফাঁপা ভাব ও অস্বস্তি বাড়ে। কীভাবে রান্না করলে হজম সহজ হবে সবজি ভালো করে সিদ্ধ বা রান্না করে খান কাঁচা বা আধসেদ্ধ কপি–জাতীয় সবজি এড়িয়ে চলুন গ্যাসের সমস্যা থাকলে কম পরিমাণে খান রান্নায় হিং, আদা, জিরা, গোলমরিচ ব্যবহার করুন কপি–ফুলকপি লবণ–হলুদের পানিতে ভিজিয়ে রাখলে হজম সহজ হয় অতিরিক্ত পরামর্শ একবারে বেশি না খেয়ে ধীরে ধীরে খান খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করুন নিয়মিত সমস্যা থাকলে কোন সবজি আপনাকে মানায়—তা লক্ষ্য করে বেছে নিন
দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে (আইসিইউ) এমন কিছু ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণু দ্রুত বাড়ছে, যেগুলোর ওপর কার্যকর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কাজ করছে না। জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আইসিইউ থেকে সংগৃহীত নমুনার ৪১ শতাংশ সন্দেহভাজন প্যান-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর), অর্থাৎ পরীক্ষিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিক সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। সামগ্রিকভাবে হাসপাতালের নমুনায় বহু ওষুধ-প্রতিরোধী জীবাণুর হার ৪৬ শতাংশ হলেও আইসিইউতে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ দ্রুতই এক বিপজ্জনক ‘পোস্ট অ্যান্টিবায়োটিক সংকট’ এর দিকে এগোচ্ছে, যেখানে সাধারণ সংক্রমণও গুরুতর মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করতে পারে। রাজধানীর মহাখালীতে আয়োজিত এক সেমিনারে এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থার একজন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি জানান, গুরুতর সংক্রমণের জন্য দায়ী বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া এখন এমন শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে যে সর্বাধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরও রোগীকে বাঁচানো অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, দেশের মোট অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ৫৭ শতাংশ হয়েছে ঢাকায়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রাজধানীতে রোগীর সংখ্যা বেশি, বিশেষায়িত হাসপাতাল বেশি এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য। এরপর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরিমাণ বেশি রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে। বিশেষ করে মূত্রনালী সংক্রমণের (ইউটিআই) রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার বেশি। জাতীয় এএমআর সার্ভিলেন্স ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। সর্বশেষ গবেষণায় গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ১৩টি সেন্টিনেল সাইট এবং ২৪টি মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি থেকে সংগৃহীত ৯৬ হাজার ৪৭৭ রোগীর ক্লিনিক্যাল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট রোগীর ৬০ শতাংশ নারী। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সর্বাধিক নমুনা এসেছে ঢাকা থেকে, এরপর চট্টগ্রাম। সমগ্র নমুনা বিশ্লেষণে গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার প্রাধান্য ৭৭ শতাংশ, আর গ্রাম-পজিটিভ জীবাণুর হার ২২ শতাংশ। শনাক্ত জীবাণুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ই. কোলাই (E. coli), ৩৫ শতাংশ, এরপর ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া (K. pneumoniae), যার হার ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৭৮ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোববার (২৩ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি, অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩৪ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮১ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৮ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৯ জন এবং সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) সাতজন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১,১১১ জন রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৮৭,৪৪২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৯০,২৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী আটজনসহ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ জন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে ৫৭৫ জনের মৃত্যু এবং এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।
