বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দেশীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে সংস্থাটি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ একটি বিবৃতিতে জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে তারা স্বাগত জানায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বকেও তারা ইতিবাচকভাবে দেখছে। সংস্থাটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত পরবর্তী ধাপে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিতে পূর্বের মতোই সমর্থন ও কারিগরি সহযোগিতা পেতে থাকবে। ডব্লিউটিওর উপমহাপরিচালক শিয়াংচেন ঝাং বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশ সংস্থাটির কারিগরি সহায়তা অব্যাহতভাবে পাবে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকেও উপকৃত হবে। তিনি জানান, ডব্লিউটিও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। এ ছাড়া এনহ্যান্সড ইন্টিগ্রেটেড ফ্রেমওয়ার্ক (ইআইএফ) এর মাধ্যমে যে সুবিধা বাংলাদেশ পেয়ে থাকে, এলডিসি উত্তরণের পরও আরও পাঁচ বছর তা বজায় থাকবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের তৃতীয় দিন হিসেবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীসহ ১২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (১৫ নভেম্বর) ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপের প্রথম পর্ব শুরু হয়ে চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। প্রথম পর্বে অংশ নেবে ছয়টি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট,বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল। দিনের দ্বিতীয় পর্বেও দুই ঘণ্টা ধরে ছয়টি দল অংশ নেবে আলোচনায়। এ পর্বে আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি (জাগপা)। ইসি প্রধান এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিনে ১২টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, রোববারও আরও ১২টি দলের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। ধাপে ধাপে সংলাপের সময়সূচি ও দলগুলোর নাম জানিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ ধর্মীয় সমাবেশ চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। মহাসম্মেলনের সংগঠকরা জানান, অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এই আয়োজন হলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ পাঁচ দেশের শীর্ষ আলেমরা অংশগ্রহণ করেছেন। শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। মঞ্চে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেকসহ দেশের শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিবিদরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো মানুষ পায়ে হেঁটে, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস এবং মেট্রোরেলে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব করছেন সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক ও খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে গিয়ে প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন, হয়তো মারাই গেছেন জাহাঙ্গীর। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ দেড় যুগ। অবশেষে গত ৭ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন তিনি। তবে এতোদিনে বাবা-মা আর নেই, স্ত্রীও এখন অন্যের সংসারে। জানা গেছে, ৬৬ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম চরদিঘলদী ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। পেশায় জেলে ছিলেন। বিশাল মেঘনার বুকে মাছ ধরে জীবিকা চলত তার। সংসারে ছিলেন বাবা-মা, স্ত্রী ও চার সন্তান। দালালের খপ্পরে পড়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে অবৈধ পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জাহাঙ্গীরের। কিন্তু পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে পরিবার ধরে নেয়, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার জানান, গত ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করেন কাউন্সেলর (লেবার) সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। তিনি জানান, এক বাংলাদেশী সেখানে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তার কাছে পাসপোর্ট কিংবা আইডি কার্ড, কোনো ডকুমেন্টই নেই। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না। এতে তার নাম-পরিচয় কিছুই জানা যাচ্ছিল না। হাইকমিশন সম্প্রতি ওই ব্যক্তির ছবি দিয়ে পরিচয় জানতে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে নিজেদের স্বজন দাবি করে যোগাযোগ করলেও কেউই যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একই সময় নরসিংদী সদরের এক ব্যক্তি পোস্টের নিচে মন্তব্য করে জানান, লোকটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে পারেন। হাইকমিশন বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সহায়তায় খুঁজে পাওয়া যায় একটি পরিবারকে। কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই ব্যক্তিই ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত ভালো নয়- বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় সব নথি সংগ্রহ করে দ্রুততম সময়ে হাইকমিশনে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি ব্যয়ে দেশে পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি। দীর্ঘ দেড় যুগ পর গত ৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশে এসে দেখেন, বাবা-মাকে হারিয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন পরিবারে ঠাঁই নিয়েছেন তার স্ত্রীও। মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী দেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে তিনি নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, আমরা বাবাকে পেয়ে আবেগে আপ্লূত। উনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, এটাই বড় পাওয়া। আমাদের পরিবারের সবাই খুশি। চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসা. সেলিনা আক্তার বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে জাহাঙ্গীর আলমের মতো যেন কেউ দেশের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে আমরাও সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করব। নরসিংদী সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জেনে বা না জেনে কেউই যেন জাহাঙ্গীর আলম বা তার পরিবারের মতো ভুল না করেন। দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। একটি ভুল যেন পরিবারের সারাজীবনের কান্না হয়ে না দাঁড়ায়।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের তৃতীয় দিন হিসেবে আগামী সোমবার (১৭ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামীসহ ১২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার (১৫ নভেম্বর) ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপের প্রথম পর্ব শুরু হয়ে চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। প্রথম পর্বে অংশ নেবে ছয়টি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট,বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল। দিনের দ্বিতীয় পর্বেও দুই ঘণ্টা ধরে ছয়টি দল অংশ নেবে আলোচনায়। এ পর্বে আলোচনায় থাকবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি (জাগপা)। ইসি প্রধান এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম দিনে ১২টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, রোববারও আরও ১২টি দলের সঙ্গে মতবিনিময় হবে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। ধাপে ধাপে সংলাপের সময়সূচি ও দলগুলোর নাম জানিয়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে গিয়ে প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন, হয়তো মারাই গেছেন জাহাঙ্গীর। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ দেড় যুগ। অবশেষে গত ৭ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন তিনি। তবে এতোদিনে বাবা-মা আর নেই, স্ত্রীও এখন অন্যের সংসারে। জানা গেছে, ৬৬ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম চরদিঘলদী ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। পেশায় জেলে ছিলেন। বিশাল মেঘনার বুকে মাছ ধরে জীবিকা চলত তার। সংসারে ছিলেন বাবা-মা, স্ত্রী ও চার সন্তান। দালালের খপ্পরে পড়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে অবৈধ পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জাহাঙ্গীরের। কিন্তু পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে পরিবার ধরে নেয়, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার জানান, গত ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করেন কাউন্সেলর (লেবার) সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। তিনি জানান, এক বাংলাদেশী সেখানে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তার কাছে পাসপোর্ট কিংবা আইডি কার্ড, কোনো ডকুমেন্টই নেই। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না। এতে তার নাম-পরিচয় কিছুই জানা যাচ্ছিল না। হাইকমিশন সম্প্রতি ওই ব্যক্তির ছবি দিয়ে পরিচয় জানতে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে নিজেদের স্বজন দাবি করে যোগাযোগ করলেও কেউই যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একই সময় নরসিংদী সদরের এক ব্যক্তি পোস্টের নিচে মন্তব্য করে জানান, লোকটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে পারেন। হাইকমিশন বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সহায়তায় খুঁজে পাওয়া যায় একটি পরিবারকে। কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই ব্যক্তিই ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত ভালো নয়- বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় সব নথি সংগ্রহ করে দ্রুততম সময়ে হাইকমিশনে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি ব্যয়ে দেশে পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি। দীর্ঘ দেড় যুগ পর গত ৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশে এসে দেখেন, বাবা-মাকে হারিয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন পরিবারে ঠাঁই নিয়েছেন তার স্ত্রীও। মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী দেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে তিনি নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, আমরা বাবাকে পেয়ে আবেগে আপ্লূত। উনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, এটাই বড় পাওয়া। আমাদের পরিবারের সবাই খুশি। চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসা. সেলিনা আক্তার বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে জাহাঙ্গীর আলমের মতো যেন কেউ দেশের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে আমরাও সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করব। নরসিংদী সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জেনে বা না জেনে কেউই যেন জাহাঙ্গীর আলম বা তার পরিবারের মতো ভুল না করেন। দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। একটি ভুল যেন পরিবারের সারাজীবনের কান্না হয়ে না দাঁড়ায়।
