ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে ‘সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ’। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশ শুরুর আগেই শহীদ মিনার এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পর থেকেই মঞ্চ প্রস্তুত, চেয়ার সাজানো ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। ধীরে ধীরে শহীদ মিনার চত্বর রূপ নেয় এক প্রতিবাদী জমায়েতে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা একের পর এক প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর করে তোলেন এলাকা। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, অন্যায়ের মুখে কথা বলব’, ‘এক হাদি রক্ত দেবে, লক্ষ হাদির জন্ম নেবে’—এমন স্লোগানের পাশাপাশি ‘নারায়ে তাকবির—আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিত হতে থাকে। হামলার ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চে গান ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। এসব পরিবেশনায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা হয়। বক্তারা গান ও কবিতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার আহ্বান জানান। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। তারা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি তোলেন। আয়োজকদের বক্তব্যে বলা হয়, এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদী অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বলেন, রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তা কখনোই সহিংসতায় রূপ নিতে পারে না। শান্তিপূর্ণভাবে চলমান এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী কণ্ঠে ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসানের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি অভ্যুত্থান-অনুপ্রাণিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি এবং সেই লক্ষ্য সামনে রেখে নিয়মিত গণসংযোগ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোড এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা দুই আততায়ী চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘ্ন দেশে প্রত্যাবর্তন এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা এই তিনটি বিষয়ই বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি ও কর্মকৌশলের মূল কেন্দ্রবিন্দু। এসব ইস্যু ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ও সক্রিয় সময় পার করছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি সাংগঠনিক শক্তি সুসংহত করা, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো ছয় দিনের টানা কর্মশালা সম্পন্ন করেছে। সেখানে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার মধ্য থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বিষয়গুলো সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং ভবিষ্যতে সরকার গঠন করলে সেগুলো কীভাবে কার্যকর করা হবে—সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। একদিকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ, অন্যদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণায় দলের ভেতরে নতুন উদ্দীপনা ও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ নির্বাসন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন বিএনপির জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, ওই দিন তারেক রহমানকে এমনভাবে বরণ করে নিতে, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার বক্তব্যে উঠে আসে, যখন দলের চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন, ঠিক সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর বিএনপির জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করছে। নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি দলীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতিতে নতুন গতি সঞ্চার করবে। বিএনপির আরেকটি বড় উদ্বেগের জায়গা হলো দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন এবং বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত তার চিকিৎসা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে এক ধরনের রাজনৈতিক সংহতি ও আবেগী ঐক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। তার আরোগ্য কামনায় দেশ-বিদেশে দোয়া মাহফিল, বিশেষ ইবাদত ও বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। এটি দলীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লড়াই’ হিসেবে দেখছে। দলটি ইতোমধ্যে দেশের অধিকাংশ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক মহলের ইতিবাচক মনোভাবকে সামনে রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, এবারের নির্বাচন বিজয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। সাধারণ ভোটার, বিশেষ করে নতুন ভোটার ও তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ও জনকল্যাণমুখী নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার কাজ চলছে, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবার জন্য সমান সুযোগের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। তবে নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কিছুটা টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে। শরিকদের ক্ষোভ ও মতপার্থক্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। দলীয় সূত্রগুলোর প্রত্যাশা, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি সন্তোষজনক সমঝোতা হবে এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক জোট গড়ে উঠবে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ঐতিহ্য, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সৃষ্ট নতুন সাংগঠনিক শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশাকে একত্রিত করতে পারলে বিএনপি আগামী দিনে একটি কার্যকর ও শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। বর্তমান এই ত্রিমুখী ব্যস্ততা প্রমাণ করে, বিএনপি এখন আর কেবল একটি প্রতিবাদী দল নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, ক্ষমতাপ্রত্যাশী এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রস্তুত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বখ্যাত গায়িকা ও উদ্যোক্তা লা টোয়া জ্যাকসন বিলাসবহুল ফ্যাশন জগতে নতুন ব্র্যান্ড ‘লা টয়া জ্যাকসন বিলাসবহুল ফ্যাশন অ্যান্ড লাইফস্টাইল’ চালু করেছেন। এমব্রেস ইউর ইউনিকনেস’ দর্শনকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা এই ব্র্যান্ডে আধুনিক বিলাসিতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয় তুলে ধরা হয়েছে। ব্র্যান্ডটির বৈশ্বিক পরিচালনা ও কৌশলগত নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহ–প্রতিষ্ঠাতা ড. কামরুল আহসান ও তান শ্রী সায়েদ ইউসুফ সায়েদ নাসির (জোজো)। তাদের নেতৃত্বে ব্র্যান্ডটি দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি পাচ্ছে। পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের বড় বোন লা টোয়া জ্যাকসন তার পারিবারিক শিল্প–ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত স্টাইলকে ফ্যাশনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কারুশিল্প ও এশীয় নকশার প্রভাব নিয়ে তৈরি সংগ্রহগুলোতে রয়েছে পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, সানগ্লাস, সুগন্ধি ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সামগ্রী। ড. কামরুল আহসানের তত্ত্বাবধানে ইউরোপ ও এশিয়ার শীর্ষ নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে প্রতিটি পণ্যে উচ্চমান ও আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে। পাশাপাশি টেকসই ও নৈতিক উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার এবং স্থানীয় কারিগরদের সহায়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাশন বিক্রির পাশাপাশি ব্র্যান্ডটির লক্ষ্য ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও স্বকীয়তাকে তুলে ধরা। ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে সম্প্রসারণ, ফ্ল্যাগশিপ স্টোর চালু এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব ও সেলিব্রেটি সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে। লা টোয়া জ্যাকসন ও তার টিমের বিশ্বাস, আসল বিলাসিতা লুকিয়ে আছে ঐতিহ্য ও নিজস্বতায়।
