গত পাঁচ বছরে প্রায় ৯ লাখ ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এক লিখিত উত্তরে এই তথ্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। শুক্রবার ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেশটির মন্ত্রী জানায়, বিপুলসংখ্যক ভারতীয় নাগরিক তাদের নাগরিকত্ব ত্যাগ অব্যাহত রেখেছেন, এবং গত পাঁচ বছরে প্রায় ৯ লাখ মানুষ এই কাজ করেছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং রাজ্যসভায় একটি লিখিত বক্তব্যে এই তথ্য দেন। মন্ত্রী জানান, যারা ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, সরকার তাদের বার্ষিক রেকর্ড রাখে। ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট ১১ লাখ ৮৯ হাজার ১৯৪ জন ভারতীয় তাদের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। সংসদে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ বছরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এই পরিসংখ্যানগুলো বলছে, বিদেশি নাগরিকত্ব বেছে নেওয়া ভারতীয়দের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই বার্ষিক সর্বোচ্চসংখ্যক লোক নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বছর অনুযায়ী এই সংখ্যাগুলো পেশ করেন। তালিকা অনুসারে, ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর যে সংখ্যক ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন, তার সংখ্যাটি ওঠানামা করেছে। ২০১১ সালে ১,২২,৮১৯ জন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, যা পরের বছর সামান্য কমে ১,২০,৯২৩ জনে দাঁড়ায়। এরপর ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সংখ্যাটি মূলত ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে ছিল। যেমন: ২০১৩ সালে ১,৩১,৪০৫ জন, ২০১৪ সালে ১,২৯,৩২৮ জন, এবং ২০১৫ সালে ১,৩১,৪৮৯ জন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ১,৪১,৬০৩ জন এবং ২০১৯ সালে ছিল ১,৪৪,০১৭ জন। তবে ২০২০ সালে নাগরিকত্ব ত্যাগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ৮৫,২৫৬ জনে দাঁড়ায়। এরপরের বছরগুলোতে এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালে ১,৬৩,৩৭০ জন, ২০২২ সালে ২,২৫,৬২০ জন এবং ২০২৩ সালে ২,১৬,২১৯ জন নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন ২,০৬,৩৭৮ জন।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডি বিচে হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী যুবক ২৪ বছর বয়সী নাভিদ আকরাম। তিনি সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমের বনিরিগ এলাকার বাসিন্দা। সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার সময় নাভিদ গুলিবিদ্ধ হন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অপর এক বন্দুকধারী ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বনিরিগের পাতিয়া এলাকায় নাভিদের বাড়িতে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ। বাড়িটি তাঁর পরিবার গত এক বছর ধরে ব্যবহার করছে। সামাজিক মাধ্যমে নাভিদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি ও হামলার সময়ের তাঁর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, নাভিদ আকরাম পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। এক্সে এক পোস্টে একজন লিখেছেন, ‘আমি নাভিদের সঙ্গে ব্রিক কারখানায় কাজ করেছি অনেকদিন। ও পাকিস্তানি।’ অপর একজন লিখেছেন, ‘ও পাকিস্তানের লাহোর থেকে এসেছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবিতে ওকে পাকিস্তানের জার্সি পরা দেখা যাচ্ছে।’ তবে নাভিদ আকরামের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু এখনো জানা যায়নি। স্থানীয় সময় আজ রোববার সন্ধ্যায় বন্ডি সমুদ্র সৈকতে বন্দুক হামলায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ১২ জন নিহত ও অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। হামলার সময় বন্ডি বিচে ইহুদিদের অন্যতম প্রধান উৎসব হানুক্কাহর অনুষ্ঠান চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ক্যাম্পবেল প্যারেডসংলগ্ন বন্ডি প্যাভিলিয়নের কাছে একটি গাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি নেমে আসেন। এরপর তাঁরা গুলি চালাতে শুরু করেন। এদিকে এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল ও কাউন্সিল অব ইমামস এনএসডব্লিউ এক যৌথ বিবৃতিতে বন্ডি বিচে গুলির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সমাজে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এ ঘটনার জন্য দায়ীদের পূর্ণ জবাবদিহি ও আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’ নিহত ব্যক্তিদের পরিবার, আহত ও এই হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
