শুক্রবার নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৪১৭ রানে চতুর্থ দিন শুরু করার পর ৮ উইকেটে ৪৬৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে। ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচ ৭৮ রানে খরচ করে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন। রেকর্ড ৫৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭২ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর দলের হাল ধরেছেন শাই হোপ ও জাস্টিন গ্রেভস। পঞ্চম উইকেটে তারা ১৪০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। শুক্রবার চতুর্থ দিন শেষে ২১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শনিবার শেষ দিনে জয়ের দেখা পেতে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন আরও ৩১৯ রান। টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিতে এত রান করে জয় তুলে নেওয়া বেশ কঠিন ব্যাপারই বলা চলে। তারপরও ক্রিকেটবিশ্ব অপেক্ষায় আছে নতুন এক কীর্তি গড়তে দেখার। *সংক্ষিপ্ত স্কোর* নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস- ২৩১ (৭০.৩ ওভার); উইলিয়ামসন ৫২, রোচ ২-৪৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস- ১৬৭ (৭৫.৮ ওভার); হোপ ৫৬, ডাফি ৫-৩৪ নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস- ৪৬৬/৮ডি (১০৯ ওভার); রাচিন ১৭৬, রোচ ৫-৭৮ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস- ২১২/৪ (৭৪ ওভার); হোপ ১১৬*, ডাফি ২-৬৫ জয়ের জন্য শেষ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩১৯ রান।
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে তিন উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করতে বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ বোলিংয় ৮০ রানে থামে পাকিস্তানের ইনিংস। জবাবে, এক ওভার হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দলীয় ৭ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন দলটির ওপেনার অতশী মজুমদার। দ্বিতীয় উইকেটের ৩১ রানের জুটি ভাঙেন জারিন তাসনিম লাবণ্য। তারপর আবার ২৮ রানের জুটি পায় পাকিস্তান। এই জুটি ভাঙেন হাবিবা ইসলাম পিংকি। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন কোমাল খান। এছাড়া জুফিশান আয়াজ ও রাভাইল ফারহানের ব্যাট থেকে আসে যথাক্রমে ১৭ ও ১৫ রান। বাংলাদেশের হাবিবা একাই নেন চারটি উইকেট। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাজে শুরু হয় বাংলাদেশেরও। মাত্র চার রানেই প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তারপর ২৭ রানের জুটি পায় বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে ৩৬ রানে ৪ উইকেট পড়লে চাপে পড়ে বাংলাদেশও। একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশকে জয়ের পথ দেখান সুবর্ণা। ৩৮ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ দিকে সাদিয়া আক্তার টানা দুই বলে দুটি চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন। এই জয়ে সিরিজে এলো ১-১ সমতা।
বিদেশি লিগে অংশ নিতে মুমিনুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস। মুমিনুল, মোস্তাফিজ ও তাসকিন তিনজনই ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এনওসি পেয়েছেন। মুমিনুল অস্ট্রেলিয়ায় উড়াল দিয়েছেন আগেরদিন। তিনি খেলবেন নিউ সাউথ ওয়েলস গ্রেড ক্রিকেটে ব্ল্যাকটাউন ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। সিডনি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই প্রতিযোগিতা ঐতিহ্যবাহী। স্টিভ স্মিথ ও মিচেল স্টার্কের মতো অসি তারকারা একসময় খেলেছেন এই লিগে। মোস্তাফিজ বৃহস্পতিবার রাতে দেশ ছেড়েছেন। তিনি গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইএল টি ২০ খেলতে। সেখানে দুবাই ক্যাপিটালসের হয়ে খেলবেন এই বাঁ-হাতি পেসার। তাসকিন আহমেদ পাচ্ছেন শারজা ওয়ারিয়র্সের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ। এর আগে বিসিবি লেগ-স্পিনার রিশাদ হোসেনকে বিগ ব্যাশ লিগে (বিবিএল) খেলার অনুমতি দিয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া আসরে হোবার্ট হারিকেনসের হয়ে খেলবেন তিনি। বিপিএল শুরু হওয়ার আগে তাসকিন-মোস্তাফিজরা দেশে ফিরবেন।