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম শান্ত। তাঁর রোল নম্বর ২৪১৩৬৭১। তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং ৯১ দশমিক ২৫ নম্বর অর্জন করেন। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলেন মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন, যা মোট আবেদনকারীর ৯৮ দশমিক ২১ শতাংশ। অনুপস্থিত ছিলেন ২ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী (১ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন ২ জন। চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮১ হাজার ৬৪২ জন পরীক্ষার্থী, যা মোট অংশগ্রহণকারীর ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন (৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ) এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন (৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ)। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে ভর্তি হতে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা–২০২৬ অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ফলাফল দেখার নিয়ম ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘MBBS Result 2025–2026’ লিংকে ক্লিক করে নিজের ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর প্রদান করতে পারবেন। এরপর ‘Result’ বাটনে ক্লিক করলে ফলাফল দেখা যাবে। ফলাফল ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মেধাতালিকা পিডিএফ আকারেও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সারা দেশে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল-ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পাসের হার ৬৬.৫৭ শতাংশ। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত দেশের ১৭টি কেন্দ্র ও ৪৯টি ভেন্যুতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লিখিত শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ৫৬৪৫ টি; যার মধ্যে এমবিবিএস ৫১০০ এবং বিডিএস ৫৪৫। বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ৭৩৬১ টি; যার মধ্যে এমবিসিএস ৬০০১ এবং বিডিএস ১৩৬০। এমবিবিএস কোর্সে ১১১০১টি এবং বিডিএস কোর্স ১৯০৫টি, অর্থাৎ সর্বমোট ১৩০০৬টি আসনের বিপরীতে এ বছর মোট আবেদনকারী ১ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ জন। তাদের মধ্যে ৪৯ হাজার ২৮ জন আবেদনকারী ছেলে এবং ৭৩ হাজার ৬০৪ জন মেয়ে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ থেকে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে অর্জিত স্কোরের ভিত্তিতে মেধা ও পছন্দক্রম অনুযায়ী ৫৬৪৫ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় বসেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ জন (৯৮.২১ শতাংশ), অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ১৯২ (১.৭৯ শতাংশ) জন, বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২। ভর্তি পরীক্ষায় মোট পাস করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১ হাজার ৬৪২ (৬৬.৫৭ শতাংশ) জন, যাদের মধ্যে পুরুষ পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ১২৮ জন (৩৮.১৩ শতাংশ) এবং নারী পরীক্ষার্থী ৫০ হাজার ৫১৪ জন (৬১.৮৭ শতাংশ)। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ৮টি মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটসমূহের ৫ হাজার ৬৪৫টি আসনের মধ্যে নির্বাচিত নারী পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ৬০৩ জন (৬৩.৮০ শতাংশ) এবং পুরুষ পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৪২ জন (৩৬.২০ শতাংশ)। ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর ৯১.২৫। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটসমূহে আগ্রহী প্রার্থীদের অনলাইন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল প্রণীত এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৬ অনুযায়ী পরবর্তীতে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ফল দেখবেন যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে ‘MBBS Result 2025-2026’ লিংকে ক্লিক করে ভর্তি পরীক্ষার রোল নম্বর দিতে হবে। এরপর ‘Result’ বাটনে ক্লিক করলেই ফলাফল দেখা যাবে। ভর্তিচ্ছুরা এটি ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নিতে পারবেন। মেধাতালিকা ওয়েবসাইটে পিডিএফ আকারেও প্রকাশ করা হয়েছে।
লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরলে তারেক রহমানকে এমন সংবর্ধনা জানানো হবে, যা অতীতে কখনো কোনো নেতা পাননি এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় ১৮ বছর পর তারেক রহমানের নির্বাসিত জীবনের অবসান প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি দলের এই প্রস্তুতির কথা জানান। বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে গণতন্ত্র রক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। মির্জা ফখরুল বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায় করি আমাদের নেতা দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসনে থাকার পর ইনশাআল্লাহ আগামী ২৫ ডিসেম্বর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণার বিষয়। তিনি আরও বলেন, আসুন, আমরা ২৫ ডিসেম্বর তাকে এমন এক সংবর্ধনা জানাই, যা অতীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নেতা পাননি। আমরা সবাই সেই প্রস্তুতি নিয়েছি, ইনশাআল্লাহ। তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সংবাদ আমাদের জন্য একদিকে স্বস্তি, অন্যদিকে আবেগের। একদিকে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন, অন্যদিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে যিনি আমাদের পথ দেখাচ্ছেন, যিনি আমাদের আশার আলো সেই নেতা আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসছেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নুল আবেদিন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের অবসরপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, এম এ হালিম, এম এ হাকিম খান এবং জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সদস্য সচিব কেএম কামরুজ্জামান নান্নু।
এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হবে। বিষয়টি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। তিনি গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ মাধ্যমকে এই তথ্যটি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বুয়েট ও ঢাবির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সমন্বয়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফল তৈরির কাজ চলছে। অনেক খাতা দেখার কাজ করতে হচ্ছে। আগামীকাল রোববার দুপুরের পর ফল প্রকাশ করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।’ তবে এই ফলাফল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে দেওয়া হবে না। গেল বারও অবশ্য এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে ফলাফল জানা যাবে? ডা. নাজমুল বলেন, ‘গতবারও এভাবে হয়নি, এবারও না। যার যার ফল চলে যাবে। রেজাল্টের ওপর একটি সামারি দেওয়া হবে।’ অনলাইনে যেভাবে মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল দেখা যাবেস্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজে আপনি আপনার MBBS ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখতে পারবেন। ধাপ ১: প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (Directorate General of Health Services - DGHS) ভিজিট করুন।ধাপ ২: ওয়েবসাইটে ‘MBBS Result 2025-2026’ লিংকে ক্লিক করুন।ধাপ ৩: নির্ধারিত স্থানে আপনার অ্যাডমিশন রোল নম্বর (Admission Roll Number) দিন।ধাপ ৪: ‘Result’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার ফলাফল স্ক্রিনে দেখা যাবে।ধাপ ৫: সেখান থেকে আপনি আপনার ফলাফল ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নিতে পারবেন।
