রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার জন্য এই পূর্বাভাস কার্যকর থাকবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। একই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টাতেও একই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকলেও আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে এবং ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা দেখা যেতে পারে। এ সময় রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক আবহাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে। ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া আংশিক মেঘলা ও শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়ও সারা দেশে আংশিক মেঘলা আকাশসহ শুষ্ক আবহাওয়া বজায় থাকতে পারে। ভোরের দিকে কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। উপদেষ্টা বলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি দেশবাসীর কাছে শরিফ ওসমান হাদির সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করে বলেন, সবার দোয়ায় তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। তিনি আরও জানান, আসামি ধরার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং সবার সহযোগিতায় খুব দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী। আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্টদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এতদিন শুধু সরকারি কর্মচারীদের হাতিয়ার বহনের অনুমতি দেওয়া হতো। এখন যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারাও চাইলে লাইসেন্সের মাধ্যমে হাতিয়ার নিতে পারবেন। পাশাপাশি, যাদের বৈধ হাতিয়ার সরকারের কাছে জমা আছে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। এ সময় সিইসি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণা ২২ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) শুরু হবে এবং শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত। ঘোষণা অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটও হবে একই দিন। ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
শরীয়তপুরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে অবশেষে থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে পালং মডেল থানায় একজনের নাম উল্লেখসহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী। অভিযোগের পর এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শরীয়তপুর শহরের বন বিভাগের কার্যালয়ের ভেতরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলে ভুক্তভোগী ওই নারী। প্রথমে অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করে, পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুর সঙ্গে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন যুবক তাদের সড়ক থেকে জোরপূর্বক বন বিভাগের কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায় এবং তাদের মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে টাকা দিতে না পারায় তিনজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটির খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। নেটিজেনরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তোলেন। তবে পরদিন সকালে ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী কোনো কলেজ শিক্ষার্থী নন, তিনি দুই সন্তানের জননী। আরও জানা যায়, সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তার বন্ধু নন, গত তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং সেদিন তারা মাদারীপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এমনকি ভুক্তভোগীর অভিযোগেও আসে পরিবর্তন। তিনি জানান, বাস্তবে তাকে একজন ব্যক্তি যৌন নির্যাতন করেছে এবং আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিল। পূর্বে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঙ্গে থাকা প্রেমিক তাকে ‘মামলা শক্ত করার জন্য’ তিনজনের নাম বলতে বলেছিল। ভুক্তভোগীর দাবি, যিনি তাকে নির্যাতন করেছেন, তিনি চিনতে পেরেছেন এবং ঘটনার সময় মারধর করে একটি আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়। পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ভুক্তভোগী বুধবার রাতে আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এরই মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছি এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশার ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে তার স্বামী রাব্বির ৩ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। পরে আদালত আয়েশার ৬ দিন এবং তার স্বামী রাব্বি শিকদারের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৮ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ ডিসেম্বর আয়েশা খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে আজিজুল ইসলামের বাসায় কাজ শুরু করেন। ৮ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে আজিজুল নিজ কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। সেখান থেকে স্ত্রীকে একাধিকবার ফোন করলেও যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে সকাল ১১টার দিকে বাসায় ফেরত আসেন। বাসায় ফিরে তিনি দেখতে পান—তার স্ত্রী গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত পড়ে আছেন। মেয়ে গলায় আঘাত নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মেইন গেটের দিকে পড়ে ছিল। দ্রুত তাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. আশিকের সহায়তায় সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এজাহারে আরও উল্লেখ রয়েছে, বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়—আয়েশা সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে বের হয়ে যান। বের হওয়ার সময় তিনি মেয়ের মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যান। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাদী নিশ্চিত হন যে, এই সময়ের মধ্যেই আয়েশা স্ত্রী ও মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চুরি ধরা পড়ায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী আয়েশাই মা–মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য তুলে ধরেন তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার আয়েশা নরসিংদী সদর থানার সলিমগঞ্জ এলাকার রবিউল ইসলামের মেয়ে। ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের পূর্বহাটিতে স্বামী রাব্বী সিকদারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। পুলিশের একটি দল তাকে সাভারের ওই বাসা থেকেই গ্রেপ্তার করে। এ সময় আয়েশার স্বামী রাব্বীকেও হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন দল গৃহকর্মীর গতিবিধি শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় কাজ করছিল। প্রথমে আয়েশার বর্তমান বাসার খোঁজ পাওয়া যায়। পরে তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সে ঝালকাঠির নলছিটিতে অবস্থান করছে। সেখান থেকেই আয়েশাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। হত্যার পরদিনই গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী ও স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন—সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে আয়েশা কাজে আসে এবং সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাঁর মেয়ের স্কুলের ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রীও নিয়ে যায়। আজিজুল জানান, ঘটনার দিন সকাল ৭টার দিকে তিনি কর্মস্থল উত্তরায় যান। সেখান থেকে স্ত্রীকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন, মেয়ের গলার নিচে গভীর কাটা দাগ নিয়ে মেয়ে প্রধান ফটকের কাছে পড়ে আছে। দ্রুত পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের সহায়তায় তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক নাফিসাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে স্ত্রী লায়লা আফরোজকে রান্নাঘরের পাশের করিডোরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে মুহূর্তেই শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। গ্রেপ্তার আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্য ও চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজধানীর পাশে ‘আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প শুরু হয়। তবে প্রায় তিন দশক পরও এলাকা পুরোপুরি বসবাসযোগ্য হয়নি। ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সড়কসহ মৌলিক সুবিধার অভাবে ভোগান্তিতে পড়ছেন প্লট মালিকরা। পূর্বাচলকে বাসযোগ্য করতে রাজউক নতুন করে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ‘পূর্বাচল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে ডিপিপি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে ব্যয়, ক্রয় পরিকল্পনা, নতুন করে ভূমি উন্নয়নসহ নানা প্রশ্নে কমিশন ডিপিপি ফেরত পাঠিয়েছে সংশোধনের জন্য। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্বাচল প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভুল বরাদ্দ নীতি। তাদের দাবি, যাদের আবাসনের প্রয়োজন নেই—সেসব সচিব, আমলা, রাজনীতিবিদদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্লটগুলো দীর্ঘ সময় খালি পড়ে আছে। অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের মতে, বিকল্প আবাসন থাকা ব্যক্তিদের প্লট বাতিল করলে দ্রুত মানুষ বসবাস শুরু করবে; কিন্তু রাজউক তা করছে না। প্রাক্কলিত ডিপিপিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৭০ কোটি টাকা। ভূমি উন্নয়ন, সড়ক প্রশস্তকরণ, নতুন রাস্তা, স্লুইচগেট, বক্স কালভার্ট, স্ট্রিট লাইট, মসজিদ-মন্দির, কাঁচাবাজারসহ ১২টি খাতে এসব অর্থ ব্যয় হবে। এছাড়া ২৮৮ কোটি টাকায় নির্মাণের প্রস্তাব আছে ‘রাজউক পূর্বাচল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’-এর, যা নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। বিশেষজ্ঞদের আরেক অভিযোগ—রাজউক প্লট বিক্রি না করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করলে ঢাকার আবাসন সংকট কিছুটা কমত। কিন্তু প্লট বরাদ্দের কারণে এখানে জমির সবচেয়ে বড় বাজার তৈরি হয়েছে। কাঠাপ্রতি যে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল ১৪ হাজার টাকার কমে, সেটিই এখন বিক্রি হচ্ছে ১–১.৫ কোটি টাকায়। ফলে প্লট হাতবদলেই অনেকে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন। জমির অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যই পূর্বাচলে আবাসন গড়ে না ওঠার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন প্লট মালিক ও জমি ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হলেও এত বেশি দামে আবাসন কার্যত অসম্ভব। নতুন প্রকল্প নিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পুরোনো অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতেই নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এখানে শুধুমাত্র অবকাঠামো নির্মাণ ও অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে।
