বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে, যার ফলে রাজপথে আবারও বিরোধ ও সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে একদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পুনরায় জোরালো হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারা অনুসরণে অনড়।
বিএনপি গত সপ্তাহে ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করে যেখানে দলটির শীর্ষ নেতারা স্পষ্টভাবে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন তারা মানবে না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আমরা রাজপথে থাকবো।” বিএনপি’র নেতারা দাবি করেন, গত দুই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারণে জনগণের আস্থা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বলা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। তারা জানে, জনগণের সমর্থন তাদের নেই, তাই ষড়যন্ত্র করছে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে, কোনো আপস নেই।”
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছু রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষক নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও কমিশন জানিয়েছে, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেন, “আমরা সকল দলকে সমান সুযোগ দেবো। কেউ যদি অংশ না নেয়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপই একমাত্র সমাধান হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফুল হক বলেন, “একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু কোনো দল নির্বাচন বর্জন করলে গণতন্ত্র আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
এদিকে দেশের সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকেরা স্থিতিশীল পরিবেশ চান। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে ক্ষমতার লড়াইয়ের চেয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া।
আগামী মাসেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেবে বিএনপি এবং একাধিক জোট গঠনের আলোচনা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, দলীয় মনোনয়ন, প্রচার কৌশল ও মাঠ পর্যায়ের সংগঠন শক্তিশালী করতে নিয়মিত বৈঠক করছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি আবারো এক নতুন মোড় নিতে চলেছে। এখন দেখার বিষয়, আলোচনার পথে রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব হয় কিনা, নাকি রাজপথই আবার হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আসনভিত্তিক প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন—দল যাকে মনোনয়ন দেবে, নির্বাচনি মাঠে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অক্টোবরের মধ্যভাগে একক প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এরই মধ্যে প্রত্যেক আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে একাধিক ধাপে বৈঠক করেছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সম্ভাব্য প্রার্থী ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন তারেক রহমান। জরিপে এগিয়ে থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই চলছে। প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীর তালিকা হাইকমান্ডের হাতে রয়েছে। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে বিএনপি মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ প্রার্থীকে আগাম মাঠে নামানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী নির্ধারণে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে—যেগুলো পরিচালিত হয়েছে দলের সাংগঠনিক টিম, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে। তারেক রহমানের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী—আন্দোলনে সম্পৃক্ত, ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ও ‘ক্লিন ইমেজ’ধারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকা নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক হয়, যেখানে নির্বাচনি প্রস্তুতি, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়। তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করলে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের প্রথমে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। এরপর তারা মাঠে প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদেরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে কাজ করার নির্দেশনা থাকবে। তফশিল ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে। এদিকে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোকেও নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। এ কারণে শতাধিক আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দল সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও জমা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপি এখন নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছে—যেখানে প্রার্থী চূড়ান্তের পাশাপাশি মাঠে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই চলছে তাদের বর্তমান তৎপরতা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নির্বাচনী সংলাপে উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ভোট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য নতুন নতুন উদ্যোগও হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী ভোটারসহ নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের জন্য ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিন সকাল ও বিকেলে দুই দফায় সংলাপ আয়োজন করা হয়। কমিশন সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি সুশীল সমাজের ২৬ প্রতিনিধির সঙ্গে চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৭ জন শিক্ষাবিদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে পূজার ছুটি শেষ হলে অক্টোবরে নারী নেত্রী, মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে কমিশন। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। জানা যায়, আগামী রমজানের আগে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তপশিল ঘোষণা হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত রাজনীতি: প্রধান দলগুলোর নতুন কৌশল বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় নির্বাচন সবসময়ই একটি উত্তপ্ত এবং আলোচিত বিষয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন ঘিরে রাজপথ, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৈরি হয় তুমুল আলোচনা, সমালোচনা এবং নানা হিসাব-নিকাশ। ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠ ইতিমধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বড় বড় দলগুলো নতুন কৌশল, নতুন মুখ এবং নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হচ্ছে জনগণের দরবারে। বর্তমান সরকার টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর এখন তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তারা বিগত সময়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অবকাঠামোগত পরিবর্তন, ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে সামনে এনে জনগণের মন জয় করতে চাইছে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক বড় প্রকল্পের উদ্বোধন, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের প্রসার ইত্যাদিকে সাফল্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বেকারত্ব ইস্যুতে জনগণের ক্ষোভ কমাতে নানা প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দলগুলো বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরছে স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রের অভাবের বিষয়ে। তারা বলছে, বিগত নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ ছিল প্রশ্নবিদ্ধ এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। এবার তারা চায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারবে সমান সুযোগ নিয়ে। এই দাবিকে সামনে রেখে তারা জোট গঠন, রোডম্যাপ ঘোষণা এবং আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গণসংযোগ বাড়ানোর অংশ হিসেবে তারা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-মফস্বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়। নতুন এই নির্বাচনী লড়াইয়ে তৃতীয় শক্তি বা বিকল্প রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাও উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম, সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক চিন্তা এবং দুর্নীতিমুক্ত শাসনের দাবি এই দলগুলোর মূল হাতিয়ার। তারা জনগণকে ‘নতুন রাজনীতি’র স্বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। যদিও মাঠ পর্যায়ে তাদের প্রভাব এখনো সীমিত, তবে অনলাইন এবং শহুরে শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে তারা একটি আলোচনার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এই নির্বাচনে একটি নতুন ট্রেন্ড হচ্ছে—রাজনৈতিক কৌশলে প্রযুক্তির ব্যবহার। বিভিন্ন দল ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। ডিজিটাল প্রচারকৌশল, ইমেজ বিল্ডিং, লাইভ বিতর্ক, অনলাইন জরিপ—সবকিছুই এখন নির্বাচনী কৌশলের অংশ। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সব দলেরই এখন বড় নজর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। যদি জনগণ মনে করে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, তবে তা দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। কিন্তু যদি আগের মতো অভিযোগ, সহিংসতা ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে, সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সময় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। জনগণ এখন অপেক্ষায় আছে—দলগুলো কীভাবে তাদের কথা রাখবে, কেমন হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব, আর কোন কৌশল জনগণের আস্থা অর্জনে সফল হবে।