হাঙ্গেরিতে একের পর এক শিশু নির্যাতন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। শনিবার রাজধানী বুদাপেস্টে আয়োজিত এই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকরা। শনিবার কুয়াশাচ্ছন্ন বুদাপেস্টের রাস্তায় ‘শিশুদের সুরক্ষা দাও’ লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান। কয়েক বছর আগের নির্যাতনের শিকার শিশুদের প্রতি সংহতি জানাতে অনেকে নরম খেলনা ও মশাল বহন করেন। ২০১০ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর শিশুদের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন অরবান। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক ভয়াবহ শিশু নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসায় সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব কেলেঙ্কারিতে অরবান নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন বিরোধী দল টিসজা’র প্রধান পিটার মাগিয়ার। গত সেপ্টেম্বরে বুদাপেস্টের একটি কিশোর সংশোধনাগারে নির্যাতনের নতুন অভিযোগ প্রকাশের পর এই আন্দোলন আরও জোরালো হয়। নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সজোলো স্ট্রিট কিশোর সংশোধনাগারের পরিচালক এক কিশোরের মাথায় লাথি মারছেন—এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ঘটনার পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে সংশ্লিষ্ট সংশোধনাগারের চার কর্মীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার ঘোষণা দিয়েছে, শিশুদের জন্য পরিচালিত সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে সরাসরি পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকবে। গত শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদন, যেখানে বলা হয়, রাষ্ট্র পরিচালিত সেবাকেন্দ্রগুলোতে থাকা শিশুদের পঞ্চমাংশেরও বেশি কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৭৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক জুজসা সালাই এএফপিকে বলেন, ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সঙ্গে যা ঘটছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এ কারণেই আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার এই ছবি ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর তখন তাঁকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আবার তলব করা হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীরা ভারতে ঢুকে পড়লে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হলো। আজ রোববার সকালে প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্বেগের বিষয়টিও জানিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে বিভিন্ন ঘটনায় এ নিয়ে অন্তত পাঁচবার তলব করা হলো প্রতিবেশী দেশটির রাষ্ট্রদূতকে। জুলাই অভ্যুত্থানের সমর্থক ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গত শুক্রবার ঢাকায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। ওসমান হাদিকে গুলিবর্ষণকারী ভারতে পালিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে ভারতের সহযোগিতাও কামনা করা হয়েছে। তাঁরা যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে সক্ষমও হন, তবে তাঁদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান তিনি। বাংলাদেশে বিতর্কিত সব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকার পেছনে ভারত সরকার সমর্থন দিয়ে আসছিল বলে অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তিগুলোর অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লিতে থেকে নানা বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। তা বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আহ্বান জানানো হলেও নয়াদিল্লি তাতে সাড়া দেয়নি। জুলাই আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর তাঁকে ফেরত দিতে নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তাতেও দিল্লির কোনো সাড়া মেলেনি। এদিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর শেখ হাসিনার আরও বক্তব্য–বিবৃতি আসতে থাকে। সেই প্রেক্ষাপটে আবার ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাঁকে ডেকে নিয়ে সরকারের পক্ষে উদ্বেগ তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। ভারতের হাইকমিশনারকে বলা হয়, পলাতক শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে তিনি তাঁর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসন্ন নির্বাচন বানচালে প্ররোচিত করছেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা–কর্মীরা ভারতে বসে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বানচালে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও প্রণয় ভার্মাকে জানানো হয়। ফাসিস্ট এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বানও জানানো হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরত পাঠানোর আহ্বানও আবার জানানো হয় ভারতের হাইকমিশনারকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবে ভারত সরকার। ভারতের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমন প্রত্যাশা ভারতের রয়েছে এবং এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে তাঁর দেশ প্রস্তুত।