বাংলাদেশ গরিব দেশ নয়; বরং সৎ নেতৃত্বের অভাবই দেশের মূল সংকট—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তাঁর মতে, দেশের সম্পদের কোনো ঘাটতি নেই, ঘাটতি শুধু সৎ ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের। রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের নতুন টেপারহাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউটিন বিতরণের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ গরিব দেশ হলে হাজার লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হতো না। আমাদের গরিব বানিয়ে রাখা হয়েছে। সৎ নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকলে এই অর্থ দেশের কল্যাণে ব্যয় হতো এবং বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের চেয়েও উন্নত হতে পারত। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। জামায়াতে ইসলামী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়। জনগণের সমর্থন পেলে কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, এতে শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিম নাগরিকরাও উপকৃত হবে। সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রশিদ শাহর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন দলের রংপুর–দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, জেলা জামায়াতের আমির ও নীলফামারী–১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের আমির ও নীলফামারী–৪ আসনের প্রার্থী হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম প্রমুখ।
নীলফামারীর এক বাস শ্রমিক নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে রংপুর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির অধীনে থাকা নীলফামারীর সব রুটের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে রংপুর থেকে নীলফামারী-সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ-জলঢাকা-ডিমলা-ডোমার রুটে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঢাকাগামী এবং অন্যান্য জেলা সমিতির (দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। এর আগে শনিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নীলফামারী জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম এ ঘোষণা দেন। জানা গেছে, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন উপকমিটির দপ্তর সম্পাদক সফিকুল ইসলামের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের পাওনা নিয়ে আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত বিরোধের জেরে রংপুর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে লাঞ্ছিত করেন। পরে বিষয়টি নীলফামারী জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অবহিত করা হয়। এ ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত রংপুর জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির অধীনে চলাচলকারী সব বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় নীলফামারী জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নীলফামারী ও আশপাশের রুটে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে তারা দাবি করেছেন। নীলফামারী জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের শ্রমিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত রংপুর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সব বাস নীলফামারী জেলা দিয়ে চলতে দেব না।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনের দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দারা। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রোববার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিক্ষোভকারীরা উপজেলার কেরানিহাট এলাকায় সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ৬ লেনের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা বলেন, মহাসড়কটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কের কোথাও না কোথাও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা এ পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না। বারবার অনুরোধ ও দাবি জানিয়েও এখনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছি। তারা আরও বলেন, এ সড়ক শুধু স্থানীয়রা ব্যবহার করেন না। এটি দেশের অর্থনীতি, পর্যটন এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ কক্সবাজারে যাতায়াত করেন। অথচ দেশের অন্যতম ব্যস্ত এ সড়কটি অনেক জায়গায় পাড়ার গলির চেয়েও সরু। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সড়ক প্রশস্ত করার আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আন্দোলনকারী আকাশ চৌধুরী বলেন, প্রতিনিয়ত এ সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার দায়ভার কে নেবে? সড়কটি ছোট হওয়ায় প্রাণহানি ঘটছে। আমরা দ্রুত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ৬ লেনে উন্নতি করণের দাবি জানাই। স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান মহাসড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম হওয়ায় প্রতিদিন চরম যানজট, দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের মাঝে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় সড়কটি দ্রুত ৬ লেনে উন্নয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আলমগীর সাকিব নামের আরেক আন্দোলনকারী বলেন, মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত হলে পণ্য পরিবহন সহজ হবে, পর্যটন শিল্পে গতি আসবে এবং জনসাধারণের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা কমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। কেরানিহাট হাইওয়ের ট্রাফিক ইনচার্জ নরুল আলম বলেন, ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ব্লকেড কর্মসূচি তুলে নেবে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়া জন্য প্রস্তুত আছি। