আত্মহত্যা করেছে আরও এক ইসরায়েলি সেনা। গাজায় আগ্রাসনের মানসিক চাপ সইতে না পেরেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। দেশটির হাইওম পত্রিকা জানায়, গাজায় আল-আকসা ফ্লাড অভিযানের প্রথম দিনের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন টমাস আদজ-গাউস্কাস নামের এই সেনা।
উপত্যকার ভেতরে পরবর্তী স্থল অভিযানেও যুক্ত ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তীব্র মানসিক সংকটে ভুগছিলেন ২৮ বছর বয়সী এ রিজার্ভ সেনা।
পত্রিকাটি জানায়, সম্ভবত পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছিলেন তিনি। আত্মহত্যার ঠিক আগে লিখেছিলেন, তিনি আর বাঁচতে পারছেন না। চারদিকে শুধু ধ্বংস আর হারানোর অনুভূতি বোধ করছেন। অক্টোবরের শেষে প্রকাশিত ইসরায়েলের সরকারি তথ্য বলছে, গত ১৮ মাসে সেনাবাহিনীতে ২৭৯টি আত্মহত্যার চেষ্টা হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছে ৩৬ জন আইডিএফ সেনা।
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থাগুলো মনে করে, ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কিন্তু তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। কারণ, সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত দায়িত্বে ছিলেন না, এমন সেনাদের আত্মহত্যার ঘটনা পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সামরিক বাহিনীর মধ্যে সীমান্ত এলাকায় আবারও ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ব্যাপক গোলাগুলি হয় দুইপক্ষে। আফগানিস্তান তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ অভিযোগ করে বলেন, পাকিস্তানি সেনারা কান্দাহারের স্পিন বোলদাক জেলায় হামলা চালায়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়, চামান সীমান্তে আফগান বাহিনী বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে। এদিকে, দুদিন আগেই সৌদি আরবে বৈঠকে বসে কাবুল-ইসলামাবাদের প্রতিনিধিরা। তবে কোনো ধরণের অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয় ওই শান্তি-আলোচনা।
ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাঙা হয়েছিল ষোড়শ শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ। উত্তাল হয়েছিল গোটা ভারতবর্ষ। ৩৩ বছর পর, আরও একটা ৬ ডিসেম্বরে ফের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তেজনার ঘনঘটা। শনিবার মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে 'বাবরি মসজিদ'-এর শিল্যান্যাস করার সিদ্ধান্তে অনড় ভরতপুরের বহিষ্কৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। সেই অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছেন সৌদি আরবের বিশিষ্ট আমীর মাওলানাসহ লক্ষাধিক মুসল্লিগণ। এই মহতী বাবরি মসজিদের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আগত হাজার হাজার মানুষকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রায় ৪০ হাজার মানুষের খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত করছেন হুমায়ুন কবীর। তিনি ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে, পুলিশের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। তার ধারণা, শনিবার মোরাদিঘির কাছে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ ২৫ বিঘা জমিতে জড়ো হবেন। তিনি আরও বলেন, ভারতের বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাজ্য থেকে ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় নেতারাও আসছেন। তিনি জানিয়েছেন, সৌদি আরব থেকে দুই জন কাজী সকালেই কলকাতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকেই একটি বিশেষ কনভয়ে পৌঁছবেন মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে। ইতোমধ্যেই বাবরি মসজিদ নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা রেজিনগরের সভাস্থলে পৌঁছে হুমায়ুন কবীর গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। এদিন তিনি বলেন, শুধুমাত্র তিন কাঠা জায়গার উপরে, এত বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা আজকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করছি। ২৫ বিঘা জায়গার মধ্যে, হাসপাতাল হবে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে, পার্ক হবে। পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে যত কোটি টাকা খরচ হয়, মুর্শিদাবাদসহ মালদা, উত্তর দিনাজপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, প্রচুর মানুষ আর্থিক সহযোগিতা করবেন। রাজ্য সরকারের টাকা এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করবেন না বলেও সাফ জানিয়েছেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, এতে মসজিদের 'পবিত্রতা' নষ্ট হবে। এটা আমি কোনওমতেই গ্রহণ করব না। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ মসজিদ নির্মাণের জন্য যে যার সামর্থ্য মত নতুন ইট, পাথর ইত্যাদি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছেন পবিত্র মসজিদ ময়দানে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আনা ইট,কাঠ,পাথরসহ সমস্ত সরঞ্জাম একত্রিত করে মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হবে। ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় নামাজ আদায় করার পর জনসভা শুরু হয়,এরপর বিকাল ৩টায় ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল বাবরি মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। অন্য দিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার ধর্মতলা চত্বরের মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশ থেকে শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ একটি সম্প্রীতি যাত্রার সূচনা করেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কয়েক হাজার মানুষ সেই সম্প্রীতি মিছিলে অংশ নেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি চক্রান্ত করে বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন লাগাতে চাইছে। জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাংলার মানুষকে বিজেপির সেই অপচেষ্টাকে রুখতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিজেপির ধর্ম নিয়ে রাজনীতির তাস খেলা এবার বন্ধ হবে। বাংলায় কোনোরকম ধর্মীয় জিগির তুলে দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে দেয়া হবে না। রাজ্য সরকার রাজ্য বাসীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের চার শীর্ষ কর্মকর্তার উপর নতুন আর্থিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশেষত নারী ও মেয়েদের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, চার তালেবান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে— নৈতিকতা ও শিষ্টাচারবিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ খালিদ হানাফি, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী নেদা মোহাম্মদ নাদিম, আইনমন্ত্রী আবদুল-হাকিম শরঈ এবং প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানি। পেনি ওং বলেন, নারী-শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা, কর্মসংস্থান ও চলাচলের স্বাধীনতা হ্রাস, এবং জনজীবনে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত করার মতো পদক্ষেপে সম্পৃক্ততার কারণে এই কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন। এদিকে, তালেবান সরকার এখনো অস্ট্রেলিয়ার নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর আগে, জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রধান বিচারপতি হাক্কানি এবং তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার বিরুদ্ধে নারীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহারের পর ক্ষমতায় ফিরে আফগানিস্তানের নারী ও কন্যাশিশুর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে তালেবান সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, কর্মস্থলে নিয়োগে বাধা এবং শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে ১.৪ মিলিয়ন মেয়েশিশুর ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানে নারীরা শ্রমবাজার থেকে বাদ পড়ায় দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠী এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। পেনি ওং বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও অস্ট্রেলিয়া মানবিক সহায়তা চলমান রাখবে। এজন্য নতুন নিষেধাজ্ঞা কাঠামোতে ‘হিউম্যানিটারিয়ান পারমিট’ রাখা হয়েছে। 'তালেবান নিপীড়নের ফলে যারা কষ্ট পাচ্ছেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় থাকা আফগান সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছি আমরা,' বলেন ওং।