লম্বা সময় পর অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট। আসন্ন লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে নারী ও পুরুষ দুই বিভাগেই ৬টি করে দল অংশ নেবে। যেখানে সবমিলিয়ে মোট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২৮টি। দুবাইয়ে সভা শেষে এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
আইসিসির প্রধান নির্বাহী সঞ্জয় গুপ্ত বলেন, ‘অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তি আমাদের জন্য বিশাল পরিবর্তন। এতে সরকারি তহবিল পাওয়ার সুযোগ বাড়বে, যা উন্নয়ন ও অবকাঠামো বিনিয়োগে বড় সহায়তা দেবে।’
‘এশিয়ান গেমস, প্যান-আমেরিকান গেমস, আফ্রিকান গেমসের মতো বহুমুখী ক্রীড়াযজ্ঞে ক্রিকেট নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত হলে নতুন অঞ্চলে খেলাটি জনপ্রিয়তা পাবে। এতে হাই-পারফরম্যান্স ও গ্রাসরুট পর্যায়ে বিনিয়োগ বাড়বে।’-যোগ করেন তিনি।
মোট ৬ দলের ৫টি আসবে পাঁচটি মহাদেশীয় অঞ্চলের (এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপ ও ওশেনিয়া) শীর্ষ দেশ। তবে এর মধ্যেই আয়োজক তাদের অঞ্চল থেকে সরাসরি খেলবে। বাকি দলটি নির্ধারিত হবে বাছাইপর্ব পেরিয়ে।
র্যাংকিং অনুযায়ী পুরুষ দলের মধ্যে ভারত (এশিয়া), অস্ট্রেলিয়া (ওশেনিয়া), ইংল্যান্ড (ইউরোপ), দক্ষিণ আফ্রিকা (আফ্রিকা), যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা ও আয়োজক দেশ) খেলার কথা।
বাছাই পর্বের জন্য খেলতে পারে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের মধ্য থেকে সেরা দল সুযোগ পাবে মূল পর্বে খেলার।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতিতে অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য পদোন্নতির দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দাবি আদায়ে বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন ও মানববন্ধন করেও সাড়া না পেয়ে তারা শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন। সূত্র জানায়, পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ছুটির দিনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন, যাতে গ্রাহকসেবা ব্যাহত না হয়। তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে তিন মাস পার হলেও প্রতিশ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়িত না হওয়ায় তারা পুনরায় ওই বছরের ৩০ নভেম্বর মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এতে সারা দেশের শাখা থেকে ১২০০–এর বেশি কর্মকর্তা অংশ নেন। পরদিন (১ ডিসেম্বর) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী পদোন্নতির বিষয়ে মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা কর্মস্থলে ফিরে যান। পরে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, সুপারনিউমারারি পদ্ধতিতে মার্চের মধ্যে পদোন্নতির বিষয়টি সমাধান করা হবে। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকে ইতোমধ্যে মোট ৭,৩১৬ কর্মকর্তা এই পদ্ধতিতে পদোন্নতি পেয়েছেন, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করেছে। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এই উদাসীনতা তাদের প্রতি কর্মীবান্ধবহীন মনোভাব ও কর্তৃপক্ষের অনীহারই প্রকাশ। তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও কৃষি ব্যাংকে আগের প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, যা ন্যায্য দাবি আদায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন একাধিক বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বাস্তব পদক্ষেপ না নিয়ে বরং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের হয়রানি ও নিপীড়ন করা হয়েছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এ বছরের চলতি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন (রিট মামলা নং: ১৬৪২৮/২০২৫, মো. পনির হোসেন গং বনাম রাষ্ট্র ও অন্যান্য)। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পদোন্নতিতে দেখা দেওয়া অনিয়ম ও অসঙ্গতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। পাশাপাশি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, রুল নিষ্পত্তির আগে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু করা হলে তা অবৈধ ও আদালত–অবমাননার শামিল হবে। রিটে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পদোন্নতিতে ১০৭৩ জন কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে মূখ্য কর্মকর্তা) এবং ৫১ জন মূখ্য কর্মকর্তা (ঊর্ধ্বতন মূখ্য কর্মকর্তা পদে) অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে জানা গেছে, পূর্বে দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক জাহিদ হোসেন এখনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পদোন্নতি–বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে যদি পুনরায় অনিয়মের পথে যাওয়া হয়, তাহলে তা আদালতের অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল হবে। তারা আশা করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত ন্যায়বিচার ও সমাধান মিলবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সাম্প্রতিক সময়ে পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্য বিরোধী অফিসার্স ফোরাম’ এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. পনির হোসেন ও সদস্য সচিব এরশাদ হোসেনকে শৃঙ্খলাজনিত মোকদ্দমা এবং মুখ্য সংগঠক মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মুখপাত্র তানভীর আহমদকে দুর্গম অঞ্চলে বদলি করা হয় এবং সারাদেশের দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, মো. আরিফ হোসেনকে বরখাস্ত করার নথিতে তাকে ‘ব্যাংক ও রাষ্ট্রবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে, অথচ ব্যাখ্যা তলবপত্রে বলা হয় তিনি ‘রাজনৈতিক কাজে তহবিল সংগ্রহ করেছেন।’ ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তার ব্যাখ্যাতলবের জবাব প্রদানের পরও বরখাস্ত চিঠি আগেই তৈরি করা হয়েছিল, যা অনেক কর্মকর্তার মধ্যে প্রশ্ন তোলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সংবিধান বা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব না পালন করেন, হাইকোর্ট তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধের জন্য আদেশ দিতে পারে। অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, এ সিদ্ধান্তের পেছনে ব্যাংকের ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি ও ন্যায়বিচারের জন্য আন্দোলন এবং আইনি লড়াই চলবে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে প্রতিকার চাইবেন। এ ব্যাপারে মো. আরিফ হোসেন ও পনির হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে একটি ভুয়া কর্মচারী ইউনিয়নের সভায় জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের ভিজিল্যান্স স্কোয়াডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ হোসেন। গত ২০ অক্টোবর প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) নামে তারা এটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান ও উদ্বোধক হিসেবে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তারা প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে ভুয়া নেতাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত হয়ে অনুষ্ঠানটি বয়কট করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাসলিমা আক্তার লিনা হেড অফিসের বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা এবং তার স্বামী মিরাজ হোসেন পুরুষ কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ওই সভায় অংশগ্রহণে বাধ্য