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান বলেন, তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাব। জনদুর্ভোগ কমাতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আগে একই দাবিতে গত ৬ এপ্রিল নগরীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর ১১ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছেও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তবে এতদিনেও বাস্তব কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এলাকাবাসী পুনরায় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে টার্গেট কিলিংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই রাজনৈতিক কারণে অন্তত ১০৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর কমপক্ষে ১৭১টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১২০ জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বড় অংশ বিএনপির নেতা-কর্মী। একই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ২৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অধিকাংশ ঘটনা দলীয় অন্তঃকোন্দলে সংঘটিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলেও রাজনৈতিক সহিংসতা ও দুর্বৃত্তদের হামলায় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। তখন নিহতের তালিকায় এগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় বিএনপির অন্তঃকোন্দলগুলোতে ৫৭৭টি ঘটনার মধ্যে ৮৮ জন নিহত হয়েছেন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে ২২১ জনের মধ্যে ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে নিহত ৩৮ জনের মধ্যে ১২ জনই অন্তঃদলীয় সহিংসতায় মারা গেছেন। জামায়াত কর্মীরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ (৭৪ জন) ছিলেন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতায় টিকে থাকতে খুন-খারাবির ঘটনা সাধারণ। যারা ক্ষমতায় আসার জন্য প্রস্তুত, তাদের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত রাখতে নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একই কারণে টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। এটি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিতভাবেও করা হতে পারে, যাতে নির্বাচন পিছিয়ে যায়। এই ধরনের ঘটনা গুরুত্ব সহকারে তদন্তের দাবি রয়েছে।
দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর ঢাকা থেকে বরিশালে যাত্রী নিয়ে পৌঁছেছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের ঐতিহ্যবাহী ও শতবর্ষী স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’। যাত্রীবহন ক্ষমতা ৯৬০ জন হলেও শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে স্টিমারটি বরিশালে আসে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে। তবে বরিশাল নদীবন্দরে ঘাট সংকট থাকায় এটি ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন টার্মিনালে নোঙর করে। স্টিমারের এই প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ইতিহাস-ঐতিহ্য–প্রেমী মানুষের মাঝে। প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাস বহনকারী এই স্টিমার অতীতে যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হলেও এবার এটিকে চালু করা হয়েছে পর্যটকবাহী নৌযান হিসেবে। এর আগে ১৫ ও ২১ নভেম্বর যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পর্যটক না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, পিএস মাহসুদ প্রতি শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে এবং শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বরিশাল থেকে যাত্রা করবে। ঢাকা থেকে যাত্রা করার পর স্টিমারটি দুপুর ১টার দিকে চাঁদপুর ঘাটে অল্প সময়ের জন্য নোঙর করে, যদিও সেখান থেকে কোনো যাত্রী ওঠেনি। সন্ধ্যায় কীর্তনখোলা নদীতে পৌঁছানোর পর ঘাট সংকটের কারণে এটি ত্রিশ গোডাউন পন্টুনে থামে। সরকারি নৌযানটির নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে ২,৬৬০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১,৬৫০ টাকা এবং ডেক শ্রেণিতে ৬০০ টাকা। যাত্রী ইমন খন্দকার স্টিমারে যাত্রার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, শত বছরের ইতিহাসের সঙ্গে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই ছিল রোমাঞ্চকর। যথাযথ প্রচারণা হলে যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন। বরিশালের সংস্কৃতিজন শুভংকর চক্রবর্তী জানান, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্মৃতিবাহী এই স্টিমারের পুনরাগমন বড় এক আনন্দের বিষয়, যা নিয়মিত চালু রাখার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ঐতিহ্যবাহী পিএস মাহসুদ নির্মিত হয় ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে। পরে ১৯৮৩ সালে এটি ডিজেল ইঞ্জিনে এবং ১৯৯৫ সালে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা প্রায় ২৫ বছর এটি বিভিন্ন রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করেছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটেছে। এসময় গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলসহ উভয় দলের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনা বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সাহাপুর ইউনিয়নের জগির মোড় ও চর আলহাজ্ব মোড় এলাকায় ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুদিন আগে দলীয় বিষয় নিয়ে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় স্থানীয় জামায়াত নেতা ইকবাল হোসেনের। এর সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী সাহাপুর ইউনিয়নের আলহাজ্ব মোড় এলাকায় যান। এ সময় জগির মোড় এলাকায় কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা ও তার ছেলে মনিরুল ইসলামকে দেখে অতর্কিত হামলা চালায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়। কিছু সময়ের