২০২১ সালে বাংলাদেশের চিকিৎসা ইতিহাসে একটি বিরল ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে। ২৬ বছর বয়সী এক বিবাহিত নারী দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ, মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা এবং মাঝে মাঝে বুক ধড়ফরজনিত উপসর্গে ভুগছিলেন। এসব সমস্যা নিয়ে তিনি একজন অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হন।
প্রাথমিক চিকিৎসায় তার মানসিক উপসর্গগুলো অনেকটাই কমে আসে। তবে চিকিৎসাকালেই ওই নারী জানান, শ্বাস নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে বুকে চাপ–চাপ অনুভূতি বা অস্বস্তি হয়। আশ্চর্যের বিষয়, তার হাঁপানি, অ্যালার্জি কিংবা ফুসফুসের প্রদাহজনিত কোনো রোগের ইতিহাস ছিল না। পারিবারিকভাবেও এ ধরনের রোগের কোনো নজির পাওয়া যায়নি।
উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতামূলকভাবে চিকিৎসক একটি চেস্ট এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর চিকিৎসকরাও বিস্মিত হন। রিপোর্টে দেখা যায়, তার ফুসফুসে অসংখ্য ক্ষুদ্র পাথরের মতো কণা জমে আছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিরল রোগটির নাম পালমোনারি এলভিওলার মাইক্রোলিথিয়াসিস (Pulmonary Alveolar Microlithiasis), সংক্ষেপে পিএএম। এ রোগে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইয়ের ভেতরে ক্যালসিয়াম ফসফেট জমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথরসদৃশ গঠন তৈরি হয়।
বিশ্বব্যাপী এ রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত কম। প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে মাত্র একজন এ রোগে আক্রান্ত হন। এখন পর্যন্ত বিশ্বে নথিভুক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনাম এই ঘটনাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য বিরল ও ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রায় চার বছর আগে তার চেম্বারেই এই বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীটি শনাক্ত হয়।
ডা. এনাম জানান, পালমোনারি এলভিওলার মাইক্রোলিথিয়াসিস একটি জেনেটিক্যাল রোগ এবং অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন উপসর্গহীন থাকতে পারে। সাধারণত এটি যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ক্যানসারের মতো মারাত্মক জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোগটি নিয়ে গবেষণা এখনও চলমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এমন বিরল রোগও সময়মতো শনাক্ত করা সম্ভব। তবে রোগটি বিরল এবং এখনও গবেষণাধীন হওয়ায় এর কোনো নিশ্চিত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। রোগের একেবারে শেষ পর্যায়ে ফুসফুস প্রতিস্থাপনই বর্তমানে একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
বিশ্বখ্যাত গায়িকা ও উদ্যোক্তা লা টোয়া জ্যাকসন বিলাসবহুল ফ্যাশন জগতে নতুন ব্র্যান্ড ‘লা টয়া জ্যাকসন বিলাসবহুল ফ্যাশন অ্যান্ড লাইফস্টাইল’ চালু করেছেন। এমব্রেস ইউর ইউনিকনেস’ দর্শনকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা এই ব্র্যান্ডে আধুনিক বিলাসিতা ও সৃজনশীলতার সমন্বয় তুলে ধরা হয়েছে। ব্র্যান্ডটির বৈশ্বিক পরিচালনা ও কৌশলগত নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহ–প্রতিষ্ঠাতা ড. কামরুল আহসান ও তান শ্রী সায়েদ ইউসুফ সায়েদ নাসির (জোজো)। তাদের নেতৃত্বে ব্র্যান্ডটি দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি পাচ্ছে। পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের বড় বোন লা টোয়া জ্যাকসন তার পারিবারিক শিল্প–ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত স্টাইলকে ফ্যাশনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কারুশিল্প ও এশীয় নকশার প্রভাব নিয়ে তৈরি সংগ্রহগুলোতে রয়েছে পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, সানগ্লাস, সুগন্ধি ও বিভিন্ন আনুষঙ্গিক সামগ্রী। ড. কামরুল আহসানের তত্ত্বাবধানে ইউরোপ ও এশিয়ার শীর্ষ নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে প্রতিটি পণ্যে উচ্চমান ও আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে। পাশাপাশি টেকসই ও নৈতিক উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার এবং স্থানীয় কারিগরদের সহায়তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাশন বিক্রির পাশাপাশি ব্র্যান্ডটির লক্ষ্য ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস ও স্বকীয়তাকে তুলে ধরা। ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে সম্প্রসারণ, ফ্ল্যাগশিপ স্টোর চালু এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারত্ব ও সেলিব্রেটি সহযোগিতার পরিকল্পনা রয়েছে। লা টোয়া জ্যাকসন ও তার টিমের বিশ্বাস, আসল বিলাসিতা লুকিয়ে আছে ঐতিহ্য ও নিজস্বতায়।
এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত হবে। বিষয়টি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। তিনি গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ মাধ্যমকে এই তথ্যটি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বুয়েট ও ঢাবির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সমন্বয়ে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার ফল তৈরির কাজ চলছে। অনেক খাতা দেখার কাজ করতে হচ্ছে। আগামীকাল রোববার দুপুরের পর ফল প্রকাশ করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।’ তবে এই ফলাফল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে দেওয়া হবে না। গেল বারও অবশ্য এই প্রক্রিয়ায় ফলাফল দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে ফলাফল জানা যাবে? ডা. নাজমুল বলেন, ‘গতবারও এভাবে হয়নি, এবারও না। যার যার ফল চলে যাবে। রেজাল্টের ওপর একটি সামারি দেওয়া হবে।’ অনলাইনে যেভাবে মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল দেখা যাবেস্বাস্থ্য অধিদপ্তর-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজে আপনি আপনার MBBS ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখতে পারবেন। ধাপ ১: প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (Directorate General of Health Services - DGHS) ভিজিট করুন।ধাপ ২: ওয়েবসাইটে ‘MBBS Result 2025-2026’ লিংকে ক্লিক করুন।ধাপ ৩: নির্ধারিত স্থানে আপনার অ্যাডমিশন রোল নম্বর (Admission Roll Number) দিন।ধাপ ৪: ‘Result’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার ফলাফল স্ক্রিনে দেখা যাবে।ধাপ ৫: সেখান থেকে আপনি আপনার ফলাফল ডাউনলোড বা স্ক্রিনশট নিতে পারবেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এটিই প্রথম জরিমানার ঘটনা। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই জরিমানা আরোপ করা হয়। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, সাতকানিয়া থেকে শুরু হওয়া একটি শোভাযাত্রায় কয়েকশ মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায় পৌঁছালে সেখানে কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ওই অংশটি অত্যন্ত ব্যস্ত হওয়ায় শোভাযাত্রার কারণে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, একই দিন অলি আহমদ বীর বিক্রম স্টেডিয়ামে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। জরিমানার পর বিকেল ৫টার দিকে নাজমুল মোস্তফা আমিন ওই দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেল ৩টার দিকে নাজমুল মোস্তফা আমিন সাতকানিয়া থেকে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িবহর নিয়ে লোহাগাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, গাড়ি ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে শোভাযাত্রা করা নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা–২০২৫-এর ৯ নম্বর ধারা লঙ্ঘনের শামিল। বিধান অনুযায়ী এ কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়েছে।