চট্টগ্রামে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। নগর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত, চাঁদাবাজি ও খুনোখুনির ঘটনা বাড়ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য স্থায়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বজায় রাখতে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া, দখলবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। একাধিক এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক ব্যবসাকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে এসব সন্ত্রাসী দল দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে মূল হোতারা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও মাঠে নামানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আধিপত্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। কিছু এলাকায় ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয়দের দাবি, এসব অপরাধ চক্রকে দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, স্থানীয় রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলো গড়ে উঠেছে। সময়মতো অভিযান ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে চট্টগ্রামে পুনরায় বড় ধরনের সহিংসতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
গত নভেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ মাসে সারাদেশে মোট ৫৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬৪ জন নারী ও ৭১ জন শিশু রয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে ২২৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৪ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৬ জন পথচারী প্রাণ হারান। এছাড়া ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে, ৪৭টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের মাস অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৪ দশমিক ২২ জন নিহত হলেও নভেম্বর মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১ জনে। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যানবাহনভিত্তিক নিহতের হিসাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহত হয়েছেন ১৯৪ জন। বাসের যাত্রী নিহত ২৪ জন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহনের আরোহী ২২ জন এবং প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের আরোহী ১৪ জন। থ্রি-হুইলার যাত্রী নিহত হয়েছেন ৮৩ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী ৩১ জন এবং রিকশা ও বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন ৯ জন। দুর্ঘটনাস্থল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩১টি দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৫টি আঞ্চলিক সড়কে, ৮২টি গ্রামীণ সড়কে এবং ৭১টি শহরের সড়কে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন অনুযায়ী, ১২২টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৯টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেওয়া, ৫৯টি পেছন থেকে আঘাত এবং ৭টি অন্যান্য কারণে সংঘটিত হয়েছে। বিভাগভিত্তিক হিসেবে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৪১টি দুর্ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৩০টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। জেলা হিসেবে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৪১টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শেরপুর ও পঞ্চগড় জেলায়, যেখানে ৯টি দুর্ঘটনায় ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও ঝুঁকিপূর্ণ মানসিকতা, নির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টার অভাব, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজি। সুপারিশে বলা হয়েছে, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ জোরদার করতে হবে এবং চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক আইনের কঠোর ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা সার্ভিস রোড নির্মাণ, পর্যায়ক্রমে রোড ডিভাইডার স্থাপন এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রেল ও নৌপথ সংস্কার করে সড়কপথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। তার অবস্থা আপাতত স্ট্যাটিক (অপরিবর্তিত) রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্যসচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হাদির চিকিৎসা আপাতত সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালেই চলবে এবং বর্তমানে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট অনুসরণ করা হচ্ছে। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ইনভেস্টিগেশন করা হলেও সামগ্রিকভাবে শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ডা. আহাদ জানান, বর্তমানে শরিফ ওসমান হাদির হার্ট, ফুসফুস ও কিডনি ভেন্টিলেশন সাপোর্টের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইউরিন আউটপুটও আগের মতোই সাপোর্টের মাধ্যমে বজায় রাখা হচ্ছে। বুধবার তার নতুন করে সিটি স্ক্যান করা হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে—ব্রেনে যে ইস্কেমিয়া বা রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যা ছিল, তা কিছুটা বেড়েছে। তিনি আরও জানান, ব্রেনে থাকা গুলির একটি ছোট অংশ অপসারণে নতুন করে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। প্রয়োজনে তাকে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। ডা. আহাদ বলেন, গুলির অংশটি যে স্থানে অবস্থান করছে, সেখানে অস্ত্রোপচার করলে নতুন করে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না—এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এই মুহূর্তে তার শরীর দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল নিতে পারবে কি না, সেটিও চিকিৎসকেরা মূল্যায়ন করছেন। এ ক্ষেত্রে পরিবারের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা গাজীপুর সাফারি পার্ক বর্তমানে বেহাল দশায় পড়েছে। পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা নষ্ট ও প্রাণীর সংখ্যা কমার কারণে দর্শনার্থীরাও কমে গেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, পার্কের বেষ্টনী ও লেকগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। প্রাণীরা মানহীন খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, ঘটছে রাজস্ব ফাঁকি, এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী মারা যাচ্ছে। ২০১৯ সালের পর থেকে নীলগাই, সিংহ, জেব্রা, জিরাফ ও ক্যাঙারুসহ একাধিক প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। পার্কের একাধিক দর্শনীয় স্থান বন্ধ এবং ভাঙচুরের কারণে সাময়িক বন্ধ থাকতেও হয়েছে। স্থানীয়রা ও দর্শনার্থীরা অব্যবস্থাপনা, প্রাণীর প্রতি অবহেলা ও দালালদের দৌরাত্ম্যকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা দ্রুত সংস্কার ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। পার্কের সহকারী বন সংরক্ষক জানিয়েছেন, কিছু প্রাণীর মৃত্যু হলেও প্রজনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং বনবিভাগ পার্কের স্বকীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে পার্কে সাতটি বাঘ, দুইটি সিংহ, ২১টি ভালুক, ২ শতাধিক হরিণ, হাতি, জলহস্তি, ঘোড়া, মেকাউ, বিভিন্ন পাখি এবং সরীশূপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। তবে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বেষ্টনী ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা যথাযথ নয়, যা পার্কের আকর্ষণ কমিয়েছে।