হিমালয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা হিম বাতাসের প্রভাবে সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ওঠানামা করছে। ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা থাকলেও এখনো ঘন কুয়াশার তেমন দেখা মেলেনি। সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আকাশে ঝলমলে রোদ উঠলেও শীতের দাপট কমছে না। এ অবস্থায় সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানার সই করা ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। একই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার একটি বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়ও সারা দেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসেও একই ধরনের আবহাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ দিনও ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে এবং রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক আবহাওয়া থাকতে পারে। ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক আবহাওয়া থাকতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ দিন রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনে দেশের আবহাওয়ায় তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
২০২১ সালে বাংলাদেশের চিকিৎসা ইতিহাসে একটি বিরল ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে। ২৬ বছর বয়সী এক বিবাহিত নারী দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ, মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা এবং মাঝে মাঝে বুক ধড়ফরজনিত উপসর্গে ভুগছিলেন। এসব সমস্যা নিয়ে তিনি একজন অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হন। প্রাথমিক চিকিৎসায় তার মানসিক উপসর্গগুলো অনেকটাই কমে আসে। তবে চিকিৎসাকালেই ওই নারী জানান, শ্বাস নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে বুকে চাপ–চাপ অনুভূতি বা অস্বস্তি হয়। আশ্চর্যের বিষয়, তার হাঁপানি, অ্যালার্জি কিংবা ফুসফুসের প্রদাহজনিত কোনো রোগের ইতিহাস ছিল না। পারিবারিকভাবেও এ ধরনের রোগের কোনো নজির পাওয়া যায়নি। উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতামূলকভাবে চিকিৎসক একটি চেস্ট এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর চিকিৎসকরাও বিস্মিত হন। রিপোর্টে দেখা যায়, তার ফুসফুসে অসংখ্য ক্ষুদ্র পাথরের মতো কণা জমে আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিরল রোগটির নাম পালমোনারি এলভিওলার মাইক্রোলিথিয়াসিস (Pulmonary Alveolar Microlithiasis), সংক্ষেপে পিএএম। এ রোগে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের ভেতরে ক্যালসিয়াম ফসফেট জমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরসদৃশ গঠন তৈরি হয়। বিশ্বব্যাপী এ রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত কম। প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে মাত্র একজন এ রোগে আক্রান্ত হন। এখন পর্যন্ত বিশ্বে নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনাম এই ঘটনাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বিরল ও ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রায় চার বছর আগে তার চেম্বারেই এই বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীটি শনাক্ত হয়। ডা. এনাম জানান, পালমোনারি এলভিওলার মাইক্রোলিথিয়াসিস একটি জেনেটিক্যাল রোগ এবং অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন উপসর্গহীন থাকতে পারে। সাধারণত এটি যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ক্যানসারের মতো মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোগটি নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এমন বিরল রোগও সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব। তবে রোগটি বিরল এবং এখনও গবেষণাধীন হওয়ায় এর কোনো নিশ্চিত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে ফুসফুস প্রতিস্থাপনই বর্তমানে একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কমৃত্যু শব্দটি অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর। কারণ বাইরে থেকে দেখলে মনে হতে পারে, রোগী এখনো শ্বাস নিচ্ছেন, হৃদ্স্পন্দন চলছে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। এটি একই সঙ্গে একটি চিকিৎসাগত ও আইনগত পরিভাষা। ব্রেন ডেথ বলতে কী বোঝায় ব্রেন ডেথ ঘটে তখনই, যখন আঘাত বা রোগের কারণে মানুষের সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক এবং ব্রেনস্টেম স্থায়ীভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ব্রেনস্টেম শরীরের শ্বাসপ্রশ্বাস ও হৃদ্স্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। আর মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে দেখা, শোনা, স্পর্শ অনুভব করা এবং নড়াচড়ার মতো মৌলিক ক্ষমতাগুলো। এই সব কাজ বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসা ও আইনের দৃষ্টিতে সেই ব্যক্তি মৃত হিসেবে গণ্য হন। তাই চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট ও কঠোর চিকিৎসা নির্দেশিকা অনুসরণ করেই ব্রেন ডেথ নির্ণয় করেন। ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার আগে সম্ভাব্য সব বিকল্প কারণ বাতিল করা হয় এবং একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ব্রেন ডেথ কি খুব সাধারণ ঘটনা? না। ব্রেন ডেথ খুবই বিরল। এক গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের হাসপাতালে মৃত্যুর মোট ঘটনার মাত্র ২ শতাংশ ব্রেন ডেথের কারণে ঘটে। ব্রেন ডেথের প্রধান কারণ কী মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে রক্ত ও অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল। তাই যেকোনো গুরুতর আঘাত বা রোগ, যা মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তা ব্রেন ডেথের কারণ হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তক্ষরণ হলেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ১. গুরুতর মাথায় আঘাত (ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি) ২. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ) ৩. সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজ ৪. ইস্কেমিক স্ট্রোক ৫. হার্ট অ্যাটাক ৬. অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি (হাইপক্সিক ইস্কেমিক ব্রেন ইনজুরি) ৭. মেনিনজাইটিস বা এনসেফালাইটিসের মতো মস্তিষ্কের সংক্রমণ কীভাবে ব্রেন ডেথ নির্ণয় করা হয় ‘মেডিক্যাল ক্রাইটেরিয়া’ বলতে বোঝায়, ব্রেন ডেথ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের অনুসরণ করতে হওয়া নির্দিষ্ট ধাপগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে এ ক্ষেত্রে তিনটি চিকিৎসা সংস্থা একসঙ্গে নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। ১. পরীক্ষা শুরুর আগে চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতির মূল কারণ শনাক্ত ও চিকিৎসা করেন। ২. যেসব সমস্যা বা অবস্থা ব্রেন ডেথের মতো উপসর্গ তৈরি করতে পারে, সেগুলো বাতিল করেন। ৩. ব্রেন ডেথের অনুকরণ করতে পারে, এমন সব পরিস্থিতি বাদ দেন। এরপর প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরা একাধিক পরীক্ষা করেন। প্রাথমিক ফল নিশ্চিত করতে এসব পরীক্ষা একাধিকবারও করা হতে পারে। ব্রেন ডেথ সন্দেহ হলে রোগীর পরিবারের সদস্যদের আগে থেকেই জানানো হয় এবং প্রতিটি পরীক্ষার অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়। পরীক্ষার