চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও সংকটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি অন্ধকার সময় অতিক্রম করছে। এই ধারাবাহিকতার নতুন সংযোজন হিসেবে আলোচনায় এসেছে মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী এবং জনসংযোগ ও প্রটোকল বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক কে. এম. হাবিবুন্নবীর স্বাক্ষরিত সদ্য প্রকাশিত এক চিঠি থেকে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপকগণ, সংশ্লিষ্ট উপমহাব্যবস্থাপকগণ এবং বিকেবির তথাকথিত সভাপতি দাবি করা সাবেক পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করা মিরাজ হোসেন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লিখিত দুজনের কোনো বৈধ স্বীকৃতি নেই এবং তারা হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ফেরারি আসামি। এছাড়া চিঠিতে জাতীয়তাবাদী ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক দাবি করা জাহিদ হোসেনের উপস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানান, জাতীয়তাবাদী ফোরাম নামে পরিচিত সংগঠনটির কোনো দলীয় স্বীকৃতি নেই। এটি আওয়ামী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গঠিত একটি স্বঘোষিত সংগঠন, যার প্রধান ও একমাত্র পৃষ্ঠপোষক বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। তথ্য অনুযায়ী, এই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী ফোরামের কোনো সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন ৫ আগস্টের পর মানবসম্পদ বিভাগে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন। বিএনপির সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং চাকরিকালে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ঘনিষ্ঠতার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। এদিকে, বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সভার কার্যবিবরণীতে রাষ্ট্রীয় পতাকা সংক্রান্ত People’s Republic of Bangladesh Flag Rules-কে বিকৃতভাবে ‘দি ফ্ল্যাগ রুলস’ বা ‘পতাকা বিধি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘পুষ্পস্তবক’ অর্পণের পরিবর্তে ‘পুষ্পার্ঘ্য’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সরকার ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অতীতে ফ্যাসিস্ট সহযোগী ও তাবেদার কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি সংক্রান্ত বিকৃত তথ্য এবং ধর্মীয় উপাসনায় ব্যবহৃত শব্দের ব্যবহার একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বহীনতা ও চরম অবহেলার পরিচায়ক। এটি ব্যাংকসহ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্বেগজনক ও অশনি সংকেত বলেও মন্তব্য করেন তারা। এছাড়া বিজয় দিবসের মতো জাতীয় তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধি না থাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জিয়া পরিষদের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, “বৈধতাহীন সিবিএ কমিটি ও নবগঠিত অবৈধ জাতীয়তাবাদী ফোরাম ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকে নজিরবিহীন লুটপাট চালাচ্ছে। বারবার অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন।” এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক–২ খালেদুজ্জামান জুয়েলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে, জিয়া পরিষদের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও পতিত ফ্যাসিস্টের দোসররা অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় জিয়া পরিষদকে অন্তর্ভুক্ত না করে তারা আবারও তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এই নৈরাজ্যের অবসান এখন সময়ের দাবি। আমরা নিজস্ব আয়োজনে মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন করবো।
যুব এশিয়া কাপে পরপর দুই ম্যাচ জেতায় বাংলাদেশের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে গতকালই। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও নেপালকে হারিয়ে শেষ চারে এক পা দিয়ে রেখেছিল তারা। গ্রুপের আরেক ম্যাচে গতকাল আফগানিস্তান শ্রীলঙ্কার কাছে হারায় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের সেমিফাইনাল। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে। ফলে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে দুই দলই। যদিও নেট রান রেটে কিছুটা এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে টপকে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচের জয়ী দলই হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ১৭ ডিসেম্বর মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে গেলে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপের বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার ম্যাচে জয়ী দলই ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে বেশ এগিয়ে আছে ভারত। সবশেষ ম্যাচ জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে যাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। ফলে বাংলাদেশ গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে না পারলে রানার্সআপ হয়ে সেমিতে খেলতে হবে ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশ গ্রুপের এক নম্বরে থাকলে সেমিফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বা সংযুক্ত আরব আমিরাত। আগামী ১৯ ডিসেম্বর টুর্নামেন্টের দুই সেমিফাইনাল। ২১ ডিসেম্বর মাঠে গড়াবে ফাইনাল ম্যাচ।
