পরিবেশ দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে হাজারীবাগ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। সেখানে গাড়ির কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ৮টি গাড়ির চালককে মোট ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অঞ্চল–৪ এর আওতাধীন বাবুবাজার ও আশপাশের এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সালেহ মুস্তানজিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৬৯ ধারা এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ৯২ উপধারা অনুযায়ী মোট ১৪টি মামলায় ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। ডিএসসিসি জানিয়েছে, জনস্বার্থে দূষণবিরোধী এসব অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে এবং পরিবেশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি চলবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ঐতিহাসিকভাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ভয়ংকর শত্রু হিসেবে পরিচিত। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসনের অবসানের পর রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পূর্ণ পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আমাদের নিরলস সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ওই বাণীতে তারেক রহমান বলেন, ৬ ডিসেম্বর একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৯০ সালের এই দিনে রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবসান হয়েছিল স্বৈরশাসনের। এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পেশাগত শপথ ভেঙে অস্ত্রের মুখে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। ধ্বংস করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি—যার সূচনা করেছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার হাতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছিল ধ্বংসস্তূপে পরিণত। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ নয় বছর আপসহীন নেতৃত্ব ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বেই গড়ে ওঠে দুর্বার গণআন্দোলন। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তিতে পরাজিত হয় স্বৈরাচার, মুক্ত হয় গণতন্ত্র। সেই অর্জিত চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা আবারও পরাস্ত করেছে এক হিংস্র ফ্যাসিবাদী শক্তিকে। ঐতিহাসিকভাবেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি—এ কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের পতনের পর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াই চলমান রাখতে হবে। তারেক রহমান আরও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অবিরাম জেল-জুলুম ও নানামাত্রিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে। নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার আশু সুস্থতা কামনা করেন তিনি। একইসঙ্গে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর চালানো অবিচার, নির্যাতন ও সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনার কথাও স্মরণ করেন তিনি। সবশেষে তারেক রহমান বলেন, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। এই স্মরণীয় দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী দেশবাসীকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। গণতন্ত্রবিরোধী পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান রোধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে জার্মানি থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকায় পৌঁছাবে। এরপর শনিবার সন্ধ্যা বা রাতে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হতে পারে অ্যাম্বুলেন্সটি। ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। শনিবার বিকেলে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জার্মান প্রাইভেট এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কোম্পানি ‘এফএআই রেন্ট এ জেট জিএমবিএইচ’-এর সিএল৬০ (বোম্বার্ডিয়ার চ্যালেঞ্জার ৬০০ সিরিজ) জেট খালেদা জিয়াকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বিমানটি ঢাকা থেকে জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসি হয়ে সরাসরি লন্ডন যাবে। শনিবার বিকেলে বা রাতে অ্যাম্বুলেন্সটির খালেদা জিয়াকে নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কাতার রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি থাকায় কাতারের আমির তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন, যা শনিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় অবতরণ করবে। তিনি অবশ্য দাবি করেন, এখন যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসছে সেটিও কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু জার্মান কোম্পানির তৈরি। কাতার জার্মানি থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে না। খালেদা জিয়াকে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে লন্ডনে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময় গতকাল মধ্যরাতে (বৃহস্পতিবার) কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসেনি। আজ সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে। তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ায় তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। গত রোববার ভোরের দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এসডিইউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমে বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দেন। কোথাও কোথাও বিদ্যালয়ে তালা লাগানোর ঘটনাও ঘটে। মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা সত্ত্বেও আন্দোলন চলতে থাকায় প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে বহু শিক্ষককে ইতিমধ্যে শোকজ করা হয়েছে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনকে অন্য জেলায় বদলিও করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কারা আন্দোলনের নেপথ্যে ছিলেন বা উসকানি দিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ অমান্য করলে চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু ওই রাতেই সহকারী শিক্ষকদের একটি অংশ পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরদিন বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৫ জনসহ মোট ৪২ সহকারী শিক্ষককে পাশের জেলায় বদলির আদেশ দেয়। এতে তারা আর নিজ জেলার কর্মস্থলে থাকতে পারবেন না। বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদেরও শোকজ করা হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে নোয়াখালীতে, যেখানে ২৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে জেলার সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়। শোকজে বলা হয়, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক, কিন্তু শিক্ষকরা নির্দেশনা অমান্য করেছেন এবং পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করেছেন। বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনাও ‘দায়িত্বহীন আচরণ’ বলে উল্লেখ করা হয়। তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বদলি ও শোকজের পর বৃহস্পতিবার রাতে সহকারী শিক্ষকরা বিবৃতি দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। জানানো হয়, আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষকদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। কাউকে আন্দোলনে বাধ্য করা হয়েছে কি না এবং পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে কি না তাও তদন্ত করা হবে। আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাস্তির বিধান সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী শৃঙ্খলাভঙ্গ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন শাস্তি তিরস্কার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বরখাস্ত পর্যন্ত শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। আইনে বলা আছে লঘু শাস্তির মধ্যে রয়েছে তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন স্কেলে অবনমন এবং ক্ষতিপূরণ আদায়। গুরু শাস্তির মধ্যে রয়েছে নিম্ন পদে অবনমন, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ এবং বরখাস্ত।
কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ (শুক্রবার) ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে না। সব ঠিক থাকলে এটি আগামীকাল শনিবার আসতে পারে। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে লন্ডন নেওয়া হতে পারে। শুক্রবার সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আগমন বিলম্বিত হয়েছে। তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার পৌঁছালে এবং মেডিকেল বোর্ড অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে ৭ তারিখ যাত্রা করানো হবে। এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর তার ফ্লাইট ছেড়ে যায়। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও চোখের নানা জটিলতায় ভুগছেন। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের টুকচাঁনপুর চরপাড়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লুন্দিয়া চরপাড়া মেঘনা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১৫ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা গুরুতর অবস্থায় থাকা ১২ জনকে দ্রুত ঢাকা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেন। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, খাবার বিক্রি শেষে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান দোকানি জহির মিয়া। তবে তিনি অসাবধানতাবশত গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটরের সুইচ বন্ধ করেননি। দোকানটি তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে গ্যাস জমে যায়। একপর্যায়ে সৃষ্ট আগুন মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দোকানের সামনে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী ও পথচারী আগুনে দগ্ধ হন। স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে আগুন নেভাতে সহায়তা করেন এবং আহতদের হাসপাতালে নেন। দগ্ধদের পরিচয়: হারুন মিয়া (৪০), সোহাগ মিয়া (১০), ওয়াসিবুল (১০), সামিউল (৯), আল আমিন (৮), শুভ (৮), নিরব (১৫), রাহাত (১২), ফাহিম (১০), আমিন (১০), হেকিম মিয়া (৫৫), সেরাজুল (১০), ছিদ্দিক মিয়া (৫৮), মোর্শিদ মিয়া (৫৫) ও নাছির মিয়া (৪০)। এদের মধ্যে হারুন মিয়ার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যক্ষদর্শী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দোকান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ আগুন রাস্তার দিকে ধেয়ে এলে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে দেখতে পান কয়েকজন আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। দ্রুত সবাই মিলে আহতদের হাসপাতালে পাঠান। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. কিশোর কুমার ধর জানান, মোট ১৫ জন দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসে। এর মধ্যে ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। একজনের ৮০ শতাংশ দগ্ধ, বাকিদের ২০–৩০ শতাংশ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনজনকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে একটি সিংহ বাইরে বের হয়ে গেছে। সিংহটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আঘাত করেনি সিংহটি। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মাঠ এরিয়ার একটি খাঁচা থেকে একটি সিংহ পৌনে ৫টার দিকে বাইরে বের হয়েছে, এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সিংহটি এখন পর্যন্ত খাচার পাশে শুয়ে আছে। আমাদের একাধিক গানম্যান পজিশন নিয়ে আছে। একটু মুভ করলেই শুট করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, সিংহ এখন পর্যন্ত কাউকে আঘাত করেনি। আমরা চারদিকে কর্ডন করে আছি। ভয়ের কোনো কারণ নেই।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর আবারো আলোচনায় এসেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি ইজারাগ্রহীতা হিসেবে বিমানকে আংশিকভাবে দায়ী করেছে এবং সংস্থাটির কার্যক্রম শুধু ফ্লাইট পরিচালনায় সীমিত রাখার পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব দক্ষ অপারেটরের কাছে দেয়ার সুপারিশ করেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে বিমানকে পুরোপুরি সরিয়ে না দিয়ে বিকল্প অপারেটর যুক্ত করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরির দিকেই ঝুঁকছে সরকার। তবে এ সুপারিশের সঙ্গে একমত নন বেশ কিছু এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দায়ী হলেও বিমানের ব্যবসা সীমিত করে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তাদের দাবি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে সেবা–সংকট বহুদিনের হলেও এর সমাধান হতে পারে দক্ষ বিকল্প অপারেটর যুক্ত করা; বিমানের কর্মকাণ্ড কমিয়ে দেয়া নয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালেও দুই বছরের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমানের ওপর নীতিগতভাবে দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কার্গো পরিষেবা, বিএফসিসির মাধ্যমে ইন-ফ্লাইট ক্যাটারিং, পোল্ট্রি কমপ্লেক্স, এবং বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টার (বিএটিসি) পরিচালনাসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু বাণিজ্যিক শাখা রয়েছে। তদন্ত কমিটি যদিও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে বিমানকে সরিয়ে দেয়ার সুপারিশ করেছে, তবে অন্যান্য বাণিজ্যিক ইউনিট নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি। বিমানের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন একচেটিয়া ক্ষমতা কোনো প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে দেয়, তাই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় প্রতিযোগিতা আনার বিকল্প নেই। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবাকে কেন্দ্র করে অভিযোগও কম নয় যেমন: ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের অপেশাদারিত্ব, লাগেজ হারানো ও চুরি, চেকইন–চেকআউট ঝামেলা থেকে শুরু করে স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। সাম্প্রতিক এক জরিপে যাত্রীদের ৯৭ শতাংশই সেবার মানে অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। বিদেশী এয়ারলাইনসও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার হিসেবে বিমানের বিকল্প চায়। শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জরিপে দেখা গেছে, তৃতীয় টার্মিনালে ৯৩ শতাংশ এয়ারলাইনস একাধিক অপারেটর চায়। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম মনে করেন, “বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান—তার কোন ব্যবসা থাকবে, কোনটা থাকবে না এভাবে বেঁধে দেওয়া অযৌক্তিক। দায় থাকলে জবাবদিহি হবে, কিন্তু তার ব্যবসা সীমিত করে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।” তিনি আরও বলেন, “৫০ বছরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিকল্প অপারেটর তৈরি করা হয়নি, এটা একটা বড় ব্যর্থতা। বিমান প্রতিষ্ঠান হিসেবে দোষী নয়; যারা পরিচালনা করেছেন তাদের জবাবদিহি করা প্রয়োজন। কার্যক্রম সীমিত করা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল ৫টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, কাতার রাজপরিবারের পূর্বনির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় কাতারের আমির তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিকল্প আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। নতুন এ অ্যাম্বুলেন্সটিও কাতারের, তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির। তিনি আরও পরিষ্কার করে বলেন, কাতার জার্মানি থেকে আলাদা কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে না—এটি কাতারেরই অ্যাম্বুলেন্স, শুধু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জার্মান। এদিকে খালেদা জিয়াকে নিতে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দেশে পৌঁছে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশযাত্রার উপযোগী বলে মত দেয়, তাহলে আগামী রোববার (৭ ডিসেম্বর) তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়তে পারেন।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কমপ্লিট শাটডাউন ও কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে নোয়াখালীর ২৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষককে শোকজ নোটিশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত নাসিমা হাবীব পৃথকভাবে তাদের এই নোটিশ দেন। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বার্ষিক মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পরীক্ষা নেননি। বরং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং বিদ্যালয়ে তালা লাগানো হয়েছে, যা দায়িত্বহীন আচরণ। নোটিশে আরও বলা হয়, এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন শিক্ষকরা। রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা নেবেন তারা।
জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে দিন দিন বাড়ছে বায়ুদূষণ। দীর্ঘদিন ধরে মেগাসিটি ঢাকার বাতাসও দূষিত। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে ঢাকার বায়ুমান কিছুটা উন্নতির দিকে থাকলেও আজ ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য জানা যায়। ২৭৫ স্কোর নিয়ে আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ভারতের রাজধানী ‘দিল্লি’, যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। একই সময় ২৫২ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ‘ঢাকা’। এদিকে ২৪২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মিশরের শহর ‘কায়রো’, যা এখানকার বাতাসের মান নাগরিকদের জন্য ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’। আইকিউএয়ার স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়, আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা আইকিউএয়ার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে। যেমন—বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)। বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
আজ শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন এলাকায় অনুষ্ঠিত ১৫তম প্রজাপতি মেলার দৃশ্য এটি। প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর এই মেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা। এবারের প্রজাপতি মেলার স্লোগান ছিল ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’। মেলা উপলক্ষে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদেরও ভিড় বাড়তে থাকে। অভিভাবকদের হাত ধরে মেলায় এসেছিল শিশু-কিশোরেরাও। হাতে ছিল নানা রঙের ফেস্টুন। কেউ কেউ পরেছিল মুখোশ। কারও গালে আঁকা প্রজাপতি। তরুণ-তরুণীরা এসেছিলেন শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে। বাদ যাননি প্রবীণ ব্যক্তিরাও। প্রজাপতির ডানার আদলে তৈরি জামা পরে বাবা শহীদুল ইসলামের হাত ধরে মেলায় এসেছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আনিকা ইসলাম। সে বলে, ‘প্রজাপতি দেখেছি, ভালো লাগছে। অনেক প্রজাপতি দেখেছি। প্রজাপতির ডানা আছে, আমারও ডানা আছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলেন, ‘প্রজাপতি আমাদের সংরক্ষণ করা যে দরকার, সেটা এ মেলায় আসলে আমাদের আবারও স্মরণ করা হয়।’ দিনব্যাপী এ মেলায় আরও ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি ওড়ানো, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা। মেলা উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, প্রজাপতির গল্প নিয়ে পুতুলনাচের (পাপেট শো) আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১১টায় মেলা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ কামরুল আহসান। প্রজাপতি সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখায় এবারের মেলায় ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় বিশিষ্ট বন্য প্রাণী বিশারদ ও সংরক্ষণবিদ আলী রেজা খানকে। এ ছাড়া যৌথভাবে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রাব্বি ও নূরে আফসারীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কমেছে প্রজাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি ছিল। ২০১৩ সালে প্রজাপতির প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১০০। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২৩ সালে একটি গবেষণা জরিপে ৭০ প্রজাতির প্রজাপতির অস্তিত্ব পান প্রজাপতি গবেষণায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশদূষণ ও প্রজাপতির বাসস্থান ধ্বংসের কারণে প্রজাপতি বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করেন প্রাণী গবেষকেরা। প্রজাপতি মেলার আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রজাপতি মেলার মূল উদ্দেশ্য, প্রজাপতি থাকলে পরাগায়ন হবে এবং আমরা পরিবেশকে ভালো রাখতে পারব। ১৫ বছর আমরা এই মেলা ধরে রেখেছি এবং সর্বস্তরের মানুষ এখানে আসছে। এটি প্রমাণ করে, প্রজাপতি টিকে থাকবে, থাকা উচিত। আমরা সংরক্ষণ করব এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখব।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করলেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে। আজ শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন মসজিদের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথাগুলো বলেন। এর আগে মসজিদে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকেরা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, চিকিৎসকেরা আশা করছেন আগামীকাল (শনিবার) কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে এসে পৌঁছালে রোববার তাঁকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের আরও বলেন, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ ধরে খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উচ্চমানের চিকিৎসকেরা তাঁর চিকিৎসা করছেন। তবে এই চিকিৎসা আরও উন্নত হাসপাতালে করা প্রয়োজন বলে সবাই মনে করছেন। সে কারণে তাঁকে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারারুদ্ধ করে রেখেছিল বলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই বছর তাঁকে নির্জন, পুরোনো কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করেন, সেখান থেকেই তাঁর রোগের সূচনা হয়। চিকিৎসার অভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনার সময় থেকে গত চার বছর তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি সুস্থ হলেও কিছুদিন আগে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাইতুল মামুর জামে মসজিদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুক্রবার আর্থিক অনুদান মসজিদ কমিটির হাতে তুলে দেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোঃ রফিকূল ইসলাম। একইসাথে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি চেয়ে বাদ জুম্মা একই মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়। এসময় ডা. রফিক উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে বিএনপির চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্যর জন্য দোয়া কামনা করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ডা. এস এম শহীদুল হাসান বাবু, ডা. জাহিদুল কবির, ডা. সায়েম আল মনসুর ফায়েজি, ডা. শরিফুল ইসলাম, ডা. তারিক আব্দুল্লাহ পিয়াল, ডা. বেলাল হোসেন নাজিম, ডা. আতিক, ডা. নিশাত, ডা. পিয়াস, ডা. মমি, ডা. সাব্বির, ঈশিকসহ বিভিন্ন মেডিকেলের চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ও বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকূল ইসলামের তত্ত্বাবধানে গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর ২ দিন ব্যাপি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয় যাতে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। মেডিকেল ক্যাম্প চলাকালীন গত ২৮ নভেম্বর বাদ জুম্মা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া আয়োজন করা হয় বাইতুল মামুর জামে মসজিদে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টা তৎক্ষণাৎ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হলে তিনি মসজিদ সংস্কারের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বিপন্ন প্রজাতির একটি শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে খাবারের সন্ধানে বা পথভ্রষ্ট হয়ে শকুনটি এখানে চলে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পশ্চিম ধনিরাম সরকার পাড়া এলাকায় বাঁশঝাড়ের নিচে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা শকুনটিকে উদ্ধার করে। প্রচণ্ড শীত ও দুর্বলতার কারণে শকুনটি নিচে পড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। খবর ছড়িয়ে