বিপিএলের নিলাম শেষ হয়েছে গত রোববার, তবে উত্তাপ এখনো রয়ে গেছে। ছয় দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিপিএলের ১২তম আসর। সিলেটে শুরু হয়ে ঢাকায় শেষ হবে এবারের টুর্নামেন্ট। নতুন মালিকানায় দল পেয়েছে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স, চট্টগ্রাম রয়েলস, নোয়াখালি এক্সপ্রেস ও সিলেট টাইটান্স। নিলামের পর দলগুলোর স্কোয়াড প্রায় চূড়ান্ত হলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়কদের নাম ঘোষণা হয়নি। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কয়েকটি দলের সম্ভাব্য নেতৃত্বের নাম জানা গেছে। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে আগের মতোই থাকছেন নুরুল হাসান সোহান। তবে সহ-অধিনায়কের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নতুন দল নোয়াখালি এক্সপ্রেসের নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে সৌম্য সরকারকে, যদিও এ সিদ্ধান্ত এখনও নিশ্চিত নয়। রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের নেতৃত্বে থাকবেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। সিলেট টাইটান্সের অধিনায়ক হবেন মেহেদী হাসান মিরাজ, আর তার ডেপুটি হিসেবে নাম আছে জাকির হাসানের। চট্টগ্রাম রয়েলসের অধিনায়কত্ব এখনো নির্ধারিত না হলেও শেখ মেহেদী হাসান এ দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সহ-অধিনায়ক হতে পারেন নাঈম শেখ। অন্যদিকে ঢাকা ক্যাপিটালসের নেতৃত্ব পাওয়ার কথা রয়েছে তাসকিন আহমেদের সবকিছু ঠিক থাকলে তিনিই দলটির অধিনায়ক হবেন।
বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ বিপিএলে আন্তর্জাতিক তারকাদের উপস্থিতি মানেই পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের জমজমাট অংশগ্রহণ। আফ্রিদি–মালিক থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের সাইম আইয়ুব, আবরার আহমেদদের পারফরম্যান্স বিপিএলে এনে দিয়েছে বাড়তি উত্তাপ। তবে এবারের আসর শুরুর আগেই সেই পরিচিত চিত্রটি সংকটে পড়েছে। পুরো মৌসুমে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বাস্তব শঙ্কা। পাকিস্তান জাতীয় দলের ঠাসা আন্তর্জাতিক সূচিই এই অনিশ্চয়তার মূল কারণ। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি জানিয়েছে, নিলামে দল গঠন করলেও পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের পুরো আসরে পাওয়া যাবে—এর নিশ্চয়তা নেই। তাই বিকল্প বিদেশি ক্রিকেটার খুঁজতে শুরু করেছে দলগুলো। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারিত বিপিএলের সময় পাকিস্তানকে খেলতে হবে পরপর দুটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি সিরিজ। জানুয়ারির শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ, এরপর মাসের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়া সফর। পাশাপাশি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে অতিরিক্ত প্রস্তুতি ক্যাম্পও রয়েছে। এক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই বড় সমস্যাটা দেখা দেবে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ ও অস্ট্রেলিয়া সফরের কারণে বাংলাদেশের আসর ছেড়ে দেশে ফিরতে হতে পারে অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে। এবারের বিপিএলে সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ নওয়াজ, আবরার আহমেদ, সাহিবজাদা ফারহান, উসমান খান, ইমাদ ওয়াসিম ও খুশদিল শাহসহ বেশ কয়েকজন আলোচিত পাকিস্তানি খেলোয়াড় দল পেয়েছেন। কিন্তু জাতীয় দলের অগ্রাধিকারের কারণে তাদের বড় একটি অংশ পুরো টুর্নামেন্ট খেলতে পারবেন কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানায়, খেলোয়াড়দের এনওসি প্রক্রিয়াধীন। তবে জাতীয় দলের দায়িত্ব থাকলে সেটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এটাই বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নিয়ম। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ধারণা, শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরুর আগে কিংবা দুই সিরিজের মধ্যবর্তী স্বল্প বিরতিতে কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটার বিপিএলে খেলতে পারবেন। এছাড়া যারা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রধান পরিকল্পনায় নেই, তারা তুলনামূলক বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতে পারেন। সব মিলিয়ে, মাঠে গড়ানোর আগেই পাকিস্তানি তারকাদের ঘিরে অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে বিপিএলের ওপর। শেষ পর্যন্ত কে কতটা খেলতে পারবেন—সেটির উত্তর মিলবে সময়ের অপেক্ষায়।
কক্সবাজারের নরম রোদে শুরুটা ছিল আশাব্যঞ্জক। নিয়ন্ত্রিত ও শৃঙ্খল বোলিংয়ে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব–১৯ নারী দলকে বড় সংগ্রহ গড়তে দেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাট হাতে নেমে সেই আশাই পাল্টে গেল হতাশায়। মাত্র ৭৫ রানে অলআউট হয়ে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েও হেরে বসে স্বাগতিকরা। ১৩ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। বুধবার কক্সবাজার একাডেমি মাঠে টস জিতে আগে ব্যাট করে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় পাকিস্তান। স্পিনারদের ধারাবাহিক আক্রমণে মাত্র ১৯.৪ ওভার টিকে দলটি তোলে ৮৮ রান। ওপেনার ও অধিনায়ক ইমা নাসির ৪১ বলে ৩০ রানে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। পাঁচে নেমে আরিশা আনসারির ২৩ বলে ২২ রান স্কোরবোর্ডে কিছুটা ভরসা যোগায়। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন জারিন তাসমিন লাবণ্য—নিখুঁত লাইন–লেন্থে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ২ উইকেট। সমান উইকেট নিয়েছেন হাবিবা ইসলাম পিংকিও। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং ধস নামে বাংলাদেশ শিবিরে। ২২ রানেই চার টপ অর্ডার ব্যাটার ফিরে গেলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় পাকিস্তানের দিকে। চেষ্টা করেছিলেন অরিত্রি নির্জনা মন্ডল (২০) ও সাদিয়া আক্তার (১৬), আর শেষ দিকে ববি খাতুনের ১৩ রানে ক্ষীণ আশা টিকে থাকলেও সেটি আর জয়ে রূপ নেয়নি। পাকিস্তানের হয়ে শাহার বানু ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার—৩ উইকেটে ভেঙে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। রোজিনা আকরামের অসাধারণ স্পেল—৪ ওভারে মাত্র ৫ রানে ২ উইকেট—স্বাগতিকদের চাপের মধ্যে রেখেছে পুরো ইনিংসজুড়ে। এখন সিরিজে ফেরার লড়াই বাংলাদেশের সামনে। শুক্রবারের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে আরও পরিণত পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে সমতায় ফেরার সুযোগ আছে অনূর্ধ্ব–১৯ নারী দলের সামনে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বৈশ্বিক আসরের আগে নিজেদের সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ ইতোমধ্যেই খেলেছে টাইগাররা। ঘোষণা করা হয়েছে টুর্নামেন্টের সূচিও। বিশ্বকাপে কেমন হবে বাংলাদেশ দল তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে ক্রিকেট সমর্থকদের। বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস জানান, এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। নেপাল, ইতালির পাশাপাশি টাইগারদের খেলতে হবে সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল যে চূড়ান্ত সেটি নিশ্চিত করে লিটন দাস বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগেই বিশ্বকাপের দল গোছানো হয়ে গেছে। এশিয়া কাপ থেকেই দল প্রস্তুত ছিল। এই খেলোয়াড়রাই টানা খেলছে। এখন খেলোয়াড়রা বিপিএলে খেলবে। তারা যেখানেই খেলুক জাতীয় দলে এসে বিশ্বকাপে ভালো করলেই আমি খুশি।’ কেমন হতে পারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল টপ অর্ডারে তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন ও সাইফ হাসানদের দলে থাকা নিশ্চিত। একই সঙ্গে লিটন, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলিদেরও দলে জায়গা নিশ্চিত বলা যায়। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন থাকতে পারেন বিশ্বকাপের পরিকল্পনাতে। বিশ্বকাপের বিবেচনায় থাকতে পারেন মারকুটে ব্যাটার শামীম পাটোয়ারী। ও অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। স্পিনে দল ভরসা রাখতে পারে শেখ মাহেদী, রিশাদ ও নাসুমের ওপর। পেস ইউনিটে মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও তাসকিনরা নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিশ্বকাপ দল : লিটন দাস (অধিনায়ক), সাইফ হাসান (সহঅধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী অনিক, নুরুল হাসান সোহান/মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, শামীম হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলাম/সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ।
২০২৫ সালটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ইতিহাসগড়া একটি বছর হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রইল। পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা, আগ্রাসী ব্যাটিং এবং রেকর্ডভাঙা এক বছর উপহার দিয়েছে দল। এর আগে কোনো পঞ্জিকাবর্ষে এমন সাফল্যের ঝলক দেখা যায়নি লাল–সবুজদের ব্যাটে। ইতোমধ্যেই নিজেদের ছক্কার রেকর্ড ভেঙে ফেলেছিল বাংলাদেশ। বছরের শেষ ম্যাচে সেই সংখ্যাটা পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। প্রথমবারের মতো এক ক্যালেন্ডার–ইয়ারে টি–টোয়েন্টিতে ২০০ ছক্কার মাইলফলক স্পর্শ করেছে দল। শেষ পর্যন্ত সংখ্যা গিয়ে থেমেছে ২০৬ এ। এর আগে ২০২৪ সালে ১২২ ছক্কার রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের। সেই রেকর্ডকে বহু আগে পিছনে ফেলে এ বছর ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও ছিল চমকের ঝলক। সবচেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম পুরো বছরে তাঁর ছক্কার সংখ্যা ৪১। তার পরেই আছেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন, যার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪ ছক্কা। সাইফ হাসান মাত্র ১৫ ম্যাচেই ছুঁড়েছেন ২৯ ছক্কা। এরপর আছেন লিটন দাস ২৩ ছক্কা নিয়ে। জাকের আলীর ব্যাট থেকে এসেছে ১৯টি, তাওহিদ হৃদয়ের নামের পাশে ১৪টি এবং শামীম পাটোয়ারীর ৯টি ছক্কা যুক্ত হয়েছে তালিকায়। শুধু ছয় নয়, চার মারার ক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরে দলের ব্যাটসম্যানরা মেরেছেন মোট ২৯৮টি চার। তবে এত সাফল্যের মাঝেও বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া হয়নি। ২০২৫ সালে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিক অস্ট্রিয়া পুরো বছরে তারা মেরেছে ৩২৬টি ছক্কা। ২৩৫ ছক্কা নিয়ে পাকিস্তান আছে দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় স্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আর বাংলাদেশ অবস্থান করছে তালিকার চতুর্থ স্থানে।