করেন। অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বদলি বা পদোন্নতি রোধের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। হেড অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, লিনা তার স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে নারী সহকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। কেউ আপত্তি জানালে মিরাজের সহযোগীরা এসে অশালীন আচরণ ও গালিগালাজ করে থাকে বলেও অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া, লিনা ‘উইমেনস ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন গড়ে মাসিক চাঁদা সংগ্রহ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডে অনেক নারী কর্মকর্তা বিব্রতবোধ করলেও চাকরির স্বার্থে নীরব থাকছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তাসলিমা আক্তার লিনা ও তার স্বামী মিরাজ ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এ ঘটনায় নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে তাসলিমা আক্তার লিনা ও মিরাজ হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে তাসলিমা আক্তার লিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। অন্যদিকে, মিরাজ হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সংঘটিত এজাহারভুক্ত হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ ও মিরাজ হোসেন পলাতক রয়েছেন। ব্যাংক প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খুনের শিকার কৃষি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল হালিম ছিলেন কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১ নম্বর আসামি হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত পিয়ন ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ এবং ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেনের নাম রয়েছে। তারা বর্তমানে নিজেদের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। ব্যাংক সূত্রে গেছে, তারা চাঁদাবাজি, ঘুষ আদায় ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, ব্যাংকের ভেতরে একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবেই এসব আসামিরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেন। এতে আরও যুক্ত রয়েছেন ডিজিএম সৈয়দ লিয়াকত হোসেন, হাবিব উন নবী, ডিএমডি খালেকুজ্জামান জুয়েল ও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিনতে আলী। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাতে মতিঝিলের বিমান অফিসের সামনে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। পরদিন সকালে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক সজীব কুমার সিং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে জানান, পুরনো সহকর্মীদের সঙ্গে বিরোধের জেরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাত ১টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান। হালিমের ছেলে ফয়সাল বলেন, তার বাবা ২০১৪ সাল থেকে কৃষি ব্যাংক সিবিএর সভাপতি ছিলেন এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও পদ নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত নভেম্বরেই মতিঝিল থানায় একটি জিডি (নং ০৫/১১/২০২৪ - ৩৩৫) করেছিলেন তার বাবা। তিনি আরও বলেন, বুধবার রাতে আমার বাবাকে তার অফিসের সহকর্মীরা মারধর করে হত্যা করেছে। সিবিএর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জানান, ২০১৪ সালে আমরা নির্বাচিত হই। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট বিনা নির্বাচনে নতুন কমিটি ঘোষণা করে আমাদের অফিস দখল করে নেয় ফয়েজ ও মিরাজ। এ নিয়ে মামলা চলছে। মামলার তথ্য অনুযায়ী, আসামিরা অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ড্রাইভার সাইফুল, শাহেদ, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মেহেদী ও অবসরপ্রাপ্ত ক্লিনার সিরাজ। এদিকে, মামলার ২ নম্বর আসামি মিরাজ হোসেন নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যদিও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির নৈমিত্তিক ছুটি পাওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক এ বিষয়ে বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়ের প্রধান মহাব্যবস্থাপক জানান, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে নেমেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একদল ভুয়া সিবিএ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, তারা বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নামে সারা দেশের শাখাগুলো থেকে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ), রেজি. নং বি-৯৮৫-এর নাম ব্যবহার করে আগামী ২০ অক্টোবর ‘বিশেষ সাধারণ সভা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা দেয় একদল ভুয়া নেতা। এ উপলক্ষে তারা ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ২৫০টি ইউনিট থেকে ১০-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠে। গোপন সূত্র জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত লোকজন শাখা পর্যায়ে বদলি ও পদোন্নতির ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তারা এসব কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এ সিন্ডিকেটের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এ ঘটনায় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের ডিজিএম জাহিদ হোসেনের প্রত্যক্ষ মদদ ও আস্কারায় চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাপ্ত আমন্ত্রণপত্রে দেখা গেছে, ভুয়া সভাপতি দাবিকারী কৃষি ব্যাংকের সাবেক পিয়ন ফয়েজ আহমেদ ও ভুয়া সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উদ্বোধক হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং প্রধান বক্তা হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা বিভিন্ন শাখা থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবগত আছেন বলে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত হওয়ায় তারা কার্যত কিছু করতে পারছেন না। অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও একই সিন্ডিকেট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। সেই টাকা তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, চাঁদাবাজ ও তাদের মদদদাতাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বহিরাগত অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব ভুয়া সিবিএ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা দাবি করেছেন। তাদের আশঙ্কা, এসব কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে।
২০২৫ সালের ফিফা দ্য বেস্ট মেনস প্লেয়ার নির্বাচনে নিজের ভোটে সাবেক বার্সেলোনা সতীর্থ ওসমান ডেম্বেলেকেই সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছেন লিওনেল মেসি। মঙ্গলবার কাতারের দোহায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারটি পান প্যারিস সাঁ জার্মেইনের এই ফরাসি উইঙ্গার। চূড়ান্ত লড়াইয়ে ডেম্বেলে পেছনে ফেলেন বার্সেলোনার কিশোর বিস্ময় লামিনে ইয়ামালকে। শেষ তিনে ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেও। মেসির ভোটে ডেম্বেলের পর দ্বিতীয় পছন্দ ছিলেন এমবাপ্পে, আর তৃতীয় স্থানে ইয়ামাল। ফিফা জানিয়েছে, ২০২৫ সালের এই পুরস্কারের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ফুটবল ফেডারেশন থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক, কোচ এবং একজন করে মিডিয়া প্রতিনিধির ভোট প্রকাশ করা হয়েছে। ডেম্বেলের জন্য ২০২৫ সালটি ছিল স্মরণীয়। তার নেতৃত্বেই পিএসজি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ, পাশাপাশি