এশিয়ায় চালের বাজারে চাহিদা এখন কমতির দিকে। যদিও এর বিপরীতে নতুন মৌসুমের সরবরাহ বাড়ছে। এতে বিদায়ী সপ্তাহেও এখানকার বাজারে চালের দামে দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে পণ্যটির দাম নেমে এসেছে ১৮ বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে। খবর বিজনেস রেকর্ডার। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকরা ধান আবাদ কমাতে পারেন, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। থাইল্যান্ডে বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। এটি আগের সপ্তাহের ৩৩৮ ডলারের তুলনায় কিছুটা কম এবং এটি ২০০৭ সালের পর সর্বনিম্ন। ব্যাংককের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম দামে ভারত চাল সরবরাহ করছে। এ কারণে বিদেশী ক্রেতারা এখন খুব সামান্য পরিমাণে থাই চালের ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। এছাড়া খাদ্যশস্যটির দাম টানা কমতে থাকায় স্থানীয় কৃষকরা আগামী মৌসুমে আবাদ কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরো জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটিও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ভারতের বাজারেও নতুন ফসলের সরবরাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৪৪-৩৫০ ডলার। এ সময় একই মানের আতপ চালের দাম টনপ্রতি ৩৫০-৩৬০ ডলারে স্থিতিশীল ছিল। দিল্লিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, নতুন মৌসুমের সরবরাহ বাড়ায় স্থানীয়ভাবে চালের মূল্য আরো কমার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ভিয়েতনামে গত সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৪১৫-৪৩০ ডলারে স্থিতিশীল ছিল। হো চি মিন সিটির এক রফতানিকারক জানান, দাম কমানোর পরও নিম্নমুখী চাহিদার কারণে বিক্রি কমেছে। ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর দেশটি থেকে চাল রফতানি ৮৮ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এ ধর্মীয় সমাবেশ চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। মহাসম্মেলনের সংগঠকরা জানান, অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এই আয়োজন হলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ পাঁচ দেশের শীর্ষ আলেমরা অংশগ্রহণ করেছেন। শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। মঞ্চে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেকসহ দেশের শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিবিদরা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো মানুষ পায়ে হেঁটে, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস এবং মেট্রোরেলে সমাবেশস্থলে যোগ দেন। মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব করছেন সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক ও খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলমান গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দেশীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে সংস্থাটি রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ একটি বিবৃতিতে জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে তারা স্বাগত জানায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বকেও তারা ইতিবাচকভাবে দেখছে। সংস্থাটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত পরবর্তী ধাপে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) জানিয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিতে পূর্বের মতোই সমর্থন ও কারিগরি সহযোগিতা পেতে থাকবে। ডব্লিউটিওর উপমহাপরিচালক শিয়াংচেন ঝাং বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বাংলাদেশ সংস্থাটির কারিগরি সহায়তা অব্যাহতভাবে পাবে এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকেও উপকৃত হবে। তিনি জানান, ডব্লিউটিও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। এ ছাড়া এনহ্যান্সড ইন্টিগ্রেটেড ফ্রেমওয়ার্ক (ইআইএফ) এর মাধ্যমে যে সুবিধা বাংলাদেশ পেয়ে থাকে, এলডিসি উত্তরণের পরও আরও পাঁচ বছর তা বজায় থাকবে।
১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো সাড়ে সাত কিলোমিটারের ম্যারাথন। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের শীর্ষ এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সের প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন এই দৌড়ে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, সাধারণ মানুষকে শারীরিক ব্যায়াম ও নিয়মিত হাঁটার বিষয়ে উৎসাহিত করতেই এ আয়োজন। তিনি জানান, প্রতি বছর ডায়াবেটিস দিবসে এ ধরনের সচেতনমূলক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস রোগীই শুধু নয়, সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়তে হবে। প্রতিদিন কিছুটা হাঁটাই পারে ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে। ম্যারাথন শেষে চিকিৎসক এবং সাধারণ দুই ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন, প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপদের পুরস্কৃত করা হয়। অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হয় মেডেল ও সার্টিফিকেট। এই সচেতনতা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছে অপসোনিন ফার্মা এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করেছে আলট্রা ক্যাম্প রানার্স। দিনের এ আয়োজন শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দৈনন্দিন হাঁটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে।