পড়তেই একনজর দেখতে শিশু-কিশোরসহ উৎসুক জনতার ভিড় জমে। স্থানীয় আতিকুর রহমান জানান, সকালে বাঁশঝাড়ে শকুনটিকে পড়ে থাকতে দেখি। পরে সেটিকে উদ্ধার করে প্রাণিসম্পদ অফিসে নেওয়া হয়। ফুলবাড়ী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক জানান, শকুনটি বয়স্ক। ধারণা করা হচ্ছে ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে খাবারের সন্ধানে বা পথভ্রষ্ট হয়ে এখানে চলে এসেছে। এর শরীরে শুকনো ঘা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর বিকেলে রংপুর বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশে শকুন এখন অতি বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্যের অভাব, পরিবেশগত বিপর্যয় ও মানুষের নানা কর্মকাণ্ডে এ বিরল প্রজাতিটি বিলুপ্তির পথে।
দিনাজপুরে ফুলবাড়ী পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে (৫ ডিসেম্বর) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদাররা ফুলবাড়ী ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। ফুলবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ ইসলাম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকাল থেকে কোরআন খতম ও বাদ জুম্মা উপজেলার প্রত্যেক মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে যেন কোনো সংঘাত সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি। ২৪ মার্চ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। ২৬ মার্চ দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞের খবরে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই দিন সকাল থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী শহরে বের হয় এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে রেলস্টেশন থেকে কাঁটাবাড়ী বিহারীপট্টি হয়ে বাজারে ফেরার পথে বিহারীপট্টিতে মিছিলকে লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি বর্ষণ করলে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। ২ এপ্রিলের পাক- হানাদার বাহিনী ফুলবাড়ীতে আক্রমন করে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙালিদের ওপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে হানাদারমুক্ত করার জন্য ৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে মিত্র বাহিনী বেতদিঘী, কাজিহাল, এলুয়াড়ী, জলপাইতলী, পানিকাটা, রুদ্রানী, আমড়া ও রানীনগর এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে চর্তুমুখী আক্রমণ চালায়। মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ফুলবাড়ী শহরে তাদের প্রবেশ ঠেকাতে ওই দিন রাত ১২টার পর ছোট যমুনা নদীর ওপর লোহার ব্রিজটির পূর্বাংশ শক্তিশালী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ব্রিজ ধ্বংসের কারণে মিত্র বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে প্রবেশ করতে দেরি হয়। আর এই সুযোগে পাক বাহিনী বিশেষ ট্রেনে করে ফুলবাড়ী থেকে ৫ ডিসেম্বর ভোরে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। ট্রেনটি ধ্বংস করতে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি মর্টারশেল নিক্ষেপ করলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০ নম্বর ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নানা কারণে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার ও সাবেক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা মনসুর আলী সরকার জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ হয়। ৫ ডিসেম্বর ভোরে পরাজয় নিশ্চিত ভেবে হানাদারেরা ফুলবাড়ী ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ৫ ডিসেম্বরই ফুলবাড়ী মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জরুরি মেরামত, সংরক্ষণ এবং গাছের ডালপালা কাটার কাজের জন্য শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আম্বরখানা উপকেন্দ্রের ফিডারের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১১ কেভি বালুচর, সেনপাড়া ও শিবগঞ্জ ফিডারের আওতাধীন ট্রান্সফরমারগুলোর জরুরি মেরামত ও গাছের ডালপালা কাটার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নিম্নোক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে না— ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোড, আম্বরখানা পয়েন্ট, রায়হুসেন গলি, মজুমদারী, সৈয়দমুগনী, লেচুবাগান, পীর মহল্লা (পূর্ব ও পশ্চিম), হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ আ/এ, দরগাহ গেইট, চন্দনটুলা, ঘূর্ণি আ/এ, দরগাহ মহল্লা, গৌর গোবিন্দ টিলা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, পুরানলেন, লালবাজার, জল্লারপাড়, স্টেডিয়াম মার্কেট, মিয়া ফাজিলচিস্ত, পিটিআই, সুবিদবাজার, বনকলপাড়া, কলবাখানী, চাষনীপীরের মাজার রোড, গোয়াইপাড়া, শাহী ঈদগাহ, হাজারীবাগ, টিবি গেইট, উঁচা সড়ক, কাহের মিয়ার গলি, মক্তব গলি, কাজীটুলা, মীরবক্সটুলা, তাঁতিপাড়া ও আশপাশের এলাকা। এ ছাড়া সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না শান্তিবাগ আ/এ, সোনার বাংলা আ/এ, নতুন বাজার, আল-ইসলাহ, আরামবাগ, বালুচর ছড়ারপাড়, ফোকাস, জোনাকী, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আলুরতল, সেনপাড়া, শিবগঞ্জ, ভাটাটিকর, সাদিপুর, টিলাগড়, গোপালটিলা, এমসি কলেজ এলাকা, সবুজবাগ, বোরহানবাগ, হাতিমবাগ, লামাপাড়া, রাজপাড়া ও আশপাশের এলাকায়। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হলে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর দেশের সব মসজিদে দলীয় উদ্যোগে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি মসজিদে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম জিয়া গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। কারাগার থেকেই তার অসুস্থতার শুরু। যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ।’ তিনি আরও জানান, ‘আগামীকাল কাতার থেকে পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছালে রোববার বেগম জিয়াকে লন্ডনে নেওয়া হতে পারে। তবে তিনি ভ্রমণের উপযোগী কিনা—সে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।’ রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ এ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। পাশাপাশি দেশনেত্রীর সুস্থতা কামনায় মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়।
গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ দেশের নানা এলাকায় মাটি কেঁপে উঠেছে একাধিকবার। হঠাৎ এ কম্পন মানুষের মনে তৈরি করেছে এক অদৃশ্য আতঙ্ক—যেন অজানা কোনো দানব ঘাপটি মেরে বসে আছে। ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরেও অনেকের মনে হচ্ছে দুলুনি পুরোপুরি থামেনি, কিংবা বিছানা যেন নড়ছে বা ঘরটা আবার টলমল করছে। এ অদ্ভুত অনুভূতির একটি নাম আছে, একে বলা হয় 'ফ্যান্টম আর্থকোয়েক সেনসেশন'। এটি মূলত দেহের ভারসাম্যব্যবস্থা ও মনের আতঙ্ক–স্মৃতির মিলনে তৈরি হওয়া একটি মনস্তাত্ত্বিক ও স্নায়ুবৈজ্ঞানিক প্রতিক্রিয়া। কেন এটি হয়? আমাদের মস্তিষ্ক আর ভেস্টিবুলার সিস্টেম, যা কানের ভেতরে ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে, এ দুটো মিলে আমাদের সংকেত দেয় আমরা স্থির নাকি নড়াচড়া করছি। ভূমিকম্পের সময় এ দুই অংশ একসঙ্গে জরুরি সতর্কতায় চলে যায়। কানের ভেতরের সংকেত বেড়ে যায়, পেশি শক্ত হয়ে থাকে, চোখ–কান–ত্বক প্রতিটি ইন্দ্রিয় নড়াচড়া বোঝার চেষ্টা করে। এ অতিরিক্ত সচেতনতা সেই মুহূর্তে জরুরি, এটি আমাদের বাঁচতে সাহায্য করে। কিন্তু কম্পন থেমে যাওয়ার পরও স্নায়ুতন্ত্রের সেই ‘হাই অ্যালার্ট’ অবস্থা সহজে কমে না। তখন খুব ক্ষুদ্র অনুভূতিও যেমন হৃদস্পন্দন, উঁচু ভবনের স্বাভাবিক দোল, এমনকি শ্বাসের সামান্য ওঠানামা মস্তিষ্ক ভুল করে আবার ভূমিকম্পের সংকেত হিসেবে ধরে। তার সঙ্গে যোগ হয় স্মৃতি আর ভয়: মস্তিষ্ক প্রশ্ন তোলে,'আরেকটা কম্পন কি আসছে?' এ শারীরিক অতিসংবেদনশীলতা আর মানসিক আশঙ্কার মিলেই তৈরি হয় এই ফ্যান্টম আর্থকোয়েক সেনসেশন। কতদিন থাকে? বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এ অনুভূতি কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই কমে যায়। সময়ের সঙ্গে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বুঝে ফেলে 'এখন আর মাটি কাঁপছে না'। কিন্তু যারা ভয়াবহ কম্পন টের পেয়েছেন, বারবার আফটারশক দেখেছেন, অথবা চরম আতঙ্কের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। খুব অল্পসংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে এ অনুভূতি কয়েক মাসও টিকে থেকে ঘুম, কাজ, মনোযোগ বা দৈনন্দিন কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে পারে। যখন দুলুনির অনুভূতির সঙ্গে তীব্র দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক, মনোসংযোগে সমস্যা বা ঘুমের ব্যাঘাত যোগ হয়, তখন বুঝতে হবে মানসিক দিকটি—যেমন আকস্মিক মানসিক চাপ বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস আপনার দৈন্দিন জীবনকে ব্যাপক প্রভাবিত করছে কি না। এ পর্যায়ে বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন। কী করলে উপশম হতে পারে? বাড়িতে বসেই সাধারণ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়, যেগুলো দেহ–মনের ভারসাম্য ফেরাতে সাহায্য করে— • হালকা শরীরচর্চা অর্থাৎ হাঁটা, স্ট্রেচিং, ধীর গতির যোগব্যায়াম শরীরকে স্বাভাবিক নড়াচড়ার অনুভূতি ফিরিয়ে দেয় এবং মস্তিষ্ককে নতুন করে ভারসাম্য শেখায়। * স্থির কোনো জিনিসে চোখ রাখা- গাছ, দরজার ফ্রেম বা দেয়ালের একটি বিন্দুর দিকে ৩০–৬০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকা মস্তিষ্কের ভুল 'নড়াচড়ার সংকেত' থামাতে সাহায্য করে। * ক্যাফেইন কমানো- এগুলো মাথা হালকা লাগা ও দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে; কমালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। * পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম- স্নায়ুতন্ত্রকে স্বাভাবিক করতে ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস উপকার দেয়। * ধীর শ্বাস–প্রশ্বাস ও গ্রাউন্ডিং- ৪ সেকেন্ডে