দেশের আকাশপথে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য। ২৫-৩০ হাজার টাকার সাধারণ এয়ার টিকিট যাত্রীকে কিনতে হচ্ছে লাখ টাকায়। বছরের পর বছর একটি সিন্ডিকেট যাত্রীর পকেট থেকে ভাড়ার তিনগুণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ চক্রের কাছে সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি কঠিনভাবে জিম্মি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। যুগান্তরের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এয়ারলাইন্স কোম্পানি, কিছু ট্রাভেল এজেন্সি এবং কিছু এয়ারলাইন্স কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে টিকিটের বাজারে এই ভাড়া নৈরাজ্য। বছরের পর বছর চলা এ নৈরাজ্য ও যাত্রী শোষণের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নির্দেশনা জারি থাকলেও তা কেউ মানছে না। সিন্ডিকেট কীভাবে টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণ করে, এর খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু তথ্য। এতে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অন্তত ১১টি এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি জিএসএ এজেন্ট (গ্লোবাল সেলস এজেন্ট) এবং ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সি মালিকের যোগসাজশে চলছে অরাজকতা। তারা গ্রুপ টিকিটের নামে ভুয়া তথ্য দিয়ে একেকটি ফ্লাইটের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ টিকিট ব্লক করে রাখে। এভাবে টিকিট বা সিট ব্লক করে রাখলে ফ্লাইটে সিট স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন টিকিটের দাম বেড়ে যায়। আর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে রাখা টিকিট বিক্রি শুরু করে সিন্ডিকেট। এভাবে কেনা দামের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে তারা টিকিট বিক্রি করে। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এক অনুষ্ঠানে টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার সেই বক্তব্যের সূত্র ধরে যুগান্তর এর পেছনের চক্রটিকে সামনে আনার চেষ্টা করে।
প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে শেখ বশিরউদ্দীনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই গরিব শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা হোক। তাদের কষ্টার্জিত টাকাই দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে। টিকিটের গায়ে মূল্য লেখার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে যুগান্তরের অনুসন্ধানে টিকিটের দাম বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি ধাপে সিন্ডিকেটের কারসাজির তথ্য উঠে আসে। বড় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো তাদের পরিচিতি বা প্রভাব কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট রুটে (বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের বা উৎসবের সময়ের রুট) টিকিট ব্লক করে রাখে। চক্রটি এয়ারলাইন্সগুলোর গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) ব্যবহার করে কারসাজি করে। তারা যাত্রীর নাম বা পাসপোর্ট নম্বর ছাড়াই বহুসংখ্যক টিকিট বুকিং সিস্টেমে হোল্ড করে। এর ফলে ওই সিটগুলো বাজার থেকে সাময়িকভাবে উধাও হয়ে যায়। অনলাইন বা সাধারণ ট্রাভেল এজেন্টের কাছে টিকিট ‘সোল্ড আউট’ দেখায়। অথচ বাস্তবে আসনগুলো খালি থাকে। এভাবে জোগান কম দেখিয়ে চাহিদা বাড়ানো হলে এয়ারলাইন্সের ডায়নামিক প্রাইসিং সিস্টেমে (চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিটের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এরপর সিন্ডিকেট নিজেদের হাতে থাকা ব্লক টিকিটগুলো চড়া দামে বাজারে ছাড়ে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে টিকিট কেনেন।
কীভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয় সিন্ডিকেট, একজন যাত্রীর অভিজ্ঞতা থেকে সেই ধারণা পাওয়া যায়। কুয়েতগামী যাত্রী শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার আলী হোসেন। ৬ অক্টোবর তার ফ্লাইট। এর জন্য তিনি টিকিট কাটতে যান। বুধবার সকালের কথা। তার কাছে প্রথমে টিকিটের দাম ৬০ হাজার টাকা দাবি করে ট্রাভেল এজেন্সি। টাকা সংগ্রহ করার পর বিকালে তিনি টিকিট কাটতে যান। তখন তাকে বলা হয়, টিকিটের দাম বেড়ে গেছে। এখন ৭৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন আলী হোসেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, টিকিট না কিনলে চাকরিটা চলে যেত। ধারদেনা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হলো। বিদেশে যাওয়ার আগেই ঋণের বোঝা কয়েক গুণ বেড়ে গেল।
সরকারের নির্দেশনা ছিল-পাসপোর্ট নম্বর ছাড়া টিকিট বুকিং নয়। সিন্ডিকেট নতুন ফাঁদ পাতে। যেহেতু বুকিং করার সময় যাত্রীর পাসপোর্ট নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ শর্ত পূরণের জন্য এজেন্সিগুলো এখন ভুয়া, বানানো বা ডামি পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করছে। সিস্টেম যেহেতু শুধু একটি বৈধ চেহারাযুক্ত (সঠিক ফরম্যাটের) নম্বর ইনপুট হিসাবে চায়, তাই এজেন্সিগুলো সেই ডামি নম্বর ব্যবহার করে বিপুলসংখ্যক সিট ব্লক বা হোল্ড করে রাখছে। এছাড়া একটি বৈধ পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে সেই যাত্রীর জন্য একই রুটের বা ভিন্ন ভিন্ন রুটের একাধিক তারিখে টিকিট বুকিং করা হয়।