আগেই জানা গিয়েছিল সিলেট পর্ব দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। অবশেষে এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। আগামী ২৬ ডিসেম্বর বিপিএলের ১২তম আসরের পর্দা উঠছে সিলেটে। উদ্বোধনী দিনে মাঠে গড়াবে দুটি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে সিলেট টাইটান্সের মুখোমুখি হবে রাজশাহী ওয়ারিয়র্স। ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর ২টায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে চট্টগ্রাম রয়্যালসের বিপক্ষে খেলবে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। এই ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচ হবে ২৩ জানুয়ারি, ২০২৬। ফাইনালের জন্য আছে রিজার্ভ ডে। ২৪ জানুয়ারি রিজার্ভ ডে থাকছে।
সিরিজের তৃতীয় ও নির্ধারণী টি–টোয়েন্টিতে দারুণ দাপট দেখিয়ে আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১১৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৮ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২–১ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। ম্যাচের সেরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তামিম। ফিল্ডিংয়ে পাঁচ ক্যাচ নিয়ে পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পর ব্যাট হাতেও দেখালেন তার ক্লাস। ৩৬ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। সঙ্গে ইমনের ২৬ বলে ৩৩ রানের ঝলক, লিটনের ৭ এবং সাইফ হাসানের ১৯ রান দলকে সহজ জয়ের পথে এগিয়ে দেয়। এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পায় আয়ারল্যান্ড। অধিনায়ক পল স্টার্লিং আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন—২৭ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৮ রান। তাকে ফেরান রিশাদ, ক্যাচ নেন সাইফ। স্টার্লিং আউট হওয়ার পর আর কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। টিম টেক্টর ১৭ রান করলেও হ্যারি টেক্টর, কাম্ফার, ডেলানিরা ব্যর্থ হন ধারাবাহিকভাবে। বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখান। মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেন নেন ৩টি করে উইকেট। শরিফুল ইসলাম শিকার করেন ২টি। মেহেদী হাসান ও সাইফুদ্দিন একটি করে উইকেট যোগ করেন দলের ঝুলিতে। শেষদিকে চাপ সামলাতে না পেরে আয়ারল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৯.৫ ওভারে ১১৭ রানে। সমগ্র ম্যাচজুড়েই ব্যাট–বল–ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই বাংলাদেশের আধিপত্য ছিল স্পষ্ট, আর সেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতে টাইগাররা।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ। তিন পরিবর্তন নিয়ে এদিন একাদশ সাজিয়েছে টাইগাররা। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সফরকারীদের কাছে হারের পর দ্বিতীয়টিতে জয়ের দেখা পায় স্বাগতিকরা। আজ যে দল জিতবে তাদের হাতেই উঠবে সিরিজের ট্রফি। নাসুম আহমেদ, নুরুল হাসান ও তানজিম হাসান সাকিবের পরিবর্তে একাদশে ডুকেছেন শরীফুল ইসলাম, শামীম পাটোয়ারি ও রিশাদ হোসেন। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হারে ৩৯ রানে। আগে ব্যাটিং করে আয়ারল্যান্ড করে চার উইকেটে ১৮১ রান। জবাবে বাংলাদেশ থামে ৯ উইকেটে ১৪২ রানে। বাংলাদেশের হয়ে ৫০ বলে সর্বোচ্চ ৮৩ রানের হার না মানা ইনিংস আসে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং করে আয়ারল্যান্ড করে ছয় উইকেটে ১৭০ রান। জবাবে ১৯.৪ ওভারেই এই লক্ষ্য তাড়া করে বাংলাদেশ। ৩৭ বলে ৫৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন লিটন দাস। ২৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন পারভেজ হোসেন ইমন। *বাংলাদেশ একাদশ:* তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরীফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। *আয়ারল্যান্ড একাদশ:* পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), টিম টেক্টর, হ্যারি টেক্টর, লোরকান টাকার (উইকেটকিপার), কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক আদাইর, ক্রেগ ইয়াং, মার্ক হামফ্রিস ও বেন হোয়াইট।