সর্বশেষ

সর্বশেষ সংবাদ
১৮ বছর ‘‌নিখোঁজ’ থাকার পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে দেখেন বাবা-মা নেই, স্ত্রী অন্যের সংসারে

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে গিয়ে প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন, হয়তো মারাই গেছেন জাহাঙ্গীর। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ দেড় যুগ। অবশেষে গত ৭ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন তিনি। তবে এতোদিনে বাবা-মা আর নেই, স্ত্রীও এখন অন্যের সংসারে।   জানা গেছে, ৬৬ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম চরদিঘলদী ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। পেশায় জেলে ছিলেন। বিশাল মেঘনার বুকে মাছ ধরে জীবিকা চলত তার। সংসারে ছিলেন বাবা-মা, স্ত্রী ও চার সন্তান। দালালের খপ্পরে পড়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে অবৈধ পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জাহাঙ্গীরের। কিন্তু পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে পরিবার ধরে নেয়, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার জানান, গত ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করেন কাউন্সেলর (লেবার) সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। তিনি জানান, এক বাংলাদেশী সেখানে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তার কাছে পাসপোর্ট কিংবা আইডি কার্ড, কোনো ডকুমেন্টই নেই। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না। এতে তার নাম-পরিচয় কিছুই জানা যাচ্ছিল না। হাইকমিশন সম্প্রতি ওই ব্যক্তির ছবি দিয়ে পরিচয় জানতে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে নিজেদের স্বজন দাবি করে যোগাযোগ করলেও কেউই যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একই সময় নরসিংদী সদরের এক ব্যক্তি পোস্টের নিচে মন্তব্য করে জানান, লোকটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে পারেন। হাইকমিশন বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সহায়তায় খুঁজে পাওয়া যায় একটি পরিবারকে। কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই ব্যক্তিই ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত ভালো নয়- বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় সব নথি সংগ্রহ করে দ্রুততম সময়ে হাইকমিশনে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি ব্যয়ে দেশে পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি। দীর্ঘ দেড় যুগ পর গত ৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশে এসে দেখেন, বাবা-মাকে হারিয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন পরিবারে ঠাঁই নিয়েছেন তার স্ত্রীও। মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী দেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে তিনি নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, আমরা বাবাকে পেয়ে আবেগে আপ্লূত। উনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, এটাই বড় পাওয়া। আমাদের পরিবারের সবাই খুশি। চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসা. সেলিনা আক্তার বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে জাহাঙ্গীর আলমের মতো যেন কেউ দেশের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে আমরাও সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করব।   নরসিংদী সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জেনে বা না জেনে কেউই যেন জাহাঙ্গীর আলম বা তার পরিবারের মতো ভুল না করেন। দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। একটি ভুল যেন পরিবারের সারাজীবনের কান্না হয়ে না দাঁড়ায়।

৯ মিনিট আগে
গণভোটের সামনে বাংলাদেশ : প্রত্যাশা, সংশয় ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