মধ্যে থাকে শারীরিক পরীক্ষা, ব্রেন এমআরআইয়ের মতো ইমেজিং টেস্ট, বিস্তৃত স্নায়বিক পরীক্ষা এবং অ্যাপনিয়া টেস্ট। স্নায়বিক পরীক্ষা কীভাবে করা হয় ব্রেন ডেথ হলে মানুষ শব্দ, আলো বা স্পর্শে স্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কোনো নড়াচড়া হলেও তা ইচ্ছাকৃত নয়। স্নায়বিক পরীক্ষার সময় চিকিৎসকেরা গলার পেছনে স্পর্শ করে গ্যাগ বা বমিভাবের প্রতিক্রিয়া দেখেন। তুলার সাহায্যে চোখে স্পর্শ করে পলক ফেলা বা চোখ বন্ধের প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করেন এবং আলো ফেলিয়ে চোখের মণির প্রতিক্রিয়া যাচাই করেন। অ্যাপনিয়া টেস্ট কী মারাত্মক মস্তিষ্ক আঘাতের ক্ষেত্রে রোগী নিজে শ্বাস নিতে পারেন না এবং ভেন্টিলেটরের ওপর নির্ভরশীল হন। অ্যাপনিয়া টেস্টে কিছুক্ষণের জন্য ভেন্টিলেটর বন্ধ রেখে দেখা হয়, রোগী নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেন কি না। যদি পরীক্ষায় ব্রেন ডেথ ধরা পড়ে এরপর কী হয় সব পরীক্ষার ফলাফল পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিতভাবে জানানো হয় এবং স্পষ্ট করে বলা হয়, ব্রেন ডেথ মানেই মৃত্যু। চিকিৎসকেরা জানেন, এ খবর গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন। তাই পরিবারকে সময় দেওয়া হয়, প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন-ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়া। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যরা ভেন্টিলেটর খুলে নেওয়ার আগে রোগীর পাশে কিছু সময় কাটানোর সুযোগও পান। কোমা আর ব্রেন ডেথের পার্থক্য কী কোমায় থাকা ব্যক্তি অচেতন থাকলেও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। যেমন- চোখে আলো ফেললে পলক ফেলা বা মাথা ঘোরানো। কোমা সব সময় স্থায়ী নয়; বেশিভাগ মানুষ দুই সপ্তাহের মধ্যেই কোমা থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ব্রেন ডেথে কোনো প্রতিক্রিয়াই থাকে না। এটি সম্পূর্ণ ও স্থায়ী অবস্থা। ব্রেন ডেথ হলে আর কখনোই চেতনা ফিরে আসে না। কেউ কি কখনো ব্রেন ডেথ থেকে সেরে উঠেছে? না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ব্রেন ডেথ থেকে কেউ কখনো সেরে ওঠে না। কঠোর নির্দেশিকা মেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। একবার ব্রেন ডেথ নিশ্চিত হলে সেই ব্যক্তি চিকিৎসাগতভাবে মৃত। ব্রেন ডেথ কি প্রতিরোধ করা সম্ভব? না। কারণ যেসব গুরুতর অসুস্থতা বা আঘাত ব্রেন ডেথের দিকে নিয়ে যায়, সেগুলো অনেক সময় প্রতিরোধের বাইরে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা পেলে ব্রেন ডেথ ঠেকানো যেতে পারে। তবে একবার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিলে, তা আর ফিরিয়ে আনার কোনো চিকিৎসা নেই। কঠিন বাস্তবতা সাধারণভাবে আমরা মৃত্যু বলতে বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, হৃদ্স্পন্দন থেমে যাওয়া। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভেন্টিলেটরের মতো যন্ত্র সাময়িকভাবে শ্বাস ও হৃদ্স্পন্দন চালু রাখতে পারে। এতে করে অনেক সময় বুঝে ওঠা কঠিন হয় যে ব্যক্তি দেখতে জীবিত, তিনি আসলে মৃত। চিকিৎসকেরা এই বাস্তবতা ভালোভাবেই বোঝেন। তাই ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার আগে তারা সব পরীক্ষানিরীক্ষা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এটিই প্রথম জরিমানার ঘটনা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই জরিমানা আরোপ করা হয়। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, সাতকানিয়া থেকে শুরু হওয়া একটি শোভাযাত্রায় কয়েকশ মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায় পৌঁছালে সেখানে কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ওই অংশটি অত্যন্ত ব্যস্ত হওয়ায় শোভাযাত্রার কারণে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, একই দিন অলি আহমদ বীর বিক্রম স্টেডিয়ামে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। জরিমানার পর বিকেল ৫টার দিকে নাজমুল মোস্তফা আমিন ওই দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেল ৩টার দিকে নাজমুল মোস্তফা আমিন সাতকানিয়া থেকে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িবহর নিয়ে লোহাগাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে শোভাযাত্রা করা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা–২০২৫-এর ৯ নম্বর ধারা লঙ্ঘনের শামিল। বিধান অনুযায়ী এ কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এই ঘোষণার মধ্যেই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে নিরাপত্তা ইস্যুটি নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না। তার ভাষায়, ১০ তারিখ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে, তার পরদিনই একজন সম্ভাব্য জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর ওপর হামলা চালানো হলো। হামলার ধরন দেখেই বোঝা যায়, এটি পেশাদার শ্যুটারের কাজ। তিনি আরও বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখবো এবং আরও সুদৃঢ় করবো। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকবে, নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা মতভেদ হবে কিন্তু এমন কোনো পর্যায়ে আমরা যাব না, যাতে ঐক্য বিনষ্ট হয়। দীর্ঘদিন পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও তার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন, সে জন্য সরকারের প্রতি আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছি। তিনি যোগ করেন, এ বিষয়টি আজকের বৈঠকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়নি, তবে এটি আমাদের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দলীয়ভাবেও আমরা চেষ্টা করবো এবং সরকারকেও আহ্বান জানাবো যেন তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, কোনো আশঙ্কাকেই আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সরকারের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব আছে, পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।” এ সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যৌথ বাহিনী, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “ইনশাআল্লাহ, এই ধরনের সহিংস ঘটনা আমরা বন্ধ করতে পারবো। সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “আমাদের চেতনা হচ্ছে জুলাই ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা। জনআকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাকে আমরা সর্বাগ্রে রাখবো। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে আমাদের কোনো আপস নেই। একই সঙ্গে তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদকে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই এ ধরনের হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে পানির ট্যাংকির সামনে রিকশায় যাত্রাকালে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত খুব কাছ থেকে গুলি করে শরীফ ওসমান হাদিকে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাদির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া গুলি হাদির মস্তিষ্কের কাণ্ড বা ব্রেন স্টেম পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’।” তিনি বলেন, “আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে কোনো নতুন ইন্টারভেনশন করা হবে না। তিনি আরও জানান, হাদি বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন এবং তাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা আপাতত তার সুস্থতা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।
