দেশে বর্তমানে ২৩২টি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদ ছিল প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকা, আর জনবল প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার। তবে বিপুল সম্পদ ও জনবল থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ৫,৯৯০ কোটি টাকার নিট লোকসান করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। সরকারের পক্ষ থেকে এ সময়ে ৫০,৭৮৩ কোটি টাকার অনুদান দিতে হয়েছে।
অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো:
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি)
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)
বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি)
শিল্প খাতের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ২,২১৩ কোটি টাকা, সেবা খাতের ছয়টি ৫,৪০৫ কোটি, বাণিজ্যিক খাতের তিনটি ১,১৫৭ কোটি এবং অন্যান্য ১৭টি প্রতিষ্ঠান ৩,৩২১ কোটি টাকার লোকসান করেছে।
২০২৪ সালের জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ ৪,৬২,৫২১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২,১৮,৫৫৩ কোটি টাকা অনাদায়ী। একাধিক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ বা কার্যক্রমে অব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সরকার প্রতি বছর বাজেট থেকে ভর্তি, ঋণ ও ভর্তুকি দিয়ে এগুলো টিকিয়ে রাখছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের জন্য বিরাট বোঝা। কিছু সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হলেও মোটাদাগে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। আগে গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে শুরু করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা উচিত।”
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “সংগঠনিক কাঠামো, দক্ষতা ও জনবল ঠিকভাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, বাকি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করা এবং ফরেনসিক অডিট করা জরুরি।”
অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, “এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশেই নয়; ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এ সমস্যা দেখা যায়। সার্বিক সংস্কার ছাড়া কার্যকর ফল পাওয়া যায় না।”
কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এখনও লাভজনক অবস্থায় আছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এগুলোর আয়:
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি): ৩,৯৪৩ কোটি টাকা
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি): ৪,৩২৮ কোটি টাকা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ): ২,৪৩ কোটি টাকা
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি): ১,৯৪৮ কোটি টাকা
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ): ৫৪৭ কোটি টাকা
তবে অনেক লাভজনক প্রতিষ্ঠানও কার্যকর পরিকল্পনা ও পেশাদারিত্ব ছাড়া পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছে না।
দীর্ঘমেয়াদী লোকসান ও অনিয়ম
সরকারি ভর্তুকি ও ঋণ বহন
জটিল মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ঘাটতি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক, সেগুলো বেসরকারি খাতে দেওয়া যেতে পারে, আর যে প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর লোকসান দিচ্ছে, সেগুলো সংস্কার বা বন্ধ করার বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলির ঘটনায় তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। এই হামলার পর সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরাও। সরকার নিরাপত্তা জোরদারের আশ্বাস দিলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার ফলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। ওসমান হাদি ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা অবস্থায় তাকে মাথায় গুলি করে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং মেডিকেল বোর্ড তার শারীরিক অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কার মধ্যেই এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তফসিল ঘোষণার পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তা অনেকটাই কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে এসব ঝুঁকি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী নিজেকে অনিরাপদ মনে করলে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে চোরাগোপ্তা হামলা, জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হবে এবং নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আবারও এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা আসে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এর আগে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন মাত্রার। এটি সরাসরি হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে বলে তারা মনে করছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে একটি আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। ওসমান হাদির ওপর হামলার পর নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান নেওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছে। অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই হামলাকে নির্বাচন বানচালের একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব এবং দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সাবেক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি এবং যেখানে শক্ত প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের ধরতে নতুন করে বিশেষ অভিযান শুরুর ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, অতীতের শাসনামলে যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র ছিল বা যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ ও অর্থের উৎস চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি গত বছর পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কা এবং লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না এই দুই বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের যেকোনো মূল্যে প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময় প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকি আগেভাগেই চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। কোথায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব বিষয়েও প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
নির্বাচিত সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে রুল অফ ল এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নির্বাচনের আগে পেশাজীবী ও বিশিষ্টজনদের সাথে আলোচনায় ভার্চুয়াল বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। তারেক রহমান জানান, ঢাকায় ২ কোটি মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহণ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে ঢাকার যানজট, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর, পানির সংকট নিরসনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চান তিনি। এছাড়া, দেশে ১ লক্ষ হেলথ কেয়ারার নিয়োগের কথাও জানান তারেক রহমান। এ সময়, পরিকল্পনার কাজগুলো করতে শক্তিশালী ম্যান্ডেট প্রয়োজন, যার জন্য জনসমর্থন প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গায়ে লেখা ‘অরিজিনাল’ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই নকল। সাধারণ সাবানের মতোই লেখা, রঙ ও মোড়ক। বাহ্যিকভাবে নামকরা ব্র্যান্ড ডেটলের মতো মনে হলেও ভেতরে ছিল মানহীন ও ক্ষতিকর উপাদান। দীর্ঘদিন ধরে এমন নকল সাবান চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র, যা নীরবে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছিল। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানাধীন মজ্জারটেক শিকলবাহা এলাকায় এমনই একটি নকল সাবান তৈরির গোপন কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম, র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। র্যাব-৭ সূত্র জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কর্ণফুলীর শিকলবাহা এলাকায় অবৈধভাবে নকল সাবান উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হলে শিকলবাহা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশের একটি স্থাপনায় কারখানাটির সন্ধান পাওয়া যায়। বাইরে থেকে এটি অটোরিকশা গ্যারেজ মনে হলেও ভেতরে ঢুকে দেখা যায় আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নকল সাবান উৎপাদনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা। অভিযানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল নকল সাবান, কাঁচামাল ও সাবান তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে পরিচালিত কারখানাটি তাৎক্ষণিকভাবে সিলগালা করা হয় এবং উদ্ধারকৃত মালামাল জব্দ করা হয়। বিএসটিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রহিম বলেন, কারখানাটি ‘সলিড করপোরেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছিল। তবে লাইসেন্সে সাধারণ সলিড সাবান উৎপাদনের অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে এখানে ডেটল সাবান ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ‘লিফোর্ড’-এর আদলে নকল সাবান তৈরি করা হচ্ছিল, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। তিনি বলেন, কারখানাটির কোনো বিএসটিআই অনুমোদন বা মান নিয়ন্ত্রণ সনদ ছিল না। ব্যবহৃত কাঁচামাল ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ছিল নিম্নমানের। এসব সাবানে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে, যা ত্বকের এলার্জি, চুলকানি, র্যাশ ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু ও সংবেদনশীল ত্বকের মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। র্যাব–৭, চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নামকরা ব্র্যান্ডের আদলে নকল সাবান তৈরি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। এটি শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, জনস্বাস্থ্যের বিরুদ্ধেও একটি গুরুতর অপরাধ। ভোক্তাদের সুরক্ষায় এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাব–৭-এর অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানকালে কারখানায় কর্মরত দুজন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব। উদ্ধারকৃত নকল সাবান ও উৎপাদন সরঞ্জামাদির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ওই স্থাপনায় রাতের বেলায় অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা যেত। এক স্থানীয় হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জানতাম এটা অটোরিকশা গ্যারেজ। কিন্তু গভীর রাতে ভেতরে কাজ চলত। বুঝতে পারিনি এখানে নকল সাবান তৈরি হচ্ছে।’ ভোক্তাদের অভিযোগ, বাজারে এসব নকল সাবান ব্যবহারের ফলে অনেকেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। নকল ও আসল পণ্যের পার্থক্য সহজে বোঝার উপায় না থাকায় সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে তারা জানান। নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।