মধ্যে পার্শ্ববর্তী চর আলহাজ্ব মোড়ে আবারও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবর্ষণ হয়, অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং প্রায় ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ঘটে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল, ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আব্দুল আলিম বাঁধন, যুবদল নেতা মিলন, রকিবুলসহ দুই দলের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। আহতরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল ঘটনার বিষয়ে বলেন, আমরা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির আওতায় সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা চালায়, আমার গাড়ি ও নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুর রহমান হামদু মেম্বার বলেন, জামায়াতের পক্ষ থেকে মূলত দুদিন আগের ঘটনার সূত্র ধরে হামলা করা হয়েছে। তালেব মণ্ডল নিজে গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করে কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানান, সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং কাজ চলছে। ঘটনার কারণে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বাংলাদেশে ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। কম্পনগুলোর মাত্রা ছিল মৃদু থেকে মাঝারি। তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মধ্যরাত ৩টার পর থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ১৩ ঘণ্টার ব্যবধানে এই তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সর্বশেষ ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এটি মৃদু হওয়ায় অনেকেই কম্পনটি টের পাননি। প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় গতকাল মধ্যরাতে। রাত প্রায় ৩টা ২৯ মিনিটে টেকনাফ থেকে ১১৮ কিলোমিটার দূরে ৪ মাত্রার এ কম্পনটি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়। এর ফলে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় হালকা কম্পন অনুভূত হয়, যদিও অধিকাংশ মানুষ তা টের পাননি। আন্তর্জাতিক ভূকম্পন উৎসগুলো জানায়, টেকনাফের এই ভূমিকম্পটি মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পরই রাত ৩টা ৩০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডে সিলেটে আরেকটি মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৪। এটিও খুবই স্বল্পমাত্রার হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেননি। সিলেট আবহাওয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে ২১ নভেম্বর সকালে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠে। ওই ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হন। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে সংঘটিত এই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬ এবং উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশাল।
হবিগঞ্জের মাধবপুর ইটাখোলা স্টেশন এলাকায় কালনী এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরের দিকে ঢাকাগামী ট্রেনটি মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলায় পৌঁছলে ইঞ্জিন হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। বিস্তারিত আসছে..
আপনি থানার মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করছেন এমন অভিযোগ তুলে একজন ব্যক্তি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হাসানকে ফোনে হুমকি দেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ভাইব্রাদারকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছেন, মিথ্যা মামলায় ঢুকাচ্ছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো আচরণ করছেন। আপনাকে কিন্তু ৩০ বছর চাকরি করতে হবে, বাংলাদেশের মধ্যেই থাকতে হবে, পরিবার নিয়ে বের হতে পারবেন না এটা মনে রাখবেন। একই ধরনের হুমকি রাজধানীর গুলশান থানার ওসিকেও দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পুলিশ সদস্যকে ফোনসহ নানা কায়দায় হুমকি দিচ্ছে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের পলাতক নেতাকর্মীরা। নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তাদের এ ধরনের হুমকি বাড়ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয় ফোন নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং এসব নম্বর কার নামে নিবন্ধিত তা জানার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে। সূত্র জানায়, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের ভয় দেখাতে এবং মনোবল দুর্বল করতে পলাতক নেতাকর্মীরা তাদের টার্গেট করছে। অনেককে বলা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদেরও দেখা হবে, এমনকি চাকরি শেষ হওয়ার পরও ক্ষতি করা হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ফোনালাপের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এতে কর্মকর্তাদের নিজেদের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করছেন। একজন মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এ ধরনের হুমকি স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে হুমকির প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। অন্যদিকে একজন সাবেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হুমকি দেওয়া একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, টুঙ্গিপাড়া থানার এসআই মনির হাসানকে ফোন করা ব্যক্তি নিজেকে এলাকার সাধারণ নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেন। ৭ নভেম্বর একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেজে ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের সেই কথোপকথনের অডিও প্রকাশ করা