  বাংলাদেশ এক নতুন ইতিহাসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিনে আয়োজন করা হচ্ছে বহুল আলোচিত গণভোট, যার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদে উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারপ্রস্তাবগুলো নিয়ে জনগণের চূড়ান্ত মতামত যাচাই করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যে প্রশ্ন ঘোষণা করেছেন, সেটি মাত্র একটি হলেও এর ভেতর অব্যক্ত রয়েছে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন, সাংবিধানিক কাঠামোর রূপান্তর, রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য এবং জনগণের ভবিষ্যৎ-আকাঙ্ক্ষার অসংখ্য সূক্ষ্ম জটিলতা। প্রশ্নটি হলো, জনগণ জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি দেবে কি না। এই একটি প্রশ্নের মধ্যেই গুঁজে রাখা হয়েছে চারটি বড় প্রস্তাব, যেগুলোর প্রতিটিই স্বাধীনভাবে একটি সাংবিধানিক সংস্কার বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গণভোটে সেগুলোকে একত্র করে উপস্থাপন করায় ভোটারের কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি হয়ে উঠেছে আরও জটিল। প্রস্তাবগুলোকে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সংস্কারের ইচ্ছা থাকলেও প্রশ্নগুলো যে সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। প্রথম প্রস্তাবটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠনের বিষয়ে। এখানে শব্দবন্ধগুলো জনগণের পরিচিত হলেও ‘জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া’—এই অংশটি বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। কারণ সাধারণ ভোটার তো বটেই, অনেক সচেতন নাগরিকও সনদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানেন না। সনদটি পুরোপুরি প্রচারিত হয়নি; তার পদ্ধতি, দায়িত্ব ও প্রয়োগ কাঠামোও অনেকাংশে অস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট মানে আসলে কোন প্রক্রিয়াকে অনুমোদন-এটা কি গ্রামের কৃষক থেকে শহরের শিক্ষক পর্যন্ত সবাই বুঝতে পারবেন? গণভোটের প্রশ্ন যদি মানুষের অজ্ঞানতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে গণতন্ত্র সেখানে দুর্বলই হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত বহন করে। উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুই কক্ষ নীতি ও আইন প্রণয়নে ভারসাম্য রক্ষার ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ হবে ১০০ সদস্যের, এবং দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সেই সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে। এতে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে—এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্বিকক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কতটা সহজ হবে? আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ক্ষুদ্র বিষয়েও মতের অমিল দূর করা কঠিন। একটি উচ্চকক্ষ ও একটি নিম্নকক্ষের মধ্যে নীতিগত বা মতাদর্শগত অমিল দেখা দিলে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হলে ভবিষ্যতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আরও দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়ায় পরিণত হতে পারে। কিন্তু সাধারণ ভোটার কি দ্বিকক্ষের এই জটিল কাঠামো, এর ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কে অবগত? ‘উচ্চকক্ষ’ বা ‘দ্বিকক্ষ’—এসব শব্দ সাধারণ মানুষের কাছে এখনো বিমূর্ত। তারা যখন ভোট দিতে যাবেন, তখন কি জানবেন তাদের ভোটের প্রভাব কোথায় গিয়ে পড়বে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই। তৃতীয় প্রস্তাবে রয়েছে সবচেয়ে বিস্তৃত সংস্কারের তালিকা—নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং আরও নানা কাঠামোগত রূপান্তর। শুনতে নিঃসন্দেহে এটি একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীলনকশার মতো। কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো এসব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। কিন্তু জনগণের ভোটের ওপর দাঁড়ানো নির্বাচিত সরকারকে এভাবে আগেই বাধ্যবাধকতার কাঠামোর মধ্যে বেঁধে ফেলা কি গণতন্ত্রের মানসিকতার সঙ্গে যায়? আবার বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার বা সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন এটিকে অনেকেই ক্ষমতার ভারসাম্যের অংশ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটার কি গ্রহণ করবেন? যাকে তারা কম পছন্দ করে ভোট দেয়নি, তাকেই আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে? আরও বড় সমস্যা হলো, জুলাই সনদের ওই ৩০টি প্রস্তাব জনগণ কতটা জানেন? শহরের উচ্চশিক্ষিত ভোটার হয়তো খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করতে পারবে, কিন্তু গ্রামীণ বা কম-শিক্ষিত ভোটার কি জানবে এসবের সুফল-কার্যকারিতা? যদি তারা না জেনেই ভোট দেন, তাহলে গণভোট কার্যত জনগণের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। চতুর্থ প্রস্তাবটি সবচেয়ে বিমূর্ত। এতে বলা হয়েছে—রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্যান্য সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশ্ন হলো—এই ‘অন্যান্য সংস্কার’ কী? কে নির্ধারণ করবে? কোন দলের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হবে? জনগণ কি এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখবে? ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে ভোটার আসলে কোন অজানা সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মতি দিচ্ছেন? এই অস্পষ্টতা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বরং আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এখানেই গণভোটের বাস্তব সংকটগুলো সামনে আসে। প্রথমত, সাংবিধানিক পরিভাষা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। দ্বিকক্ষ, সংস্কার পরিষদ, অনুমোদন প্রক্রিয়া—এসব শব্দ যেন এক ধরনের প্রশাসনিক গোলকধাঁধা। দ্বিতীয়ত, এক প্রশ্নে চারটি ভিন্নমুখী কাঠামোগত প্রস্তাবের প্রতি হ্যাঁ বা না বলতে বলা হচ্ছে। যদি কোনো ভোটার দুটি বিষয়ে সম্মত এবং দুটি বিষয়ে অসম্মত হন, তাহলে তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেবেন? রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষও এখানে বিভ্রান্ত হবেন, প্রান্তিক জনগণের কথা তো বাদই দিলাম। তৃতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হওয়া যেমন সুবিধাজনক, তেমনি এতে রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে। নির্বাচন প্রচারণার উত্তাপে গণভোটের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনার প্রবণতা গণভোটেও একইভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া সংবিধানের ১৪২(১) অনুযায়ী সংবিধানের নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তনের জন্য সংসদের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি গণভোট ডাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংসদ গঠনের আগেই গণভোট আয়োজন কতটা সংবিধানসম্মত—এ বিষয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। সবকিছুর শেষে মূল সত্যটি হলো—গণভোট তখনই অর্থবহ হয়, যখন জনগণ জানে তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। প্রস্তাবগুলো যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অনেকাংশে সংকুচিত হয়ে গেছে। গণভোটকে সফল করতে হলে এখন প্রয়োজন স্বচ্ছ ব্যাখ্যা, বোধগম্য ভাষা এবং ব্যাপক গণশিক্ষা। গ্রামীণ ভোটার থেকে শহরের তরুণ—সবার কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে হবে প্রস্তাবগুলো কী, কেন প্রয়োজন, এবং এর ফল কী হবে। জুলাই সনদ ও গণভোট চাইলে নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কিন্তু যদি জনগণের বোঝাপড়া ছাড়া এটি কেবল রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়, তাহলে গণভোট পরিণত হবে সংখ্যার খেলা—যেখানে জনগণের কণ্ঠ নয়, প্রাধান্য পাবে কেবল রাজনৈতিক শক্তির হিসাব।

১ ঘন্টা আগে
এবার নভেম্বরেও সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা

শীতের শুরুতে সাধারণত কমতে শুরু করে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপদ্রব; কিন্তু এ ধারার ব্যত্যয় দেখা যায় গত বছর। সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত বছরজুড়ে ভর্তি হওয়া এক লাখ এক হাজার ২১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হন নভেম্বরে। এবারও যেন এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বর্ষা শেষে এরই মধ্যে শীতের আভাস মিলতে শুরু করলেও প্রকোপ কমছে না ডেঙ্গুর। উল্টো নিয়েছে ভয়াবহ রূপ। গত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতি মাসে দেড় গুণ হারে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। চলতি নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি রোগী, আর সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ৪৮ জন। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে। মৃত্যুও শতাধিক ছাড়ানোর শঙ্কা রয়েছে চিকিৎসকদের। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে। ফলে এডিস মশার প্রজনন চক্রও দীর্ঘ হয়েছে। সেইসঙ্গে মশক নিধনে নিষ্ক্রিয় কর্মসূচি, আগাম প্রস্তুতির অভাব এবং সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলায় ডেঙ্গু এখন আর বর্ষার রোগ হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছরই মানুষ রোগটিতে ভুগছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু নিয়ে গত আগস্টে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ৩৯ জনের। সেপ্টেম্বরে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৬৬ জনে, মৃত্যু হয় ৭৬ জনের। অক্টোবরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২২ হাজার ৫২০ জনে, মৃত্যু হয় ৮০ জন। আর চলতি নভেম্বরের দুই সপ্তাহে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ২০৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এডিস মশা নির্মূলের বিকল্প নেই। আমরা এখনো সে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারিনি। ফলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ এ মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। ডেঙ্গুকে মৌসুমি রোগ ভেবে হালকা করে দেখার সময় শেষ। তিনি বলেন, শুধু কীটনাশকের ধোঁয়া বা স্প্রে দিয়ে মশার প্রজনন রোধ সম্ভব নয়। কার্যকর প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন কমিউনিটি এনগেজমেন্ট, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ শুধু সরকারি দায়িত্ব নয়, প্রত্যেক নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। সর্বশেষ চিত্র: গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কারও মৃত্যু না হলেও এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬০ জন। এতে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৬৬ জনে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৩২৬ জনের। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৪৫ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে, ২৪ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৫, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৩, ঢাকা বিভাগে ৭১ ও সিলেট বিভাগে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হন।

২ ঘন্টা আগে
উত্তোলন বাড়লে জ্বালানি তেলের দাম কমবে কি?

চলতি বছর বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন আরও বাড়তে পারে। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পরিশোধিতসহ মোট উৎপাদন গড়ে দৈনিক ১০ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল হতে পারে, যা আগের পূর্বাভাসের তুলনায় এক লাখ ব্যারেল বেশি। একই সময়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১০ কোটি ৪১ লাখ ব্যারেলে। খবর রয়টার্সের। ইআইএ জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকার কারণে জ্বালানি তেলের মজুত ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মজুত হতে পারে ২৯৩ কোটি ব্যারেল এবং ২০২৬ সালের শেষ প্রান্তিকে ৩১৮ কোটি ব্যারেল পর্যন্ত পৌঁছাবে। সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের গড়মূল্য চলতি বছর ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলার ৭৬ সেন্ট হতে পারে, যা গত বছরের ৮০ ডলারের তুলনায় কম। মার্কিন বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) গড়মূল্য নেমে আসতে পারে ৬৫ ডলার ১৫ সেন্টে। যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেল উত্তোলন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এ বছর দেশটিতে গড়ে দৈনিক উৎপাদন হতে পারে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল, আর ২০২৬ সালে তা সামান্য কমে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল হতে পারে।

২ ঘন্টা আগে
ছবি : সংগৃহীত
জাতীয়
গণভোটের সামনে বাংলাদেশ : প্রত্যাশা, সংশয় ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