বিমান ভ্রমণের নিয়ম অনুযায়ী একজন যাত্রী একই সময়ে একই রুটে কনফার্ম টিকিট নিতে পারেন না। সিস্টেমের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এজেন্সিগুলো একই নামে বারবার টিকিট বুকিং (রিপিটেড বুকিং) করে। এতে বাজারে কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই বাকি টিকিটের দাম বেড়ে যায়। এই রিপিটেড বুকিংয়ের বেশির ভাগ ডামি যাত্রী।
এদিকে টিকিটের দাম নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে নজর দিলে দেশের যাত্রীসাধারণ কতটা ঠকছেন, এর একটা ধারণা পাওয়া যায়।
যুগান্তরের হাতে আসা তথ্যে দেখা যায়, কলকাতা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইটের দূরত্ব ঢাকার সমপরিমাণ বা কিছু ক্ষেত্রে বেশি হলেও সে দেশের যাত্রীর টিকিটের দাম অর্ধেক বা তারও কম। ৮ অক্টোবর বিদেশি একটি এয়ারলাইন্সে যে যাত্রী ঢাকা থেকে রিয়াদ যাবেন, তার টিকিটের মূল্য ও সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশি যাত্রীকে ৯ ঘণ্টার ফ্লাইট যাত্রায় গুনতে হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা। একই দিনে কলকাতা থেকে রিয়াদগামী একই বিমানে যাত্রীর আকাশপথে ১১ ঘণ্টার জন্য দিতে হয় ৫৫ হাজার টাকা। ভাড়া কম। যাত্রার সময় বাংলাদেশ থেকে ২ ঘণ্টা বেশি। একইভাবে ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছার সময় ৫ ঘণ্টা। এই দূরত্বের জন্য একজন যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ৭১ হাজার টাকায় টিকিট কিনছেন। অপরদিকে কলকাতা থেকে দুবাই রুটে ফ্লাইং সময় একই হলেও টিকিটের দাম মাত্র ৩৮ হাজার টাকা। এবার নজর দেওয়া যাক ঢাকা থেকে নিউইয়র্কের ফ্লাইটের দিকে। বাংলাদেশ থেকে এই রুটে যাত্রা সময় (লে-ওভারসহ) সর্বোচ্চ ২৩ ঘণ্টা। এই রুটে একজন যাত্রীর খরচ পড়ছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অপরদিকে কলকাতা থেকে নিউইয়র্কের ফ্লায়িং দূরত্ব ও সময় ৪৫ ঘণ্টা (লে-ওভারসহ)। কিন্তু তাদের যাত্রীর টিকিটের দাম ৯৫ হাজার টাকা।
এতে দেখা যায়, ঢাকা থেকে রিয়াদ যেতে বাংলাদেশি যাত্রীকে কলকাতার যাত্রীর চেয়ে প্রায় ৭৩ শতাংশ ভাড়া বেশি গুনতে হয়। একইভাবে দুবাইগামী যাত্রীকে প্রায় ৮৭ শতাংশ এবং নিউইয়র্কগামী যাত্রীকে দিতে হয় অন্তত ৫৮ শতাংশ বেশি ভাড়া।
দূরত্ব প্রায় সমান বা কলকাতা থেকে কম হলেও ঢাকা ও কলকাতার টিকিট মূল্যের পার্থক্যের কারণ বিশ্লেষণ করেছেন বিদেশি এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, বাংলাদেশে ট্যাক্স ও এয়ারপোর্ট চার্জ অতিরিক্ত। এর বাইরে ঢাকায় যাত্রীদের টিকিট ও এয়ারলাইন্সের সিটের কৃত্রিম সংকট ও সিট সংকট তৈরি করে কেউ কেউ বাড়তি অর্থ নেয়। এতে বেড়ে যায় টিকিটের দাম। বাড়তি টাকা গুনতে হয় যাত্রীকে।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে বারবার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হলেও সিন্ডিকেট চক্র নতুন কৌশল অবলম্বন করে যাত্রীর পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা কেড়ে নিচ্ছে। সরকার এ বিষয়ে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে সতর্কতা জারি করে। সরকারের নির্দেশনা ছিল, টিকিট বিক্রির সময় অবশ্যই যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট নম্বর যুক্ত থাকতে হবে। টিকিটে দাম উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া তা টিকিটের গায়েও ছাপা থাকতে হবে। যদিও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আকাশপথে যাত্রীসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের কোনো কার্যকারিতা এখন নেই।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ উইং কমান্ডার (অব.) এটিএম নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না, বরং প্রতিদিনই ভাড়া বাড়ছে। টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া নিছক বাজারের কারণে নয়। এটি একটি সুসংগঠিত সিন্ডিকেটের প্রমাণ। এয়ারলাইন্স ও কিছু ট্রাভেল এজেন্সি মিলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তারা লোয়ার ক্লাস বন্ধ করে দেয় এবং ফ্লাইটের ক্লোজিং ডেট যত ঘনিয়ে আসে, দাম তত বাড়ায়। সিন্ডিকেট শুধু এজেন্সিগুলো একা করে না। এয়ারলাইন্সের সম্পৃক্ততা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। বিশেষ করে গ্রুপ টিকিটের নামে বিপুলসংখ্যক টিকিট ব্লক করে রাখা, সেগুলো এয়ারলাইন্স থেকে নেওয়া ও বিক্রি নিয়ে কোনো মনিটরিং নেই।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সরকারি নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় অসাধু চক্র সাধারণ যাত্রীদের পকেট কেটে নিচ্ছে। এটি প্রকাশ্য লুটপাট এবং স্পষ্টতই দুর্নীতির প্রমাণ। কার্যকর মনিটরিং ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে এই অনিয়ম ঠেকানো সম্ভব হবে না।
