রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শীতের সবজি এখন ভরপুর শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, লাউ, মুলাসহ নানা ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবুও দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কৃষক ন্যায্য দাম পান না, ভোক্তাও ন্যায্য দামে কিনতে পারেন না; লাভের বড় অংশটি হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট। এদের নিয়ন্ত্রণে আনার মতো উদ্যোগ কোথাও দেখা যায় না। ফলে কৃষকের ঘাম আর ভোক্তার কষ্ট দুই দিক থেকেই লাভবান হচ্ছে এই চক্রটি। প্রশ্ন থেকে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন, আর কবে স্বস্তি ফিরবে সাধারণ মানুষের জীবনে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, গত অক্টোবরে অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে সারা দেশে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক জায়গায় সবজির ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে, ফলে স্থানীয় পর্যায়ে দাম বেড়েছে।
এক ক্রেতা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, শীতের সবজি বাজারে এসেছে প্রায় এক মাস হলো, কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। অন্য বছর এ সময়ে সবজির দাম অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যেত।
বর্তমানে ভালো মানের বেগুন এক কেজি ৮০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা সাধারণত গরমকালে হয়ে থাকে। মাঝারি ফুলকপি বা বাঁধাকপি ৪০–৬০ টাকা, আর নতুন শিম ৮০–১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের বছর এ সময় এসব সবজি পাওয়া যেত প্রায় অর্ধেক দামে। নতুন আলু সবসময়ই একটু বেশি দামে আসে এবারও কেজিপ্রতি ১০০–১২০ টাকায় মিলছে।
অন্যান্য সবজির মধ্যেও রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। বরবটি ৭০–৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ও পটোল ৬০–৮০ টাকা, আর একটি মিষ্টি কুমড়া ৮০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের দামও চড়া—এক আঁটি ২০ টাকার নিচে খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও সবজি দাম কমেনি, পেঁয়াজের বাজারে সামান্য স্বস্তির দেখা মিলেছে। অনেক জায়গায় দেশি পেঁয়াজ ১১০–১১৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ফার্মের ডিমের দাম সহনীয় প্রতি ডজন ১২৫–১৩০ টাকা।
তবে মুরগির বাজারে বেড়েছে চাপ। এক সপ্তাহেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার ১৯০ টাকা, সোনালি ৩০০–৩৩০ টাকা, দেশি ৫৫০–৬৫০ টাকা এবং লেয়ার ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, ফিডের দাম বৃদ্ধিসহ খামারের অন্যান্য ব্যয় বাড়ায় এ পরিস্থিতি।
মাছের বাজারেও বড় পরিবর্তন নেই। ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি; মাঝারি ইলিশ ১৫০০ টাকা এবং বড় ইলিশ ২০০০–৩০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই, কাতল, মৃগেল ৩০০–৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ১৯০–২৫০ টাকার নিচে নেই। অন্যান্য মাছের মধ্যেও একই প্রবণতা মাগুর ৫০০, কৈ ২০০–২৫০, সিলভার কার্প ২৫০–৩০০, বোয়াল ৫০০–৭০০, কালিবাউশ ৪৫০, আইড় ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ছোট মাছের দামও বেশি কাঁচকি ৪৫০, মলা ৩০০, পাবদা ৩০০–৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৬৫০–১০০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রাজধানীতে সবজির নিয়মিত সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। আরও ৭–১০ দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে এবং তখন দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে বাজার পরিস্থিতি বছর বছর একই থাকে সরবরাহ থাকে স্বাভাবিক, তবুও দাম কমে না। শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরা থাকলেও দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে। কে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, কারা দাম বাড়িয়ে লাভ লুটছে সে প্রশ্নের উত্তর আজও অস্পষ্ট। কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পান না, আর ক্রেতাও স্বস্তি পান না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শীতের