শ্বাস নেওয়া ও ৬ সেকেন্ডে ছাড়ার মতো কৌশল, পায়ের তলার মাটি অনুভব করা, বা আশপাশের জিনিসকে জোরে বলে বর্ণনা করা (চেয়ারটা এখানে, জানালাটা বাঁ পাশে) * বারবার খোঁজ নেওয়া কমানো- প্রতি মিনিটে খবর দেখা বা কম্পন টের পাওয়ার চেষ্টা করা মস্তিষ্ককে সতর্ক অবস্থায় আটকে রাখে। নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে খবর দেখাই ভালো। * মানুষের সঙ্গে কথা বলা- অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলে আতঙ্ক কমে। যদি ভূমিকম্পের পরও মনে হয় পৃথিবী নড়ছে, জেনে রাখুন, আপনার দেহ ঠিক তার কাজটাই করছে, শুধু একটু বেশি সংবেদনশীল হয়ে গেছে। বিশ্রাম, হালকা নড়াচড়া, সঠিক শ্বাস–প্রশ্বাস, পরিবারের সঙ্গ, আর প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্যে অধিকাংশ মানুষই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর যদি এ অনুভূতি আপনাকে দৈনন্দিন জীবন থেকে দূরে সরাতে থাকে, সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না,এটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সবচেয়ে সাহসী ও বাস্তবিক পদক্ষেপ।
আমি ২০০৮ সালে একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ছিলাম। তখন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার কয়েকবার মতবিনিময়ের (ইন্টারঅ্যাকশন) সুযোগ হয়েছিল। আমি ২০০৮ সালে একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে ছিলাম। তখন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার কয়েকবার মতবিনিময়ের (ইন্টারঅ্যাকশন) সুযোগ হয়েছিল। আমি উনাকে দেখেছি অত্যন্ত দৃঢ় ও সজ্জন একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে। বলা যায়, উনি কোনো কিছুই হালকাভাবে করতেন না। এখানে অবশ্যই বলে নিতে হয় যে উনার সঙ্গে আমার যতটুকু মতবিনিময় হয়েছে, সেটি ছিল সীমিত পরিসরে। বেগম খালেদা জিয়াকে আমি একজন উঁচুদরের রাজনীতিক হিসেবেই উপলব্ধি করেছি। তিনি তার ধারণা ও নীতিতে যথেষ্ট অবিচল। একই সঙ্গে তাকে আমি আলাপ-আলোচনায় আগ্রহী মানুষ হিসেবেও দেখেছি। সুষ্ঠুভাবে এগোনোর পথে যদি কোনো পরামর্শের বিষয় আসত, সেগুলো দিতে তিনি কখনো পিছপা হতেন না। আজ তিনি জীবনের এক ধরনের সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছেন। আমি দোয়া করছি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। উনার যে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা, তিনি তার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তার সেই কষ্ট আমরা দেখেছি এবং এক অর্থে সেটা ছিল অন্যায়ভাবে দেয়া কষ্ট। এ কষ্ট আসলে তার প্রাপ্য ছিল না। তার যে জীবন, তাতে করে এ কষ্ট প্রাপ্য ছিল না। আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে আনবেন এ দোয়া করছি, কারণ তার আরো অনেক কিছু করার আছে। আমাদের সমাজ এখন অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় পার করছে। এখানে তার মতো ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিই এক ধরনের স্বস্তিময় প্রভাব সৃষ্টি করে। শুধু তার উপস্থিতিটাই পরিবেশকে শান্ত রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। আমি এ দোয়াটাই করছি। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান: বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহাসমাবেশে বাংলাদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবু নাসির খান বলেন, ‘প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা থাকলেও ২০১৫ সালের পর এ দেশে সরকারি কর্মচারীদের কোনো বেতন বৃদ্ধি হয়নি। অন্যদিকে গত ১০ বছরে নিত্যপণ্যের মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এই মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে খাপ খেয়ে চলতে পারছেন না সরকারি কর্মচারীরা। বিভিন্ন সংগঠনের নামে পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য তারা আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন।’ অন্তর্বর্তী সরকার পে-স্কেল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নবম পে-কমিশন গঠন করলেও সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা আগামী সরকার পে-স্কেল বাস্তবায়ন করবেন বলে সরকারি কর্মচারীদের মনে আগুন ধরিয়ে দেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই এবং জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের দাবি জানান আবু নাসির খান। মো. ওয়ারেস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জুনায়েদ আব্দুর রহিম সাকিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কর্মচারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। মো. জাকির হোসেন, আমিনুর রহমান ও রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের হাজার হাজার কর্মচারীসহ বিভিন্ন দপ্তরের লক্ষাধিক কর্মচারী মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে মো. বাদিউল কবির, মো. মাহমুদুল হাসান, রবিউল জোয়াদ্দার, মো. লুৎফর রহমান, আ. হান্নান, মো. বেলাল হোসেন, খায়ের আহমেদ মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।