কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) দ্রুত অগ্রগতি আধুনিক অফিসের অনেক কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে দিচ্ছে। তবে এআই সব পেশা পুরোপুরি বিলুপ্ত করে দেবে— এমন আশঙ্কা অমূলক বলে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক মাধ্যম সি-নেট। সি-নেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যানথ্রপিকের সিইও ড্যারিও আমোডেই মনে করেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এআই প্রযুক্তি অফিসকেন্দ্রিক এন্ট্রি-লেভেল চাকরির অর্ধেক বিলুপ্ত করতে পারে। একইভাবে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও এপ্রিল মাসে জানিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যেই এআই সিস্টেম কোম্পানির মোট কোডের অর্ধেক লিখতে সক্ষম হবে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, ৬৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, এআই উপলব্ধ চাকরির সংখ্যা কমিয়ে দেবে। এ কারণে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মাইক্রোসফটের গবেষকেরা গত জুলাইয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। সেখানে কোন কোন পেশার কাজ এআই-এর সক্ষমতার সঙ্গে বেশি মিলে যায় তা তুলে ধরা হয়েছিল। তালিকায় অনুবাদক, ইতিহাসবিদসহ বেশ কিছু পেশা শীর্ষে থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, কাজের সঙ্গে মিল থাকলেই চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেশি— এমন ধারণা ভুল হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, যেসব কাজে এআইয়ের সক্ষমতার সঙ্গে বেশি মিল পাওয়া গেছে, সেসব কাজ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাবে— এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক নয়। নতুন প্রযুক্তির ব্যবসায়িক প্রভাব আগেই অনুমান করা কঠিন এবং অনেক সময় তা বিপরীত দিকে গড়ায়। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ড্যারেল এম. ওয়েস্ট সি-নেটকে বলেন, ‘চাকরি’ ও ‘টাস্ক’ অর্থাৎ কাজ— এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি। তার মতে, অধিকাংশ পেশাই টিকে থাকবে। তবে সেই পেশার বহু ছোট–ছোট কাজ এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে ফেলবে।
বিশ্বের শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল (অ্যালফাবেট) তাদের ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ছয় মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গুগলের কাছে মোট ২৭৯টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ পাঠিয়েছে, যার বেশির ভাগই সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট সম্পর্কিত। তবে এসব অনুরোধে গুগলের সাড়া সীমিত ছিল। এই সময়ে সরকার মোট ১,০২৩টি আইটেম সরানোর জন্য অনুরোধ করেছে। তুলনামূলকভাবে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে তখনকার সরকারের সময় ৩৩৭টি অনুরোধ করা হয়েছিল এবং ৪,৪৭০টি আইটেম সরানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে পাঠানো অনুরোধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮১টি ছিল সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরানোর জন্য। এছাড়া নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবার বিষয়ে ৩৮টি এবং মানহানিবিষয়ক ৩২টি অনুরোধ ছিল। সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরানোর সব অনুরোধই ইউটিউবের কনটেন্ট নিয়ে ছিল। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে। গুগল জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অনুরোধগুলোর ৬৫ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। এর মধ্যে ১৬.১ শতাংশে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ৯ শতাংশে কনটেন্ট ইতিমধ্যে সরানো হয়েছে, ২.৫ শতাংশ আইনি প্রক্রিয়ায় সরানো হয়েছে, ৩.৭ শতাংশ নীতি অনুযায়ী সরানো হয়েছে এবং ৩.৫ শতাংশ কনটেন্ট পাওয়া যায়নি। ইউটিউব, গুগলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, তাদের কমিউনিটি গাইডলাইন ভঙ্গ করা ভিডিও সরিয়ে দেয়। এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৫৫টি ভিডিও সরানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করেছে। অধ্যাদেশের ধারা ৮ অনুযায়ী বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে কনটেন্ট ব্লক করার অনুরোধ করতে পারে। বর্তমান আইন অনুসারে, কোনো কনটেন্ট ব্লক করা হলে স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার সব ব্লককৃত কনটেন্টের তথ্য প্রকাশ করবে। ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, নতুন অধ্যাদেশে তথ্য প্রকাশের বিধান থাকায় মানুষ জানতে পারবে সরকার কোন ধরনের সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরাতে চায়। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৩৫০ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ও প্রোফাইল ছবি গোপনে সংগ্রহের ঘটনা সামনে এসেছে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় ও এসবিএ রিসার্চের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকেরা হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুতর দুর্বলতা শনাক্ত করার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তাদের মতে, এই দুর্বলতার কারণে দীর্ঘদিন ব্যবহারকারীদের প্রোফাইলসংক্রান্ত তথ্য অজ্ঞাতভাবে স্ক্র্যাপ করা সম্ভব হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। গবেষকদের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেটার নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি বড় ফাঁক ব্যবহার করে বিভিন্ন উৎস থেকে ফোন নম্বর ও প্রোফাইল ছবি সংগ্রহ করা গেছে। গবেষণা দলের প্রধান গ্যাব্রিয়েল গেগেনহুবার জানান, একটি উৎস থেকে অস্বাভাবিক পরিমাণ অনুরোধ আসায় তারা ত্রুটিটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এই ত্রুটির কারণে প্রায় অসীম অনুরোধ পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। দলের সদস্য আলইওশা ইউডমায়ার বলেন, বার্তার অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন সুরক্ষিত থাকলেও মেটাডেটা সুরক্ষিত নয়। বিপুল মেটাডেটা বিশ্লেষণ করলে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা সরাসরি হুমকির মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি স্বীকার করেছে মেটা। তারা জানিয়েছে—ত্রুটি ছিল, তবে তা ঠিক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফোন নম্বর ও প্রোফাইল ছবি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সীমা আরোপ করা হবে এবং এর জন্য নির্দিষ্ট খরচও রাখা হবে। সংস্থাটি আবারও দাবি করেছে, ফোন নম্বর ও প্রোফাইল ছবি প্রকাশ্য থাকায় এটিকে তথ্য ‘ফাঁস’ বলা যাবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মত—প্রকাশ্য তথ্য হলেও তৃতীয় পক্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির হাতে তা চলে যাওয়া বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। হোয়াটসঅ্যাপের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহসভাপতি নীতীন গুপ্ত বলেন, গবেষকরা বাগ বাউন্টি প্রোগ্রামের মাধ্যমে দায়িত্বশীলভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাদের প্রদর্শিত পদ্ধতিতে কিছু তথ্য স্ক্র্যাপ করা সম্ভব হলেও বার্তার অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। গবেষকদের তথ্যমতে, হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েব ইন্টারফেস ব্যবহার করে তারা প্রতি ঘণ্টায় কয়েক কোটি ফোন নম্বর সংগ্রহ করেছেন। এতে প্রায় ৫৭ শতাংশ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা সম্ভব হয় এবং তাদের প্রোফাইল ছবিও মেলে। এমনকি ২৯ শতাংশ ব্যবহারকারীর চ্যাটেও প্রবেশ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি তাদের। যদিও মেটা বলছে—এটি কোনো তথ্য ফাঁস নয়।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে নাগরিকদের আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় এর মোকাবিলায় নাগরিক সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে ডিবি সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন শেষে কমিশনার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা কেবল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার দায়িত্ব নয়; বরং নাগরিক, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সম্মিলিত সচেতনতার মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি জানান, প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সাইবার জালিয়াতি, অনলাইন প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি ও মানহানিসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ এখন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, আর্থিক সুরক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অপরাধ মোকাবিলায় ডিএমপি পর্যাপ্ত সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধনের মাধ্যমে নাগরিকরা আরও দ্রুত ও কার্যকর সেবা পাবেন বলে জানান কমিশনার। অনলাইন হয়রানির শিকার নারী ও কিশোর-কিশোরীরা নিরাপদে অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তাও পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিশ্বের জনপ্রিয় বেশ কিছু ওয়েবসাইট হঠাৎ করে অচল হয়ে পড়েছে। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও প্রবেশে সমস্যা দেখা যায়। ক্লাউডফ্লেয়ারের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করলে অনেক ব্যবহারকারী একটি বার্তা দেখতে পান, যেখানে বলা হয় ক্লাউডফ্লেয়ারের সমস্যার কারণে পেজটি লোড করা সম্ভব হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স, চলচ্চিত্র পর্যালোচনা সাইট লেটারবক্সডসহ বিপুল সংখ্যক ওয়েবসেবা এতে প্রভাবিত হয়। ক্লাউডফ্লেয়ার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা সমস্যাটি সম্পর্কে অবগত এবং দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ত্রুটি বহু গ্রাহকের সেবা ব্যাহত করতে পারে। তদন্ত চলছে এবং নতুন তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে। ইন্টারনেট অবকাঠামো হিসেবে কাজ করা ক্লাউডফ্লেয়ার সাইবার হামলা প্রতিরোধ, উচ্চমাত্রার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদান করে। ফলে তাদের সিস্টেমে সামান্য ত্রুটিও একাধিক ওয়েবসাইটে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়েবসাইট বিভ্রাট পর্যবেক্ষণকারী প্ল্যাটফর্মগুলোকেও একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। পরে সেবা স্বাভাবিক হলে দেখা যায় বিশ্বজুড়ে ওয়েবসাইট বিভ্রাটের ঘটনায় রিপোর্টের সংখ্যা হঠাৎ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। প্রভাবিত ব্যবহারকারীরা একটি নোটিশ দেখতে পান যেখানে লেখা ছিল ক্লাউডফ্লেয়ারের নেটওয়ার্কে অভ্যন্তরীণ সার্ভার ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কয়েক মিনিট পর পুনরায় চেষ্টা করুন। এ বৈশ্বিক বিভ্রাটে ঠিক কতসংখ্যক ওয়েবসাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গুগল প্লে স্টোরে শত শত ক্ষতিকর অ্যাপ পাওয়া গেছে, যেগুলো এখন পর্যন্ত চার কোটি বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। গুগল প্লে স্টোরে শত শত ক্ষতিকর অ্যাপ পাওয়া গেছে, যেগুলো এখন পর্যন্ত চার কোটি বারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান জেডস্কেলার সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ‘থ্রেটল্যাবজ ২০২৫ মোবাইল, আইওটি অ্যান্ড ওটি থ্রেট রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মে ম্যালওয়্যার আক্রমণ বাড়ছে। হ্যাকাররা অ্যাপ বা ফাইলকে হাতিয়ার বানিয়ে ফোনে ঢুকে তথ্য চুরি, নজরদারি বা ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মতো কাজ করছে। উল্লেখ্য, জেডস্কেলারের ক্লাউড প্লাটফর্ম থেকে ২০২৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক চাকরি ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ২২ হাজারেরও বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। এ তথ্য জানিয়েছে প্রযুক্তি সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির দিকে দ্রুত ঝুঁকছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। দক্ষতা বাড়ানোর এই প্রয়াসের ফলে চাকরির কাঠামো ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। চাকরি ছাঁটাইয়ে শীর্ষে রয়েছে মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা, ইন্টেল, ওরাকল এবং সেলসফোর্স। এ ছাড়া সিসকো, এইচপি, ইলেকট্রনিক আর্টস, এক্সপিডিয়া, টিকটক, লেনোভো ও অ্যাটল্যাসিয়ানও কর্মী কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। টেকক্রাঞ্চ জানায়, শুধু ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রযুক্তি খাতে ১৬ হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। সূত্র : শাফাক নিউজ
টেক উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন নতুন ওপেন সোর্স ডিজিটাল বিশ্বকোষ ‘গ্রকিপিডিয়া’ তৈরির, যা উইকিপিডিয়ার বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। মাস্কের ভাষায়, এটি হবে ‘নিরপেক্ষ, বুদ্ধিমান ও সীমাহীন জ্ঞানের উৎস’। মঙ্গলবার ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়ে মাস্ক লিখেছেন, “এক্সএআই-এ যোগ দিন এবং গ্রকিপিডিয়া তৈরিতে সাহায্য করুন। এটি হবে উইকিপিডিয়ার চেয়ে অনেক ভালো, যেখানে সবাই অবদান রাখতে পারবে।” নতুন বিশ্বকোষটি তার চ্যাটবট গ্রক-এর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে এবং তথ্য সরবরাহ করবে রাজনৈতিক পক্ষপাত ছাড়াই। মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই উইকিপিডিয়াকে বামপন্থি পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে সমালোচনা করেছেন। ২০২৩ সালে তিনি একশ কোটি ডলারে প্ল্যাটফর্মটি কেনার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। সম্প্রতি উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি স্যাঙ্গার এটিকে ‘প্রচারণার মাধ্যম’ আখ্যা দিয়েছেন, অভিযোগ করেছেন রক্ষণশীল ও লিবার্টারিয়ান মতাদর্শের ব্যবহারকারীদের সেন্সর করা হচ্ছে। এই বিতর্কের মাঝে ‘গ্রকিপিডিয়া’ প্রযুক্তি ও তথ্য জগতের পরবর্তী বড় প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আগ্রহ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।