মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে সৈয়দপুর উপজেলার ১২৬টি খামার প্রায় ২০ হাজার পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রেখেছে। এছাড়াও এনজিও এবং ব্যক্তিগত উদ্যেগে আরও ১৫ হাজারের অধিক পশু বিক্রির জন্য লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে পশুর বাজার জমে না উঠলেও বেচাবিক্রি ভালোই হচ্ছে। ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু আসা বন্ধ হলে দাম ভালোই পাবেন বলে আশা খামার মালিকদের। কোরবানীর ঈদে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা পশুর কদর থাকায় খামারীরা ওই উপায় অবলম্বন করছেন। তারা প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করছেন পশু। ঈদের বাজার ধরতে তাই খামারে খামারে এখন চলছে পশু মোটাতাজা করার ব্যস্ততা। খামারীরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে ঈদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সৈয়দপুর প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলা নিবনন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ১২৬টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে বড় খামার। উপজেলায় এ বছর কোরবানীর জন্য ৪০ হাজারেরও অধিক গরু খামারী ও গৃহস্থ পরিবারে প্রস্তুত রয়েছে। এসব গরু মোটাতাজা করণে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হৃষ্টপুষ্ট গরুর চাহিদা থাকায় খামারীরা এই পদ্ধতি অনুসরন করছেন। প্রাণী সম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকেও নিয়মিত পরামর্শ ও তদারকি করা হচ্ছে। এতে করে গোটা উপজেলার খামারীরা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু মোটাতাজা করেছেন। এ ক্ষেত্রে দেশী ও শংকর জাতের গরু সর্বাধিক।
সরেজমিনে শহরের বাঁশবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ইউসুফ ডেইরী ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, শহরের শেষ প্রান্তে বিশাল জায়গায় গড়ে উঠেছে এ ফার্ম। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে গরু-ছাগলের লালন পালন চলছে। খামার জুড়ে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন ফলজ বাগান। সঙ্গে রয়েছে উন্নত ঘাস আবাদের জমি। জমিতে শোভাচ্ছে উন্নত জাতের ঘাস। এ ফার্মের মালিক তরুণ উদ্যেক্তা জামিল আশরাফ মিন্টু। খামার সম্পর্কে খামারী মিন্টু জানান, কোরবানীর ঈদে পশুর চাহিদা মেটাতে তার খামারে ১৫৪ টি ষাড় ও গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে ৫০টি ছাগল। এর মধ্যে ৫৬টি গরু ও ২১টি বিক্রি হয়ে গেছে। ঢাকার বন্ধু খামার ২৫টি গরু ও ১০ ছাগল কিনেছে এবং স্থানীয় ক্রেতারা কিনেছে আরও ৪২টি গরু ও ছাগল। খামারে সর্বনি¤œ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ছাগলও রয়েছে ১০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের। গরু-ছাগল বিক্রি শেষে ক্রেতাদের দেয়া হচ্ছে পশুর স্বাস্থ্য সনদ। এ বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা পশু বিক্রির টার্গেট রয়েছে তার। মিন্টু জানান, তার খামারে গরু-ছাগল মোটাতাজা করণে কোন ওষুধ, ইনজেকশন বা হরমন জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়না। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক উপায়ে গরু ছাগল মোটা তাজা করা হয়েছে। এতে খরচ বাড়লেও ক্রেতারা স্বাস্থ্যসম্মত গরু-ছাগল কিনতে কার্পণ্য করছেন না। তারা বেশী দাম দিয়েই কিনছেন পশু। পশুর রোগ বালাইয়ের চিকিৎসায় জন্য নিয়োজিত আছেন একজন পশু ডাক্তার। তার তত্ত্বাবধানে পশুর স্বাস্থ্য সনদ দেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। মিন্টু তার খামার ব্যবসার শুরুর ইতিবৃত্ত তুলে ধরে বলেন, ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে তিনি শুরু করেন খামার ব্যবসা। বাবা শাহাব উদ্দিন ও চাচা সাবেক কমিশনার মোস্তফা কামালের প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক ব্যবসার বাইরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন এই খামার। কেবল মনোবলের উপর ভর করে সাফল্য পাওয়ার পর তার আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরই খামারের পরিধি বাড়ছে, বাড়ছে গরু-ছাগলের সংখ্যা। গত ৫/৬ বছর খামার পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি এখন পুরেমাত্রা একজন সফল খামারী হয়ে উঠেছেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান, শহরের বাসা বাড়িতে পশু রাখার জায়গা না থাকলে তার খামারে পশু রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কেউ চাইলে পশু কোরবানী পর্যন্ত করে দেয়া হয়। সফল খামারী মিন্টু একজন রোটারিয়ান, মানবিক সেবায় তার বহু অবদান রয়েছে। একজন সফল খামারী হিসাবে পুরষ্কৃত হয়েছেন একাধিক বার। সর্বশেষ পুরষ্কার পান ‘আমার কুড়ি’ জাতীয় সংগঠনের মহান বিজয় দিবস সম্মাননা পদক। সফল ব্যবসায়ী ও সমাজসেবায় অবদান রাখায় তাকে দেয়া হয় ওই পদক। তিনি জানান, তার খামারের সুনাম এখন দেশ জুড়ে। ইতোমধ্যে তার খামার পরিদর্শন করেছেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বেসরকারী ও এনজিওর বহু বিশিষ্টজন। এছাড়াও তার খামার দেখতে প্রতিদিনই আসেন দূর দূরান্তের অসংখ্য মানুষ। গরু খামারের পাশাপাশি প্রায় সোয়া দুই বিঘা জমির উপর তিনটি পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করেছেন। সেই সাথে ৭ শতক জমির উপর গড়ে তুলেছেন পেঁপের বাগান। এ বাগান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০/৪০ মণ পেঁপে বাজারে বিক্রয় করছেন। এছাড়া আম, লিচু, কাঁঠালসহ অন্যান্য বাগানও রয়েছে তার। তার এ উদ্যোগে একদিকে যেমন আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন মিন্টু তেমনি তার প্রতিষ্ঠানে ২০টি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।