আমরা সবাই জানি, পানি ছাড়া জীবন কল্পনা করা যায় না। চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ— সবাই বলেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, শুধু পানি খেলেই হলো না, কীভাবে পানি খাচ্ছেন সেটাও স্বাস্থ্যের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পানি পান করেও অনেকেই শরীরের নানা সমস্যায় ভোগেন, আর এর কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিছু সাধারণ ভুল। দ্রুত পানি গিলে ফেলা থেকে শুরু করে খাবারের সঙ্গে পানি খাওয়া কিংবা প্লাস্টিকের বোতলে পানি সংরক্ষণ— এসব ছোট ছোট অভ্যাসই ধীরে ধীরে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সতর্ক না হলে এসব ভুল থেকে তৈরি হতে পারে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ রায়ান ফার্নান্দো বলেছেন, স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ ভালো অবস্থানে রাখতে ও শক্তি সঞ্চারে পানি পানের ভুলগুলো করা যাবে না। চলুন, পানি পানে যে ৪টি ভুল করলে বিপদ হতে পারে দ্রুত পানি পান অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে হুড়োহুড়ি করে পানি খেয়ে ফেলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শরীরের জন্য এক ধরনের ছোট্ট শক পাওয়ার মতো। পানি গিলে ফেলার আগে অন্তত কয়েক সেকেন্ড মুখে ধরে রাখা ভালো। এতে পানি শরীরের সঙ্গে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। খুব গরম বা ঠান্ডা পানি পান গরমকালে ঠান্ডা পানি আর শীতে গরম পানি পান— এমন অভ্যাস অনেকেরই আছে। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এটি শরীরের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করে। শরীরকে প্রথমে সেই পানিকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনতে হয়, যা প্রক্রিয়ায় দ্বিগুণ পরিশ্রম বাড়ায়। তাই সবসময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাই উত্তম। খাবারের সময় পানি পান খাবার খাওয়ার মাঝখানে পানি পান করলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। এতে খাবার ভেঙে ফেলতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় এবং অম্বল, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে বা পরে পানি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। প্লাস্টিকের বোতলে পানি রাখা অনেকেই প্লাস্টিকের বোতলে পানি রাখেন এবং সরাসরি সেখান থেকেই পান করেন। চিকিৎসকদের মতে, এ অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে রোদে বা তাপে রাখা প্লাস্টিকের বোতল থেকে বিপিএ ও ফ্যাথলেটসের মতো রাসায়নিক বের হয়ে পানির সঙ্গে মিশে যায়। এসব রাসায়নিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, প্রজনন সমস্যা তৈরি করে এবং কোষের ক্ষতি করে। এ ছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশ্রিত পানি প্রদাহ সৃষ্টি করে দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ভারতের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ বিকাশ চাওলা বলেন, বরফ ঠান্ডা পানি হজমের ক্ষমতা কমায় এবং পাকস্থলিতে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। তার দাবি, হালকা গরম পানি শরীরের জন্য বেশি উপকারী। এটি ত্বক পরিষ্কার রাখে ও ব্রণ-জিট কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে নয়ডা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের প্রফেসর ড. এস এ রেহমান বলেন, প্লাস্টিকের বোতল থেকে পানি পান করলে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রবেশ করে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাই প্রতিদিন কতটা পানি খাচ্ছেন, তার পাশাপাশি কীভাবে পানি খাচ্ছেন সেটাও নজর রাখা জরুরি। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৭৪৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দৈনিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দিনে বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বরিশালে ভর্তি হয়েছেন ১২৫ জন, চট্টগ্রামে ৮৯ জন, ঢাকার সিটি করপোরেশনের বাইরে ১৫৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১১৬ জন এবং দক্ষিণ সিটিতে ১২৭ জন। খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বাইরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছেন আরও রোগী। এই সময়ে সারা দেশে চিকিৎসা শেষে ৬৯৭ জন রোগী হাসপাতাল ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ২৬৭ জন। জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৮৮ হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ জনে। গত দুই বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪ সালে দেশে মোট শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন ডেঙ্গু রোগী এবং মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জনের এবং মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন।
চা বাঙালির জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। সকাল বেলা জাগরণের জন্য এক কাপ চা, দুপুরে কাজের ফাঁকে চা-বিরতি, বিকেলে বন্ধুদের আড্ডার সঙ্গে চা— সবই আমাদের জীবনধারার অংশ। কিন্তু অনেক সময় আমরা এই প্রিয় পানীয়টিকে সঠিকভাবে উপভোগ করি না। ফলে ছোট ছোট ভুল অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে পাকস্থলী ও লিভারে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের তৈরি প্রক্রিয়া, দুধের পরিমাণ, চিনি ব্যবহার এবং খাওয়ার সময়— এসবই নির্ধারণ করে চা কতটা স্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর হবে। তাই চলুন জানি, সাধারণ মনে হলেও চায়ের ৭টি ক্ষতিকর অভ্যাস যা আমাদের শরীরের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১. খুব গাঢ় চা তৈরি করা চায়ের পাতা বা ব্যাগ অনেকক্ষণ রেখে দিলে ক্যাফেইন ও ট্যানিনের মাত্রা বেড়ে যায়। বেশি ট্যানিন পাকস্থলীর লাইনিংকে রগড়াতে পারে, অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। গাঢ় চা লিভারের ওপরও অতিরিক্ত চাপ ফেলে। সমাধান : হালকা ও কম সময় ধরে চা প্রস্তুত করুন। ২. খালি পেটে চা পান সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে চা খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। তখন পাকস্থলী প্রাকৃতিকভাবে অ্যাসিডিক থাকে, যা চা খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, বমি ভাব এবং অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারে। এছাড়া, খালি পেটে চা লোহা (iron) শোষণেও বাধা দেয়। সমাধান : চা খাওয়ার আগে হালকা কিছু খান; যেমন টোস্ট বা ফল। ৩. অতিরিক্ত চিনি যোগ করা চা মিষ্টি খেতে ভালো লাগলেও বেশি চিনি পাকস্থলী ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর। চিনি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে পুষ্টি দেয়, হজম ধীর করে এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। লিভারে অতিরিক্ত চিনি জমে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। সমাধান : চিনি কমানো বা হালকা বিকল্প ব্যবহার করা ভালো। ৪. দুধ বেশি ব্যবহার করা প্রতিদিন দুধ দিয়ে চা খাওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুধ হজম ধীর করে, ফোলাভাব ও ভারী অনুভূতি বাড়ায়। গাঢ় চায়ের সঙ্গে বেশি দুধ মিশালে পাকস্থলীর উপর চাপও বাড়ে। সমাধান : দুধের পরিমাণ কমান বা হালকা দুধ ব্যবহার করুন। ৫. খাবারের ঠিক পরে চা খাওয়া খাওয়ার সাথে সাথে চা খেলে লোহা ও জিঙ্কের শোষণ কমে যায় এবং হজমও ধীর হয়। সমাধান : খাবারের ৩০ মিনিট পর চা পান করুন। ৬. দিনে খুব বেশি চা খাওয়া দিনে ৩-৪ কাপের বেশি