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ মিনি অকশনের জন্য নাম লেখানো খেলোয়াড়দের লম্বা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আছেন বাংলাদেশের দুই তারকা সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। আইপিএলে ৯ মৌসুম খেলা সাকিবের ভিত্তিমূল্য ১ কোটি ভারতীয় রুপি। মুস্তাফিজকে রাখা হয়েছে শীর্ষ বিদেশি খেলোয়াড়দের ক্যাটাগরিতে। তারা ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপি। একদিনের মিনি অকশনে ১৩৫৫ জন খেলোয়াড়ের নাম উঠবে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর আবুধাবিতে হবে খেলোয়াড় কেনার এই অনুষ্ঠান। ১৩ পৃষ্ঠার লম্বা তালিকায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের জায়গা হয়েছে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল, কেএস ভরত, রাহুল চাহার, রবি বিষ্ণয় ও আকাশ দীপের মতো তারকারা। বিষ্ণয় ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার কেবল ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপির তালিকায়। বিদেশিদের তালিকায় আরও আছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যামেরন গ্রিন, ম্যাথু শর্ট ও স্টিভ স্মিথ। বিয়ের কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে নাম লিখিয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটার জশ ইংলিস। ইংল্যান্ডের জেমি স্মিথ ও জনি বেয়ারস্টো, নিউজিল্যান্ডের রাচিন রবীন্দ্র, শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মাথিশা পাথিরানা আছেন। সব মিলিয়ে ৪৩ জন বিদেশি খেলোয়াড় সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্যের ক্যাটাগরিতে। মুস্তাফিজের সঙ্গে যেখানে আছেন গ্রিন, স্মিথ, জেমি স্মিথ, মুজিব উর রহমান, নবীন-উল-হক, শন অ্যাবট, অ্যাস্টন আগর, কুপার কনোলি, জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক, ইংলিস, মুস্তাফিজ, গাস অ্যাটকিনসন, টম ব্যান্টন, টম কারান, লিয়াম ডওসন, বেন ডাকেট, ড্যানিয়েল লরেন্স, লিয়াম লিভিংস্টোন, ড্যারিল মিচেল, রাচিন, মাইকেল ব্রেসওয়েল, জেরাল্ড কোয়েটজি, লুঙ্গি এনগিডি, আনরিখ নর্কিয়ে, পাথিরানা, মাহিশ থিকশানা ও হাসারাঙ্গা। ১৪টি দেশের ক্রিকেটাররা এবারের নিলামে থাকছেন। এমনকি মালয়েশিয়া থেকেও খেলোয়াড় নাম লিখিয়েছেন। জন্মসূত্রে ভারতীয় অলরাউন্ডার বিরানদীপ সিংয়ের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ রুপি।
আসন্ন বিপিএল ১২-এর লড়াই মাঠে গড়াতে আর মাত্র কিছুদিন বাকি। তার আগে আজ রোববার অনুষ্ঠিত হলো খেলোয়াড় নিলাম, যেখানে অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য আর তারকা-মানের ওপর ভিত্তি করে দলগুলো সাজিয়েছে নিজেদের স্কোয়াড। ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম—১ কোটি ১০ লাখ টাকায় তাকে দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস, যা এবারের নিলামের সর্বোচ্চ মূল্য। নিলাম শেষে ছয় দলের সম্পূর্ণ স্কোয়াড এক নজরে— রংপুর রাইডার্স সরাসরি চুক্তি: নুরুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, খাজা নাফি, সুফিয়ান মুকিম নিলাম থেকে: লিটন দাস (৭০ লাখ), তাওহিদ হৃদয় (৯২ লাখ), নাহিদ রানা (৫৬ লাখ), রকিবুল হাসান (৪২ লাখ), আলিস আল ইসলাম (২৮ লাখ), মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি (১৮ লাখ), নাঈম হাসান (১৮ লাখ), মেহেদি হাসান সোহাগ (১১ লাখ), মাহমুদউল্লাহ (৩৫ লাখ), আব্দুল হালিম (১১ লাখ), এমিলো গে (১০ হাজার ডলার), মোহাম্মদ আখলাক (১০ হাজার ডলার) ঢাকা ক্যাপিটালস সরাসরি চুক্তি: তাসকিন আহমেদ, সাইফ হাসান, উসমান খান, অ্যালেক্স হেলস নিলাম থেকে: শামীম পাটোয়ারী (৫৬ লাখ), সাইফউদ্দিন (৬৮ লাখ), মোহাম্মদ মিঠুন (৫২ লাখ), তাইজুল ইসলাম (৩০ লাখ), সাব্বির রহমান (২৮ লাখ), নাসির হোসেন (১৮ লাখ), তোফায়েল আহমেদ (১৮ লাখ), ইরফান শুক্কুর (১৮ লাখ), আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৪ লাখ), মারুফ মৃধা (১৪ লাখ), জায়েদ উল্লাহ (১১ লাখ), দাসুন শানাকা (৫৫ হাজার ডলার), জুবাইরউল্লাহ আকবর (২০ হাজার) সিলেট টাইটানস সরাসরি চুক্তি: নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সায়েম আইয়ুব, মোহাম্মদ আমির নিলাম থেকে: পারভেজ হোসেন (৩৫ লাখ), খালেদ আহমেদ (৪৭ লাখ), আফিফ হোসেন (২২ লাখ), রনি তালুকদার (২২ লাখ), জাকির হাসান (২২ লাখ), রুয়েল মিয়া (২৩ লাখ), আরিফুল ইসলাম (২৬ লাখ), ইবাদত হোসেন (২২ লাখ), শহিদুল ইসলাম (১৪ লাখ), রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ (১৪ লাখ), তৌফিক খান তুষার (১৪ লাখ), মুমিনুল হক (২২ লাখ), রবিউল ইসলাম রবি (১১ লাখ), অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস (৩৫ হাজার ডলার), অ্যারন জোন্স (২০ হাজার ডলার) রাজশাহী ওয়ারিয়র্স সরাসরি চুক্তি: নাজমুল হোসেন শান্ত, তানজিদ হাসান, সাহিবজাদা ফারহান, মোহাম্মদ নওয়াজ নিলাম থেকে: তানজিম হাসান (৬৮ লাখ), ইয়াসির আলি (৪৪ লাখ), আকবর আলী (৩৪ লাখ), রিপন মণ্ডল (২৫ লাখ), জিসান আলম (১৮ লাখ), হাসান মুরাদ (১৮ লাখ), আব্দুল গাফফার (৪৪ লাখ), মেহেরব হাসান (৩৯ লাখ), ওয়াসী সিদ্দিকী (১৯ লাখ), মোহাম্মদ রুবেল (১১ লাখ), মুশফিকুর রহিম (৩৫ লাখ), দুশান হেমান্থ (২৫ হাজার ডলার), জাহান্দাদ খান (২০ হাজার ডলার) চট্টগ্রাম রয়্যালস সরাসরি চুক্তি: মেহেদী হাসান, তানভীর ইসলাম, আবরার আহমেদ নিলাম থেকে: মোহাম্মদ নাঈম (১ কোটি ১০ লাখ), শরীফুল ইসলাম (৪৪ লাখ), আবু হায়দার (২২ লাখ), মাহমুদুল হাসান (৩৭ লাখ), সুমন খান (৩২ লাখ), জিয়াউর রহমান (৩০ লাখ), আরাফাত সানি (১৮ লাখ), মুকিদুল ইসলাম (৩৩ লাখ), সালমান হোসেন (১৪ লাখ), শুভাগত হোম (১৪ লাখ), জাহিদুজ্জামান সাগর (১১ লাখ), নিরোশান ডিকভেলা (৩৫ হাজার ডলার), অ্যাঞ্জেলো পেরেরা (২০ হাজার ডলার) নোয়াখালী এক্সপ্রেস সরাসরি চুক্তি: হাসান মাহমুদ, সৌম্য সরকার, জনসন চার্লস, কুশল মেন্ডিস নিলাম থেকে: জাকের আলী (৩৫ লাখ), মাহিদুল ইসলাম (৩৫ লাখ), হাবিবুর রহমান সোহান (৫০ লাখ), নাজমুল ইসলাম অপু (১৮ লাখ), আবু হাশিম (১৮ লাখ), মুশফিক হাসান (১৮ লাখ), শাহাদাত হোসেন (১৮ লাখ), রেজাউর রহমান (১৮ লাখ), মেহেদি হাসান (১৪ লাখ), সৈকত আলী (১৪ লাখ), সাব্বির হোসেন (১৪ লাখ), ইহসানউল্লাহ (২৮ হাজার ডলার), হায়দার আলি (২৫ হাজার ডলার) বিপিএল ১২ শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর, আর নিলামের মাধ্যমে দলগুলো নিশ্চিত করল নিজেদের কাঙ্ক্ষিত স্কোয়াড। এখন অপেক্ষা মাঠের লড়াইয়ে কোন দল গড়বে সেরা সমন্বয়—তা দেখার।
বিপিএল নিলামে ব্যাট হাতে ভরসার নাম দুজনই। একজন অভিজ্ঞ ফিনিশার, অন্যজন দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য উইকেটকিপার-ব্যাটার। কিন্তু এবারের নিলামে সেই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের কারও প্রতিই আগ্রহ দেখাল না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। ফলে প্রথম রাউন্ডেই অবিক্রীত থেকে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। রোববার (৩০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিপিএল নিলামের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে প্রথম নাম ওঠে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ভিত্তিমূল্য ৩৫ লাখ টাকা থেকে বিড শুরু হলেও ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউই হাত তুলতে রাজি হয়নি। একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, বড় ম্যাচে পারফর্ম করার ইতিহাস কোনোটিই এবার দলগুলোর মন গলাতে পারেনি। এর আগে ‘এ’ ক্যাটাগরির নিলামে মোহাম্মদ নাঈমকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় দলে নিয়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। লিটন দাসকে ৭৫ লাখ টাকায় দলে টেনেছে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুই সিনিয়র তারকার অবিক্রিত থাকা। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, অবিক্রিত ক্রিকেটারদের পরে আবার নিলামে তোলা হবে। তবে দ্বিতীয়বার তাঁরা উঠবেন ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। সেক্ষেত্রে তাঁদের ভিত্তিমূল্যও কমে আসবে। সেটিই হয়তো শেষ সুযোগ হতে পারে মাহমুদউল্লাহ–মুশফিকের জন্য। ফরম্যাট ও কৌশলগত পরিকল্পনার কারণে দলগুলো কি অভিজ্ঞদের পেছনে বিনিয়োগে অনাগ্রহ? নাকি পারফরম্যান্স গ্রাফই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে এ নিয়ে এখনই ক্রিকেট মহলে চলছে আলোচনা। তবে স্পষ্ট একটি বিষয় অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারের ভবিষ্যত এখন অনেকটাই নির্ভর করছে পুনরায় নিলামে তাঁদের প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মনোভাবের ওপর।
এ বছরের বহুল প্রতীক্ষিত বিপিএল নিলাম চলছে আজ রোববার। প্রথম ধাপেই ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নাম তোলা হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। কিন্তু কোনো দল তাকে দলে ভেড়ায়নি। ৩৫ লাখ টাকা ভিত্তিমূল্য থাকা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সর্বশেষ বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়েই চ্যাম্পিয়ন হন। জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত খেলছেন। একই পরিণতি হয়েছে মুশফিকুর রহিমেরও। নিলামের প্রথম ধাপে তাকেও দলে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুশফিক লিখেছেন, সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। দেশি খেলোয়াড়দের নিলাম শেষ হওয়ার পর আলাদা সেশনে আবারও উঠতে পারে এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের নাম। তবে সেক্ষেত্রে তারা ‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকবেন এবং ভিত্তিমূল্য আগের চেয়ে কমে যাবে।