ইউক্রেন গতকাল শনিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, কৃষ্ণ সাগরে সূর্যমুখী তেল বহনকারী একটি তুর্কি জাহাজে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর এক দিন আগে ইউক্রেনের একটি বন্দরে তুর্কি মালিকানাধীন একটি জাহাজে রুশ হামলার ফলে ওই জাহাজে আগুন ধরে যায়। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। ইউক্রেনের নৌবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছে ‘রাশিয়া সূর্যমুখী তেল বহনকারী তুর্কি জাহাজ 'ভিভা'কে লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ওই জাহাজটি সূর্যমুখী তেল বহন করে মিশরে যাচ্ছিল।’ ইউক্রেনের নৌবাহিনী জানায়, ১১ জন ক্রু বা নাবিকের কেউ আহত হয়নি এবং জাহাজটি তার যাত্রা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। নৌবাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, ভিডিওতে একটি ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং ‘প্রতিক্রিয়া’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জেলেনস্কি তার সন্ধ্যার ভাষণে বলেন, ‘এটি খাদ্য নিরাপত্তার ওপর আঘাত, ‘যেসব জাহাজের যুদ্ধের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, সেগুলোতে হামলা করা রাশিয়ার দ্বারা সমগ্র বিশ্বের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তিনি বলেন, প্রতিক্রিয়া অবশ্যই হবে।’ শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বন্দর ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর পর এটি তুর্কি জাহাজে দ্বিতীয় হামলার ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার উত্তর-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। অপরাধী এখনও পলাতক রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৮টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গঠিত গ্রুপ আইভি লীগ স্কুল এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক জরুরি সতর্ক বার্তায় বলেছে, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা একাধিক গুলিবিদ্ধ ব্যক্তির খবর জানতে পেরেছি, তবে এই মুহূর্তে আমরা তাদের অবস্থা প্রকাশ করতে পারছি না।’ বার্তায় আরও বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সন্দেহভাজন ব্যক্তির সন্ধানে তাদের তল্লাশী অব্যাহত রেখেছে। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪ টা ২২ মিনিটে একটি জরুরি বার্তা জারি করে। তারা জানায়, বারুস ও হলি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের কাছে সক্রিয় বন্দুকধারী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দরজা বন্ধ, ফোন সাইলেন্ট ও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে থাকতে বলা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন যে তাকে গুলি চালানোর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এফবিআই ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা শুধু নিহত ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি।’ বোস্টনের কাছে রোড আইল্যান্ডের প্রভিডেন্সে অবস্থিত এই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউপিআরআই জানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রাথমিক উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেছে।
বার্লিনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বলেছেন, যুদ্ধ অবসানে তিনি ‘সংলাপের’ জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। কিয়েভ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সংশোধনী নিয়ে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে তিনি কোনো জবাব পাননি। তবে তিনি বলেন, আমি সব সংকেত গ্রহণ করছি এবং আজ যে সংলাপ শুরু হবে, এর জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি আরো বলেন, বার্লিনের এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মার্কিনিদের সঙ্গে এবং ইউরোপীয়দের সঙ্গে বৈঠক করছি এবং আজ ও আগামীকাল এই বৈঠকগুলো বার্লিনে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়ার পর গতকাল শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। ট্রাম্প বলেন, মেক্সিকোর কাছে আমেরিকার ৮ লাখ একর-ফুট পানি পাওনা রয়েছে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এর এক-চতুর্থাংশ পানি ছাড়ার দাবিও জানিয়েছেন মার্কিন রিপাবলিকান এই নেতা। পানি না দিলে নতুন করে পাঁচ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান তিনি। রিপাবলিকান নেতা মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ১৯৪৪ সালের একটি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। যার অধীনে আমেরিকা কলোরাডো নদীর পানি ভাগ করে নেয় রিও গ্র্যান্ডের পানির বিনিময়ে, যা দুই দেশের সীমান্তে অবস্থিত। মার্কিন কৃষি বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো আমেরিকান কৃষক এবং পশুপালকদের বর্তমান পানির বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।’ এতে বলা হয়েছে যে চুক্তিতে বর্তমান পানিচক্র এবং পূর্ববর্তী পানিচক্রের ঘাটতি উভয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দুই দেশ জানুয়ারির শেষের দিকে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তিটি বর্তমানে বিদ্যমান থাকায় আগামী সপ্তাহ থেকে মেক্সিকো ২০২,০০০ একর-ফুট পানি ছেড়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির উদ্ধার কর্মীরা শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপে টানা ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এই দুর্যোগ দেখা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩ জন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি ২১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে অব্যাহত বৃষ্টি ও দুর্গম পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাশিয়া শনিবার জানিয়েছে, তারা রাতভর ইউক্রেনের শিল্প ও জ্বালানি স্থাপনায় হাইপারসনিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে। মস্কোর দাবি, এটি ইউক্রেনের ‘রাশিয়ার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার’ প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে। মস্কো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের সেনা ও জ্বালানি স্থাপনায় ‘বৃহৎ আক্রমণ’ চালিয়েছে। এতে কিনঝাল হাইপারসনিক মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, এটি ইউক্রেনের ‘রাশিয়ার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সন্ত্রাসী হামলার’ জবাব।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান আজ শনিবার সতর্ক করে বলেছেন, কৃষ্ণসাগর যেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ‘সংঘাতের এলাকা’তে পরিণত না হয়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিক হামলার পর তিনি এ সতর্কবার্তা দিলেন। ইস্তাম্বুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ কৃষ্ণসাগরকে সংঘাতের এলাকা হিসেবে দেখা উচিত নয়। এটি রাশিয়া বা ইউক্রেনের কারও জন্যই লাভজনক হবে না। কৃষ্ণসাগরে সবার নিরাপদ নৌযাত্রা প্রয়োজন।” গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাশিয়ার একটি বিমান হামলায় ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল ওডেসার একটি বন্দরে তুরস্কের মালিকানাধীন একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুর্কমেনিস্তানে একটি শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে এরদোয়ান ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি উত্থাপন করার কয়েক ঘণ্টা পরই এ হামলার ঘটনা ঘটে। এরদোয়ানের দপ্তরের বরাতে জানানো হয়, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বন্দর ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলার বিষয়ে একটি সীমিত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। এরদোয়ান জানান, পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনার মূল বিষয় ছিল যুদ্ধ ও শান্তি প্রচেষ্টা। তিনি আরো বলেন, এই বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান কী, অন্য সব পক্ষের মতো পুতিনও তা খুব ভালোভাবেই জানেন। এরদোয়ান বলেন, পুতিনের সঙ্গে এই বৈঠকের পর আমরা আশা করছি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্পের সঙ্গেও শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাব। এরদোয়ান বলেন, শান্তি খুব দূরে নয়, আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। যুদ্ধকালীন মস্কো ও কিয়েভ-উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা তুরস্ক বসফরাস প্রণালি নিয়ন্ত্রণ করে, যা ইউক্রেনীয় শস্য ও রুশ তেল ভূমধ্যসাগরে পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। গত কয়েক সপ্তাহে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি তেলবাহী জাহাজও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, যার কিছু ছিল ড্রোন হামলা, এর দায় স্বীকার করেছে কিয়েভ। এসব হামলার পর আঙ্কারা তীব্র সমালোচনা করে এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে।
ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে ইরান। তেলবাহী জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার ১৮ নাবিক রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, ‘ছয় মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহনকারী একটি তেলবাহী জাহাজ ওমান উপকূলে আটক করা হয়েছে।’ হরমোজগান প্রদেশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি আরও জানায়, এ সময় জাহাজটি তার সব নেভিগেশন সিস্টেম বন্ধ করে রেখেছিল। ইরানি কর্তৃপক্ষ প্রায়ই উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানি পাচারের অভিযোগে জাহাজ আটক করার ঘোষণা দিয়ে থাকে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। বিশ্বের মধ্যে ইরানে খুচরা জ্বালানির দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায়, প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাচার অত্যন্ত লাভজনক বলে মনে করা হয়। গত মাসেও গালফ অঞ্চলের পানিতে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে ইরান। সে সময় ওই জাহাজের বিরুদ্ধে ‘অননুমোদিত পণ্য পরিবহনের’ অভিযোগ আনা হলেও, ইরানের ওই পদক্ষেপটি কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ বলে অভিযোগ ওঠে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নাকচ করে দেয় তেহরান। সর্বশেষ এই জাহাজ জব্দের ঘটনা ঘটল এমন এক সময়, যখন এর মাত্র দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার উপকূলে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে। ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী, ওই জাহাজটির ক্যাপ্টেন ভেনিজুয়েলা ও ইরান থেকে তেল পরিবহন করছিলেন। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে, ২০২২ সালে ভেনিজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতের রাজধানী দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ আবারও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে শহরজুড়ে ঘন ধোঁয়াশা দেখা যায়, যার ফলে বহু এলাকায় দৃশ্যমানতা বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (সিপিসিবি) তথ্যমতে, সকাল ৮টায় দিল্লির গড় বায়ুমান সূচক (একিউআই) ছিল ৩৯০, যা ‘অতি খারাপ’ হিসেবে বিবেচিত। কিছু এলাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ—নন্দর বিহার, ঘাজিপুর, জাহাঙ্গিরপুরি ও রোহিনীতে একিউআই ৪৩০–৪৪০ ছাড়িয়েছে, যা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ পর্যায়। ভোরের দিকে ধোঁয়া ও হালকা কুয়াশা মিলে দৃশ্যমানতা আরও কমে যায়। সিপিসিবির মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই ৩০০ ছাড়ালেই স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ‘অতি খারাপ’ বাতাসে দীর্ঘ সময় থাকলে সুস্থ মানুষেরও শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যসমস্যা হতে পারে। তবে আপাতত দিল্লি বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্বাভাবিক রয়েছে, যদিও যাত্রীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শীতকালে দিল্লিতে এমন দূষণ নতুন নয়। আগের দিন শুক্রবারও একিউআই ছিল ৩৮৬। সামান্য উন্নতির আভাস মিললেও রাজধানীর বড় অংশ এখনো ঘন ও বিষাক্ত ধোঁয়ার কবলে রয়েছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, যেখানে দলগুলো একে অপরকে দায়ী করছে শহরের স্বাস্থ্যের অবনতির জন্য।
যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের সরকারের ‘চরম ও গোপন’ ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয়সহ দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম বংশোদ্ভূত লাখো মানুষ গুরুতর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন—এমন সতর্কতা দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভের এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আইনি ক্ষমতায় প্রায় ৯০ লাখ মানুষ, অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। বিশেষ করে যাদের দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান আইনে সরকার মনে করলে কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে—যদি তাকে অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য মনে করা হয়। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বসবাস না করলেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব। অধিকারকর্মীদের মতে, এই ব্যবস্থা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পদ্ধতিগত হুমকিতে পরিণত হয়েছে এবং এতে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে এক ধরনের বর্ণভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া বলেন, ভবিষ্যতে কর্তৃত্ববাদী সরকার এলে এই ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা আরও বাড়বে। রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম বলেন, নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু একের পর এক সরকার দ্বিস্তরের নীতি চালু করে বিপজ্জনক নজির তৈরি করছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে, যেখানে শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এই হার অনেক কম। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা। তথ্যসূত্র : মিডল ইস্ট আই