লিগ ওয়ান ও কুপ দে ফ্রান্স শিরোপা জেতে। মৌসুমজুড়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৩ ম্যাচে ৩৫ গোল করে দুর্দান্ত ছাপ রাখেন তিনি। এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ব্যালন ডি’অর জয়ের পরও ডেম্বেলেকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মেসি। বার্সেলোনায় একসঙ্গে চার মৌসুম খেলেছেন এই দুই তারকা, এরপর ২০২১ সালে পিএসজিতে পাড়ি জমান আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। ফুটবলবিশ্বে ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকায় আরেকটি বড় স্বীকৃতি যোগ হলো ডেম্বেলের নামের পাশে—যেখানে মেসির মতো কিংবদন্তির ভোটও তার পক্ষে গেছে।
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। আর ধারাভাষ্যকার হিসেবে দেশটিতে বহুদিন ধরেই সবার পছন্দের তালিকায় হার্শা ভোগলে। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে হাজির হন দু'জন। যেখানে সঞ্চালকের ভূমিকাতে দেখা যায় প্রিন্স অব ক্যালকাটাকে। আবার অতিথি হলেও নানা প্রশ্ন হার্শা করেছেন সৌরভকে। আলোচনায় উঠে এসেছে ভারতীয় ক্রিকেটের নানা দিক, নানা উত্থান-পতনের গল্প। 'দ্য ক্যাপ্টেনস কাম' নামের ওই শো-টিতে দু'জনের কথোপকথনের খানিকটা জেনেই নেই। সৌরভ গাঙ্গুলি: হারশা আমার সাথে আছেন এবং তাকে ধন্যবাদ। আমি এই আড্ডার জন্য মুখিয়ে আছি। হার্শা ভোগলে: আমি এখানে আসতে পেরে খুব খুশি এবং একই সাথে বেশ উচ্ছ্বসিতও। কারণ, সৌরভের সাথে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে আমার সবসময়ই ভালো লাগে। আর আরেকটা বিষয়ে মজা পাচ্ছি কারণ, আমরা এটা এর আগেও অনেকবার করেছি। কিন্তু প্রতিবার আমি থাকতাম ওই দিকে (সঞ্চালকের ভূমিকায়) আর তুমি থাকতে এই দিকে (অতিথি হিসেবে)। আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের সময় ছিল ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের ওই সময়টা, যখন ভারত খুব অসাধারণ কিছু করছিল। আমার বিশেষভাবে মনে আছে, তুমি এমন এক সময়ে অধিনায়কত্ব পেয়েছিলে যখন খুব অস্থির পরিস্থিতি ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট ঘিরে নানা সমস্যা ছিল, বিশ্বাসের অভাব ছিল। হঠাৎ শচিন টেন্ডুলকার নিজে বললেন, আমি আর ক্যাপ্টেন থাকতে চাই না। আচ্ছা, তুমি কি অধিনায়ক হওয়ার আশা করছিলে? সৌরভ গাঙ্গুলি: বছরের পর বছর আমার অভিজ্ঞতা এবং তোমার অভিজ্ঞতা থেকে তুমি জানো যে, পরিস্থিতি কেবল অস্থিরতার মধ্যেই বদলায়। যখন সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, যথাযথ থাকে, শান্ত থাকে, তখন তুমি পরিবর্তন দেখতে পাও না। আমার অধিনায়কত্ব এসেছিল এক অস্থির সময়ে। শচিন এটা করতে চায়নি। হয়তো সে যদি করতে চাইত, আমি হয়তো কোনোদিনই ভারতের ক্যাপ্টেন হতাম না। আমি কখনও ভাবিনি আমি ভারতকে নেতৃত্ব দেব। ৯৬ সালে আমি ডেবিউ (অভিষেক) করি, তুমি তখন সেখানে ছিলে। তখন সময়টা খুব আলাদা ছিল। ভারতকে তখন অন্যভাবে দেখা হতো। গত ২৯ বছরে অনেক কিছু বদলেছে। হার্শা ভোগলে: আমি একটা তরুণ ছেলেকে ব্যাট করতে নামতে দেখেছিলাম। এরও ৫ বছর আগে কেউ একজন আমাকে বলেছিল, এই ছেলেটার দিকে নজর রেখো। রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে সে ১২২ রান করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সেখান থেকে সেই ছেলেটা, মানে তুমি ভাইস-ক্যাপ্টেন হলে। ভাইস-ক্যাপ্টেন হলে সাধারণত ক্যাপ্টেন্সির লাইনেই থাকা হয়। কিন্তু দূর থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার যেটা মনে হয়েছিল, ভারতের মানুষ আবার বিশ্বাস ফিরে পেতে চাইছিল। তারা খেলা দেখতে চাইত এবং ভাবতে চাইত যে, 'আমার সব খেলোয়াড় আমার জন্যই খেলছে।' সৌরভ গাঙ্গুলি: বিশেষ করে ভারতে ক্রিকেট... এটা প্রায় ধর্মের মতো। বর্তমান প্রজন্মে হয়তো অর্থের পরিমাণ অনেক বেড়েছে, কিন্তু আমার প্রজন্মে বা তারও আগে গাভাস্কার-কপিলদের সময়েও এই