২০২৫–২৬ কর বছরের জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার নির্দিষ্ট কিছু করদাতা ছাড়া সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাদের রিটার্ন জমা দিতে হবে, তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের তথ্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদান করতে হবে। সময় বাকি মাত্র ১০ দিন, তাই যারা এখনও দাখিল করেননি, তাদের জন্য সতর্কবার্তা।
অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে ই-রিটার্ন অপশন নির্বাচন করে দেওয়া গাইডলাইনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। নতুন ব্যবহারকারীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, যেখানে টিআইএন, মোবাইল নম্বর এবং ক্যাপচা দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। ওটিপি কোড বসিয়ে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করার পর লগইন করলে একটি ইন্টারফেস পাবেন। সেখানে নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য পূরণ করে সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ দিলে অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে।
রিটার্ন ফরমে নিজের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও অন্যান্য ইনকাম সোর্স সঠিকভাবে লিখে পূরণ করতে হবে। পরবর্তী ধাপে ট্যাক্স ও পেমেন্টের তথ্য পূরণ করে প্রয়োজনীয় ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। যাদের করযোগ্য আয় নেই, তারা জিরো রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন। সবশেষে রিটার্ন ও ট্যাক্স জমা দেওয়ার স্লিপ এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা এবং অন্যান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে। এছাড়া জমি নিবন্ধন, ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমা থাকা বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
২০২৫–২৬ কর বছরের জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার নির্দিষ্ট কিছু করদাতা ছাড়া সকল ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাদের রিটার্ন জমা দিতে হবে, তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের তথ্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদান করতে হবে। সময় বাকি মাত্র ১০ দিন, তাই যারা এখনও দাখিল করেননি, তাদের জন্য সতর্কবার্তা। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে ই-রিটার্ন অপশন নির্বাচন করে দেওয়া গাইডলাইনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। নতুন ব্যবহারকারীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, যেখানে টিআইএন, মোবাইল নম্বর এবং ক্যাপচা দিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে। ওটিপি কোড বসিয়ে নতুন পাসওয়ার্ড সেট করার পর লগইন করলে একটি ইন্টারফেস পাবেন। সেখানে নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য পূরণ করে সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ দিলে অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে যাবে। রিটার্ন ফরমে নিজের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও অন্যান্য ইনকাম সোর্স সঠিকভাবে লিখে পূরণ করতে হবে। পরবর্তী ধাপে ট্যাক্স ও পেমেন্টের তথ্য পূরণ করে প্রয়োজনীয় ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। যাদের করযোগ্য আয় নেই, তারা জিরো রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন। সবশেষে রিটার্ন ও ট্যাক্স জমা দেওয়ার স্লিপ এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা এবং অন্যান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে। এছাড়া জমি নিবন্ধন, ইউটিলিটি সংযোগ, ক্রেডিট কার্ডসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে রিটার্ন জমা থাকা বাধ্যতামূলক।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওনা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বা আইপিপিগুলোর, যাদের বিল ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এছাড়া পিডিবির কাছে গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে ১১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া পরিশোধে জরুরি ভিত্তিতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বকেয়া পরিশোধে ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, আগের সরকারের সময়কার নিয়ম অনুসরণ করেই অন্তর্বর্তী সরকার ভারত ও আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে। তবে ভারতের কাছে বিদ্যুৎ আমদানির বকেয়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া ছিল ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, যা বর্তমানে শূন্যে নেমে এসেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত ও আদানির কাছে বিদ্যুৎ আমদানির বিপরীতে ২ বিলিয়ন ২৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫ আগস্টের আগে আদানি গ্রুপের কাছে বিদ্যুৎ কেনার বকেয়া বিল ছিল বিলম্ব সারচার্জসহ ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা বর্তমানে কমে ৮৮৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে সরকারের দাবি। যদিও আদানির পক্ষ থেকে কয়লার দাম নিয়ে বিরোধের কথা জানিয়ে তাদের পাওনা ৩০ কোটি ডলারেরও বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে ভেড়ামারা দিয়ে ভারত সরকার থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট, ত্রিপুরা থেকে বেসরকারিভাবে ১৬০ মেগাওয়াট এবং নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আইপিপিগুলোর পাওনা ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত পিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর পাওনা ছিল ১৮ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকায়। বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দাবি, স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন বিল না পাওয়ায় ব্যাংক ঋণের চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে বিদেশি সরবরাহকারীদের বকেয়া তুলনামূলক দ্রুত পরিশোধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানানো হয়, আসন্ন নির্বাচনের আগে বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে নতুন সরকার বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে পারে। মার্চ-এপ্রিল থেকে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বেড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারে, যেখানে শীতকালে পিক আওয়ারে সরবরাহ থাকে ১০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুটি বড় আইপিপি থেকে লোকসানে বিদ্যুৎ কেনার বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে না পাওয়ায় বকেয়া কমানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শিগগিরই এই অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পিডিবির কাছে বকেয়া বিলের মধ্যে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিল রয়েছে ১১ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যা আগের সরকারের সময় ছিল ১৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা বর্তমানে ৩ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা, যা আগে ছিল ৫ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের হুইলিং চার্জের বকেয়া ৪৭৮ কোটি টাকা থেকে কমে এখন ১৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিডিবি বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিল বাবদ মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। গ্যাস সংকটের কারণে কয়লা ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাতে হওয়ায় অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। ফার্নেস অয়েল ও ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বকেয়ার চাপ বাড়ছে। পিডিবির হিসাবে বর্তমানে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্রয়মূল্য প্রতি ইউনিট ১১ টাকা ৮৩ পয়সা এবং বিতরণ কোম্পানি পর্যন্ত সরবরাহ করতে খরচ হয় প্রতি ইউনিট ১২ টাকা ৩৫ পয়সা। বিক্রয়মূল্য কম থাকায় প্রতি ইউনিটে প্রায় ৫ টাকা ৭২ পয়সা লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত তিন অর্থবছরে ভর্তুকির বাইরে পিডিবির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ৮৯৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ ইতোমধ্যে কৃষকের মাঠ থেকে বাজারে এসেছে। পাশাপাশি দেশে এখনো পুরোনো পেঁয়াজের মজুত রয়েছে প্রায় এক লাখ টন। এমন অবস্থায় পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও আমদানিকারক ও পাইকারি কমিশনভিত্তিক এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। সুযোগ বুঝে তারা আমদানির অনুমতি নিলেও সেই সুবিধাকে কেন্দ্র করে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। আমদানিকারকদের দাবি ছিল পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে বাজারে সরবরাহ করা হবে; কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় পেঁয়াজ আনা হলেও পাইকারি কমিশন বিক্রেতারা তা ১২০–১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। ফলে খুচরা বাজারে দাম পৌঁছেছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায়। বাজার বিশ্লেষকদের ভাষায় কেজিপ্রতি অতিরিক্ত ১১০ টাকা মুনাফা যেন “সাগরচুরি”। রাজধানীর শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি আড়তে দেখা গেছে, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৭৫–৬০০ টাকায়, অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১১৫–১২০ টাকা। পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে পাল্লাপ্রতি ৬৫০–৬৭৫ টাকায়, যা কেজিপ্রতি ১৩০–১৩৫ টাকা। অন্যদিকে কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ দুই ধরনেরই প্রতি কেজি ১৪০–১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রাজধানীর পাইকারি আড়তে তদারকি সংস্থাগুলোর যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানিকারকরা সব খরচ মিলিয়ে কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ টাকায় পেঁয়াজ আমদানি করছেন। পরিবহন ব্যয়সহ দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা হওয়ার কথা। অথচ পাইকারি পর্যায়ে এ পেঁয়াজ ১২০–১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের খরচ ও স্বল্প মুনাফা যোগ করে তা ১৪০–১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অনেকে আমদানি মূল্য জানাতে গড়িমসি করছেন। কেউ কেউ দায় চাপাচ্ছেন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং আমদানির টার্গেট নির্ধারণের ওপর, যা তাদের মতে বাজারে সংকটের পরিবেশ তৈরি করছে। ভোক্তা অধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে, অথচ কার্যকর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের মতে, কত টাকা দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে এবং কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে—তা নির্ধারণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাজারের অস্থিরতা কমে আসবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা অনুযায়ী অভিযান চলছে এবং অনিয়ম ধরা পড়লেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে ফিরে আসবে।