সবজি এখন ভরপুর শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, লাউ, মুলাসহ নানা ধরনের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবুও দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কৃষক ন্যায্য দাম পান না, ভোক্তাও ন্যায্য দামে কিনতে পারেন না; লাভের বড় অংশটি হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট। এদের নিয়ন্ত্রণে আনার মতো উদ্যোগ কোথাও দেখা যায় না। ফলে কৃষকের ঘাম আর ভোক্তার কষ্ট দুই দিক থেকেই লাভবান হচ্ছে এই চক্রটি। প্রশ্ন থেকে যায়, তাদের বিরুদ্ধে কবে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন, আর কবে স্বস্তি ফিরবে সাধারণ মানুষের জীবনে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, গত অক্টোবরে অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে সারা দেশে শীতকালীন সবজির উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক জায়গায় সবজির ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে, ফলে স্থানীয় পর্যায়ে দাম বেড়েছে। এক ক্রেতা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, শীতের সবজি বাজারে এসেছে প্রায় এক মাস হলো, কিন্তু দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। অন্য বছর এ সময়ে সবজির দাম অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যেত। বর্তমানে ভালো মানের বেগুন এক কেজি ৮০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা সাধারণত গরমকালে হয়ে থাকে। মাঝারি ফুলকপি বা বাঁধাকপি ৪০–৬০ টাকা, আর নতুন শিম ৮০–১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের বছর এ সময় এসব সবজি পাওয়া যেত প্রায় অর্ধেক দামে। নতুন আলু সবসময়ই একটু বেশি দামে আসে এবারও কেজিপ্রতি ১০০–১২০ টাকায় মিলছে। অন্যান্য সবজির মধ্যেও রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। বরবটি ৭০–৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ও পটোল ৬০–৮০ টাকা, আর একটি মিষ্টি কুমড়া ৮০–১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের দামও চড়া—এক আঁটি ২০ টাকার নিচে খুব কমই পাওয়া যাচ্ছে। যদিও সবজি দাম কমেনি, পেঁয়াজের বাজারে সামান্য স্বস্তির দেখা মিলেছে। অনেক জায়গায় দেশি পেঁয়াজ ১১০–১১৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে ফার্মের ডিমের দাম সহনীয় প্রতি ডজন ১২৫–১৩০ টাকা। তবে মুরগির বাজারে বেড়েছে চাপ। এক সপ্তাহেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার ১৯০ টাকা, সোনালি ৩০০–৩৩০ টাকা, দেশি ৫৫০–৬৫০ টাকা এবং লেয়ার ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের মতে, ফিডের দাম বৃদ্ধিসহ খামারের অন্যান্য ব্যয় বাড়ায় এ পরিস্থিতি। মাছের বাজারেও বড় পরিবর্তন নেই। ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি; মাঝারি ইলিশ ১৫০০ টাকা এবং বড় ইলিশ ২০০০–৩০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। রুই, কাতল, মৃগেল ৩০০–৭৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ১৯০–২৫০ টাকার নিচে নেই। অন্যান্য মাছের মধ্যেও একই প্রবণতা মাগুর ৫০০, কৈ ২০০–২৫০, সিলভার কার্প ২৫০–৩০০, বোয়াল ৫০০–৭০০, কালিবাউশ ৪৫০, আইড় ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ছোট মাছের দামও বেশি কাঁচকি ৪৫০, মলা ৩০০, পাবদা ৩০০–৬০০ এবং গলদা চিংড়ি ৬৫০–১০০০ টাকা পর্যন্ত। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রাজধানীতে সবজির নিয়মিত সরবরাহ এখনো শুরু হয়নি। আরও ৭–১০ দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে এবং তখন দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বাজার পরিস্থিতি বছর বছর একই থাকে সরবরাহ থাকে স্বাভাবিক, তবুও দাম কমে না। শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরা থাকলেও দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে। কে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, কারা দাম বাড়িয়ে লাভ লুটছে সে প্রশ্নের উত্তর আজও অস্পষ্ট। কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পান না, আর ক্রেতাও স্বস্তি পান না। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরায়েলের কারাগারে প্রয়োগ করা নির্যাতন, যৌন ও শারীরিক অত্যাচার এবং প্রাণহানির ঘটনা নিয়মিত হয়েছে—এটি কেবল ব্যতিক্রম নয়, বরং একটি নীতি হিসেবে চলেছে। এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস। সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দির মৃত্যু নিশ্চিতভাবে নির্যাতন, শারীরিক হামলা, চিকিৎসার প্রতি অবহেলা বা অপুষ্টির কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন। পিএইচআরআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর অনেক ঘটনাই ইসরায়েলের সামরিক ও সিভিলিয়ান কনসেনট্রেশন সুবিধায় ঘটেছে। প্রতিবেদনের একজন লেখক ওনেগ বেন ডরোর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, 'এটি শুধু চরম-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের নীতি নয়, এটি ইসরায়েলের নীতি, যা ইসরায়েলি হেফাজতে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে।' প্রতিবেদনটিতে নির্যাতনের কয়েকটি জ্বলন্ত উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, পশ্চিম তীরের ৩৩ বছর বয়সী বাসিন্দা আব্দ আল-রাহমান মারি। তিনি নভেম্বর ২০২৩-এ মেগিডো কারাগারে মারা যাওয়ার পর তার দেহে অসংখ্য চিহ্ন, আঘাত এবং হাড় ভাঙার প্রমাণ পাওয়া যায়। ওয়ালিদ খালেদ আব্দুল্লাহ আহমাদ, ১৭ বছর বয়সী নাবলুসের বাসিন্দা। সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ আটক হওয়ার ছয় মাস পর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর দেহে প্রায় কোনো পেশী বা চর্বি অবশিষ্ট ছিল না, যদিও তার পরিবার বলেছিল সে একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন। আরাফাত হামদান, ২৫ বছর বয়সী, বেইত সিরার বাসিন্দা। শুধুমাত্র দুই দিন সামরিক হেফাজতে থাকার পর মারা যায়। 'টাইপ-১' ডায়াবেটিসের রোগী আরাফাতকে বাঁচতে নিয়মিত ইনসুলিন প্রয়োজন ছিল। মৃত্যুর সময় তাকে মারধর করা হয় এবং ওষুধ দেয়া হয়নি।
দেশের কৃষিপণ্যের বাজারে স্বাভাবিক বাজার সূত্র কিছুটা ব্যর্থ হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও পণ্যের দাম কমার বদলে বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ টন বেশি পিঁয়াজ উৎপাদন হলেও আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে হঠাৎ পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার এখন বিশেষ টাস্কফোর্স মাঠে নামিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু পিঁয়াজ নয়, মসলাজাতীয় আরও দুটি পণ্যের—আদা ও রসুনের—দামও ঊর্ধ্বমুখী। টিসিবি তথ্যানুসারে, ২৯ অক্টোবরের তুলনায় ৫ নভেম্বরের মধ্যে কেজিপ্রতি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা, আদার ১০ টাকা এবং রসুনের ১৫ টাকা। ২৯ অক্টোবর পিঁয়াজের দাম ছিল ৭৫ টাকা কেজি, যা বেড়ে ১১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আদার দাম ১৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৫ টাকা এবং রসুনের দাম ১৬৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২,৯৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪৪ লাখ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আগের অর্থবছরে ২,৭৩৫ হেক্টরে ৪০ লাখ টন উৎপাদন হয়েছিল। এর পরও নভেম্বরে পিঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি সরকারি দপ্তরগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতি বছরই নভেম্বরে কিছু কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা সাধারণত সাময়িক। তবে এবার বৃষ্টির কারণে দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। শিগগিরই মুড়িকাটা পিঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্সের কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে পিঁয়াজের খুচরা মূল্য ৪০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও মূল্য বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার সচিবালয়ে পিঁয়াজের উৎপাদন, চাহিদা ও বর্তমান বাজারদর নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন ইতিমধ্যেই আমদানির সুপারিশ দিয়েছে। সাবেক সচিব ও কৃষিপণ্যের বাজার বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হয়েছে। উৎপাদন বেশি থাকলেও পণ্যটি এখন কৃষকের হাতে নেই এবং ফড়িয়ার দখলে চলে গেছে। তাদের মতে, যথাসময়ে আমদানির অনুমতি না দেওয়া ছিল চরম ভুল।