চা পান করা অতিরিক্ত কফেইন সরবরাহ করে, যা পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি, ডিহাইড্রেশন এবং লিভারের ওপর চাপ বাড়ায়। সমাধান : মাত্রা বজায় রাখুন, চা হলো আনন্দের পানীয়, চাপের নয়। ৭. শুধুই চা পানে নির্ভর করা চা হালকা ডিউরেটিক, অর্থাৎ প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি বের করে দেয়। শুধুই চা পান করলে ডিহাইড্রেশন হয়, যা হজম ও লিভারের ওপর চাপ ফেলে। সমাধান : চা খাওয়ার মধ্যে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। শেষ কথা চা নিজে কোনো ক্ষতিকর পানীয় নয়। হালকা চা, কম চিনি, সঠিক দুধের পরিমাণ, সময়মতো চা পান এবং পর্যাপ্ত পানি— এসবই আপনাকে পাকস্থলী ও লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য সুরক্ষা দেবে। ছোট ছোট পরিবর্তনেই চা উপভোগ করতে পারেন, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি ছাড়াই। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
রাতে ঘুমোতে গিয়ে অনেকেই মনে মনে ভাবেন, ‘আলোটা নেভাব নাকি জ্বালিয়েই রাখব?’ বিশেষ করে যেসব বাসায় ছোট বাচ্চা, প্রবীণ বা ভয়-উদ্বেগে ভোগা সদস্য থাকে, সেখানে রাতভর ছোট্ট একটা বাতি জ্বলতেই থাকে। অনেকে ভাবেন, এতে ক্ষতি কি! বরং অন্ধকারের ভয়ের চেয়ে একটু আলোই ভালো। কিন্তু চিকিৎসক ও ঘুম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি এতটা নিরীহ নয়। শরীরের ভেতরের ঘড়ি থেকে শুরু করে হরমোন, এমনকি মানসিক প্রশান্তি—সবকিছুতেই প্রভাব পড়ে এই ছোট্ট আলোটির। তাই প্রশ্ন উঠছে, ‘আলো জ্বালিয়ে ঘুমানো কি সত্যিই ক্ষতিকর? ক্ষতিকর হলে কোন মাত্রা পর্যন্ত?’ এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিদেশি সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতের আলোকে খামোখা উপেক্ষা করলে সেটা আপনার হৃদয়ের জন্য ভয়ানক হতে পারে। ৯ বছর ধরে প্রায় ৮৯ হাজার মানুষের ওপর চালানো একটি বড় আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যারা রাতে উজ্জ্বল আলোতে ঘুমিয়েছে, তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, করনারি আর্টারি ডিজিজসহ বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে; এমনকি সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোর পরিবেশে ঘুমালে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা পাওয়া গেছে। এই বিশাল পরিসরের পর্যবেক্ষণ অস্বীকার্যভাবে বলছে, রাতে আলো তথা সার্কাডিয়ান ক্লক-হস্তক্ষেপের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো কেবল ঘুমের গুণে ভিড়ে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে তা রক্তনালির স্বাস্থ্য, শর্করার নিয়ন্ত্রণ, রক্তের জমাট বাধার প্রবণতা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অপ্রত্যাশিত অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর এই সমস্যাগুলোর প্রত্যেকটিই হৃদরোগের মৌলিক কারণ। অর্থাৎ, নিছক আলোর অসুবিধা নয়, এটি সাইলো-অফেক্ট নয়; বরং শরীরের বায়োলজিক্যাল রিদমের সঙ্গে লড়াই এবং ফল ভয়াবহ হতে পারে। গবেষণার সারমর্ম কী? যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ঘুম বিশেষজ্ঞদের যৌথ গবেষণায় ৮৮,৯০৫ জনকে ৯.৫ বছর ধরে অনুসরণ করে রাতে আলো এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা হাতের কব্জিতে সেন্সর পরে ২৪ ঘণ্টার আলোর মাত্রা রেকর্ড করেছেন। রাতের সময় ধরা হয়েছে রাত ১২টা ৩০ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। ফলাফল যা বেরিয়ে এসেছে যারা অল্প আলোতে ঘুমিয়েছেন, তারা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে ছিলেন। কিন্তু যাদের শোবার ঘর ছিল মাঝারি, উজ্জ্বল বা সবচেয়ে উজ্জ্বল পরিবেশে, তাদের জন্য চিত্রটি ভয়ংকর। ১. করোনারি আর্টারি ডিজিজ বাড়ার ঝুঁকি মাঝারি আলো- ১২% উজ্জ্বল আলো- ২০% খুব উজ্জ্বল আলো- ৩২% ২. মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট অ্যাটাক) বাড়ার ঝুঁকি মাঝারি আলো- ২০% উজ্জ্বল আলো- ২৭% খুব উজ্জ্বল আলো- ৪৭% ৩. হার্ট ফেইলিউর বাড়ার ঝুঁকি মাঝারি আলো- ১৫% উজ্জ্বল আলো- ২১% খুব উজ্জ্বল আলো- ৫৬% ৪.️অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বাড়ার ঝুঁকি (সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোতে) ঝুঁকি বৃদ্ধি-৩২% ৫️. স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ে উজ্জ্বল পরিবেশে ঘুমালে ২৮% বেশি সব মিলিয়ে দেখা গেছে, রাতে ঘর যত উজ্জ্বল, হৃদ্রোগের ঝুঁকি তত বেশি। এমনকি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ BMI, কোলেস্টেরল, শিফট-ওয়ার্ক— এসব নিয়েও হিসাব থেকে বাদ দিলেও আলোজনিত ঝুঁকি ঠিকই থাকে। হার্টের ঝুঁকি বাড়ার কারণ আলো শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত করে। রাতে উজ্জ্বল আলো একাধিক শারীরবৃত্তীয় সমস্যা তৈরি করে। যেমন গ্লুকোজ প্রসেসিং কমে যাওয়া , টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়া, রাতে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে রক্তনালির ক্ষতি ইত্যাদি। আর এই কারণগুলো মিলেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শেষকথা গবেষণাটি পর্যবেক্ষণভিত্তিক হওয়ায় সরাসরি কারণ নির্ধারণ করা যায়নি, তবে এতে ঝুঁকির চিত্র স্পষ্ট। রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমানোকে আমরা অনেকেই তুচ্ছ একটি অভ্যাস মনে করি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা দেখাচ্ছে এই সামান্য বিষয়টিই আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও আধুনিক জীবনযাপনের পরিবর্তনের ফলে অনেকের মধ্যেই ওজন বৃদ্ধি, রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা বাড়ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে বহু চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব সমস্যার সহজ সমাধানে ভেজানো মেথি হতে পারে কার্যকর উপায় এমনটাই জানাচ্ছে বিভিন্ন গবেষণা। মেথির দানায় থাকা দ্রবণীয় ফাইবার, অ্যামিনো অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিজিয়ে রাখলে আরও সক্রিয় হয় এবং শরীর সহজে শোষণ করতে পারে। নিয়মিত ভেজানো মেথি খাওয়া ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে, হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীরের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীরা যদি ৬০ দিন ধরে প্রতিদিন ১০ গ্রাম ভেজানো মেথি খান, তবে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া যায়। সকালে খালি পেটে ভেজানো মেথির দানা চিবিয়ে খেলে বাড়তি ফোলাভাব কমে এবং ব্লাড সুগার স্থিতিশীল থাকে। মেথি খাওয়ার নিয়ম সহজ ১-২ চামচ মেথি রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে দানাগুলো চিবিয়ে খান এবং অবশিষ্ট পানি পান করুন। তবে দুই চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়, বেশি ফাইবার পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। হজম সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মেথি বিশেষভাবে উপকারী। পানিতে ভিজে মেথি জেলি জাতীয় রূপ ধারণ করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে, এসিডিটি কমায় এবং ব্লোটিং দূর করে। যাদের হজমে সমস্যা বা পেট খারাপের প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য এটি কার্যকর এক প্রাকৃতিক সমাধান। এ ছাড়া মেথির অন্যতম বড় উপকার হলো ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা। মেথির গ্যালাক্টোম্যানান নামক ফাইবার কার্বোহাইড্রেট ধীরে হজম করায়, ফলে সুগার আকস্মিকভাবে বাড়ে না এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। মোটকথা, প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ভেজানো মেথি যুক্ত করলে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ, হজম শক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমাতে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া সম্ভব।