  বাংলাদেশ এক নতুন ইতিহাসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি একই দিনে আয়োজন করা হচ্ছে বহুল আলোচিত গণভোট, যার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদে উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারপ্রস্তাবগুলো নিয়ে জনগণের চূড়ান্ত মতামত যাচাই করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে যে প্রশ্ন ঘোষণা করেছেন, সেটি মাত্র একটি হলেও এর ভেতর অব্যক্ত রয়েছে রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন, সাংবিধানিক কাঠামোর রূপান্তর, রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য এবং জনগণের ভবিষ্যৎ-আকাঙ্ক্ষার অসংখ্য সূক্ষ্ম জটিলতা। প্রশ্নটি হলো, জনগণ জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি দেবে কি না। এই একটি প্রশ্নের মধ্যেই গুঁজে রাখা হয়েছে চারটি বড় প্রস্তাব, যেগুলোর প্রতিটিই স্বাধীনভাবে একটি সাংবিধানিক সংস্কার বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গণভোটে সেগুলোকে একত্র করে উপস্থাপন করায় ভোটারের কাছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি হয়ে উঠেছে আরও জটিল। প্রস্তাবগুলোকে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, সংস্কারের ইচ্ছা থাকলেও প্রশ্নগুলো যে সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে, সে নিশ্চয়তা নেই। প্রথম প্রস্তাবটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠনের বিষয়ে। এখানে শব্দবন্ধগুলো জনগণের পরিচিত হলেও ‘জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া’—এই অংশটি বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। কারণ সাধারণ ভোটার তো বটেই, অনেক সচেতন নাগরিকও সনদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানেন না। সনদটি পুরোপুরি প্রচারিত হয়নি; তার পদ্ধতি, দায়িত্ব ও প্রয়োগ কাঠামোও অনেকাংশে অস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে ‘হ্যাঁ’ ভোট মানে আসলে কোন প্রক্রিয়াকে অনুমোদন-এটা কি গ্রামের কৃষক থেকে শহরের শিক্ষক পর্যন্ত সবাই বুঝতে পারবেন? গণভোটের প্রশ্ন যদি মানুষের অজ্ঞানতার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে গণতন্ত্র সেখানে দুর্বলই হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের পরিকল্পনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত বহন করে। উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুই কক্ষ নীতি ও আইন প্রণয়নে ভারসাম্য রক্ষার ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ হবে ১০০ সদস্যের, এবং দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সেই সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত হবে। এতে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে—এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্বিকক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া কতটা সহজ হবে? আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ক্ষুদ্র বিষয়েও মতের অমিল দূর করা কঠিন। একটি উচ্চকক্ষ ও একটি নিম্নকক্ষের মধ্যে নীতিগত বা মতাদর্শগত অমিল দেখা দিলে আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হলে ভবিষ্যতে সাংবিধানিক পরিবর্তন আরও দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়ায় পরিণত হতে পারে। কিন্তু সাধারণ ভোটার কি দ্বিকক্ষের এই জটিল কাঠামো, এর ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কে অবগত? ‘উচ্চকক্ষ’ বা ‘দ্বিকক্ষ’—এসব শব্দ সাধারণ মানুষের কাছে এখনো বিমূর্ত। তারা যখন ভোট দিতে যাবেন, তখন কি জানবেন তাদের ভোটের প্রভাব কোথায় গিয়ে পড়বে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই। তৃতীয় প্রস্তাবে রয়েছে সবচেয়ে বিস্তৃত সংস্কারের তালিকা—নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা এবং আরও নানা কাঠামোগত রূপান্তর। শুনতে নিঃসন্দেহে এটি একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীলনকশার মতো। কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো এসব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। কিন্তু জনগণের ভোটের ওপর দাঁড়ানো নির্বাচিত সরকারকে এভাবে আগেই বাধ্যবাধকতার কাঠামোর মধ্যে বেঁধে ফেলা কি গণতন্ত্রের মানসিকতার সঙ্গে যায়? আবার বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার বা সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন এটিকে অনেকেই ক্ষমতার ভারসাম্যের অংশ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটার কি গ্রহণ করবেন? যাকে তারা কম পছন্দ করে ভোট দেয়নি, তাকেই আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হচ্ছে? আরও বড় সমস্যা হলো, জুলাই সনদের ওই ৩০টি প্রস্তাব জনগণ কতটা জানেন? শহরের উচ্চশিক্ষিত ভোটার হয়তো খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করতে পারবে, কিন্তু গ্রামীণ বা কম-শিক্ষিত ভোটার কি জানবে এসবের সুফল-কার্যকারিতা? যদি তারা না জেনেই ভোট দেন, তাহলে গণভোট কার্যত জনগণের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠবে। চতুর্থ প্রস্তাবটি সবচেয়ে বিমূর্ত। এতে বলা হয়েছে—রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্যান্য সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশ্ন হলো—এই ‘অন্যান্য সংস্কার’ কী? কে নির্ধারণ করবে? কোন দলের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হবে? জনগণ কি এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখবে? ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে ভোটার আসলে কোন অজানা সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মতি দিচ্ছেন? এই অস্পষ্টতা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে বরং আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এখানেই গণভোটের বাস্তব সংকটগুলো সামনে আসে। প্রথমত, সাংবিধানিক পরিভাষা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। দ্বিকক্ষ, সংস্কার পরিষদ, অনুমোদন প্রক্রিয়া—এসব শব্দ যেন এক ধরনের প্রশাসনিক গোলকধাঁধা। দ্বিতীয়ত, এক প্রশ্নে চারটি ভিন্নমুখী কাঠামোগত প্রস্তাবের প্রতি হ্যাঁ বা না বলতে বলা হচ্ছে। যদি কোনো ভোটার দুটি বিষয়ে সম্মত এবং দুটি বিষয়ে অসম্মত হন, তাহলে তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেবেন? রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষও এখানে বিভ্রান্ত হবেন, প্রান্তিক জনগণের কথা তো বাদই দিলাম। তৃতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট হওয়া যেমন সুবিধাজনক, তেমনি এতে রাজনৈতিক প্রভাবের আশঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠে। নির্বাচন প্রচারণার উত্তাপে গণভোটের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনার প্রবণতা গণভোটেও একইভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া সংবিধানের ১৪২(১) অনুযায়ী সংবিধানের নির্দিষ্ট অংশ পরিবর্তনের জন্য সংসদের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি গণভোট ডাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংসদ গঠনের আগেই গণভোট আয়োজন কতটা সংবিধানসম্মত—এ বিষয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। সবকিছুর শেষে মূল সত্যটি হলো—গণভোট তখনই অর্থবহ হয়, যখন জনগণ জানে তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। প্রস্তাবগুলো যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ অনেকাংশে সংকুচিত হয়ে গেছে। গণভোটকে সফল করতে হলে এখন প্রয়োজন স্বচ্ছ ব্যাখ্যা, বোধগম্য ভাষা এবং ব্যাপক গণশিক্ষা। গ্রামীণ ভোটার থেকে শহরের তরুণ—সবার কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে হবে প্রস্তাবগুলো কী, কেন প্রয়োজন, এবং এর ফল কী হবে। জুলাই সনদ ও গণভোট চাইলে নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কিন্তু যদি জনগণের বোঝাপড়া ছাড়া এটি কেবল রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়, তাহলে গণভোট পরিণত হবে সংখ্যার খেলা—যেখানে জনগণের কণ্ঠ নয়, প্রাধান্য পাবে কেবল রাজনৈতিক শক্তির হিসাব।