হঠাৎ করেই পরিবর্তন আনা হলো ভারতীয় বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় গেম শো ‘দিদি নম্বর ১’ এর সঞ্চালনায়। বছরের পর বছর ধরে সঞ্চালনার মুকুট ধরে রাখা রচনা ব্যানার্জিকে হঠাৎই দেখা গেল বিদায়ের পথে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন নতুন এক মুখ। তিনি হলেন রেডিওর হাসির জাদুকর, ক্যারিশম্যাটিক উপস্থাপক মীর আফসার আলী। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ১’-এর নতুন প্রোমো প্রকাশ হওয়ার পরই দর্শকদের মধ্যে এই পরিবর্তন নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই শোয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রচনা ব্যানার্জির বদলে মীরকে দেখেই দর্শকরা অবাক হয়েছেন। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিবর্তন সাময়িক। জি বাংলার ফ্লোর ডিরেক্টর রাজীব ব্যানার্জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, অনুষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও রচনার সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মীর তাদের পরিচিত ও দীর্ঘদিনের সহযোগী হওয়ায় তাকেই সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রথমিক পর্যায়ে তিন পর্বের জন্য মীর উপস্থাপকের ভূমিকায় থাকবেন। এরপর রচনা ব্যানার্জি আবার ফিরে আসবেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, অভিনেত্রী ব্যক্তিগত কারণে (সম্ভাব্য বিদেশ ভ্রমণ) ছুটিতে থাকায় এই স্বল্পমেয়াদি রদবদল আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভক্তদের আশ্বস্ত করেছে যে, এই পরিবর্তন স্থায়ী নয় এবং খুব দ্রুতই দর্শকরা রচনাকে নতুন পর্বে দেখতে পাবেন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়া ভোররাতে ব্যাপক সমন্বিত আক্রমণ চালিয়েছে। একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আগুন ধরে যায়, সড়কে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসাবশেষ। এখনও হামলা চলমান। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন একজন পুরুষ ও এক গর্ভবতী নারী। পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর কিয়েভজুড়ে সক্রিয় হয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়েছে। শহরের বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহেও সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বহু ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়—অগ্নিকাণ্ড, ভেঙে পড়া ভবন, ধ্বংসস্তূপ এবং আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি। অনেকে শহর ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিয়েভ সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো জানান, রুশ বাহিনী আবাসিক ভবনগুলোকে টার্গেট করছে। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উভয়ই ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মেয়র ক্লিচকো আরও বলেন, হামলায় শহরের হিটিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি জেলায় তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ-পানির সেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে উদ্ধারকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন নেভানো ও আহতদের সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে কর্মকর্তাদের ধারণা, বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি। ট্রাম্পের ওপর নির্মিত ৬ পর্বের একটি প্রামান্যচিত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছিল, যাতে মনে হচ্ছিল ট্রাম্প সহিংসতার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ক্ষমা চাইলেও ক্ষতিপূরণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থাটি। এ ঘটনায় ট্রাম্পের আইনজীবী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তবে বিবিসির দাবি তারা ট্রাম্পের মানহানি হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ জানিয়েছেন, তারা হোয়াইট হাউজে চিঠি পাঠিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ওই প্রামাণ্যচিত্রে তার বক্তব্য যেভাবে কাটা ও সাজানো হয়েছিল, সেটির জন্য তারা দুঃখিত। একই সঙ্গে তারা বলেছে— এই প্রামাণ্যচিত্র আর কোনো প্ল্যাটফর্মে দেখানো হবে না। পরে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসিকে নোটিশ দিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা এবং সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিলেন। না হলে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলারের মামলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পকে নিয়ে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” বক্তব্য দেখানো হয়েছে। এই ঘটনায় বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেছেন। টার্নেস বলেছেন, বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব আমার কাঁধেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আশ্রয়নীতি অনুযায়ী, ইইউতে আসা আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টনের কথা রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি দেশকে আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করতে হবে, না হলে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে হবে। কিন্তু অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণের এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে জার্মানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ। এতে বলা হয়েছে, দেশটি ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে জার্মান পার্লামেন্টে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জার্মানিতে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে শরণার্থীর সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার কমেছে। ২০২৪ সালের শেষে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৫০ হাজার, সংখ্যাটি কমে এখন হয়েছে ৩৫ লাখ। শরণার্থীর এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে জার্মানিতে বিভিন্ন মর্যাদায় বসবাসের অনুমতি পাওয়া আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীরা। নতুন আসা আশ্রয়প্রার্থী থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে যারা দেশটিতে আছেন, তাদেরকেও রাখা হয়েছে এই তালিকায়। ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ডিপিএ-এর হাতে আসা নথিটি মূলত ইইউর অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার মাগনুস ব্রুনারের তথাকথিত ‘সংহতি পুল’ সম্পর্কিত বিশ্লেষণ। এই নথিতে ইঙ্গিত করা হয়েছে, জার্মানি যুক্তি দেখাতে পারে যে তারা ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের দায়িত্ব অন্য ইইউ রাষ্ট্রগুলোর হওয়া উচিত ছিল। ইইউর আশ্রয় সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত এই পুলের লক্ষ্য হলো অভিবাসন ইস্যুতে তীব্র চাপের মুখে থাকা বা সম্মুখসারির দেশগুলোর ওপর থেকে চাপ কমিয়ে আনা। এদিকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর অভিবাসন চাপ মোকাবিলায় বিশেষ সহায়তা পাবে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ গ্রিস, সাইপ্রাস, স্পেন ও ইতালি। মঙ্গলবার ইউরোপীয় কমিশন সংহতি ব্যবস্থার মূল দাবিদার হিসেবে এ চারটি দেশের নাম ঘোষণা করেছে। সামনের বছরগুলোতে বিপুল সংখ্যক আগমন বা গ্রহণ ব্যবস্থা নিয়ে চাপের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রথমবারের মতো উত্থাপন করা অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণটিকে ইইউর নতুন আশ্রয়নীতি বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দায়িত্বগুলো আরও ন্যায্যভাবে বণ্টন ও ভারসাম্যপূর্ণ করা। এখন ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো এসব বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ইনফোমাইগ্রেন্টস
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে আটক ৬ শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন এক ফেডারেল বিচারক। মানবাধিকার সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আদালতের এই রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন ও মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযানে আটক ৬১৫ জনকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন এক ফেডারেল বিচারক। বুধবার দেওয়া এই রায়ের পর আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যেই তাদের মুক্তি দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন জাস্টিস সেন্টার (এনআইজেসি) ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)–এর দাখিল করা মামলার রায়ে মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক জেফ্রি কামিংস এই আদেশ দেন। এই মামলায় বাদীপক্ষ অভিযোগ করেছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের “অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ” নামে পরিচালিত অভিযানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইসিই বেআইনিভাবে বহু মানুষকে আটক করেছে। এসিএলইউ ও এনআইজেসি জানায়, গত জুনে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৩ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ জন স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে ধারণা করছে সংগঠনটি। বিচারক কামিংসের নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক আটকাদেশ নেই এবং যারা সমাজের জন্য কোনো বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেন না, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। এনআইজেসি–এর আইনজীবী মার্ক ফ্লেমিং বলেন, “মোট ৬১৫ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। কারণ অনেকে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছেন।” অবশ্য মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর এই রায়ের তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। সংস্থার মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিটি ধাপে কিছু কর্মীসুলভ বিচারক, আশ্রয়প্রদানকারী রাজনীতিক ও সহিংস দাঙ্গাকারীরা আইন প্রয়োগে বাধা দিয়েছে। এখন একজন ‘অ্যাক্টিভিস্ট বিচারক’ ৬১৫ অবৈধ অভিবাসীকে মুক্তি দিয়ে মার্কিন নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।” অবশ্য স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি না সেটা এখনও জানায়নি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা শুক্রবার পর্যন্ত সময় চেয়ে রায়ের স্থগিতাদেশের আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।