হয়, যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এসআই মনির জানান, তিনি সন্ত্রাস দমন আইনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, আর মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি পান। পরে জানা যায়, হুমকিদাতার বাড়ি পাশের কোটালিপাড়া থানায়, নাম ইমরান হোসেন রাজিব। একইভাবে গুলশান থানার ওসিকেও ফোনে হুমকি দেওয়া হয়। হুমকিদাতা বলেন, আপনি যে শহরে চাকরি করেন সেই শহরের হর্তাকর্তা আমরা। আজ হোক বা কাল, আমরা এমপি–মন্ত্রী হবো। চাকরি কয়দিন করবেন? আপনার চৌদ্দগোষ্ঠীর খবর আমাদের কাছে আছে। আপনারও পরিবার আছে আমরা ছাড়ব না। এই অডিওও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওসি জানান, তিনি জিডি করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছেন এবং প্রায় প্রতিরাতেই বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি পাচ্ছেন। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। মামলা প্রয়োজন হলে মামলা নেওয়া হয়, জিডির বিষয়েও তদন্ত করা হয়। বিদেশি সিম কারও নামে নিবন্ধিত তা জানতে আন্তর্জাতিকভাবে তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর বিজয়নগরের একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে; তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি।
উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় দিন দিন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১৩-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এতে জেঁকে বসেছে শীত। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় হিমেল বাতাসের সঙ্গে হালকা কুয়াশা। শনিবার (২২ নভেম্বর) আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে ১৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড হয়। এদিকে তাপমাত্রা কমায় ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার লেপ-তোশকের দোকানে। পাশাপাশি বিভিন্ন গরম কাপড়ের দোকানেও বিক্রি বেড়েছে। শীতের পিঠাপুলি তৈরির ধুম পড়েছে। সড়কের পাশের দোকানগুলোতে ভিড় করে মানুষ পিঠার স্বাদ উপভোগ করছেন। অন্যদিকে, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, হিমালয়সংলগ্ন হওয়ায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শীত বেশি হয়ে থাকে। আজ শনিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনদিন তাপমাত্রা ক্রমশই কমছে। তবে নভেম্বরের মাস শেষে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তাহিরপুর সাব-জোনাল অফিসের আওতাধীন সকল এলাকায় শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পল্লী বিদ্যুতের তাহিরপুর সাব জোনাল অফিসের সহকারী ম্যানেজার আলাউল হক সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুনামগঞ্জ গ্রিড থেকে তাহিরপুর উপকেন্দ্র পর্যন্ত ৩৩ কেভি লাইনের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজ এবং লাইনের পাশে থাকা গাছের ডালপালা কর্তনের জন্য শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। এ সময়ের মধ্যে তাহিরপুর সাব-জোনাল অফিসের আওতাধীন সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত থাকবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সাময়িক এই অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুততার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাসও প্রদান করা হয়।
নরসিংদীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ জনে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ জন। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও তার ৮ বছর বয়সী ছেলে হাফেজ মো. ওমর, পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়ার কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫), ডাংগা ইউনিয়নের কাজীরচর নয়াপাড়ার নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামের ফোরকান। ভূমিকম্পের তীব্রতায় নরসিংদী জেলা জুড়ে ভবন, ঘরবাড়ি ও স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বহু স্থানে দেয়াল ধসে পড়া, ভবন হেলে যাওয়া এবং ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের নিরাপদ স্থানে দৌড়ানোর ঘটনা দেখা যায়। পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে ভূমিকম্পের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। একই এলাকায় একটি ডেইরি ফার্মের মাঠে মাটি ফেটে আলাদা হয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্যও দেখা যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সার্কিট হাউসসহ বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন, দোকানপাট ও বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ নিরূপণে কাজ শুরু করেছে এবং জরুরি সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২, বিউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ এবং রাইট অফ ওয়ে বরাবর গাছপালার শাখা-প্রশাখা কর্তনের কারণে আগামী শুক্রবার (২১ নভেম্বর) কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ১১ কেভি কালীঘাট ফিডারের আওতায় আমজাদ আলী রোড, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, মহাজনপট্রি, হকার্স মার্কেট, লালদীঘিরপাড়, ডাক বাংলা রোড এবং আশপাশের এলাকাসমূহে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি ১১ কেভি ধোপাদিঘীরপাড় ফিডারের আওতায় রোজ ভিউ পয়েন্ট, উপশহর ডি-ব্লক মেইন রোড উভয়পাশ্ব এবং আশপাশের এলাকাতেও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে। নির্বাহী প্রকৌশলীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কাজ শেষ হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এই সময়কালকে লাইন চালু হিসেবে গণ্য করা হবে। বিউবো কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।