খবর৭১ ডেস্ক, নভেম্বর ১৫, ২০২৫ 0
ছবি : সংগৃহীত
১৮ বছর ‘‌নিখোঁজ’ থাকার পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে দেখেন বাবা-মা নেই, স্ত্রী অন্যের সংসারে

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন নরসিংদীর চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে গিয়ে প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন, হয়তো মারাই গেছেন জাহাঙ্গীর। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ দেড় যুগ। অবশেষে গত ৭ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন তিনি। তবে এতোদিনে বাবা-মা আর নেই, স্ত্রীও এখন অন্যের সংসারে।   জানা গেছে, ৬৬ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর আলম চরদিঘলদী ইউনিয়নের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। পেশায় জেলে ছিলেন। বিশাল মেঘনার বুকে মাছ ধরে জীবিকা চলত তার। সংসারে ছিলেন বাবা-মা, স্ত্রী ও চার সন্তান। দালালের খপ্পরে পড়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে রেখে অবৈধ পথে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। প্রবাস জীবনের প্রথমদিকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জাহাঙ্গীরের। কিন্তু পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন খোঁজ না পেয়ে পরিবার ধরে নেয়, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার জানান, গত ২১ অক্টোবর মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করেন কাউন্সেলর (লেবার) সৈয়দ শরীফুল ইসলাম। তিনি জানান, এক বাংলাদেশী সেখানে ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। তার কাছে পাসপোর্ট কিংবা আইডি কার্ড, কোনো ডকুমেন্টই নেই। অসুস্থতার কারণে কথা বলতে পারেন না। এতে তার নাম-পরিচয় কিছুই জানা যাচ্ছিল না। হাইকমিশন সম্প্রতি ওই ব্যক্তির ছবি দিয়ে পরিচয় জানতে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে নিজেদের স্বজন দাবি করে যোগাযোগ করলেও কেউই যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একই সময় নরসিংদী সদরের এক ব্যক্তি পোস্টের নিচে মন্তব্য করে জানান, লোকটি চরদিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে পারেন। হাইকমিশন বিষয়টি যাচাই করার অনুরোধ জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সহায়তায় খুঁজে পাওয়া যায় একটি পরিবারকে। কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই ব্যক্তিই ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়া গিয়ে নিখোঁজ হওয়া জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত ভালো নয়- বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় সব নথি সংগ্রহ করে দ্রুততম সময়ে হাইকমিশনে পাঠান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। আর্থিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি ব্যয়ে দেশে পাঠানোর অনুরোধও জানান তিনি। দীর্ঘ দেড় যুগ পর গত ৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম। পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। দেশে এসে দেখেন, বাবা-মাকে হারিয়েছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন পরিবারে ঠাঁই নিয়েছেন তার স্ত্রীও। মালয়েশিয়ায় অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়ে বছরের পর বছর জেলের দুর্বিষহ জীবনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীর। হারিয়েছেন বাকশক্তিও। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আবার কখনো অঝোরে কেঁদে ফেলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী দেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে তিনি নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে আমান উল্লাহ বলেন, আমরা বাবাকে পেয়ে আবেগে আপ্লূত। উনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন, এটাই বড় পাওয়া। আমাদের পরিবারের সবাই খুশি। চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোসা. সেলিনা আক্তার বলেন, আমাদের পরিষদ থেকে কিছু অর্থ দেয়া হয়েছে। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে জাহাঙ্গীর আলমের মতো যেন কেউ দেশের বাইরে না যায়, সে বিষয়ে আমরাও সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করব।   নরসিংদী সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, জেনে বা না জেনে কেউই যেন জাহাঙ্গীর আলম বা তার পরিবারের মতো ভুল না করেন। দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধ পথে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। একটি ভুল যেন পরিবারের সারাজীবনের কান্না হয়ে না দাঁড়ায়।

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৮ বছরের সর্বনিম্নে

এশিয়ায় চালের বাজারে চাহিদা এখন কমতির দিকে। যদিও এর বিপরীতে নতুন মৌসুমের সরবরাহ বাড়ছে। এতে বিদায়ী সপ্তাহেও এখানকার বাজারে চালের দামে দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে পণ্যটির দাম নেমে এসেছে ১৮ বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে। খবর বিজনেস রেকর্ডার। খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকরা ধান আবাদ কমাতে পারেন, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। থাইল্যান্ডে বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। এটি আগের সপ্তাহের ৩৩৮ ডলারের তুলনায় কিছুটা কম এবং এটি ২০০৭ সালের পর সর্বনিম্ন। ব্যাংককের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, থাইল্যান্ডের তুলনায় অনেক কম দামে ভারত চাল সরবরাহ করছে। এ কারণে বিদেশী ক্রেতারা এখন খুব সামান্য পরিমাণে থাই চালের ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। এছাড়া খাদ্যশস্যটির দাম টানা কমতে থাকায় স্থানীয় কৃষকরা আগামী মৌসুমে আবাদ কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরো জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটিও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ভারতের বাজারেও নতুন ফসলের সরবরাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহে দেশটিতে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত সেদ্ধ চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৪৪-৩৫০ ডলার। এ সময় একই মানের আতপ চালের দাম টনপ্রতি ৩৫০-৩৬০ ডলারে স্থিতিশীল ছিল। দিল্লিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, নতুন মৌসুমের সরবরাহ বাড়ায় স্থানীয়ভাবে চালের মূল্য আরো কমার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ভিয়েতনামে গত সপ্তাহে ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চাল টনপ্রতি ৪১৫-৪৩০ ডলারে স্থিতিশীল ছিল। হো চি মিন সিটির এক রফতানিকারক জানান, দাম কমানোর পরও নিম্নমুখী চাহিদার কারণে বিক্রি কমেছে। ভিয়েতনাম ফুড অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর দেশটি থেকে চাল রফতানি ৮৮ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।