কোলন ক্যানসার একসময় ছিল বয়স্কদের রোগ। বয়স পঞ্চাশ পার হলেই এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেত, চিকিৎসকরাও তাই মূলত বয়স্কদের ক্ষেত্রেই কোলন ক্যানসারের আশঙ্কার কথা বলতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিত্রটি দ্রুত বদলাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যেই বাড়ছে এ ক্যানসার। মাত্র ত্রিশ বা চল্লিশের কোঠায় পা দিতেই অনেক তরুণ এখন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন! গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের মধ্যে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৯৫০ সালের প্রজন্মের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে কোলন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ লাখ মানুষ, একই সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ লাখ ৩০ হাজার জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগামী দুই দশকে যদি জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন না আসে, তবে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছর নতুন করে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৩২ লাখে, আর মৃত্যু হতে পারে ১৬ লাখ মানুষের। তবে আশার খবর হলো, কিছু নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি কমিয়ে আনলে কোলন ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব। চলুন, জেনে নিই নিয়ন্ত্রণযোগ্য সেই ঝুঁকিগুলো— ১. অ্যালকোহল সেবন মদ্যপান অন্তত সাত ধরনের ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, এর মধ্যে কোলন ক্যানসারও রয়েছে। দীর্ঘদিন অ্যালকোহল খেলে ঝুঁকি ৩০ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে যে কোনো ধরনের অ্যালকোহল পান বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে। ২ . ধূমপান তামাক ব্যবহার বিশ্বব্যাপী ২৫ শতাংশ ক্যানসারজনিত মৃত্যুর জন্য দায়ী। দীর্ঘদিন ধূমপান করলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ও মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং ও সহায়তা নেওয়া এর সমাধান। ৩. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা অতিরিক্ত ওজন শুধু সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি ক্যানসারের অন্যতম বড় ঝুঁকি। স্থূলতা শরীরে প্রদাহ, কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং রক্তনালীর গঠনে প্রভাব ফেলে যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমানো। ৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস লাল মাংস (গরু, খাসি, শুকর ইত্যাদি) ও প্রক্রিয়াজাত মাংস (হটডগ, সসেজ ইত্যাদি) দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া উচ্চ তাপে ভাজা বা গ্রিল করা মাংসও ক্ষতিকর। অন্যদিকে শাকসবজি, ফল, আঁশযুক্ত শস্য বেশি খাওয়া এবং লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করাই এ সমস্যা সমাধান করতে পারে। ৫. অলস জীবনযাপন শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কোলন ক্যানসারের বড় কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এ ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যায়। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করা। হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সিঁড়ি ব্যবহার করাও কার্যকর। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
আজকের ব্যস্ত শহুরে জীবনে লিফট আর এসকেলেটর এতটাই হাতের কাছে যে, সিঁড়ি ব্যবহারের কথা অনেকেই ভাবেন না। অথচ প্রতিদিন কয়েক মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করাই হতে পারে সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর ব্যায়ামগুলোর একটি। নিয়মিত এই অভ্যাস শুধু কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যই উন্নত করে না, শরীরের পেশি গঠন, সহনশীলতা, এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণেও এনে দিতে পারে দারুণ পরিবর্তন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার কী কী উপকার রয়েছে, আর কারা এই ব্যায়ামটি বেশি সময় করা থেকে বিরত থাকবেন—চলুন জেনে নেওয়া যাক। ১. সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার শারীরিক উপকারিতা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা একটি ভারবহনকারী ব্যায়াম, যা পুরো শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। ক. হৃদযন্ত্র ও ক্যালোরি খরচ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য : সিঁড়ি বেয়ে ওঠা হৃদস্পন্দনকে দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা হার্টকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ক্যালোরি খরচ : দ্রুত হাঁটা বা জগিং করার চেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে প্রতি মিনিটে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়। এটি চর্বি কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। খ. পেশি গঠন ও হাড়ের স্বাস্থ্য পেশির কার্যকারিতা : সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় প্রধানত পা এবং নিতম্বের পেশিগুলো (কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিংস, গ্লুটস) সক্রিয় হয়। এটি এই পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। হাড়ের ঘনত্ব : এটি একটি ভারবহনকারী ব্যায়াম হওয়ায় নিয়মিত অনুশীলন হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কমায়। ২. কাদের এই কাজ বেশিক্ষণ করা উচিত নয়? যদিও সিঁড়ি ওঠা উপকারী, তবে কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক পরিস্থিতিতে এই কাজ দীর্ঘক্ষণ ধরে বা উচ্চ তীব্রতায় করা ক্ষতিকর হতে পারে। শারীরিক অবস্থা বিপদ কেন পরামর্শ হাঁটুর সমস্যা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হাঁটুর জয়েন্টে শরীরের ওজনের প্রায় ৩ থেকে ৭ গুণ বেশি চাপ পড়ে। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর পুরোনো ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হালকা ব্যায়াম বা সাঁতারের মতো বিকল্প বেছে নিন। গোড়ালি বা পায়ের পাতার আঘাত এই ধরনের ব্যায়াম গোড়ালি এবং পায়ের পাতার পেশি ও জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। আঘাত সম্পূর্ণ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত সিঁড়ি ওঠা এড়িয়ে চলুন। তীব্র কার্ডিয়াক সমস্যা তীব্র হৃদরোগ বা গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে সিঁড়ি বেয়ে ওঠার কারণে হার্টের ওপর হঠাৎ অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। হৃদরোগীরা বা যাদের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন আছে, তাদের চিকিৎসকের ছাড়পত্র নিয়েই এই ব্যায়াম করা উচিত। ভারসাম্যহীনতা বা মাথা ঘোরা সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভারসাম্যহীনতার সমস্যা থাকলে সাবধানে সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। প্রয়োজনে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে হাঁটুন। কীভাবে এই অভ্যাস শুরু করবেন যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে, তবে প্রতিদিনের রুটিনে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে এই অভ্যাস শুরু করতে পারেন: ধীরে শুরু করুন : প্রথমে দিনে ৫-১০ মিনিট সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করুন। গতি বাড়ান : একবার স্বচ্ছন্দবোধ করলে ধীরে ধীরে সময় এবং গতি বাড়ান। সঠিক জুতা : আঘাত এড়াতে ভালো গ্রিপযুক্ত আরামদায়ক জুতা পরে এই ব্যায়াম করুন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা হলো ক্যালোরি পোড়ানো, হৃদযন্ত্র শক্তিশালী করা এবং পেশি টোন করার একটি চমৎকার উপায়। তবে হাঁটুবা হৃদরোগের মতো সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এই কাজ বেশি ক্ষণ ধরে করা উচিত নয়। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