১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো সাড়ে সাত কিলোমিটারের ম্যারাথন। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের শীর্ষ এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সের প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন এই দৌড়ে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, সাধারণ মানুষকে শারীরিক ব্যায়াম ও নিয়মিত হাঁটার বিষয়ে উৎসাহিত করতেই এ আয়োজন। তিনি জানান, প্রতি বছর ডায়াবেটিস দিবসে এ ধরনের সচেতনমূলক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস রোগীই শুধু নয়, সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়তে হবে। প্রতিদিন কিছুটা হাঁটাই পারে ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে। ম্যারাথন শেষে চিকিৎসক এবং সাধারণ দুই ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন, প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপদের পুরস্কৃত করা হয়। অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হয় মেডেল ও সার্টিফিকেট। এই সচেতনতা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছে অপসোনিন ফার্মা এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করেছে আলট্রা ক্যাম্প রানার্স। দিনের এ আয়োজন শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দৈনন্দিন হাঁটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে।
ডায়াবেটিস এখন আর শুধু বয়স্কদের রোগ নয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত রুটিন, কম শারীরিক পরিশ্রম ও মানসিক চাপের কারণে অল্প বয়সীদের মধ্যেও দ্রুত বাড়ছে এই রোগের ঝুঁকি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কিডনি, হার্ট, চোখ ও স্নায়ুতন্ত্রসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের বেশ কয়েকটি লক্ষণ পায়ে দেখা যায়—যা সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা পায়ের ৭টি সাধারণ সতর্ক সংকেত চিহ্নিত করেছেন: ১. পায়ে ব্যথা বা অস্বস্তি জ্বালা, ঝিনঝিন ভাব, লালচে হওয়া বা অসাড়তা—এসবই ডায়াবেটিসের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। ২. ক্ষত বা ঘা দেরিতে সারা ডায়াবেটিসে রক্তপ্রবাহ ধীর হয়ে যায়, ফলে পায়ের ক্ষত দ্রুত সারতে চায় না। ৩. ফোসকা বা আলসার পায়ের নিচে বা আঙুলের তলায় ফোসকা, ঘা বা আলসার দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি। ৪. পায়ের আকৃতির পরিবর্তন ডায়াবেটিস পায়ের হাড়, জোড় ও নখের গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে। ৫. ত্বকের সমস্যা পায়ের ত্বক শুষ্ক হওয়া, ফেটে যাওয়া, চামড়া ওঠা বা আঙুলের ফাঁকে ত্বক খসে যাওয়া—এসবই ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সতর্ক সংকেত। ৬. ত্বকের রঙের পরিবর্তন পায়ের ত্বক ফ্যাকাশে, নীলচে বা অস্বাভাবিক গাঢ় হয়ে গেলে অবহেলা করা ঠিক নয়। ৭. ফোলাভাব গোড়ালি বা পায়ে অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দিলে এটি রক্তসঞ্চালন সমস্যা বা ডায়াবেটিসের ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়ে এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো যত্ন নিলে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ভরপেট খেয়েও মেদ ঝরাতে পারে সঠিক খাদ্যাভ্যাস বাঙালির জীবনে ভাত মানেই আবেগ। সকাল, দুপুর বা রাত—দিনের যে কোনো খাবারে ভাত না থাকলে যেন আহারই অপূর্ণ লাগে। কিন্তু ওজন কমানোর পথে অনেকেই ভাতকে মনে করেন ‘শত্রু’। তাই ডায়েট শুরু করলেই অনেকে ভাত বাদ দেন। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, ওজন কমাতে ভাত পুরোপুরি ছাড়াই সমাধান নয়—বরং কীভাবে, কতটা ও কার সঙ্গে খাচ্ছেন, সেটিই মূল কৌশল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় নিউট্রিশন কোচ জাস্টিন গিচাবা জানিয়েছেন, ভাত একা খেলে শরীরে ফ্যাট জমতে পারে, কিন্তু সঠিক খাবারের সঙ্গে খেলে তা ওজন কমাতেও সহায়ক হতে পারে। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ভাত খুব সহজে হজম হয়, ফলে দ্রুত ক্ষুধা লাগে এবং মানুষ না বুঝেই বেশি খেয়ে ফেলেন। এতে ওজন বাড়ে। গিচাবা বলেন, ভাত থেকে পাওয়া এনার্জি দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তাই শরীর আরও খাবার চায়। এই চক্রটাই মেদ বাড়িয়ে দেয়। অনেক জিমপ্রেমী ভাত ও চিকেনকে আদর্শ কম্বিনেশন মনে করলেও, গিচাবার মতে এটি যথাযথ নয়। বরং ফাইবারযুক্ত খাবার ভাতের সঙ্গে খেলে শরীরে ফ্যাট কমানোর প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। তার মতে, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ধীরে হজম হয়, দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। এটি রক্তের চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। গিচাবা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার বা প্রতিমিলে কমপক্ষে ১০ গ্রাম ফাইবার রাখার। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে—বিনস, ছোলা, মসুর ডাল, সবুজ মটর, পালংশাক, ব্রকোলি ও অ্যাভোকাডো। তিনি বলেন, প্রতিদিন এই তালিকা থেকে কয়েকটি খাবার ডায়েটে রাখুন। দেখবেন, ভাত বাদ না দিয়েও মেদ কমানো কত সহজ। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি যোগ করেন, আমি নিজেও মাঝে মাঝে ভাত খাই, তবে বুঝেছি মিষ্টি আলুর মতো খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। সংক্ষেপে, ভাতকে দোষারোপ না করে যদি খাবারের ভারসাম্য ও ফাইবারের পরিমাণে নজর রাখা যায়, তাহলে ভরপেট খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব। অর্থাৎ, মেদ ঝরানোর যুদ্ধে ভাত নয়, বুদ্ধিদীপ্ত খাদ্যাভ্যাসই আসল অস্ত্র। সূত্র: দ্য ওয়াল
কলাকে বলা হয় সহজলভ্য ‘সুপারফুড’। এটি যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনই শরীরের প্রয়োজনীয় এনার্জিরও দারুণ উৎস। সবজি হিসেবেও যেমন খাওয়া যায়, তেমন ফল হিসেবেও পাকা কলা জনপ্রিয়। তবে প্রশ্ন হলো, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কোন ধরনের কলা খাওয়া ভালো? কাঁচা, পাকা নাকি মজে যাওয়া? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলা যত পাকতে থাকে, ততই এর পুষ্টিগুণে পরিবর্তন আসে। কাঁচা অবস্থায় ফলটির মধ্যে থাকা স্টার্চ ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রাকৃতিক শর্করায়। যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজে। ফলে কাঁচা, পাকা ও অতিপাকা কলার গুণাগুণে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও এর প্রভাব ভিন্ন। কাঁচকলা কাঁচকলা হলো ডায়াবেটিকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং মিষ্টত্ব তুলনামূলকভাবে কম। এই ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অন্ত্রের জন্যও উপকারী, কারণ কাঁচকলা প্রিবায়োটিক জাতীয় খাবার হিসেবে কাজ করে; যা হজমতন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং প্রদাহজনিত সমস্যা কমায়। পুরোপুরি কাঁচা নয়, আবার পুরোপুরি পাকা নয়— এমন অবস্থার কলাও দারুণ উপকারী। এই পর্যায়ে কলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে, যা পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম সঠিক রাখতে সাহায্য করে। যাদের রক্তে শর্করার সমস্যা সামান্য বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা এই ধরনের কলা পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন। হলুদ কলা যখন কলা একেবারে পেকে যায়, তখন মিষ্টত্ব বেড়ে যায়। কারণ এর স্টার্চ পুরোপুরি শর্করায় রূপ নেয়। এই কলা দ্রুত এনার্জি জোগায়, তাই যারা ব্যায়াম করেন বা শরীরচর্চার পর শক্তি চান, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নয়, কারণ এতে শর্করার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি। মজে যাওয়া কলা যে কলায় কালচে বা খয়েরি দাগ পড়ে, সেটিই মজে যাওয়া কলা। এই অবস্থায় ফলটির মিষ্টত্ব সবচেয়ে বেশি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ধরনের কলা একেবারেই পরিহারযোগ্য। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো কাঁচকলা বা অল্প পাকা কলা, যেখানে ফাইবার বেশি ও শর্করা তুলনামূলকভাবে কম। আর মজে যাওয়া অতিপাকা কলা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। সূত্র : এই সময়
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।