ছবি: সংগৃহীত
বিচারকদের দুই দাবি না মানলে রোববার থেকে কলমবিরতি

দেশের সব আদালতে বিচারকের বাসস্থান ও যাতায়াতের সময় নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করাসহ দুই দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।   দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন বিচারকরা। তা না হলে আগামী রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে তারা একযোগে কলমবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।   শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।   বিচারকদের দ্বিতীয় দাবি হলো– রাজশাহীর ঘটনায় বিচারকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবহেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গ্রেপ্তার আসামিকে আইনবহির্ভূতভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে অপেশাদারিত্ব প্রদর্শনে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।   আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারকদের কর্মের পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি পূরণ না হলে রোববার থেকে সারা দেশে একযোগে কলমবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বিচারকরা।   বিবৃতিতে বিচারকরা বলেছেন, দেশের প্রত্যেক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন ও গাড়িতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।   বিচার বিভাগের সদস্যরা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেও তারা ও তাদের পরিবার নিরাপত্তাহীন বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। জেলা পর্যায়ের সব বিচারকের জন্য সরকারি আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা নেই বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। চৌকি আদালতে বিচারকদের বাধ্য হয়ে অরক্ষিত বাসায় ভাড়া থাকতে হয়, রিকশা-ভ্যানে করে, এমনকি হেঁটেও যাতায়াত করতে হয়।   রোববার দেশের সব বিচারক নিজ নিজ কর্মস্থলে কালো ব্যাজ পরবেন বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।

ছবি: সংগৃহীত
সুষ্ঠু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা জরুরি : সিইসি

 ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, সবার সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনের মূল খেলোয়াড় এবং নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষ রেফারি হিসেবে কাজ করতে চায়। এজন্য দলগুলোর সহযোগিতা অপরিহার্য।   সকালে শুরু হওয়া সংলাপে নিবন্ধিত ১২টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সিইসি জানান, বর্তমানে মোট ৫৪টি নিবন্ধিত দল রয়েছে এবং কমিশন সব দলের প্রতি সমান আচরণ করতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, এবার নির্বাচন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আউট অব কান্ট্রি ভোটিং, সরকারি কর্মচারীসহ নির্বাচনি কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের ভোটের ব্যবস্থা এসব অতিরিক্ত দায়িত্ব কমিশনের ওপর এসেছে। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারকে বড় সংকট উল্লেখ করে সিইসি দলগুলোর সহযোগিতা চান। পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে পোস্টার দিয়ে পুরো শহর ছেয়ে গেছে, অথচ আচরণবিধিতে পোস্টার নিষিদ্ধ। তপশিল ঘোষণার আগেই এসব পোস্টার সরানোর আহ্বান জানান তিনি। সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন উদ্বেগ ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য প্রার্থী হওয়া কঠিন হয়ে গেছে। কিছু দলের প্রতিনিধিরা সব আসনে ‘না’ ভোটের বিধান রাখার দাবি তোলেন। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেন, কিছু মহল নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কয়েকটি দল পোস্টার নিষিদ্ধের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জানায়, এতে নতুন ও ছোট দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা কমিশনের মাধ্যমে অভিন্ন ডিজাইনের পোস্টার ছাপানোর প্রস্তাব করে।   এদিকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানায় একটি দল, যারা অভিযোগ করে কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সন্ত্রাসী ব্যবহার করছে। তপশিল ঘোষণার আগেই নিরাপত্তা অভিযান চালানোর দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে জামানতের অর্থ বৃদ্ধি নিয়ে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সংলাপে আরও বিভিন্ন দল নির্বাচন পরিবেশ, প্রতীক পরিচিতি এবং আচরণবিধি প্রতিপালন নিয়ে মতামত তুলে ধরে। সংলাপ শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ছবি : সংগৃহীত
ডায়াবেটিস সচেতনতায় হাতিরঝিলে সাড়ে ৭ কিমি ম্যারাথন

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো সাড়ে সাত কিলোমিটারের ম্যারাথন। সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের শীর্ষ এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সের প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেন এই দৌড়ে।   আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, সাধারণ মানুষকে শারীরিক ব্যায়াম ও নিয়মিত হাঁটার বিষয়ে উৎসাহিত করতেই এ আয়োজন। তিনি জানান, প্রতি বছর ডায়াবেটিস দিবসে এ ধরনের সচেতনমূলক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস রোগীই শুধু নয়, সুস্থ থাকতে হলে সবাইকে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়তে হবে। প্রতিদিন কিছুটা হাঁটাই পারে ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে। ম্যারাথন শেষে চিকিৎসক এবং সাধারণ দুই ক্যাটাগরিতেই চ্যাম্পিয়ন, প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপদের পুরস্কৃত করা হয়। অংশগ্রহণকারী সবাইকে দেওয়া হয় মেডেল ও সার্টিফিকেট।   এই সচেতনতা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছে অপসোনিন ফার্মা এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করেছে আলট্রা ক্যাম্প রানার্স। দিনের এ আয়োজন শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে দৈনন্দিন হাঁটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে।