সাধারণ সময়ে ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রুটের ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া যেখানে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সৌদি আরব ও দুবাই রুটে এই মূল্যবৃদ্ধি চরমে। এই অরাজকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) প্রশাসক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোতাকাব্বীর আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। এমনকি প্রশাসক হিসাবে সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগে সরাসরি কোনো সদস্যের মেম্বারশিপ বাতিল করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আমাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আমরা তা সদস্যদের অবহিত করেছি। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় বেশকিছু এজেন্সির লাইসেন্স বাতিলও করেছে।
এদিকে টিকিট সিন্ডিকেটে জড়িত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রুপ বুকিংয়ের নামে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাহিদাসম্পন্ন রুটের এয়ার টিকিট ব্লক করে রাখে এমন ১৩টি এজেন্সিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেঘা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার সার্ভিস, মাদার লাভ এয়ার সার্ভিস, জেএস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, ফোর ট্রিপ লিমিটেড, কিং এয়ার এভিয়েশন, বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট, সাদিয়া ট্রাভেলস, আত-তাইয়ারা ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল ও এনএমএসএস ইন্টারন্যাশনাল। এসব ট্রাভেল এজেন্সি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক দামে অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে টিকিটের মজুতদারি, কালোবাজারি ও প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার বিষয়টি তাতে উঠে আসে। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, আমরা এসব চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। এরই মধ্যে ৪৯টি এজেন্সিকে চিঠি দিয়েছি। ১৩টির লাইসেন্স বাতিল করেছি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
পরিবেশ দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে হাজারীবাগ এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। সেখানে গাড়ির কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ৮টি গাড়ির চালককে মোট ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া অঞ্চল–৪ এর আওতাধীন বাবুবাজার ও আশপাশের এলাকায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সালেহ মুস্তানজিরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ২৬৯ ধারা এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ৯২ উপধারা অনুযায়ী মোট ১৪টি মামলায় ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। ডিএসসিসি জানিয়েছে, জনস্বার্থে দূষণবিরোধী এসব অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে এবং পরিবেশ রক্ষায় কঠোর নজরদারি চলবে।
কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ (শুক্রবার) ঢাকায় পৌঁছাচ্ছে না। সব ঠিক থাকলে এটি আগামীকাল শনিবার আসতে পারে। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে রোববার (৭ ডিসেম্বর) তাকে লন্ডন নেওয়া হতে পারে। শুক্রবার সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের আগমন বিলম্বিত হয়েছে। তিনি বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শনিবার পৌঁছালে এবং মেডিকেল বোর্ড অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে ৭ তারিখ যাত্রা করানো হবে। এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার পর তার ফ্লাইট ছেড়ে যায়। ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড ও চোখের নানা জটিলতায় ভুগছেন। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য কাতার সরকারের ব্যবস্থাপনায় জার্মানি থেকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল ৫টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, কাতার রাজপরিবারের পূর্বনির্ধারিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় কাতারের আমির তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিকল্প আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। নতুন এ অ্যাম্বুলেন্সটিও কাতারের, তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জার্মানির। তিনি আরও পরিষ্কার করে বলেন, কাতার জার্মানি থেকে আলাদা কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে না—এটি কাতারেরই অ্যাম্বুলেন্স, শুধু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জার্মান। এদিকে খালেদা জিয়াকে নিতে দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। দেশে পৌঁছে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিদেশযাত্রার উপযোগী বলে মত দেয়, তাহলে আগামী রোববার (৭ ডিসেম্বর) তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশ ছাড়তে পারেন।