জাতীয়

নানা চ্যালেঞ্জে কৃষি খাত হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

আক্তারুজ্জামান ডিসেম্বর ০৩, ২০২৫ 0
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা চ্যালেঞ্জের কারণে কৃষি খাতে উৎপাদন কমছে, যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো-আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়া, দুর্বল অবকাঠামো, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব এবং ফসলের সীমিত বৈচিত্র্যায়ন। এরই মধ্যে ধান উৎপাদন স্থবিরতার মধ্যে পড়েছে। কমেছে গম উৎপাদন। যদিও ডাল, শাকসবজি, মসলা ও ক্ষুদ্র শস্যের উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির সম্মেলন কক্ষে ‘পাসপেকটিভ অন দ্য অ্যাগ্রিফুড সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা সচিব এসএম শাকিল আকতার। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডল। সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক।

 

গবেষণা প্রতিবেদনে ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ফসলের বাইরেও বিস্তৃত হচ্ছে। যেমন শ্রমে উৎপাদনশীলতা কমাচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কৃষি শ্রমিক সরবরাহ এবং শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কমছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কৃষি শ্রমিকের আয় কমছে ২০ শতাংশ। পাশাপাশি শ্রমের উৎপাদনশীলতা কমছে ১১ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। তাপের কারণে শ্রমের উৎপাদনশীলতা কমায় কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যায়, উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় এবং ৩ থেকে ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আউশ ধান উৎপাদন ও চাষের এলাকা বেড়েছে। তবে বোরো ধানের উৎপাদন ও চাষের এলাকা বাড়ছে না। যদিও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোরো ধানের ফলন বৃদ্ধি ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।’

 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সেচের আওতাধীন এলাকা সামান্য বাড়লেও মোট ফসলি জমির অনুপাত কমেছে। অন্যদিকে জমিতে সারের ব্যবহার বেড়েছে। এতে মানবদেহের রক্তে ইউরিয়া বাড়ছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া কীটনাশকের ব্যবহারও ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কীটনাশকের দানা ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। ২০১২ সালের পর কৃষিক্ষেত্রে ছত্রাকনাশক, ভেষজনাশক এবং তরল ও গুঁড়া কীটনাশক ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবহার হচ্ছে।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা যায় নিয়মিত মৌসুমি বন্যা হচ্ছে না। এছাড়া বর্ষাকাল ছোট হয়ে আসছে। শুষ্ক রবি মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। এ কারণে জমি আরও নিবিড়ভাবে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে একটি জমিতে এক বছরের আরও বেশি ফসল চাষ করা সম্ভব হবে।’

 

এতে বলা হয়ে, ‘বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা গত কয়েক দশকে গভীর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে। একসময় কৃষি অর্থনীতি প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। সত্তরের দশকে জিডিপিতে সর্বাধিক অবদান রাখত কৃষি খাত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ভূমিকা কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমে হয়েছে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। তারপরও এখন পর্যন্ত গ্রামীণ জীবিকার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কৃষি। শ্রমশক্তির প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থান হচ্ছে এই খাতে। এছাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবারকে টিকিয়ে রাখছে কৃষি খাত।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কৃষিব্যবস্থার মধ্যে প্রাথমিক কৃষি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাণিজ্য ও পরিবহণ, খাদ্যসেবা, উপকরণ সরবরাহ-একে অপরের সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে যুক্ত হয়ে ভ্যালু চেইন তৈরি করে, যা গ্রামীণ উৎপাদকদের নগর ভোক্তাদের সঙ্গে যুক্ত করে। কৃষির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যচাষ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদন বেশি হারে বেড়েছে। এটি হয়েছে মূলত পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য। অভ্যন্তরীণ মৎস্যচাষ ধারাবাহিকভাবে সম্প্রসারিত হলেও সামুদ্রিক মৎস্যচাষ স্থবির রয়েছে। তবে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য রূপান্তর জমি সম্প্রসারণের পরিবর্তে নিবিড়তা, বৈচিত্র্যায়ন এবং ভ্যালু চেইন সংহতকরণের ওপর বেশি নির্ভর করবে। এর জন্য এমন নীতি করা দরকার, যা জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করবে। সেই সঙ্গে সংযোগ উন্নত করবে এবং দারিদ্র্য হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পুষ্টি উন্নয়নে উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে।’

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাকিল আকতার বলেন, ‘এই গবেষণা প্রতিবেদনটি দেশের কৃষি খাতের একটি পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছে। এখান থেকে কৃষির গতিপ্রকৃতি এবং খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবেন।’

Popular post
হাইকোর্টের রুল জারি, কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতি কেন অবৈধ নয়

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে। 

কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতি বিতর্ক : উদ্বেগে দুই শতাধিক কর্মকর্তা

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।   

কৃষি ব্যাংকের ‘ভুয়া সিবিএ সভা’ ঘিরে চাঞ্চল্য

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে।  অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