আইপিএল ২০২৬ এর সূচি চূড়ান্তভাবে প্রকাশ না হলেও জানা গেল, ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মের মধ্যে হবে পরবর্তী আসর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও একই উইন্ডোতে হয়েছে ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। বিসিসিআই পূর্ণ সূচি ঘোষণা করেনি। তবে আইপিএলের ১৯তম আসর যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে হবে, সেটা জানিয়ে দিলো তারা। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় হবে এই টুর্নামেন্ট। টানা দ্বিতীয় বছর পিএসএলের সঙ্গে প্রায় মিল রেখে সূচি ঘোষণা করল। পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হবে ২৬ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আইপিএল দলগুলো তাদের ধরে রাখা ও ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়দের তালিকা প্রকাশ করে। আজ আবুধাবিতে ৩৬৯ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে হবে মিনি নিলাম। ৭৭ জন খেলোয়াড়কে কিনতে পারবে দলগুলো, বিদেশি ৩১ জন। সর্বোচ্চ ১৩ জন খেলোয়াড়কে কিনতে পারবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। চলতি বছর ৩ জুন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে প্রথমবার আইপিএল জেতে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করেছে। সকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান থেকে এই বিশেষ তোপধ্বনি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল অর্পণ করে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বাজে করুণ সুর। শ্রদ্ধা জানানোর পর রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং প্রদর্শন করে একটি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে এবং একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে। এছাড়া ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।
মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ৫৭ মিনিটে তিনি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধান উপদেষ্টা। এর আগে সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এদিকে বিজয়ের ৫৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ণিল আলোয় সেজেছে রাজধানী ঢাকা। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই লাল-সবুজের আলোকচ্ছটায় ঝলমলিয়ে উঠেছে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বিজয় দিবসের এই আলোকসজ্জায় মুগ্ধ হয়েছেন নগরবাসী, বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বা আইপিপিগুলোর, যাদের বিল ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এছাড়া পিডিবির কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে ১১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া পরিশোধে জরুরি ভিত্তিতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বকেয়া পরিশোধে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়কার নিয়ম অনুসরণ করেই অন্তর্বর্তী সরকার ভারত ও আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। তবে ভারতের কাছে বিদ্যুৎ আমদানির বকেয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া ছিল ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, যা বর্তমানে শূন্যে নেমে এসেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত ও আদানির কাছে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে ২ বিলিয়ন ২৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫ আগস্টের আগে আদানি গ্রুপের কাছে বিদ্যুৎ কেনার বকেয়া বিল ছিল বিলম্ব সারচার্জসহ ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বর্তমানে কমে ৮৮৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে সরকারের দাবি। যদিও আদানির পক্ষ থেকে কয়লার দাম নিয়ে বিরোধের কথা জানিয়ে তাদের পাওনা ৩০ কোটি ডলারেরও বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে ভেড়ামারা দিয়ে ভারত সরকার থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট, ত্রিপুরা থেকে বেসরকারিভাবে ১৬০ মেগাওয়াট এবং নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আইপিপিগুলোর পাওনা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত পিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর পাওনা ছিল ১৮ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায়। বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দাবি, স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বিল না পাওয়ায় ব্যাংক ঋণের চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে বিদেশি সরবরাহকারীদের বকেয়া তুলনামূলক দ্রুত পরিশোধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানানো হয়, আসন্ন নির্বাচনের আগে বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে নতুন সরকার বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে পারে। মার্চ-এপ্রিল থেকে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বেড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে, যেখানে শীতকালে পিক আওয়ারে সরবরাহ থাকে ১০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুটি বড় আইপিপি থেকে লোকসানে বিদ্যুৎ কেনার বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে না পাওয়ায় বকেয়া কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শিগগিরই এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পিডিবির কাছে বকেয়া বিলের মধ্যে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিল রয়েছে ১১ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যা আগের সরকারের সময় ছিল ১৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা বর্তমানে ৩ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ৫ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের হুইলিং চার্জের বকেয়া ৪৭৮ কোটি টাকা থেকে কমে এখন ১৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবি বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিল বাবদ মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। গ্যাস সংকটের কারণে কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাতে হওয়ায় অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ফার্নেস অয়েল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বকেয়ার চাপ বাড়ছে। পিডিবির হিসাবে বর্তমানে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়মূল্য প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৮৩ পয়সা এবং বিতরণ কোম্পানি পর্যন্ত সরবরাহ করতে খরচ হয় প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৩৫ পয়সা। বিক্রয়মূল্য কম থাকায় প্রতি ইউনিটে প্রায় ৫ টাকা ৭২ পয়সা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত তিন অর্থবছরে ভর্তুকির বাইরে পিডিবির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ৮৯৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও সংকটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি অন্ধকার সময় অতিক্রম করছে। এই ধারাবাহিকতার নতুন সংযোজন হিসেবে আলোচনায় এসেছে মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী এবং জনসংযোগ ও প্রটোকল বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক কে. এম. হাবিবুন্নবীর স্বাক্ষরিত সদ্য প্রকাশিত এক চিঠি থেকে জানা যায়, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ, প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপকগণ, সংশ্লিষ্ট উপমহাব্যবস্থাপকগণ এবং বিকেবির তথাকথিত সভাপতি দাবি করা সাবেক পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করা মিরাজ হোসেন। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্লিখিত দুজনের কোনো বৈধ স্বীকৃতি নেই এবং তারা হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ফেরারি আসামি। এছাড়া চিঠিতে জাতীয়তাবাদী ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক দাবি করা জাহিদ হোসেনের উপস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানান, জাতীয়তাবাদী ফোরাম নামে পরিচিত সংগঠনটির কোনো দলীয় স্বীকৃতি নেই। এটি আওয়ামী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গঠিত একটি স্বঘোষিত সংগঠন, যার প্রধান ও একমাত্র পৃষ্ঠপোষক বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। তথ্য অনুযায়ী, এই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী ফোরামের কোনো সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন ৫ আগস্টের পর মানবসম্পদ বিভাগে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেন। বিএনপির সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং চাকরিকালে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ঘনিষ্ঠতার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। এদিকে, বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সভার কার্যবিবরণীতে রাষ্ট্রীয় পতাকা সংক্রান্ত People’s Republic of Bangladesh Flag Rules-কে বিকৃতভাবে ‘দি ফ্ল্যাগ রুলস’ বা ‘পতাকা