ফলের মধ্যে ডালিমকে বলা হয় ‘রত্নভান্ডার’। শুধু লালচে দানাগুলো চোখের আরামই নয়, এর ভেতর লুকিয়ে আছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। প্রাচীনকাল থেকেই ডালিমকে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন নিয়ম করে এই ফলটি খেলে শরীরে ঘটে নানা ইতিবাচক পরিবর্তন।
১. হৃদ্যন্ত্র পায় বাড়তি সুরক্ষা
ডালিম হৃদ্যন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, টানা আট সপ্তাহ ডালিমের রস পান করলে রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে, আর ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বেড়ে যায়। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে এবং রক্তনালির প্রদাহ হ্রাস পায়।
২. ত্বকে আসে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা
ডালিম ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখে ও ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায়। এতে বলিরেখা হ্রাস পায় এবং ত্বক হয় মসৃণ ও উজ্জ্বল।
৩. শরীরের প্রদাহ কমে যায়
ডালিমে থাকা পিউনিকালাজিন নামক যৌগ প্রদাহবিরোধী হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত খেলে শরীরের প্রদাহ, ব্যথা ও ক্লান্তি কমে।
৪. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ডালিম বা এর রস গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি সেবনে শেখা ও মনে রাখার ক্ষমতাও উন্নত হয়।
৫. হজমশক্তি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ডালিম প্রাকৃতিক প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটিয়ে হজম প্রক্রিয়া মসৃণ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস–অম্বল দূর করে।
৬. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডালিম উপকারী। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৭. ব্যায়ামের পর দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে আনে
নিয়মিত ব্যায়ামকারীদের জন্য ডালিম প্রাকৃতিক রিকভারি ড্রিঙ্ক হিসেবে কাজ করে। এটি ক্লান্তি দূর করে, পেশির প্রদাহ কমায় ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
৮. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
একটি মাঝারি আকারের ডালিমে দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন–সি–এর প্রায় ৩২ শতাংশ থাকে। এতে থাকা ফোলেট, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি–কাশিসহ মৌসুমি অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।
৯. কিডনি ভালো রাখে ও টক্সিন দূর করে
ডালিম শরীরের খনিজ ভারসাম্য রক্ষা করে এবং কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমায়। এটি মূত্রতন্ত্র পরিষ্কার রাখে ও শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে।
১০. ওজন কমাতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে, টানা ৩০ দিন ডালিমের নির্যাস গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজন, রক্তে গ্লুকোজ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে।
সারকথা:
ডালিম শুধু একটি ফল নয়, এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ত্বক, হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক, কিডনি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই লালচে রত্ন যোগ করলেই আপনি নিজেই টের পাবেন পরিবর্তন।
সূত্র: এনডি টিভি
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা দক্ষিণের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন বলেছেন, বিগত সরকারের সময় প্রণীত তথাকথিত রাজাকারের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে ছিল জামায়াতে ইসলামী, যেখানে মোট ৩৬ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, ওই তালিকার শীর্ষে ছিল আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি এবং তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামীর এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের একটি বিষয় নিয়ে বারবার গালি দেওয়া হয়—আমরা নাকি রাজাকারের দল। যারা এ কথা বলেন, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বিগত সরকারের আমলে যখন বাংলাদেশে রাজাকারের তালিকা করা হয়, তখন সেই তালিকার শীর্ষে ছিল আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় অবস্থানে বিএনপি এবং তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টি। সুতরাং এই তিনটি দলকে বাদ দিয়ে রাজাকার শব্দ ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।” তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও দেশ কাঙ্ক্ষিতভাবে এগোতে পারেনি। স্বাধীনতার পরও অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে তিনি দুর্নীতিকে দায়ী করেন। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেন তিনি। জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বেলাল উদ্দিন প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন আহম্মদসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতারা।
শীতকালে শরীরে কিছু অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন দেখা দেয়, যা স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে স্ট্রোকজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এ সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তচাপের বেশি পার্থক্য স্ট্রোকের অন্যতম কারণছবি: পেক্সেলস কেন শীতে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে শীতকালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো— রক্তনালি সংকোচন ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর স্বাভাবিকভাবেই তাপ ধরে রাখতে চায়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ত্বকের কাছাকাছি রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে আসে। রক্তনালি সংকুচিত হলে রক্ত চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি হয়, ফলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তচাপের বেশি পার্থক্য স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি ঠান্ডা তাপমাত্রায় রক্ত স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ঘন এবং আঠালো হয়ে যায়। রক্ত ঘন হওয়ার কারণে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়। ইসকেমিক স্ট্রোকের (যেখানে রক্তনালিতে জমাট বাঁধে) ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ঝুঁকির কারণ। ভিটামিন ডির অভাব শীতকালে সূর্যের আলোর অভাব হওয়ায় শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি দেখা যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডির অভাব উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা পরোক্ষভাবে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ঠান্ডার কারণে অনেকেই এ সময় শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেন। ব্যায়ামের অভাব রক্ত সঞ্চালনকে ধীর করে দেয় এবং স্থূলতা ও অন্যান্য হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সংক্রমণের প্রভাব শীতকালে ফ্লু বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এসব সংক্রমণ শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। শীতকালে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এসব বিষয় মেনে চলুন— উষ্ণ থাকুন: শরীরকে যতটা সম্ভব উষ্ণ রাখুন। বাইরে বের হলে গরমকাপড়, টুপি, মাফলার ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে নিয়মিত তা পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। সক্রিয় থাকুন: ঠান্ডার অজুহাতে ব্যায়াম বন্ধ করবেন না। বাড়ির ভেতরে হালকা শরীরচর্চা বা রুটিন মেনে দিনের উষ্ণ সময়ে জগিং করুন। পর্যাপ্ত পানি খান: শীতকালে নিয়মিত পানি খেয়ে শরীর আর্দ্র রাখুন। শীতে সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কার্যকরভাবে কমানো সম্ভব।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়েছে ‘সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ’। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশ শুরুর আগেই শহীদ মিনার এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। দুপুরের পর থেকেই মঞ্চ প্রস্তুত, চেয়ার সাজানো ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে আয়োজন সম্পন্ন করা হয়। ধীরে ধীরে শহীদ মিনার চত্বর রূপ নেয় এক প্রতিবাদী জমায়েতে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা একের পর এক প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর করে তোলেন এলাকা। ‘আমরা সবাই হাদি হবো, অন্যায়ের মুখে কথা বলব’, ‘এক হাদি রক্ত দেবে, লক্ষ হাদির জন্ম নেবে’—এমন স্লোগানের পাশাপাশি ‘নারায়ে তাকবির—আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিত হতে থাকে। হামলার ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চে গান ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। এসব পরিবেশনায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা হয়। বক্তারা গান ও কবিতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার আহ্বান জানান। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। তারা শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি তোলেন। আয়োজকদের বক্তব্যে বলা হয়, এই সমাবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদী অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বলেন, রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তা কখনোই সহিংসতায় রূপ নিতে পারে না। শান্তিপূর্ণভাবে চলমান এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদী কণ্ঠে ন্যায়বিচার ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসানের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি অভ্যুত্থান-অনুপ্রাণিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি তিনি ঢাকার ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি এবং সেই লক্ষ্য সামনে রেখে নিয়মিত গণসংযোগ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোড এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা চালানো হয়। মোটরসাইকেলে আসা দুই আততায়ী চলন্ত রিকশায় থাকা হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটাপন্ন।