রচনা ব্যানার্জি ও মীর আফসার আলী I ছবি: সংগৃহীত
রচনার বিদায়ের পর নতুন দায়িত্বে মীর

হঠাৎ করেই পরিবর্তন আনা হলো ভারতীয় বাংলা টেলিভিশনের জনপ্রিয় গেম শো ‘দিদি নম্বর ১’ এর সঞ্চালনায়। বছরের পর বছর ধরে সঞ্চালনার মুকুট ধরে রাখা রচনা ব্যানার্জিকে হঠাৎই দেখা গেল বিদায়ের পথে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন নতুন এক মুখ। তিনি হলেন রেডিওর হাসির জাদুকর, ক্যারিশম্যাটিক উপস্থাপক মীর আফসার আলী।   ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দিদি নম্বর ১’-এর নতুন প্রোমো প্রকাশ হওয়ার পরই দর্শকদের মধ্যে এই পরিবর্তন নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই শোয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রচনা ব্যানার্জির বদলে মীরকে দেখেই দর্শকরা অবাক হয়েছেন। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিবর্তন সাময়িক। জি বাংলার ফ্লোর ডিরেক্টর রাজীব ব্যানার্জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, অনুষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ ও রচনার সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মীর তাদের পরিচিত ও দীর্ঘদিনের সহযোগী হওয়ায় তাকেই সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।   জানা গেছে, প্রথমিক পর্যায়ে তিন পর্বের জন্য মীর উপস্থাপকের ভূমিকায় থাকবেন। এরপর রচনা ব্যানার্জি আবার ফিরে আসবেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, অভিনেত্রী ব্যক্তিগত কারণে (সম্ভাব্য বিদেশ ভ্রমণ) ছুটিতে থাকায় এই স্বল্পমেয়াদি রদবদল আনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভক্তদের আশ্বস্ত করেছে যে, এই পরিবর্তন স্থায়ী নয় এবং খুব দ্রুতই দর্শকরা রচনাকে নতুন পর্বে দেখতে পাবেন।

নিউজ ক্লিপস

খেলাধুলা

  • অন্যান্য খেলা
  • হকি
  • ফুটবল
  • ক্রিকেট

জনপ্রিয় সংবাদ

মতামত

আন্তর্জাতিক

আরও দেখুন
ছবি : সংগৃহীত
কিয়েভে রাশিয়ার ব্যাপক হামলা, একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ
খবর৭১ ডেস্ক, নভেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়া ভোররাতে ব্যাপক সমন্বিত আক্রমণ চালিয়েছে। একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আগুন ধরে যায়, সড়কে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংসাবশেষ। এখনও হামলা চলমান।   কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন একজন পুরুষ ও এক গর্ভবতী নারী। পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর কিয়েভজুড়ে সক্রিয় হয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রশাসন জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়েছে। শহরের বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহেও সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বহু ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়—অগ্নিকাণ্ড, ভেঙে পড়া ভবন, ধ্বংসস্তূপ এবং আতঙ্কিত মানুষের ছুটোছুটি। অনেকে শহর ছেড়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিয়েভ সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো জানান, রুশ বাহিনী আবাসিক ভবনগুলোকে টার্গেট করছে। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র উভয়ই ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মেয়র ক্লিচকো আরও বলেন, হামলায় শহরের হিটিং সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি জেলায় তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ-পানির সেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।   এদিকে উদ্ধারকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে আগুন নেভানো ও আহতদের সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে কর্মকর্তাদের ধারণা, বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইল বিবিসি
খবর৭১ ডেস্ক, নভেম্বর ১৪, ২০২৫ 0

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি। ট্রাম্পের ওপর নির্মিত ৬ পর্বের একটি প্রামান্যচিত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছিল, যাতে মনে হচ্ছিল ট্রাম্প সহিংসতার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ক্ষমা চাইলেও ক্ষতিপূরণ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থাটি।   এ ঘটনায় ট্রাম্পের আইনজীবী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তবে বিবিসির দাবি তারা ট্রাম্পের মানহানি হওয়ার মতো কিছু খুঁজে পায়নি।   বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ জানিয়েছেন, তারা হোয়াইট হাউজে চিঠি পাঠিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ওই প্রামাণ্যচিত্রে তার বক্তব্য যেভাবে কাটা ও সাজানো হয়েছিল, সেটির জন্য তারা দুঃখিত। একই সঙ্গে তারা বলেছে— এই প্রামাণ্যচিত্র আর কোনো প্ল্যাটফর্মে দেখানো হবে না।   পরে ট্রাম্পের আইনজীবীরা বিবিসিকে নোটিশ দিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা এবং সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিলেন। না হলে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন ডলারের মামলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তাদের অভিযোগ, প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পকে নিয়ে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” বক্তব্য দেখানো হয়েছে।   এই ঘটনায় বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি এবং বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেস পদত্যাগ করেছেন। টার্নেস বলেছেন, বিবিসি নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব আমার কাঁধেই।

ছবি: সংগৃহীত
অভিবাসী গ্রহণ থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে জার্মানি
খবর৭১ ডেস্ক, নভেম্বর ১৩, ২০২৫ 0

  ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন আশ্রয়নীতি অনুযায়ী, ইইউতে আসা আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ন্যায্যভাবে বন্টনের কথা রয়েছে।   অর্থাৎ প্রতিটি দেশকে আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করতে হবে, না হলে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে হবে। কিন্তু অন্তত আগামী বছর পর্যন্ত আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণের এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে জার্মানি।   ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ। এতে বলা হয়েছে, দেশটি ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।    গত সেপ্টেম্বরে জার্মান পার্লামেন্টে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জার্মানিতে ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে শরণার্থীর সংখ্যা অন্তত ৫০ হাজার কমেছে। ২০২৪ সালের শেষে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৫০ হাজার, সংখ্যাটি কমে এখন হয়েছে ৩৫ লাখ।   শরণার্থীর এই সংখ্যার মধ্যে রয়েছে জার্মানিতে বিভিন্ন মর্যাদায় বসবাসের অনুমতি পাওয়া আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীরা। নতুন আসা আশ্রয়প্রার্থী থেকে শুরু করে দীর্ঘদিন ধরে যারা দেশটিতে আছেন, তাদেরকেও রাখা হয়েছে এই তালিকায়। ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।   ডিপিএ-এর হাতে আসা নথিটি মূলত ইইউর অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার মাগনুস ব্রুনারের তথাকথিত ‘সংহতি পুল’ সম্পর্কিত বিশ্লেষণ। এই নথিতে ইঙ্গিত করা হয়েছে, জার্মানি যুক্তি দেখাতে পারে যে তারা ইতোমধ্যেই বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের দায়িত্ব অন্য ইইউ রাষ্ট্রগুলোর হওয়া উচিত ছিল।   ইইউর আশ্রয় সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত এই পুলের লক্ষ্য হলো অভিবাসন ইস্যুতে তীব্র চাপের মুখে থাকা বা সম্মুখসারির দেশগুলোর ওপর থেকে চাপ কমিয়ে আনা।   এদিকে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর অভিবাসন চাপ মোকাবিলায় বিশেষ সহায়তা পাবে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ গ্রিস, সাইপ্রাস, স্পেন ও ইতালি। মঙ্গলবার ইউরোপীয় কমিশন সংহতি ব্যবস্থার মূল দাবিদার হিসেবে এ চারটি দেশের নাম ঘোষণা করেছে।   সামনের বছরগুলোতে বিপুল সংখ্যক আগমন বা গ্রহণ ব্যবস্থা নিয়ে চাপের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস।   সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রথমবারের মতো উত্থাপন করা অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণটিকে ইইউর নতুন আশ্রয়নীতি বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দায়িত্বগুলো আরও ন্যায্যভাবে বণ্টন ও ভারসাম্যপূর্ণ করা।   এখন ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো এসব বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ইনফোমাইগ্রেন্টস

ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে আটক ৬ শতাধিক অভিবাসীকে মুক্তির নির্দেশ আদালতের
খবর৭১ ডেস্ক, নভেম্বর ১৩, ২০২৫ 0

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে আটক ৬ শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন এক ফেডারেল বিচারক। মানবাধিকার সংস্থার আবেদনের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে।   অবশ্য আদালতের এই রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন ও মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।   সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযানে আটক ৬১৫ জনকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন এক ফেডারেল বিচারক। বুধবার দেওয়া এই রায়ের পর আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যেই তাদের মুক্তি দিতে হবে।   যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন জাস্টিস সেন্টার (এনআইজেসি) ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)–এর দাখিল করা মামলার রায়ে মার্কিন জেলা আদালতের বিচারক জেফ্রি কামিংস এই আদেশ দেন। এই মামলায় বাদীপক্ষ অভিযোগ করেছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের “অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ” নামে পরিচালিত অভিযানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইসিই বেআইনিভাবে বহু মানুষকে আটক করেছে।   এসিএলইউ ও এনআইজেসি জানায়, গত জুনে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৩ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ জন স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে ধারণা করছে সংগঠনটি।   বিচারক কামিংসের নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাধ্যতামূলক আটকাদেশ নেই এবং যারা সমাজের জন্য কোনো বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেন না, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।   এনআইজেসি–এর আইনজীবী মার্ক ফ্লেমিং বলেন, “মোট ৬১৫ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। কারণ অনেকে দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছেন।”   অবশ্য মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর এই রায়ের তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে।   সংস্থার মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতিটি ধাপে কিছু কর্মীসুলভ বিচারক, আশ্রয়প্রদানকারী রাজনীতিক ও সহিংস দাঙ্গাকারীরা আইন প্রয়োগে বাধা দিয়েছে। এখন একজন ‘অ্যাক্টিভিস্ট বিচারক’ ৬১৫ অবৈধ অভিবাসীকে মুক্তি দিয়ে মার্কিন নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।”   অবশ্য স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি না সেটা এখনও জানায়নি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা শুক্রবার পর্যন্ত সময় চেয়ে রায়ের স্থগিতাদেশের আবেদন করেছেন।

আমাদের অনুসরণ করুন

ট্রেন্ডিং

হাইকোর্টের রুল জারি, কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি কেন অবৈধ নয়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে। 

অক্টোবর ২২, ২০২৫
বিনোদন
অন্যান্য
সর্বশেষ
জাতীয়

অর্থনীতি
সারাদেশ
টেলিকম ও প্রযুক্তি
প্রবাসী