বিধি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘পুষ্পস্তবক’ অর্পণের পরিবর্তে ‘পুষ্পার্ঘ্য’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা সরকার ঘোষিত কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অতীতে ফ্যাসিস্ট সহযোগী ও তাবেদার কর্মকর্তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতীয় পতাকা ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি সংক্রান্ত বিকৃত তথ্য এবং ধর্মীয় উপাসনায় ব্যবহৃত শব্দের ব্যবহার একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বহীনতা ও চরম অবহেলার পরিচায়ক। এটি ব্যাংকসহ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্বেগজনক ও অশনি সংকেত বলেও মন্তব্য করেন তারা। এছাড়া বিজয় দিবসের মতো জাতীয় তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভায় কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধি না থাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জিয়া পরিষদের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধান কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, “বৈধতাহীন সিবিএ কমিটি ও নবগঠিত অবৈধ জাতীয়তাবাদী ফোরাম ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাংকে নজিরবিহীন লুটপাট চালাচ্ছে। বারবার অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন।” এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপব্যবস্থাপনা পরিচালক–২ খালেদুজ্জামান জুয়েলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে, জিয়া পরিষদের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও পতিত ফ্যাসিস্টের দোসররা অপকর্ম ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিজয় দিবসের প্রস্তুতি সভায় জিয়া পরিষদকে অন্তর্ভুক্ত না করে তারা আবারও তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রমাণ করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এই নৈরাজ্যের অবসান এখন সময়ের দাবি। আমরা নিজস্ব আয়োজনে মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদযাপন করবো।
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে সংঘটিত ভয়াবহ হামলার সময় এক হামলাকারীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার যে ভিডিও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে দেখা যাওয়া সাহসী পথচারীর পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। তার নাম আহমেদ আল আহমেদ, বয়স ৪৩ বছর। এই দুঃসাহসিকতার জন্য তিনি ইতোমধ্যে ‘নায়ক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার সময় আহমেদ সরাসরি হামলাকারীর দিকে ছুটে যান এবং তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন। পরে সেই অস্ত্র হামলাকারীর দিকেই তাক করে তাকে পিছু হটতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি অস্ত্র নিচু করে এক হাত উঁচু করেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুঝতে পারে তিনি হামলাকারী নন। দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় ফলের দোকানের মালিক আহমেদ বর্তমানে সিডনির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার পরিবার জানিয়েছে, হাতে ও বাহুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাকে চার থেকে পাঁচবার গুলি করা হয়েছে। রোববার রাতে বন্ডাই বিচে এ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। হামলার সময় সেখানে হানুকাহ উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক হাজারের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ এটিকে ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আহমেদের এক চাচাতো ভাই জানান, তিনি শতভাগ একজন নায়ক। তার হাতে ও বাহুতে দুটি গুলির আঘাত রয়েছে এবং বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন। পরিবার আশা প্রকাশ করেছে, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আহমেদের সাহসিকতায় গর্বিত তার বাবা মোহামেদ ফাতাহ ও মা মালাকেহ হাসান। তারা বলেন, মানুষজনের ওপর হামলা হতে দেখে তাদের ছেলে এক মুহূর্তও দ্বিধা করেননি। তার কাছে কোনো জাতিগত বা ধর্মীয় বিভেদ নেই—অস্ট্রেলিয়ায় সবাই সমান নাগরিক বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। জানা গেছে, আহমেদ ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তার পরিবার সম্প্রতি সিরিয়া থেকে সিডনিতে এসে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনি সিরিয়ার ইদলিবে বড় হয়েছেন। তার আত্মীয়রা জানিয়েছেন, আহমেদের এই সাহসিকতা শুধু তার পরিবার নয়, পুরো গ্রাম ও সম্প্রদায়কে গর্বিত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় জড়িত দুই হামলাকারী ছিলেন বাবা ও ছেলে, যাদের বয়স যথাক্রমে ৫০ ও ২৪ বছর। ৫০ বছর বয়সি হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আর ২৪ বছর বয়সি হামলাকারী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, হামলাকারীরা