বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত কমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে জমির উপরিভাগে, দেখা দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি খরা। অতিরিক্ত নলকূপনির্ভর সেচ এবং পৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে এই অঞ্চলে কৃষি, বসতভিটা ও দৈনন্দিন জীবনে তীব্র পানিসঙ্কট তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে—সেচ বা শিল্পকারখানার কাজে আর গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিকাজের মূল ভরসা ছিল গভীর নলকূপের পানি, যা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পরিচালনা করে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রায় ১৮ হাজার গভীর নলকূপ এই প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন। গত সপ্তাহে সরকারের এ সংক্রান্ত গেজেট তাদের হাতে পৌঁছেছে।
প্রতি বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়, যার বড় অংশই বিএমডিএ পরিচালিত সেচব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট সেচকৃত বোরো ধানের প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং গমের ৬০ শতাংশ আসে এই অঞ্চল থেকে। সেচ সুবিধার কারণে এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তরিত হওয়ায় খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ধান–গম ছাড়াও আম, পেয়ারা, কমলা, মাল্টা, সবজি, ডাল, মসলা ও তেলবীজসহ নানা ফসল এখন এখানে চাষ হচ্ছে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চল দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই হঠাৎ পানি সরবরাহ বন্ধ হলে খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বিকল্প উৎস নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। বর্ষার পানি সংরক্ষণকে তারা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখছেন। ছাদের পানি সংগ্রহ, গ্রাম–বাজার–শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেইনওয়াটার হারভেস্টিং, পুকুর–দিঘি–বিল পুনঃখনন এবং খাল–নালার সংযোগ পুনরুদ্ধার করলে সারা বছর সেচ এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া সম্ভব।
দীর্ঘদিন ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করা জরুরি হলেও কৃষকদের জন্য বিকল্প পানির ব্যবস্থা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা মনে করেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৃষকদের মতামত নেওয়া হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হতো।
ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলের পুকুর-দিঘি ছিল ঐতিহ্যের অংশ, কিন্তু সেগুলো এখন ভরাট হয়ে গেছে। জলাধার পুনঃখনন করা গেলে শুধু সেচই নয়, ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জও বহুগুণে বাড়বে। তাদের মতে, বিকল্প ব্যবস্থা না করে নলকূপের পানি বন্ধ করলে শস্য উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
স্থানীয় কৃষকরাও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্যে, পানি ছাড়া চাষাবাদ অসম্ভব; তাই নলকূপ নির্ভরতা কমানোর আগে টেকসই পানি ব্যবস্থার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএমডিএর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের প্রেক্ষাপটে একেবারে হঠাৎ করে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার বন্ধ করা বাস্তবসম্মত নয়। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
প্রায় এক দশক পর পূর্বাঞ্চলের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মূল ভাড়া অপরিবর্তিত থাকলেও ‘পন্টেজ চার্জ’ যোগ হওয়ায় যাত্রীদের এখন থেকে ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হবে। নতুন ভাড়া কার্যকর হবে ২০ ডিসেম্বর থেকে। রেলওয়ে জানায়, কোনো যাত্রাপথে সেতু বা অনুরূপ অবকাঠামো থাকলে তার জন্য বাড়তি যে মাশুল যুক্ত করা হয়, সেটিই পন্টেজ চার্জ। নতুন হিসাব অনুযায়ী ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুকে আড়াই কিলোমিটার হিসেবে ধরা হবে। ফলে কাগজে যাত্রার দূরত্ব বাড়বে এবং সে অনুযায়ী বাড়বে ভাড়া। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্বাঞ্চলের ছয়টি রুটে মোট ১১টি সেতুর জন্য পন্টেজ চার্জ যুক্ত হয়েছে। রুটগুলো হলো—ঢাকা–চট্টগ্রাম, ঢাকা–কক্সবাজার, ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর এবং ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ। ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৩৮১ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। এর ফলে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১৩৫ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। কমিউটার ভাড়া ১৭০ থেকে বেড়ে ১৯০ টাকা এবং শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪০৫ থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকা হয়েছে। এই রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর ভাড়াও বেড়েছে। স্নিগ্ধা আসনে ৭৭৭ টাকার বদলে এখন দিতে হবে ৮৫৭ টাকা। এসি সিটের ভাড়া ৯৩২ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৩০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ১,৪৪৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,৫৯১ টাকা। বিরতিহীন ট্রেনগুলোর স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ৮৫৫ থেকে বেড়ে ৯৪৩ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। কক্সবাজারগামী ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ১,৩২২ থেকে