ট্রিপল-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ পরীক্ষায় তারা আশাব্যঞ্জক ফলও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি একটি কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল শুক্রবার এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে সান অ্যান্টোনিও ব্রেস্ট ক্যানসার সিম্পোজিয়ামে ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ সংক্রান্ত ফল উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনার ৩৬ বছর বয়সী চেইস জনসন ২০২১ সালে আক্রমণাত্মক ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পর তিনি রোগমুক্ত হলেও পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি বেশি থাকায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ নেন। ট্রিপল-নেগেটিভ ক্যানসারের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ রোগীর ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। ভ্যাকসিনটি ল্যাক্টালবুমিন নামের একটি প্রোটিনকে লক্ষ্য করে, যা প্রায় ৭০ শতাংশ ট্রিপল-নেগেটিভ স্তন টিউমারে পাওয়া যায়। গবেষকদের লক্ষ্য হলো—ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে কার্যকর করা, যাতে টি-সেল এই প্রোটিনযুক্ত ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে। প্রথম ধাপে ট্রায়ালে তিনটি গ্রুপে ৩৫ জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশের দেহে ভ্যাকসিনটি ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যদিও এই প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে ক্যানসার প্রতিরোধ বা পুনরাবৃত্তি কমাতে কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো জানা যায়নি। এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, পরীক্ষায় কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, শুধু ইনজেকশনের জায়গায় সামান্য লালচেভাব বা গুটির মতো সমস্যা ছিল। গবেষক ড. জি থমাস বাড জানান, আগামী বছর দ্বিতীয় ধাপে ট্রায়াল শুরু হবে, যেখানে প্রথমবারের মতো দেখা হবে ভ্যাকসিনটি সত্যিই পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি কমাতে পারে কি না। সফল হলে ভবিষ্যতে উচ্চ জেনেটিক ঝুঁকিতে থাকা নারীদের জন্য প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিন হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে ভয়াবহভাবে মেরু ভালুকের বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে এরই মধ্যেই এক নতুন গবেষণা সবাইকে আশার আলো দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এমন কিছু জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন যা এই প্রাণীগুলিকে উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এই প্রথম কোনো বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর ডিএনএ-তে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ খুঁজে পাওয়া গেল। ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়ার গবেষকরা দেখেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব গ্রিনল্যান্ডের মেরু ভালুকদের মধ্যে তাপ চাপ, বার্ধক্য এবং মেটাবলিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু জিন ভিন্নভাবে কাজ করছে। এই অঞ্চলের পরিবেশ উত্তর গ্রিনল্যান্ডের চেয়ে উষ্ণ এবং কম বরফযুক্ত। গবেষকরা ভালুকের রক্ত নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেন, দক্ষিণ-পূর্বের ভাল্লুকদের ডিএনএ-তে জাম্পিং জিন বা মোবাইল জিনোম খণ্ডগুলির কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এই জাম্পিং জিনগুলি অন্যান্য জিনের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রধান গবেষক ড. অ্যালিস গডেন বলেন, এই ভালুকগুলি সম্ভবত দ্রুত গলে যাওয়া সামুদ্রিক বরফের বিরুদ্ধে বাঁচার জন্য তাদের ডিএনএ দ্রুত পুনবিন্যাস করছে। অন্যদিকে, এ ভালুকদের খাদ্যাভ্যাসও বদলেছে— তারা কম চর্বিযুক্ত উদ্ভিদজাত খাবার খাচ্ছে, আর তাদের ডিএনএ-তে চর্বি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা খাদ্যের অভাবের সময়ে তাদের বাঁচতে সাহায্য করছে। আর এই পরিবর্তনগুলোই মেরু ভালুকের বেঁচে থাকার আশা জাগায়। তবে গবেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই পরিবর্তনগুলি তাদের বিলুপ্তির ঝুঁকিকে পুরোপুরি কমাচ্ছে না। সুতরাং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।
বুলগেরিয়ায় সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বুধবার সন্ধ্যায় (১০ ডিসেম্বর) দেশটিতে দুর্নীতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয় সাধারণ মানুষ। খবর রয়টার্সের। বেশ কিছুদিন ধরেই দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। রাজধানী সোফিয়া এবং কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী দেশটির আরও কয়েক ডজন শহরে সর্বশেষ বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এমন এক সময় দেশটিতে এই বিক্ষোভ-সমাবেশ হচ্ছে যখন আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বুলগেরিয়া ইউরোকে তাদের সরকারি মুদ্রা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা লেজার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সোফিয়ায় অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনে ‘পদত্যাগ’, মাফিয়া আউট এবং সুষ্ঠু নির্বাচনসহ বিভিন্ন শব্দ প্রদর্শন করেছে। সোফিয়ার বাসিন্দা ৬৪ বছর বয়সী ডোবরি লাকভ বলেন, আমি মনে করি জনগণের শক্তি ধীরে ধীরে তাদের (সরকারকে) পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে কারণ অনেক সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রথমত বিচার বিভাগীয় সংস্কার প্রয়োজন। যদি বিচার ব্যবস্থা ঠিক করা হয়, তাহলে বাকি সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে, একেবারে সবকিছুই। বুলগেরিয়ার সংসদ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী রোজেন ঝেলিয়াজকভের সরকারের ওপর অনাস্থা ভোটের আয়োজন করবে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর ষষ্ঠবারের মতো অনাস্থা ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে সরকার ২০২৬ সালের বাজেট পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নেয়। বিরোধী দল এবং অন্যান্য সংগঠন জানিয়েছে যে, তারা উচ্চতর রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের অর্থায়নের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অবদান এবং লভ্যাংশের ওপর কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। বাজেট পরিকল্পনার বিষয়ে সরকার পিছু হটার পরেও গত চার বছরে সাতটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দেশটিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের মধ্যে ২০২৪ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইটি বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলিন বাহচেভানোভ বলেন, অবশেষে বুলগেরিয়ায় স্বাভাবিকতা ফিরে আসার এবং আমাদের অভিজাততন্ত্র, মাফিয়া এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী শক্তি থেকে নিজেদের মুক্ত করার সময় এসেছে। এদিকে বুধবার বুলগেরিয়ান সংবাদ সংস্থা বিটিএ জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন জিইআরবি দলের নেতা বয়কো বরিসভ বলেছেন, ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদাররা ১ জানুয়ারি বুলগেরিয়া ইউরো জোনে যোগদানের আগে পদত্যাগ না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে বুধবারের বিক্ষোভের আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম সংস্কারবাদী বিরোধী দল ‘উই কন্টিনিউ দ্য চেঞ্জ’-এর অ্যাসেন ভ্যাসিলেভ বলেন, সরকার পদত্যাগ করলেও আমরা ইউরো জোনে প্রবেশ করবো।
আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় মাত্র এক সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে বিরোধীরা দাবি করেছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুক্ত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গত ২৯ অক্টোবর দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান বিজয়ী হয়েছেন। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগের পাশাপাশি সমালোচকদের হত্যা ও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। দেশজুড়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ভয়াবহ দাঙার সৃষ্টি হয়। দেশটির বিরোধী দল চাদেমার উপ-চেয়ারম্যান জন হেচে সাংবাদিকদের বলেছেন, মাত্র এক সপ্তাহে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব সহিংসতায় রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত এবং এটিকে ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। এর আগে, তানজানিয়ার এই বিরোধী দল নির্বাচনী সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছিল। যদিও দেশটির সরকার নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হেচে বলেছেন, এই অপরাধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সহিংসতার কারণে লোকজনের দেশত্যাগের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ ও জোরপূর্বক গুমের ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন হেচে। নির্বাচনী সহিংসতার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সদস্য ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও নির্বিচার আটকের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেছে দেশটির বিরোধীদল চাদেমা। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে দলটি। নির্বাচনের দীর্ঘদিন পরও সরকার বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করছে বলে অভিযোগ করেছে চাদেমা। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিরোধীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা ছিল। ওই সময় দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট হাসান এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সঠিক হিসেবে দাবি করে বলেন, সরকার উৎখাতের প্রচেষ্টা ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় তিনি একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। তবে বিরোধীদের দাবি, কমিশনে কেবল সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই রয়েছেন। তারা স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সূত্র: এএফপি।
২০২৬ সালের হজের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদ আল হারাম এবং মসজিদ আন নববীর ভেতরে ছবি তোলার ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ মিথ্যা। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বা কোনো সরকারি সংস্থার কোনো সূত্র এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়নি। যানজট কমাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অভিযোগে যে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা যাচাই না করা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। পোস্টগুলোতে ভুলভাবে বলা হয়েছে, হজের মৌসুমে মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ছবি তোলা এবং ভিডিও তোলা নিষিদ্ধ থাকবে। সরকারি চ্যানেলগুলো (দ্য ইসলামিক ইনফরমেশনসহ) নিশ্চিত করে যে, দুই পবিত্র মসজিদে ছবি তোলার ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিধিনিষেধ চালু করা হয়নি। তবে বিদ্যমান অন্যান্য নির্দেশিকা বহাল রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শ্রদ্ধাশীল আচরণকে উৎসাহিত করা, ইবাদতকারীদের বিঘ্নিত করে এমন সব কাজ নিষিদ্ধ এবং হজের সময় ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলার আবশ্যিকতা। এসব হজ এবং রমজানসহ সব ঋতুতে কার্যকর থাকবে। কর্তৃপক্ষ লক্ষ করেছে, এই ধরনের মিথ্যা দাবি মাঝে মাঝে অনলাইনে প্রকাশিত হয়। প্রায়ই তা হজের সময়কালে জনপ্রিয়তা পায়। সচেতনদের সব ধরনের গুজব থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক-উ অঞ্চলে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সহায়তা কর্মী ওয়াই হুন অং এ তথ্য জানিয়েছেন। হামলাটি বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঘটেছে। এদিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ছিল। হামলায় আহত ও নিহতদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাধারণ মানুষ ও কর্মীরা রয়েছেন। হাসপাতালে কমপক্ষে ২০টি মৃতদেহও দেখা গেছে। এই বিমান হামলা সামরিক শাসনের অধীনে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে সংঘটিত হলো। মিয়ানমারে সামরিক অভিযান ও বিমান হামলার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। গত অক্টোবরেও সাগাইং অঞ্চলে ধর্মীয় উৎসবে বিমান বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হন এবং ৪৫ জন আহত হন। জাতিসংঘ এ ধরনের অবিচ্ছিন্ন হামলাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে। সকলপক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সাগাইং অঞ্চল সবচেয়ে বেশি বিমান হামলার শিকার হয়েছে। চলতি বছরে শুধু ২৮ মার্চ এই অঞ্চলে ১০৮টির বেশি বিমান হামলায় অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
সৌদি আরবের বেশিরভাগ অঞ্চলে ঝোড়ো হাওয়া ও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর (এনসিএম) সতর্ক করেছে, আবহাওয়া যদি দ্রুত উন্নতি না হয়, তাহলে অনেক এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, মক্কা, মদিনা, কাসিম, রিয়াদ, পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং উত্তর সীমান্ত এলাকায় বিপুল বর্ষণ ও ঝড় হচ্ছে। এ ছাড়া হাইল, তাবুক, আল জৌফ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে মাঝারি বর্ষণ ও কুয়াশার সঙ্গে ঝোড়ো আবহাওয়া চলছে। এনসিএম জানিয়েছে, এই পরিস্থিতির মূল কারণ লোহিত সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ। সাগর থেকে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ৪০ কিলোমিটার, এবং ঝোড়ো অবস্থায় এটি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পারস্য উপসাগর থেকেও দক্ষিণাঞ্চলে ১০-৩৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মরুভূমির দেশ সৌদি আরবে এমন ঝড়-বৃষ্টি বিরল হলেও, গত কয়েক বছরে কয়েকবার ভারী বর্ষণ হয়েছে। জনগণকে নিরাপদ জায়গায় থাকার এবং আবহাওয়া সতর্কবার্তা মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সূত্র: গালফ নিউজ
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।