হালিম হত্যার আসামিরা পলাতক, ধামাচাপা দিচ্ছে প্রশাসন

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।  কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কৃষি ব্যাংকে ভুয়া সিবিএ নেতাদের কোটি টাকারও বেশি চাঁদাবাজি

অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।  

ভিপি আবু সাদিক কায়েম । ছবি : সংগৃহীত
সাদিক কায়েমের আহ্বান : সচেতন ও সুশৃঙ্খল হয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয় এবং ফার্মগেটে অবস্থিত ডেইলি স্টার ভবনে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা।   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি আবু সাদিক কায়েম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনায় মন্তব্য করেছেন। তার ভেরিফায়েড আইডিতে তিনি লিখেছেন, আধিপত্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসেনানী শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর শাহাদাতের পর খুনীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও প্রক্সি ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করার জন্য দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অপরিহার্য। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, আধিপত্যবাদের এদেশীয় দোসর ও সহযোগীরা ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য ক্ষোভকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, সংবাদপত্র অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা সেই প্রচেষ্টার অংশ হতে পারে। সাদিক কায়েম ছাত্রজনতাকে সচেতন, সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে রাজপথে অবস্থান নেয়ার পরামর্শ দেন। এর আগে, বিক্ষুব্ধ জনতা শাহবাগের দিক থেকে মিছিল নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। তারা প্রথম আলো এবং ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। একপর্যায়ে কিছু ব্যক্তি অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং কার্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে ডেইলি স্টার ভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।

মোঃ ইমরান হোসেন ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ 0
শরিফ ওসমান বিন হাদি। ছবি : সংগৃহীত

হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাবে শুক্রবার

রিফ ওসমান হাদি। ছবি : সংগৃহীত

হাদির জানাজার সময় ঘোষণা করলো ইনকিলাব মঞ্চ

শরিফ ওসমান হাদি। ছবি : সংগৃহীত

সন্ধ্যায় দেশে পৌঁছাবে ওসমান হাদির মরদেহ

শরিফ ওসমান হাদি। ছবি : সংগৃহীত
ওসমান হাদির মৃত্যুর সময় জানালেন ডা. আহাদ

সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অস্ত্রোপচার শেষে তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্যসচিব ডা. মো. আব্দুল আহাদ।   বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানান। ডা. মো. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে ওসমান হাদির পরিবার অস্ত্রোপচারের জন্য সম্মতি দেয়। এরপর তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার পর আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। পরে সরাসরি তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।’ হাদির মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আহাদ বলেন, ‘মৃত্যুর খবরটি এইমাত্র পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’ এর আগে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগে অংশ নিতে গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।

মোঃ ইমরান হোসেন ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ 0
ছবি : সংগৃহীত

যখন ওসমান হাদির মরদেহ দেশে ফিরবে

ছবি : সংগৃহীত

ওসমান হাদিকে ‘বাংলার বীর’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

ছবি : সংগৃহীত

ওসমান হাদির সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব নেবে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

ছবি : সংগৃহীত
হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দৃঢ় আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য বা ছাড় দেওয়া হবে না।   বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ভাষণে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিপ্লবী চেতনায় উজ্জীবিত এই তরুণ নেতা ছিলেন প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল প্রতীক। তার জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি শুধু প্রতিবাদই নয়, বরং দেশপ্রেম, ধৈর্য ও অটল দৃঢ়তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। দেশবাসীর প্রতি শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সকল নাগরিকের প্রতি তার আন্তরিক অনুরোধ— সবাই যেন ধৈর্য ও সংযম বজায় রাখেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং রাষ্ট্র আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ওসমান হাদি ছিলেন পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির সরাসরি শত্রু। তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে বিপ্লবীদের ভয় দেখানোর অপচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয়, সন্ত্রাস কিংবা রক্তপাতের মাধ্যমে এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দেশ বর্তমানে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। শহীদ হাদি ছিলেন এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরবর্তী ধাপে সক্রিয় ভূমিকা রাখার স্বপ্ন ছিল তার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই স্বপ্ন আজ অপূর্ণ রয়ে গেছে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন সমগ্র জাতির কাঁধে ন্যস্ত। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে সবাইকে ধৈর্য, সংযম, সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী অপশক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা যায়। ভাষণের শেষাংশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই শোকের মুহূর্তে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ও ত্যাগকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। অপপ্রচার ও গুজবে কান না দিয়ে যেকোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।   তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ফাঁদে পা না দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অবিচল থাকাই হবে শহীদ হাদির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।

মোঃ ইমরান হোসেন ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ 0

ওসমান হাদির মৃত্যুতে ২০ ডিসেম্বর এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি : সংগৃহীত

ওসমান হাদি মারা গেছেন

ছবি : সংগৃহীত

তারেক রহমানকে অভ্যর্থনা দিতে স্থান যাচাই-বাছাই চলছে: সালাহউদ্দিন

0 Comments