বেড়ে ১,৪৪৯ টাকা হয়েছে। এসি সিট ১,৫৯০ থেকে বেড়ে ১,৭৪০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২,৪৩০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৬৫৬ টাকা। ঢাকা–সিলেট রুটে মেইল ট্রেনের ভাড়া ১২৫ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, কমিউটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, শোভন চেয়ার ৩৭৫ থেকে বেড়ে ৪১০ টাকা হয়েছে। স্নিগ্ধা, এসি সিট ও এসি বার্থের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রুটেও একইভাবে বিভিন্ন শ্রেণির আসনের ভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক জানান, ১০০ মিটারের বেশি দীর্ঘ পুরোনো সেতুগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতেই এই পন্টেজ চার্জ সমন্বয় করা হয়েছে। সব রুটে নয়, কেবল নির্বাচিত রুটগুলোতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এবং বাড়তি পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি নয়।
আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী এই দিনেই। ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি এবং ১৯৩২ সালের একই দিনে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তাঁর স্মৃতিকে ধারণ করে প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে বেগম রোকেয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় জীবনে বিশেষ অবদান রাখা চার নারীকে এবার বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হবে। রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদক তুলে দেবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। এ বছর নারীশিক্ষায় অবদানের জন্য রুভানা রাকিব, নারী অধিকার (শ্রম অধিকার) বিভাগে কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার শ্রেণিতে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণ (ক্রীড়া) শ্রেণিতে ঋতুপর্ণা চাকমাকে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার ও নারী জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের প্রতি এই সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। নারী শিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়ার সংগ্রাম ও অবদান স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা এক বাণীতে জানিয়েছেন, রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় পিছিয়ে পড়া নারীদের মুক্তির মূল চাবিকাঠি ছিল শিক্ষা—এই উপলব্ধি থেকেই রোকেয়া আজীবন নারীশিক্ষা বিস্তারে কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি দিবসের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। রোকেয়ার সংগ্রাম ও আদর্শ ১৮৮০ সালে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে জন্ম নেওয়া রোকেয়া এমন এক সময়ে নারীর শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন, যখন মুসলিম সমাজে মেয়েদের লেখাপড়া ছিল প্রায় নিষিদ্ধ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও বড় ভাইয়ের সহায়তায় লুকিয়ে উর্দু, বাংলা, আরবি ও ফারসি শেখেন তিনি। পরবর্তীতে ভাগলপুরে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বিয়ের পর স্বামীর উৎসাহে নিজের শিক্ষার পরিধি বাড়ান এবং নারীশিক্ষা বিস্তারে কাজ শুরু করেন। নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সমাজে নারীর মর্যাদা এবং শিক্ষার প্রসার ছিল তাঁর আজীবনের লক্ষ্য। গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধে তিনি তুলে ধরেছেন নারীর মুক্তি ও আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন। তাঁর বিখ্যাত রচনার মধ্যে রয়েছে মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী। নারী জাগরণের পথিকৃত হিসেবে তিনি সর্বত্র সম্মানিত; ২০০৪ সালের এক জরিপে তাঁকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রংপুরে নানা কর্মসূচি রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের পায়রাবন্দে দিবসটি উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সংগীতানুষ্ঠান এবং নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান র্যালি, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাহিত্যিকরা। দিবসকে কেন্দ্র করে রংপুর জেলার বিভিন্ন সংগঠনও নারী উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ ও আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করাই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য। একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করবে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় ৯ লাখ সদস্য মাঠে থাকবে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো বেআইনি ও অনুমোদনহীন সভা-সমাবেশ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বেআইনিভাবে এমন কর্মসূচিতে অংশ নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অনেকের ন্যায্য দাবি-দাওয়া থাকলেও গত দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি আন্দোলন-বিক্ষোভের মাধ্যমে এসব দাবি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকার ন্যায্য দাবিতে বরাবরই সাড়া দিয়েছে এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তিনি আরও বলেন, এখন দেশ নির্বাচনমুখী সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই সব দাবি-দাওয়া নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ সময়ে কেউ যেন উত্তেজনা সৃষ্টি না করেন বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্ন না করেন এ প্রত্যাশা জানানো হয়েছে।