একটি ছোট পদচারী সেতুর কাছ থেকে গুলি চালাচ্ছিল। আহমেদ প্রথমে একটি পার্ক করা গাড়ির আড়ালে আশ্রয় নেন, এরপর হঠাৎ বেরিয়ে এসে এক হামলাকারীকে ধরে ফেলেন। অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পর তাকে মাটিতে ফেলে দেন। পরে ওই হামলাকারী আবার সেতুর দিকে পালিয়ে গিয়ে আরেকটি অস্ত্র তুলে নেয় এবং গুলি চালাতে থাকে। আহমেদের এই সাহসী ভূমিকার কারণে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলেও তার সাহসিকতার প্রশংসা করা হয়েছে। সবাই একবাক্যে তাকে একজন সত্যিকারের নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী, বাইপাইল পয়েন্টে ডাইভারশন চলবে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ। এ সময় বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য সকল যানবাহন চালকদের অনুরোধ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দীর্ঘদিনের দর-কষাকষির পর অবশেষে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করলো ইউক্রেন। তবে, বড় ধরনের হামলা হলে জোটের সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তা সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছে কিয়েভ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে ৫ ঘণ্টার বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কি। এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ তথ্য জানায়। আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার পেছনের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় সামরিক জোট ন্যাটো'তে কিয়েভের যোগদানের আকাঙ্ক্ষাকে। রাশিয়া শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোনোভাবেই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন। কারণ—এমনটি হলে রুশ সীমান্তে বাড়বে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি। হুমকির মুখে পড়বে তাদের প্রভাব ও নিরাপত্তা। অবশেষে, এবার মস্কোর সেই শর্ত মানতে রাজি হলো কিয়েভ। যার মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রক্রিয়া। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বার্লিনে মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসেন প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ভোলেদেমির জেলেনস্কি। সামরিক জোটে যোগ দেয়ার স্বপ্নপূরণ না হলেও, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর থেকে আর্টিকেল ফাইভের মত নিরাপত্তা পাবার নিশ্চয়তা পেয়েছে কিয়েভ। পূর্ণ ন্যাটো সদস্য না হলেও, এর ফলে বড় কোনো আক্রমণের মুখে জোটের সদস্য দেশগুলো থেকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা পাবে তারা। তবে এ ঘোষণায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে সংশয়। পশ্চিমা বিশ্বের এমন আশ্বাসে ভরসা করতে পারছে না অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির প্রকৃত বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশটির জনগণ।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করেছে। সকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান থেকে এই বিশেষ তোপধ্বনি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল অর্পণ করে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বাজে করুণ সুর। শ্রদ্ধা জানানোর পর রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সেনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং প্রদর্শন করে একটি বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে এবং একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে। এছাড়া ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করবে।
এ এইচ এম বজলুর রহমান
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে সংঘটিত ভয়াবহ হামলার সময় এক হামলাকারীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার যে ভিডিও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে দেখা যাওয়া সাহসী পথচারীর পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। তার নাম আহমেদ আল আহমেদ, বয়স ৪৩ বছর। এই দুঃসাহসিকতার জন্য তিনি ইতোমধ্যে ‘নায়ক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার সময় আহমেদ সরাসরি হামলাকারীর দিকে ছুটে যান এবং তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন। পরে সেই অস্ত্র হামলাকারীর দিকেই তাক করে তাকে পিছু হটতে বাধ্য করেন। এরপর তিনি অস্ত্র নিচু করে এক হাত উঁচু করেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুঝতে পারে তিনি হামলাকারী নন। দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় ফলের দোকানের মালিক আহমেদ বর্তমানে সিডনির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার পরিবার জানিয়েছে, হাতে ও বাহুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাকে চার থেকে পাঁচবার গুলি করা