১২তম বিপিএলের নিলামে শুরুতেই যেন হইচই ফেলে দিলেন নাঈম শেখ। ‘এ’ গ্রেডে থাকা এই ওপেনারের ভিত্তিমূল্য ছিল ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু কয়েকটি দলের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে তার মূল্য এক লাফে কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়ে যায়। গত আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাঈমকে ঘিরে সিলেট টাইটানস, রংপুর রাইডার্স, চট্টগ্রাম রয়্যালস এবং নোয়াখালী এক্সপ্রেসের মধ্যে ছিল তীব্র লড়াই। শেষ পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় তাকে দলে টেনে নেয় চট্টগ্রাম রয়্যালস। জাতীয় দলে সাম্প্রতিক সময়ে আলো ছড়াতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই রান করে যাচ্ছেন নাঈম। বিপিএল তার জন্য হতে পারে জাতীয় দলে ফেরার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। নিলামের দ্বিতীয় নাম ছিল লিটন দাস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগের দিনই দারুণ ফিফটি হাঁকানো এই ওপেনারকে নিয়ে আলোচনাও ছিল বেশ। তবে তাকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে বড় কোনো লড়াই দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত রংপুর রাইডার্স ৭০ লাখ টাকায় লিটনকে দলে ভেড়ায়।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে সিরিজ হারানোর শঙ্কায় পড়েছিল টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আইরিশদের ৪ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লিটন বাহিনী। শনিবার (২৯ নভেম্বর) চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। ১৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের ফিফটিতে ২ বল বাকি থাকতেই জয় পায় টিম টাইগার্স। ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন ২ আইরিশ ওপেনার পউল স্টার্লিং ও টিম টেকটর। দলীয় ৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তানজিদ তামিম। ব্যক্তিগত ২৯ রানে সাইফের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্টার্লিং। লিটন দাসের স্ট্যাম্পিং এ ৩৮ রান করে আউট হন টিম টেকটর। একই ওভারে মেহেদি হাসানের দ্বিতীয় শিকার ১১ রান করা হ্যারি টেকটর। শেখ মেহেদীর ৩ উইকেটের পর দলের হাল ধরেন লরকান টাকার। তবে ৪১ রান করে তিনি ফিরলে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রানের সংগ্রহ পায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে শুরুতেই রাউন আউটের শিকার তানজিদ তামিম। দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়ার পরে ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ক্যাচ আউট হন পারভেজ ইমন। হামফ্রিসের বলে কাটা পড়েন ২২ রান করা সাইফ হাসান। শেষদিকে লিটনের ৫৭ রানে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন শেখ মেহেদি হাসান। ১৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দলের জয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন লিটন কুমার দাস। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন করেন মূল্যবান ৪৩ রান। ক্যারিয়ারের ১১৯তম ম্যাচে লিটন দাস ৩৭ বলে তিন চার ও তিন ছক্কায় ১৬তম ফিফটি হাঁকিয়ে ৫৭ রানে আউট হন। ৩৪তম বলে ছক্কা মেরে তিনি অর্ধশতক পূর্ণ করেন। এর আগে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। ২৮ বলে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে দলীয় ২৬ রানে রানআউট হন অপর ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। এরপর লিটনকে সঙ্গে নিয়ে ৪৩ বলে ৬০ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন পারভেজ। তার আগে প্রথমে ব্যাট করে আয়ারল্যান্ড সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ১৭০ রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা তোলে ১ উইকেটে ৭৫ রান। মাঝখানে বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বড় সংগ্রহ গড়ে আয়ারল্যান্ড। তাদের হয়ে লরকান টাকার ৩২ বলে চার বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন। ওপেনার টিম ট্যাক্টর ২৫ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় করেন ৩৮ রান। পল স্টার্লিং ১৪ বলে তিন চার ও দুটি ছক্কায় ২৯ রান যোগ করেন। বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন শেখ মেহেদি হাসান। একটি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তানজিম হাসান সাকিব।
বিপিএল সিজন ১২–এর নিলামকে সামনে রেখে স্থানীয় খেলোয়াড়দের তালিকায় কিছু ক্রিকেটারের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। শনিবার (২৯ নভেম্বর) এক গণমাধ্যম বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি পরিষ্কার করে বোর্ড। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির হাতে পৌঁছেছে স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনের পর সম্ভাব্য দুর্নীতি-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বোর্ডের সদ্য গঠিত ইনটেগ্রিটি ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। ইউনিটটি পরিচালিত হচ্ছে স্বাধীন চেয়ার অ্যালেক্স মার্শালের তত্ত্বাবধানে এবং এটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে। বিসিবি জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। সেজন্য বিপিএল ১২-এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইনটেগ্রিটি ইউনিটের স্বাধীন চেয়ারের পরামর্শ অনুযায়ী কয়েকজন ব্যক্তিকে, যাদের মধ্যে কিছু ক্রিকেটারও আছেন, এবারের আসরে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গভর্নিং কাউন্সিলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি শুধুমাত্র বিপিএলকে কেন্দ্র করে নেওয়া একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ—যা তদন্ত প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করা এবং টুর্নামেন্টের সুনাম রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। এই সিদ্ধান্ত বিসিবির অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে মন্তব্য করা এখনই যথোপযুক্ত নয়, কারণ ইনটেগ্রিটি ইউনিট এখনও স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা ও তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা যেন একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে পারে—এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।
চট্টগ্রামের নরম আলো, একইসঙ্গে ব্যাটে-বলের দারুণ সুবিধা—সব মিলিয়ে পাওয়ারপ্লেতে যেন পঞ্চম গিয়ারে শুরু করেছিল আয়ারল্যান্ড। প্রথম ৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৭৫ রান! সেই সময়টায় বোঝাই যাচ্ছিল না, এ ম্যাচে তাদের থামানোর মতো কিছু আছে কি না। কিন্তু পাওয়ারপ্লে শেষে যেন আচমকাই ‘জ্বালানি’ ফুরিয়ে বসে সফরকারীরা। ৭৫/১ থেকে ১১ ওভার শেষে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ১০৩/৪। পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন একাই শেখ মেহেদী হাসান। এই মাঝের সময়েই তিনি তুলে নেন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট—টিম টেক্টর, হ্যারি টেক্টর এবং ক্যালিটজকে ফিরিয়ে দেন ধারাবাহিকভাবে। ম্যাচের গতি একাই টেনে বাংলাদেশের দিকে এনে দেন অফস্পিনার। তবে বাংলাদেশ বোলাররা যখন ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের করে নিচ্ছিলেন, তখনই দেখা দেয় পরিচিত দুর্বলতা—ফিল্ডিংয়ের দোষ আর পেসারদের অনিয়মিত লেংথ। শেষ চার ওভারে তাই আবার চাপ বাড়ায় আয়ারল্যান্ড, তুলেই নেয় ৩৬ রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ১৭০/৬। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান এসেছে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারের ব্যাটে। পাওয়ারহিটিংয়ে শুরুটা করেন অধিনায়ক পল স্টার্লিং—মাত্র ১৪ বলে ২৯। টিম টেক্টর খেলেন ২৫ বলে ৩৮। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মেহেদী, সাকিব ও সাইফউদ্দিন উইকেট পেয়েছেন। বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে ১৮২ রান তাড়া করতে গিয়ে ১৪২/৯ এ থেমেছিল। আজ সামনে আরও একটি বড় লক্ষ্য—১৭১। পাওয়ারপ্লেতে যদি ব্যাটাররা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে, তবেই এই লক্ষ্য দেখা যেতে পারে নাগালের মধ্যে। না হলে আবারও কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হবে লিটন দাসের দলকে। চট্টগ্রামে এখন অপেক্ষা—বাংলাদেশ কি পারে এই রান তাড়া করতে?
সৌদি আরবে ফুটবলে অঢেল বিনিয়োগ হয়েছে গত কয়েক বছরে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের বড় বড় তারকাদের এনে নজর কেড়েছে সৌদি প্রো লিগ। এবার ক্রিকেটের মানচিত্রে নিজেদের নতুন করে চেনাতে যাচ্ছে সৌদি আরব, তাও আবার নারী ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। ফেয়ারব্রেক ও সৌদি ক্রিকেটের যৌথ উদ্যোগে দেশটিতে প্রথমবার পেশাদার নারী ক্রিকেট ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। সৌদি ক্রিকেট ও ফেয়ারব্রেক এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই প্রতিযোগিতায় ৩৫টিরও বেশি দেশের নারী ক্রিকেটাররা অংশ নেবেন। ২০১৩ সাল বেসরকারি কোম্পানি ফেয়ারব্রেক ক্রীড়াঙ্গনে লিঙ্গসমতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২২ ও ২০২৩ সালে দুবাই ও হংকংয়ে গ্লোবাল ইনভাইটেশনাল টি-টোয়েন্টি আয়োজন করেছিল তারা। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় আসর হওয়ার কথা থাকলেও তা পরের বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তা আর মাঠে গড়ায়নি। ফেয়ারব্রেক ইনভাইটেশনাল পুরোপুরি আইসিসির অনুমোদিত এবং ছয়টি দল খেলেছিল। চামারি আতাপাত্তু, সোফি এক্লেস্টোন, লরা উলভার্ট ও মারিজান্নে ক্যাপের মতো আন্তর্জাতিক তারকারা খেলেছিল। তবে বিসিসিআই ভারতীয় খেলোয়াড়দের অনাপত্তিপত্র দেয়নি। নতুন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ভারতের কোনো খেলোয়াড় খেলবেন কি না তা স্পষ্ট নয়। ক্রিকেট মানচিত্রে সৌদি আরবের পরিধি আরও বাড়ছে। ২০২৪ সালে জেদ্দায় হয়েছিল আইপিএল নিলাম। ভবিষ্যতে আইএল টি-টোয়েন্টির কিছু ম্যাচও আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।