সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর ছয় বিচারপতি হলেন— বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আপিল বিভাগ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর চতুর্দশ সংসদ নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো-
>> পূর্বের রায় বাতিল ও আপিল মঞ্জুর : আদালত সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগের রায়টিতে বেশ কিছু ভুল ছিল। তাই, আদালত আগের সেই রায়টিকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দিয়েছে।
ফলস্বরূপ, এর সাথে সম্পর্কিত সব আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে এবং পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলিও নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
>> তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার (এনপিসিজি) : এই রায়ের ফলে, সংবিধানের চতুর্দশ খণ্ডের ২এ অধ্যায়, যা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত, সেটি সক্রিয় ও পুনরুজ্জীবিত হলো।
এই ব্যবস্থাটি ১৯৯৬ সালের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল।
>> কার্যকারিতা শুরু হওয়ার শর্ত : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটলেও, এর কার্যক্রম শর্তসাপেক্ষ। এটি তখনই কার্যকর হবে, যখন ত্রয়োদশ সংশোধনীর ৫৮খ(১) এবং ৫৮গ(২) অনুচ্ছেদগুলোর বিধান কার্যকর করা হবে।
>> ভবিষ্যতের জন্য প্রযোজ্যতা : এই আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুনরুদ্ধার ও পুনরুজ্জীবিত হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানগুলো কেবল ভবিষ্যৎ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, অতীতের কোনো ঘটনার উপর এই রায়ের সরাসরি প্রভাব পড়বে না, কিন্তু ভবিষ্যতের সবকিছুর জন্য এটি প্রযোজ্য হবে।
এর বিস্তারিত রায় বা পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা পরে প্রকাশিত হবে।
২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন তৎকালীন আপিল বিভাগ। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে নতুন করে আইনি লড়াই শুরু হয়। চলতি বছরের ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর করেন সর্বোচ্চ আদালত। দেওয়া হয় আপিলের অনুমতি। এরপর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার ও পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক আপিল করেন।
এরপর ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫, ৬ ও ১১ নভেম্বর শুনানি হয়। শুনানি শেষ করে রায়ের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
এ আপিলে বিএনপি মহাসচিবের করা আপিলের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের করা আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে আপিল শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
এর আগে, আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্ভব নয়। কারণ সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলা আছে। এখন তো কোনো সংসদ নেই। সংসদ ভেঙে গেছে এক বছরের বেশি সময় আগে। আমরা আশা করছি, চতুর্দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। আমরা সব আবেদনকারী আপিল বিভাগে এর পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের চাপে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ওই বছর ২৭ মার্চ সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে। এরপর এ পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
২০০৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
পরে রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে আপিলে শুনানি শুরু হয়। সর্বোচ্চ আদালত এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন। তাদের প্রায় সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি সে সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন।
তখনকার প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি শুনানি গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন। এ ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে ছিলেন বিচারপতি খায়রুল হকসহ চারজন। আর তিনজন ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠের দেওয়া রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অর্থাৎ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন অগণতান্ত্রিক এবং তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে তা বাতিলযোগ্য। তবে প্রয়োজনের নিরিখে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ রায় ঘোষণার সাত দিন পর অর্থাৎ ১৭ মে অবসরে যান এ বি এম খায়রুল হক। অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
তখন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে ‘তবে প্রয়োজনের নিরিখে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ এ পর্যবেক্ষণ বাদ দেওয়া হয়। পরে এ পূর্ণাঙ্গ রায়কে আশ্রয় করে দলীয় সরকারের অধীনে পরপর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকেন শেখ হাসিনা। জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট তার পতন ঘটে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
পরিবেশ দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে হাজারীবাগ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। সেখানে গাড়ির কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ৮টি গাড়ির চালককে মোট ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অঞ্চল–৪ এর আওতাধীন বাবুবাজার ও আশপাশের এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সালেহ মুস্তানজিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৬৯ ধারা এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ৯২ উপধারা অনুযায়ী মোট ১৪টি মামলায় ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। ডিএসসিসি জানিয়েছে, জনস্বার্থে দূষণবিরোধী এসব অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে এবং পরিবেশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি চলবে।
কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ (শুক্রবার) ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে না। সব ঠিক থাকলে এটি আগামীকাল শনিবার আসতে পারে। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে লন্ডন নেওয়া হতে পারে। শুক্রবার সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আগমন বিলম্বিত হয়েছে। তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার পৌঁছালে এবং মেডিকেল বোর্ড অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে ৭ তারিখ যাত্রা করানো হবে। এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর তার ফ্লাইট ছেড়ে যায়। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও চোখের নানা জটিলতায় ভুগছেন। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল ৫টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, কাতার রাজপরিবারের পূর্বনির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় কাতারের আমির তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিকল্প আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। নতুন এ অ্যাম্বুলেন্সটিও কাতারের, তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির। তিনি আরও পরিষ্কার করে বলেন, কাতার জার্মানি থেকে আলাদা কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে না—এটি কাতারেরই অ্যাম্বুলেন্স, শুধু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জার্মান। এদিকে খালেদা জিয়াকে নিতে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দেশে পৌঁছে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশযাত্রার উপযোগী বলে মত দেয়, তাহলে আগামী রোববার (৭ ডিসেম্বর) তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়তে পারেন।