গণমাধ্যমের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর প্রকাশ্য হামলার দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে, যা একটি জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক ও উদ্বেগজনক বিষয়। এ ধরনের ঘটনা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এক বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে সংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন—এটাই স্বাভাবিক ও স্বীকৃত বিষয়। অথচ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, তবে তা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা জনগণের কথা তুলে ধরেন, অন্যায় ও অনিয়মের চিত্র সামনে আনেন। সেই গণমাধ্যমের ওপর হামলা মানে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা। এটি শুধু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো সমাজের বিরুদ্ধে আঘাত।
সালাহউদ্দিন হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
তিনি দাবি করেন, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সাংবাদিকরা যেন ভয়ভীতি বা চাপের মুখে না পড়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। অন্যথায় গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে।
বিবৃতির শেষাংশে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি সভ্য রাষ্ট্রে ভিন্নমত ও সমালোচনাকে সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হয়। গণমাধ্যমকে শত্রু নয়, বরং রাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে দেখতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, পত্রিকা সমাজের দর্পণ হলেও বর্তমানে সেই দর্পণ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে যেভাবে পরিকল্পিত হামলা হয়েছে, তা জাতির জন্য গভীর লজ্জার বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। রোববার ঢাকায় সম্পাদক, বার্তা প্রধান ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের পর তারেক রহমানের শিগগিরই ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে টার্গেটেড হামলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। এ ধরনের ঘটনার আশঙ্কা আগে থেকেই অনুমান করা উচিত ছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, গণতন্ত্র চাওয়ার কথা বলা হলেও কেন কিছু স্থানে মবোক্রেসিকে প্রশ্রয় দেওয়া হলো। গণতন্ত্রের নামে বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা লালন করা কেন গ্রহণযোগ্য হবে—সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেন, গণমাধ্যম স্থাপনায় যেভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে, সেই দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু গণমাধ্যমের ওপর আঘাত নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তিকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এমন ঘটনার পূর্বাভাস গোয়েন্দা প্রতিবেদনে থাকার কথা এবং তা ছিল বলেও জানা গেছে। তা সত্ত্বেও কেন সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে দেখা গেছে—সে বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই এ ধরনের সহিংসতা ঘটেছে। এসব ঘটনা কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গণমাধ্যমের ওপর সংঘটিত হামলার ঘটনা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর প্রকাশ্য হামলার দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে, যা একটি জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক ও উদ্বেগজনক বিষয়। এ ধরনের ঘটনা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এক বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে সংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন—এটাই স্বাভাবিক ও স্বীকৃত বিষয়। অথচ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়, তবে তা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারা জনগণের কথা তুলে ধরেন, অন্যায় ও অনিয়মের চিত্র সামনে আনেন। সেই গণমাধ্যমের ওপর হামলা মানে জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা। এটি শুধু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়, বরং পুরো সমাজের বিরুদ্ধে আঘাত। সালাহউদ্দিন হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলেও তিনি সতর্ক করেন। তিনি দাবি করেন, গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সাংবাদিকরা যেন ভয়ভীতি বা চাপের মুখে না পড়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। অন্যথায় গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে। বিবৃতির শেষাংশে সালাহউদ্দিন বলেন, একটি সভ্য রাষ্ট্রে ভিন্নমত ও সমালোচনাকে সহ্য করার মানসিকতা থাকতে হয়। গণমাধ্যমকে শত্রু নয়, বরং রাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে দেখতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শীতের ভরা মৌসুম চললেও রাজধানীর কাঁচাবাজারে ফেরেনি স্বস্তি। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে চাল-ডাল ও ভোজ্যতেলসহ সবজিবাজারে পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ থাকলেও দামের ভারে নাজেহাল ক্রেতারা। সেই সঙ্গে এখনো দাম কমেনি পেঁয়াজের। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যা এমন চিত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, টমেটো, গাজর, মুলাসহ শীতকালীন সবজির কোনো ঘাটতি নেই। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি সবজির দাম তুলনামূলক বেশি। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। বাজারভেদে টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। গাজর, শিম ও বরবটির কেজিও অনেক জায়গায় ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে নামছে না। শালগমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পালংশাকের এক আঁটি কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা, আর লালশাক ও মুলাশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আঁটি দরে। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং এক হালি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। মাছের বাজারেও দামের চাপ কমেনি। মাঝারি আকারের রুই মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা এবং শোল মাছের দাম উঠেছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। চিংড়ি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা। মাংসের বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় নেমেছে। মাছ ও মুরগির বাজার বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুদি বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও খোলা আতপ চালের দাম এখনো চড়া। দুই সপ্তাহ ধরে এই চাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজার আড়তে বাজার করতে আসা জেসমিন আরা বলেন, এখন বাজারে গেলে সবচেয়ে কঠিন হয় হিসাব মেলানো। শীতের সবজি থাকার পরও দাম এত বেশি কেন—সেটাই বুঝি না। এর সঙ্গে পেঁয়াজের দাম কমছে না। ভরা মৌসুমে যদি দাম এমন হয় তবে আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে খেতে পারবে। আরেকজন ক্রেতা ফিরোজ মাহমুদ জানান, বেতন বাড়েনি কিন্তু বাজার খরচ নিয়মিত বাড়ছে, এতে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়ত থেকেই বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হওয়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পরিবহণ ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধিও দামের ওপর প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে জাতীয় নির্বাচন, অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতা সামাল দিতে ব্যস্ত সরকার। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মৌসুমের শেষ সময়ে বাড়তি মুনাফা আদায়ে সক্রিয় হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের বাজারে কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব মানতে নারাজ। সরকার আমদানি বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুড়িকাটা ও পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পুরোনো পেঁয়াজও রয়েছে। অর্থাৎ বাস্তবে পেঁয়াজের কোনো বড় সংকট নেই। তবুও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবমিলিয়ে শীত এলেও কাঁচাবাজারে শীতলতা নেই দামের ক্ষেত্রে। ক্রেতাদের প্রত্যাশা—বাজারে কার্যকর তদারকি ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দামে স্থিতিশীলতা ফিরুক, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়।