যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে আটজন অভিবাসনবিষয়ক বিচারককে বরখাস্ত করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। সংশ্লিষ্ট বিচারকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন গতকাল মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে।
অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কট্টর অবস্থান ঘিরে অনিশ্চিয়তার মধ্যেই এ আট বিচারককে বরখাস্ত করার খবর জানা গেল।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইমিগ্রেশন জাজেস (এনএআইজে) জানায়, বরখাস্ত হওয়া আট বিচারকের সবাই ম্যানহাটানের ২৬ ফেডারেল প্লাজায় কর্মরত ছিলেন। এখানকার একটি আদালত অভিবাসীদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়া–সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
গত কয়েক মাসে মুখোশধারী ফেডারেল কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই ‘জ্যাকব কে জাভিটজফেডারেল বিল্ডিং’-এর করিডরে টহল দিয়ে আসছিলেন। শুনানি থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁরা অভিবাসীদের আটক করছিলেন। এমনকি বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমের সামনেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও অভিবাসী পরিবারগুলোকে পৃথক করে দেওয়ার ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ‘২৬ ফেডারেল প্লাজা’ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের প্রতীকী জায়গা হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্কের আট বিচারককে ঠিক কী কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসনবিষয়ক ৬০০ বিচারক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৯০ জনকে বছরজুড়ে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এই ৮ জন।
অভিবাসীদের পক্ষে কাজ করে আসা সংগঠনগুলো মনে করছে, বরখাস্ত হওয়া বিচারকদের পরিবর্তে এসব পদে এমন লোকদের নিয়োগ দেওয়া হবে, যাঁদের মনোভাব ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসননীতির সঙ্গে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন ইউনিফিল অভিযোগ করেছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘প্রস্তাব ১৭০১’-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। বৃহস্পতিবার মারাউনাহ, মাজাদেল ও বারাশিত এলাকায় এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানায় মিশনটি। শুক্রবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এক বিবৃতিতে ইউনিফিল জানায়, এই হামলাগুলো নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে বিদ্যমান লিয়াজোঁ ও সমন্বয় ব্যবস্থাগুলো পুরোপুরি মেনে চলার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে লেবাননের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক করে বলা হয়— এমন কোনো উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে হবে যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। ২০০৬ সালে গৃহীত প্রস্তাব ১৭০১-এ হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতা বন্ধ, এবং ব্লু লাইন থেকে লিতানি নদী পর্যন্ত এলাকায় একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। গত বছরের অস্ত্রবিরতির শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলের সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতেই। তবে দেশটি এখনও পাঁচটি সীমান্ত চৌকিতে সেনা উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ইউনিফিল আরও জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বিন্ত জবেইল এলাকায় টহল চলাকালে তিনটি মোটরবাইকে করে ছয় ব্যক্তি তাদের একটি গাড়ির কাছে আসে। তাদের একজন গাড়ির পেছনের দিকে তিনটি গুলি ছোড়ে। সৌভাগ্যক্রমে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। মিশনটি লেবানন কর্তৃপক্ষকে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
পেন্টাগন গত সোমবার যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অকাস নিরাপত্তা চুক্তি অনুমোদন করেছে। এই চুক্তির আওতায়, অস্ট্রেলিয়া ১৫ বছরের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি ভার্জিনিয়া-শ্রেণির পরমাণু সাবমেরিন পাবে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই বছরের শুরুতে জানিয়েছে, তারা ২০২১ সালে তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় স্বাক্ষরিত পারমাণু-চালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন চুক্তি পর্যালোচনা করছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক বিবৃতিতে বলেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ তাদের পাঁচ মাসব্যাপী পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে। এই পর্যালোচনা অকাস চুক্তিকে সমর্থন করেছে এবং এটি ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট এজেন্ডার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ’ বলে নির্ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুসারে, অকাসকে ‘পূর্ণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া’ উচিত এবং পর্যালোচনায় অকাসকে সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর সুযোগকে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ সমুদ্র শক্তি বিষয়ক মার্কিন হাউস উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জো কোর্টনি বলেছেন, পর্যালোচনার সমাপ্তি নিশ্চিত করে যে এই চুক্তির ‘কাঠামো আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’ পর্যালোচনা সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি উল্লেখযোগ্য যে ২০২১ সালের অকাস চুক্তি এখন তিনটি দেশের তিনটি সরকারের পরিবর্তন অতিক্রম করেও টিকে আছে এবং এটি এখনও শক্তিশালীভাবে বিদ্যমান।
ভেনিজুয়েলার সঙ্গে যে কোনো ধরনের সমস্যা হলে, গায়ানার পাশে থেকে দেশটিকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। গায়ানায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ কথা বলেন। গায়ানার সঙ্গে ভেনিজুয়েলার সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র। গায়ানায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু অপরিশোধিত তেলের মজুত রয়েছে এবং এর বেশিরভাগই বিতর্কিত এসেকুইবো অঞ্চলে অবস্থিত। ওই অঞ্চলটিতে গায়ানার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মালিকানা রয়েছে এবং ভেনেজুয়েলা এই অঞ্চলটির মালিকানা দাবি করে আসছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যকার এই ভূখণ্ডগত বিরোধ, একটি দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত বিরোধের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এক দশক আগে, এক্সনমোবিল এসেকুইবো অঞ্চলে বিশাল সমুদ্রের তলদেশে তেলের মজুত আবিষ্কার করার পর থেকে এবং ২০২৩ সালে গায়ানা তেল ব্লক নিলাম শুরু করলে, বিবদমান দুই দেশের মধ্যে এই তীব্র উত্তেজনা অধিকতর তীব্র হয়েছে। এসেকুইবো ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গায়ানা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। রাজধানী জর্জটাউনে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোল থেরিয়ো এএফপিকে বলেন, ‘যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তবে আমরা গায়ানার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশটির রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গায়ানার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এলো, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে। এই মোতায়েনকে তারা মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ বলে অভিহিত করছে। কিন্তু কারাকাস দাবি করছে যে এটি দেশটির শাসন পরিবর্তনের কৌশল।