২০২৬ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীদের জন্য ২০২৫ সালের পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসই বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সব শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক চিঠিতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান এবং আলিম পরীক্ষা এনসিটিবির পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির আলোকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায়, ২০২৬ সালের এইচএসসি ও সমমান এবং আলিম পরীক্ষায় অনিয়মিত/মানোন্নয়ন হিসেবে যেসব পরীক্ষার্থী অংশ নেগ্রহণ করবে, তাদের পরীক্ষা ২০২৫ সালের পরীক্ষার জন্য ইতোপূর্বে এনসিটিবির পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির আলোকেই নেওয়া হবে। সব শিক্ষা বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছাবেন। তার এই আগমনকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে যে বাধাগুলো তৈরি হয়েছিল, তারেক রহমান দেশে ফিরলে সেগুলো দূর হওয়ার আশা করা হচ্ছে। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান এবং তখন থেকেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় তার সাজা বাতিল বা অব্যাহতি পাওয়া শুরু হয়। এরপর থেকেই তার দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়। গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির বিভিন্ন নেতা তার শিগগির দেশে ফেরার বিষয়টি ইঙ্গিত করলেও এবারই প্রথম নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হলো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, বাস্তবে তা হবে না। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যেতে হবে। তবেই তারা বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেবে। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বিএনপির বিভিন্ন বিভাগীয় সাংগঠনিক ইউনিট থেকে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এক বছর-সোয়া বছর আগেই বলেছিলাম—সামনের নির্বাচন এত সহজ হবে না। আজ ধীরে ধীরে তা প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা যদি এখনো সিরিয়াস না হই, তাহলে দেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। গণতন্ত্রই এই দেশকে রক্ষা করতে পারে, আর সেই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে পারবেন আপনারাই—বিএনপির নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, মানুষের কাছে বিএনপির পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলেই জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। পাশাপাশি তিনি আশ্বস্ত করেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দলীয়করণ নয়, বরং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। যে ভোট দিয়েছে কিংবা দেয়নি—সবাই দেশের নাগরিক, সবার জন্য কাজ করতে হবে,—যোগ করেন তিনি। তারেক রহমান আরও বলেন, বিএনপি অলীক স্বপ্ন দেখাচ্ছে না; বরং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা উপস্থাপন করছে। নির্বাচন সামনে, তাই ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। প্রার্থী আসবে, পরিবর্তন হবে—কিন্তু দল ও আদর্শ একই থাকবে,—বলেন তিনি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, কিছু দল মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু বিএনপির তা করার প্রয়োজন নেই। বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিলেই যথেষ্ট। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, অনেকে মসজিদে গিয়ে তাদের কথা বলছেন। তারা যদি বলতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? বললে সবাই বলবে; না বললে কেউ বলবে না। নিয়ম যদি থাকে—তা হবে সবার জন্য সমানভাবে, বিশেষ কারও জন্য নয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনায় ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ অন্য নেতারা।
অর্থনৈতিক চাপ, যেমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার কারণে দারিদ্র্য বাড়ে। এ ছাড়া, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ, বৈষম্যমূলক নীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং একটি নির্দিষ্ট দারিদ্র্যের চক্রের কারণেও দারিদ্র্য বাড়ে। দারিদ্র্য বাড়ার আরেকটি কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, যা দরিদ্র পরিবারগুলোকে আরও দরিদ্র করে তোলে। এরপর আছে কর্মসংস্থান সংকট। পর্যাপ্ত নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া এবং মন্দার কারণে চাকরি হারানোর ফলে আয়ের উৎস কমে যায়। অর্থনৈতিক বৈষম্য সুবিধাভোগীরা আরও বেশি সুবিধা পায়, কিন্তু অনেক দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষ প্রয়োজনীয় পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হয়। সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মানুষ ভালো চাকরি পায় না এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় না। বন্যা, খরা, ঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা দারিদ্র্য বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ সুদের ঋণ বা অন্যান্য ঋণের জালে আটকা পড়া দারিদ্র্য আরও বাড়িয়ে তোলে। জ্বালানিসংকট, আর্থিক খাতের দুরবস্থা, উচ্চ সুদহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কম হারে মজুরি বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা কম এসব সমস্যা তো অর্থনীতিতে আছেই। তবে বর্তমান সরকারের সময় যুক্ত হওয়া বড় দুটি উপাদান হচ্ছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা। এতে তৈরি হয়েছে আস্থাহীনতা। এ কারণে অর্থনীতি গতিহীন, বিনিয়োগ নেই, হয়নি বাড়তি কর্মসংস্থান। ফলে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধিও সামান্য। সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার বেড়ে ২৬ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারকে দায়ী করা যায়। বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ২৪ লাখ ৬০ হাজার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ২৬ লাখ ২০ হাজার হয়েছে। বেকারত্বের হার ২০২৪ সালে সার্বিক বেকারত্বের হার ৪.৪৮ শতাংশ। এটি ২০২৩ সালের ৪.১৫ শতাংশ থেকে বেশি। অন্যদিকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকা এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৩তম আইসিএলএসের ভিত্তিতে বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক জরিপ অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের শ্রমশক্তি ছিল ৭ কোটি ৬ লাখ নারী-পুরুষ। জরিপের সময় দেশে ৬ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছে। অর্থাৎ, তারা কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী ২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার। যারা কর্মে নিয়োজিত নয় কিন্তু বেকার হিসেবেও বিবেচিত নয়, তারাই মূলত শ্রমশক্তির বাইরের জনগোষ্ঠী। এ জনগোষ্ঠীতে আছে শিক্ষার্থী, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মে নিয়োজিত নয় বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক এমন গৃহিণীরা। উল্লেখ্য, প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ১৩-১৪ লাখ মানুষের দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান হয়। বাকিরা কাজের জন্য প্রবাসে যায়। তাই দুই দশক ধরে বেকারের সংখ্যা মোটামুটি ২৪-২৮ লাখের মধ্যেই রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য দিয়েছে। এ হিসাবে সাময়িক হিসাব থেকে মাথাপিছু আয় ৪৬ ডলার কমে গেছে। সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চূড়ান্ত হিসাব দিয়েছে। সেখানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও কমেছে। এক বছরে বেকার বেড়েছে দেড় লাখ। ২০২৫ চূড়ান্ত হিসাবমতে, দেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৬ লাখ ২০ হাজার। ২০২৩ সালে এটি ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। দেশে তিন মাসে বেকার বেড়েছে ৬০ হাজার। ২০২৫ সব মিলিয়ে এক বছরের ব্যবধানেও দেশে বেকার বেড়েছে। ২০২৪ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ সাফল্য দেখালেও ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে। এ সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও সেটি তুলনামূলক কম অন্তর্ভুক্তিমূলক। ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছে ধনী মানুষরা। বর্তমানে দেশের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি একেবারে স্থবির হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যারা কর্মসংস্থানে রয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছে। ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক এ তথ্য উল্লেখ করেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সময়ে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যে কোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছে ধনী মানুষরা, ফলে আয়বৈষম্য বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১০ থেকে ২০২২—এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং আরও ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাদের জীবনমানের উন্নতি হয়েছে, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনের মতো জরুরি সেবাগুলো পাওয়া সহজ হয়েছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার গতি ধীর হয়েছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে। ২০১৬ সালের পর থেকে তুলনামূলকভাবে কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ বদলে গেছে। দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধির সুফল পেয়েছে ধনী মানুষরা, ফলে আয়বৈষম্য বেড়ে গেছে। কৃষির ওপর ভর করে গ্রামীণ এলাকাগুলো দারিদ্র্য হ্রাসে নেতৃত্বের ভূমিকায় চলে গেছে। একই সময়ে শহরে দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাইলে সবচেয়ে জরুরি হবে দারিদ্র্যবান্ধব, জলবায়ু-সহিষ্ণু এবং কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ।’ লাখ লাখ বাংলাদেশির জন্য দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার একটি মাধ্যম অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন। প্রবাস আয় দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করেছে, তুলনামূলকভাবে গরিব পরিবার এটা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়। কিন্তু দেশে অভিবাসী হওয়া কর্মীরা শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় জীবনযাপন করে, যেখানে জীবনযাত্রার মান নিম্ন। আর সচ্ছল পরিবার ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসনের সুযোগ নেওয়া যায় না, কেননা বিদেশ যাওয়ার খরচ খুবই বেশি। যদিও বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বেড়েছে তবে সেখানে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে এবং উপকারভোগী নির্বাচন লক্ষ্যভিত্তিক নয়। দেখা গেছে, ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পাওয়াদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ধনী পরিবার যেখানে অতি দরিদ্র পরিবারের অর্ধেকও এই সুবিধা পায়নি। তা ছাড়া, ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বেশিরভাগ সময়েই লক্ষ্যভিত্তিক হয় না, এমনকি বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং সারে সরকার যে ভর্তুকি দেয়; তার সিংহভাগ অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারগুলো পায়। দারিদ্র্য এবং বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে এমন চারটি প্রধান নীতিগত করণীয় চিহ্নিত করেছে এ প্রতিবেদন। এগুলো হলো—উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থানের ভিত্তি মজবুত করা, দরিদ্র এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বেশি করে শোভন কাজের ব্যবস্থা করা, আধুনিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-সহায়ক বিধিবিধান তৈরি করে দরিদ্রবান্ধব বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং শক্তিশালী রাজস্ব নীতি ও কার্যকর এবং লক্ষ্যভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা শক্তিশালী করা। বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এবং প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক বৈষম্য, বিশেষ করে পূর্ব-পশ্চিমের বৈষম্য বেশ কমিয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আঞ্চলিক বৈষম্য, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দারিদ্র্য মূল্যায়ন দেখিয়েছে যে, উদ্ভাবনী নীতি গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, শহরে গুণগত কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিতে দরিদ্রবান্ধব মূল্য-শৃঙ্খল নিশ্চিত করা এবং কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসের গতি পুনরুদ্ধার ও ত্বরান্বিত করতে পারে এবং সমৃদ্ধিতে সবার অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে পারে।’ লেখক: সাবেক কর কমিশনার ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান-ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন
হাসপাতালের সংকটময় বিছানায় শুয়ে থাকা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চারপাশে এখন সমগ্র জাতি নিঃশব্দ প্রার্থনায় নিমগ্ন। দল-মত-ধর্ম-বর্ণের ব্যবধান ভুলে সবাই তার জন্যই হাত তুলছে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ পর্যন্ত সবার হৃদয়ে একই মিনতি—তিনি সুস্থ হোন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো নেতার অসুস্থতা নিয়ে এমন সামষ্টিক আবেগ, এমন ঐক্যের বিস্তার আগে কখনো দেখা যায়নি। এই দৃশ্য বলে দেয়, খালেদা জিয়া শুধু একটি দলের নেত্রী নন; তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের মানুষের গভীরতম মানবিক অনুভূতির প্রতীক। এই ভালোবাসা, এই ঐক্যের উৎস শুধুই তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় নয়; উৎস তার চরিত্রে, তার মহত্ত্বে, তার অসীম সহিষ্ণু ও নিঃস্বার্থ হৃদয়ে। খালেদা জিয়া সেই বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন, যিনি ক্ষমতায় থেকেও প্রতিপক্ষকে ঘৃণা করেননি আর ক্ষমতার বাইরে থেকেও বিদ্বেষকে রাজনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তপ্ত বছরগুলোয় তার আচরণ বারবার দেখিয়েছে মানুষকে ভালোবাসা, দেশকে ভালোবাসা, অন্যায়ের কাছে মাথানত না করা—এগুলোই তার রাজনীতির প্রধান ভিত্তি। তিনি চাইলে ভিন্ন জীবন বেছে নিতে পারতেন। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে তিনি বিলাস-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরা জীবন কাটাতে পারতেন অনায়াসে। কিন্তু তিনি সেই পথ বেছে নেননি। তিনি প্রবেশ করেছিলেন রাজনীতির অনিশ্চিত গোলকধাঁধায়—শুধু জনগণের কল্যাণের টানে, গণতন্ত্রের দায়ে। এটি ছিল ত্যাগের সিদ্ধান্ত, কঠিন, কণ্টকাকীর্ণ, তবুও দৃঢ়। গণতন্ত্রের জন্য তার লড়াই শুধু এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং ফ্যাসিবাদী দমনপীড়নের বিরুদ্ধেও ছিল তার দীর্ঘ, নিরলস সংগ্রাম। জীবনের বহু সময় জেল, মামলা, গৃহবন্দিত্ব, অপমান, অপবাদ—সব তিনি সহ্য করেছেন এ বিশ্বাসে যে, গণতন্ত্রের আলো নিভে যেতে নেই। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন নিঃশ্বাস নিতে পারে স্বাধীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজে—এ আদর্শই তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের সামনে তিনি কখনো মাথা ঝোঁকাননি। রাজনীতির ইতিহাসে খুব কম মানুষ আছেন, যারা ক্ষমতার মোহ ছেড়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এতটা নিষ্ঠা ও স্থিতি নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত একটি দলকে সংগঠিত করে তিনি যেভাবে পুনর্গঠন করেছিলেন, তা ছিল এক নীরব বিপ্লব। অভিজ্ঞতা কম থাকলেও নেতৃত্বের শক্তি ছিল তার ব্যক্তিত্বে, সৎ ইচ্ছায়, ধৈর্যে। বিএনপিকে তিনি শুধু একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদ ছিল দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ক্ষমতা বা পদ নয়; সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের মানুষের স্নেহ, আস্থা ও শ্রদ্ধা। এ শ্রদ্ধার গভীরতা আজ অসুস্থতার মুহূর্তে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একজন মানুষ যখন হাসপাতালের বিছানায় শায়িত হয়ে দেশের মানুষের মনোভূমিকে এমনভাবে একত্রিত করে ফেলেন, সেটিই হয়ে ওঠে তার নেতৃত্বের সবচেয়ে সত্যিকারের মূল্যায়ন। তার জীবনে দুঃখ, সংগ্রাম, ক্ষতি ছিল প্রচুর। নিজের ও পরিবারের ওপর আঘাত আসবে জেনেও তিনি গণতন্ত্রের পথ ছাড়েননি। তার দুই পুত্রকে হারানো—একজনের মৃত্যু, একজনের দীর্ঘ নির্বাসন— এসবই ছিল তার জীবনের গভীরতম ক্ষত। কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। মহৎ হৃদয়ের মানুষরা সাধারণত ভেঙে পড়েন না—তারা নীরবে লড়াই করেন, কারও ক্ষতি চান না, কিন্তু অন্যায়ের কাছে নতও হন না। খালেদা জিয়ার জীবন তার উজ্জ্বলতম উদাহরণ। আজ যখন তিনি মৃত্যুপথযাত্রার মতো এক ভয়াবহ অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়ছেন, তখন জাতি বুঝতে পারছে—এ নারীর জীবন শুধু একটি রাজনৈতিক গল্প নয়; এটি এক অধ্যবসায়, সহিষ্ণুতা, মানবিক মর্যাদা ও ত্যাগের মহাকাব্য। সামাজিক মাধ্যমে যে অভূতপূর্ব দোয়া-প্রবাহ দেখা গেছে, তা কোনো প্রচারণার ফল নয়; এটি হৃদয়ের সাড়া। যারা কখনো তাকে ভোট দেননি, যারা তার দলকে সমর্থন করেন না, তারাও আজ প্রার্থনার অংশ হয়ে গেছেন—এটাই এক নেত্রীকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসার সর্বোচ্চ প্রমাণ। মানুষের ভালোবাসা কখনো মিথ্যা হয় না। রাজনীতির গল্প বদলায়, ক্ষমতার পালাবদল ঘটে, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে যে স্থান, তা যুগ পেরিয়েও থেকে যায়। আজ বেগম খালেদা জিয়া সেই বিরল স্থানে অবস্থান করছেন, যেখানে রাজনৈতিক পরিচয় নয়, মানবিক চরিত্রই তার পরিচয়। জীবনের সায়াহ্নে এসে তিনি হয়ে উঠেছেন জাতির ঐক্যের প্রতীক—এ এক আশ্চর্য, অথচ গভীর সত্য। জাতি তার সুস্থতা কামনা করছে শুধু একজন ব্যক্তির জন্য নয়, একটি ইতিহাসের জন্য, একটি আদর্শের জন্য, একটি মানবিকতার জন্য। তিনি যে পথ দেখিয়েছেন—সাহসের, ধৈর্যের, ন্যায়ের, আপসহীনতার; সে পথই আজ মানুষের মনে আলো জ্বেলে যাচ্ছে। রাজনীতিতে অনেকেই ক্ষমতার চূড়ায় ওঠেন, কিন্তু খুব কম মানুষ মানুষের হৃদয়ে থাকেন। খালেদা জিয়া সেই বিরল জননীসুলভ নেত্রী, যিনি পরিণত বয়সে, অসুস্থতার বিছানায় থেকেও জাতিকে একত্রিত করতে পেরেছেন। সেই ঐক্যই আজ তার প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধা। এই প্রার্থনা-ভরা সময়ই তার প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শুভেচ্ছা মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তপশিল ঘোষণার পর রাতেই টিএসসি চত্বর থেকে তাৎক্ষণিক এই মিছিল বের করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। টিএসসি থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ভিসি চত্বর ও হলপাড়া ঘুরে পুনরায় টিএসসিতে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাবেশ ও মিছিল চলাকালে নেতাকর্মীরা ‘১২ তারিখ সারাদিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘তারেক রহমানের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘খালেদা জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ —এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে টিএসসির ডাস চত্তরের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গনেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, বিগত চারটি নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়েছিল। আমরা ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন দেখেছি, ২০১৮ সালে রাতের ভোট দেখেছি এবং ২০২৪ সালে ‘আমিডামি’ নির্বাচন দেখেছি। বিগত সময়ে আমরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। এবার ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে আবার ভোট দেওয়ার সুযোগ এসেছে। আমরা যোগ্য প্রার্থী ও মার্কা দেখে ভোট দেব। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের ‘৩১ দফা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জনসাধারণের কাছে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে সম্পৃক্ত করার জন্য গণজোয়ার সৃষ্টি করব। পাশাপাশি ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার করব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম ভুঁইয়া ইমনসহ অনেকে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তপশিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তপশিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
কেউ পছন্দ করেন বরফ ঠান্ডা পানি, কেউ আবার লেবু মিশিয়ে গরম পানি। আবার অনেকেই যা-ই পাই, তাই খেয়ে নেন। কিন্তু পানি গরম বা ঠান্ডা হলে কি শরীরের ওপর কোনো ভালো বা খারাপ প্রভাব পড়ে? এক গ্লাস পানি নিয়ে বসুন, আর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড. ব্রায়ান উইনার কী বলছেন, তা দেখে নিন। ঠান্ডা পানি বলতে কী বোঝায় চলুন জেনে নিই। এটা শুনতে সাধারণ মনে হলেও আসলে সবার ঠান্ডার অনুভূতি এক নয় - একজন যেখানে ঠান্ডায় কাঁপছেন, আরেকজন সেখানে গরম লাগছে। তাই ঠান্ডার একটা ধারণা জানা দরকার। ড. উইনার বলেন, ফ্রিজ থেকে বের করা বরফ-ঠান্ডা পানি সাধারণত ৪১°F (৫°C) এর মতো। কলের ঠান্ডা পানি প্রায় ৬০°F (১৫.৫°C)। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি প্রায় ৭৮°F (২৫.৫°C)। ঠান্ডা পানি কি ভালো? আপনি ভাবতে পারেন এ নিয়ে অনেক গবেষণা আছে, কিন্তু বাস্তবে তেমন নেই। ড. উইনার বলেন, ঠান্ডা পানি ভালো বা খারাপ - এ ব্যাপারে দৃঢ় বৈজ্ঞানিক তথ্য খুব কম। তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরের হাইড্রেট থাকা জরুরি, এটাই মূল বিষয়। পানি কত ঠান্ডা বা গরম হলে কী প্রভাব পড়ে, সে নিয়ে গবেষণা সীমিত।’ ঠান্ডা পানির সুবিধা তবে খেলোয়াড়দের নিয়ে হওয়া গবেষণায় দেখা গেছে, তারা সাধারণত ঠান্ডা কলের পানি বেশি পছন্দ করেন। এ ছাড়া ঠান্ডা কলের পানি শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা করতেও সাহায্য করে। ড. উইনার বলেন, ঘাম থেমে যায় শরীর পানি পুরোপুরি শোষণ করার আগেই। শরীরে একটি রিফ্লেক্স আছে যা পানির উপস্থিতি অনুভব করে - এ রিফ্লেক্স ঠান্ডা পানিতে বেশি সক্রিয় হয়। বরফ খেলে ক্যালোরি কমে ড. উইনার নিজেই এ ব্যাপারে বেশ জানেন। কয়েক বছর আগে তিনি আইসক্রিম বাদ দিয়ে ইতালিয়ান আইস খেতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন এক সমস্যা - ক্যালোরির হিসাব! বরফ গলাতে শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি ব্যয় করে, যা হিসাব করা হয় না। তিনি হিসাব করে দেখেন, প্রতি ১ আউন্স বরফ গলাতে শরীর প্রায় ৫ ক্যালোরি খরচ করে। তাই সংক্ষেপে, হাইড্রেট থাকতে চাইলে ঠান্ডা কলের পানি ভালো। কয়েক ক্যালোরি বেশি পোড়াতে চাইলে বরফ বা ইতালিয়ান আইস খেতে পারেন। আকালেশিয়া রোগে গরম পানি কি সাহায্য করে? আকালেশিয়া একটি বিরল অসুখ - যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখে ১ জন আক্রান্ত হন। এই অবস্থায় খাবার ও পানি পাকস্থলীতে নামতে সমস্যা হয়, কারণ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর মাঝের যে পেশি (LES), তা ঠিকমতো খুলতে চায় না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে - - গরম পানীয় বা গরম খাবার LES পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে। - ঠান্ডা পানি আকালেশিয়ার উপসর্গ আরও খারাপ করতে পারে। তাহলে কোনটা ভালো- গরম নাকি ঠান্ডা পানি? অনেকে বলেন গরম পানি খেলে হজম ভালো হয় বা সর্দি-কাশিতে আরাম মেলে। কিন্তু ড. উইনারের মতে, গরম বা উষ্ণ পানি পান করার উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা খুব কম। তিনি বলেন, ‘গরম পানীয় মানুষের মনে আরাম দেয়, মনকে শান্ত করে। সর্দি লাগলে গরম ভাপ নাকে ঢুকে একটু আরাম দেয়, কিন্তু এটা হাইড্রেশনের ব্যাপার নয়। এটা ঠিক যেন মা গরম চিকেন স্যুপ দিচ্ছে, আরাম লাগে, কিন্তু চিকিৎসাগত দিক থেকে লাভ তেমন নেই।’ শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মূলত ব্যক্তিগত পছন্দ। আপনার শরীর যেভাবে ভালো বোধ করে -গরম, ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি - সেভাবেই পান করুন। সূত্র : ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।