হয়েছে। রোববার রাতে বন্ডাই বিচে এ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন। হামলার সময় সেখানে হানুকাহ উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক হাজারের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ এটিকে ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আহমেদের এক চাচাতো ভাই জানান, তিনি শতভাগ একজন নায়ক। তার হাতে ও বাহুতে দুটি গুলির আঘাত রয়েছে এবং বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন। পরিবার আশা প্রকাশ করেছে, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আহমেদের সাহসিকতায় গর্বিত তার বাবা মোহামেদ ফাতাহ ও মা মালাকেহ হাসান। তারা বলেন, মানুষজনের ওপর হামলা হতে দেখে তাদের ছেলে এক মুহূর্তও দ্বিধা করেননি। তার কাছে কোনো জাতিগত বা ধর্মীয় বিভেদ নেই—অস্ট্রেলিয়ায় সবাই সমান নাগরিক বলেই তিনি বিশ্বাস করেন। জানা গেছে, আহমেদ ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তার পরিবার সম্প্রতি সিরিয়া থেকে সিডনিতে এসে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনি সিরিয়ার ইদলিবে বড় হয়েছেন। তার আত্মীয়রা জানিয়েছেন, আহমেদের এই সাহসিকতা শুধু তার পরিবার নয়, পুরো গ্রাম ও সম্প্রদায়কে গর্বিত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় জড়িত দুই হামলাকারী ছিলেন বাবা ও ছেলে, যাদের বয়স যথাক্রমে ৫০ ও ২৪ বছর। ৫০ বছর বয়সি হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আর ২৪ বছর বয়সি হামলাকারী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, হামলাকারীরা একটি ছোট পদচারী সেতুর কাছ থেকে গুলি চালাচ্ছিল। আহমেদ প্রথমে একটি পার্ক করা গাড়ির আড়ালে আশ্রয় নেন, এরপর হঠাৎ বেরিয়ে এসে এক হামলাকারীকে ধরে ফেলেন। অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পর তাকে মাটিতে ফেলে দেন। পরে ওই হামলাকারী আবার সেতুর দিকে পালিয়ে গিয়ে আরেকটি অস্ত্র তুলে নেয় এবং গুলি চালাতে থাকে। আহমেদের এই সাহসী ভূমিকার কারণে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলেও তার সাহসিকতার প্রশংসা করা হয়েছে। সবাই একবাক্যে তাকে একজন সত্যিকারের নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তাইওয়ানে কোনো যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলে মার্কিন সামরিক বাহিনী চীনের কাছে পরাজিত হতে পারে—এমন আশঙ্কার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে পেন্টাগনের এক অতি গোপন মূল্যায়নে। নথিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণভিত্তিক। সাম্প্রতিক এক যুদ্ধ মহড়ায় দেখা গেছে, বেইজিং চাইলে মোতায়েনের আগেই মার্কিন ফাইটার স্কোয়াড্রন, বড় যুদ্ধজাহাজ এমনকি উপগ্রহ নেটওয়ার্কও অচল করে দিতে সক্ষম। এই অত্যন্ত শ্রেণিবদ্ধ নথির নাম ‘ওভারম্যাচ ব্রিফ’। পেন্টাগনের অফিস অব নেট অ্যাসেসমেন্টের তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক ও ব্যয়বহুল অস্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিপরীতে, চীন তুলনামূলক কম খরচে দ্রুত উৎপাদনযোগ্য অস্ত্র তৈরি করে যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর সুবিধা অর্জন করেছে। নথিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চীন মার্কিন সামরিক সম্পদ অকার্যকর করে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর আগেই চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘চরম বিচক্ষণতার’ সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে এই নথির সারসংক্ষেপ যখন যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এক কর্মকর্তা জানান, চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সামরিক কৌশলের বিপরীতে একাধিক বিকল্প প্রস্তুত রেখেছে। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করেও দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলে আসছে। অন্যদিকে, তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো পরিবর্তন মানতে রাজি নয়। যদিও চীন এখনো আক্রমণের নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করেনি, তবে পশ্চিমা গোয়েন্দা মূল্যায়নে ধারণা করা হচ্ছে—২০২৭ সালের আশপাশে তাইওয়ান দখলের প্রচেষ্টা শুরু হতে পারে, যা চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত দুই দশকে চীন বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করেছে, যা দিয়ে তারা তাইওয়ানে পৌঁছানোর আগেই মার্কিন বিমানবাহী রণতরীসহ উন্নত সামরিক সম্পদ ধ্বংস করতে পারে। যুদ্ধ মহড়াগুলোতে দেখা গেছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক রণতরীগুলোর অনেকটাই চীনা হামলা প্রতিহত করতে অক্ষম হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত সর্বাধুনিক বিমানবাহী রণতরীটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও চীনা হামলার বিরুদ্ধে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত। এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলা হয়েছে—আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র কতটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি বড় যুদ্ধ চালানোর মতো অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনের শিল্প সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আর আগের মতো নেই। প্রতিবেদনটি আরও জানায়, বেইজিং ও মস্কোর তুলনায় ওয়াশিংটন দ্রুত উন্নত অস্ত্র তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—অতিরিক্ত ব্যয়বহুল ও সীমিতসংখ্যক অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা। বর্তমানে ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। পেন্টাগনের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সব বিভাগেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে আছে, যদিও উভয় দেশের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা প্রায় সমান। তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট
দীর্ঘদিনের দর-কষাকষির পর অবশেষে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করলো ইউক্রেন। তবে, বড় ধরনের হামলা হলে জোটের সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে নিরাপত্তা সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছে কিয়েভ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে ৫ ঘণ্টার বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কি। এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ তথ্য জানায়। আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার পেছনের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় সামরিক জোট ন্যাটো'তে কিয়েভের যোগদানের আকাঙ্ক্ষাকে। রাশিয়া শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোনোভাবেই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন। কারণ—এমনটি হলে রুশ সীমান্তে বাড়বে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতি। হুমকির মুখে পড়বে তাদের প্রভাব ও নিরাপত্তা। অবশেষে, এবার মস্কোর সেই শর্ত মানতে রাজি হলো কিয়েভ। যার মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রক্রিয়া। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বার্লিনে মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসেন প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ভোলেদেমির জেলেনস্কি। সামরিক জোটে যোগ দেয়ার স্বপ্নপূরণ না হলেও, ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর থেকে আর্টিকেল ফাইভের মত নিরাপত্তা পাবার নিশ্চয়তা পেয়েছে কিয়েভ। পূর্ণ ন্যাটো সদস্য না হলেও, এর ফলে বড় কোনো আক্রমণের মুখে জোটের সদস্য দেশগুলো থেকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা পাবে তারা। তবে এ ঘোষণায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে সংশয়। পশ্চিমা বিশ্বের এমন আশ্বাসে ভরসা করতে পারছে না অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতির প্রকৃত বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশটির জনগণ।
একের পর এক গুলির শব্দ সিডনির এই সমুদ্র সৈকত জুড়ে। প্রাণ বাঁচাতে দিকবিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে ছুটছে মানুষ। এরইমাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আততায়ীর হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নেয় এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। মুহুর্তেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয় এই ভিডিওটি। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনির বন্ডাই বিচে ধর্মীয় উৎসব পালন করছিলেন দেশটির অন্তত হাজারখানিক ইহুদী নাগরিক। তবে হঠাৎই কয়েকজন বন্দুকধারী হামলা চালায় সেখানে। আনুমানিক ৪০-৫০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে অস্ত্রধারীরা। তাতে হতাহত হয়েছেন অনেকেই। গুলি, হট্টগোল আর চিৎকারের শব্দে সাক্ষাৎ নরকে পরিণত হয় বনডি সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ। এ পরিস্থিতিতেও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেয়া সেই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। তার নাম আহমেদ আল আহমেদ। স্থানীয় এক ফলের দোকানের মালিক সে। একজন মুসলিম হয়েও ইহুদীদের জীবন বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়ায় স্থানীয়দের কাছে বাস্তব জীবনের হিরো হয়ে ওঠেন তিনি। অনেকের জীবন বাঁচালেও আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। হাসপাতালে নেয়ার পর তার শরীরে অস্ত্রোপচার চালানো হয় বলে সেভেন নিউজকে জানান আহমেদের চাচাতো ভাই মুস্তোফা। মুস্তফা জানান, আগে কখনও অস্ত্র চালানোর অভিজ্ঞতা ছিলো না আহমেদের। তবুও, দুই সন্তানের জনক আহমেদ কিভাবে এতো সাহসী হয়ে উঠলেন জানেন না তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।