খেলাটা কেবল একটা খেলার চেয়ে অনেক বড় কিছু ছিল। যখন ২০০০ সালে আমি ক্যাপ্টেন হলাম, তখন অনেক কিছু ঘটছিল। আমার সাথে সবচেয়ে ভালো যেটা হয়েছিল তা হলো, আমি তখন ল্যাঙ্কাশায়ারে ছিলাম ৬ মাসের জন্য। ভারতে যখন এসব হচ্ছিল, আমি, রাহুল (দ্রাবিড়) কেন্টে, অনিল (কুম্বলে) লেস্টারশায়ারে—আমরা সবাই বাইরে ছিলাম। আমার মনে হয় এটা ২০০০ সালের গ্রীষ্মকাল ছিল। তখন মিডিয়া এখনকার মতো এত দ্রুত ছিল না। কিছু খবর আসত যে তদন্ত হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ হচ্ছে। কিন্তু এটা আমাকে বিচলিত করেনি। আমি ক্যাপ্টেন্সি আশা করিনি, কারণ শচিন ক্যাপ্টেন ছিল এবং সে-ই সবসময়ই খুব স্বচ্ছ ইমেজের ছিল। আমি ভাইস-ক্যাপ্টেন হিসেবেই খুশি ছিলাম। কিন্তু যখন আমি প্রথম ক্যাপ্টেন হলাম, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটা জরুরি ছিল। আর আমি সবচেয়ে ভালো যেটা করেছিলাম, তা হলো আমি পেছন ফিরে তাকাইনি। আমি সামনে তাকাতে চেয়েছিলাম। আমার কাছে বিশ্বাস অর্জনের প্রথম ও প্রধান শর্ত ছিল ম্যাচ জেতা। এমন একটা দল তৈরি করা যারা জিতবে। আমরা একদল দারুণ খেলোয়াড় পেয়েছিলাম। আমি সবসময় বলি, আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমি টেন্ডুলকার, দ্রাবিড়, কুম্বলে, লক্ষ্মণ, সেহওয়াগদের নেতৃত্ব দিয়েছি। ধোনি পরে এসেছিল যখন আমি প্রতিষ্ঠিত ক্যাপ্টেন। এরা সবাই অবিশ্বাস্য খেলোয়াড় ছিল। কিন্তু ভালো খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তারা খুব ভালো মানুষ ছিল। যাদের সততা ছিল প্রশ্নাতীত। ভারত তাদের কাছে সবার আগে ছিল, তারপর তাদের প্রতিভা। তাই এটা আমার কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছিল। হার্শা ভোগলে: ইয়ান চ্যাপেল আমাকে একটা খুব মজার কথা বলেছিলেন। তিনিও অস্থির সময়ে ক্যাপ্টেন হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'আমি প্রথমে একটা তালিকা করেছিলাম যে, খেলোয়াড় হিসেবে আমার সাথে কী কী আচরণ করা হলে আমার খারাপ লাগত। এবং আমি ঠিক করেছিলাম, আমি যখন ক্যাপ্টেন হব, তখন অন্যদের সাথে সেই আচরণগুলো করব না।' আমি ৯২ থেকে ৯৬ সালের কথা এইজন্যই আনলাম কারণ ওটা তোমার জন্য খুব সুখকর সময় ছিল না। দলে সুযোগ পাওয়ার পরেও তুমি ৪-৫ বছর বাইরে ছিলে। তোমার মনে কি সেই চিন্তাটা ছিল? সৌরভ গাঙ্গুলি: ১০০% ছিল। আমি চাইনি কোনো তরুণ খেলোয়াড় সেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাক। কারণ এটা তোমার ক্ষমতাকে ৫০% কমিয়ে দেয়। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, যখন আমি কাউকে বেছে নিই, আমি তাকে সফল হওয়ার জন্যই বেছে নিই, ব্যর্থ হওয়ার আশা করি না। হার্শা ভোগলে: এখানেই একজন নেতার গুরুত্ব বোঝা যায়। সৌরভ গাঙ্গুলি: আমার কাছে প্রতিযোগিতা মানে হলো আরও ভালো হয়ে ওঠা। এ ছাড়া অন্য কোনো প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিযোগিতা মানে কাউকে নিচে নামানো নয়। হার্শা ভোগলে: তুমি কি কখনও ভুল করার ভয় পেতে? কারণ লিডাররা তো ভুল করবেই। সৌরভ গাঙ্গুলি: তুমি যেমন বললে, ৯৯-এর আগে ক্যাপ্টেনরা আসত আর যেত। অনেকে ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনসি হারাত। সিরিজ খেলে ফেরার পথে প্লেনে থাকত আর নেমে দেখত তারা আর ক্যাপ্টেন নেই। তো, আমি কি ভুল করার ভয় পেতাম? হ্যাঁ, পেতাম। আমি মানুষ। সবাই মানুষ। সেরা মানুষটিও হয়তো সেটা দেখাবে না, কিন্তু মনে মনে সে জানে যে সে ভুল করতে পারে। কিন্তু আমি ভুল যাতে কম হয়, তার জন্য বাড়তি পরিশ্রম করতাম। এটা একটা ভারসাম্য। টেস্ট ম্যাচে ব্যাট করতে নামার সময় তুমি নার্ভাস থাকো। ৫ নম্বরে ব্যাট করা সবচেয়ে কঠিন, কারণ তুমি জানো ৩ আর ৪ নম্বর ব্যাট করছে আর এরপর তুমি। কিন্তু যখন তুমি মাঠে নামো, গার্ড নাও, প্রথম বলটা যখন তোমার পাশ দিয়ে যায়, তখন জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তুমি নিজেকে এভাবেই তৈরি করো। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, কর্পোরেট হোক বা ক্রিকেট, তোমাকে সফল হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হয়। তুমি এমনি এমনি মাঠে বা কর্পোরেট অফিসে গিয়ে সফল হতে পারো না। হার্শা ভোগলে: কেউ কীভাবে সফল হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে পারে? সৌরভ গাঙ্গুলি: সফল হওয়ার একটাই উপায়, একই জিনিস বারবার করা। এর কোনো শর্টকাট নেই। হার্শা ভোগলে: মাঠে তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং ভুল হলে তার দায়ভারও নিতে হয়। তুমি শান্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিতে কীভাবে? সৌরভ গাঙ্গুলি: তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি শান্ত থাকো বা রাগী। মাঠে আমাকে জার্সি ওড়াতে বা ঝগড়া করতে দেখেছ, কিন্তু ভেতর থেকে আমি খুব শান্ত মানুষ। আমাকে তুমি কোনো ঘরের কোণে বসে নিজের কাজ করতে দেখবে, কোনো আওয়াজ নেই। এটাই আমার স্বভাব। কিন্তু ক্যাপ্টেন হিসেবে সবচেয়ে জরুরি হলো সিদ্ধান্ত নিতে ভয় না পাওয়া। এবং সেই সিদ্ধান্ত সবসময় প্রগতিশীল হতে হবে, সমর্থনের হতে হবে। এমন সময় আসে যখন কাউকে বাদ দিতে হয়। যেমন ২০০১ সালে মোহালিতে আমি সেহওয়াগকে বলেছিলাম, 'তুমি ফাস্ট বোলিং খেলার জন্য এখনও তৈরি নও। তুমি ফিরে যাও, খেলো এবং ফিরে এসো।' সে ফিরে এসেছিল একজন অন্য খেলোয়াড় হিসেবে। সততা খুব জরুরি। নেতৃত্ব মানে শুধু কাউকে ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং কাউকে তৈরি করা। এটাই একজন নেতার সবচেয়ে বড় ভূমিকা। জীবন বা খেলার যেকোনো পর্যায়ে, সৃষ্টি করাটাই আসল। ক্যাপ্টেন হিসেবে সবচেয়ে জরুরি হলো, পরিস্থিতি যেন হাতের বাইরে না চলে যায়। হার্শা ভোগলে: এটা কি সত্য যে যখন তুমি শান্ত থাকো তখন তোমার মন ভালো কাজ করে? আর রেগে গেলে মন কাজ করে না? সৌরভ গাঙ্গুলি: হ্যাঁ, কারণ রেগে গেলে ভুলভাল চিন্তা আসে। আর শান্ত থাকলে তুমি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাও।
নানা বিতর্কিত ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার লিওনেল মেসির ভারত সফর। শেষদিকে বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে মেসির সফরের শুরুটা হয়েছিল বিশৃঙ্খলা, বিতর্ক ও গন্ডগোল দিয়ে। আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তিকে ঠিকভাবে দেখতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্টেডিয়াম ভাঙচুর ও লুটপাট চালান সমর্থকরা। এমন ঘটনার জন্য মেসিকেই দায়ী মনে করছেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার। মেসির ভারত সফর নিয়ে দেশটির এক গণমাধ্যমে কলাম লেখেন গাভাস্কার। সেখানে তিনি দাবি করেন, মেসি নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের মতে, মেসির যতক্ষণ মাঠে থাকার কথা ছিল ততক্ষণ তিনি থাকেননি। আর এ কারণেই স্টেডিয়াম ভাঙচুর ও লুটপাটের জন্য মেসিকে দায়ী করেন গাভাস্কার। তিনি লেখেন, ‘কলকাতা স্টেডিয়ামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার সময় লিওনেল মেসি ঘোষিত সময়ের তুলনায় অনেক কম সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় সবাইকে দোষারোপ করা হলেও তাকে করা হচ্ছে না যিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তার যদি এক ঘণ্টার জন্য স্টেডিয়ামে থাকার কথা থাকে এবং তিনি যদি সময়ের আগে চলে যান, তবে যারা অর্থ দিয়ে টিকিট কিনেছিলেন তাদের জন্য এটা হতাশার। তাহলে মূল দোষী তিনি এবং তার সহযোগীরাই।’ গাভাস্কার কলামে আরও লেখেন, ‘হ্যাঁ, এটা সত্য যে মেসি রাজনীতিবিদ ও তথাকথিত ভিআইপিদের দ্বারা ঘিরে ছিলেন। তার তার কোনো নিরাপত্তা হুমকি ছিল না। তার কি শুধু স্টেডিয়ামে ঘুরে বেড়ানোর কথা ছিল, নাকি কার্যকর কিছু পেনাল্টি কিকও নিতে পারতেন? যদি সেটি হতো তাহলে চারপাশের সবাইকে সরতে হতো এবং উপস্থিত দর্শকরাও তাদের নায়ককে দেখতে পারেন যেটির জন্য তারা এসেছিলেন।’ অন্য শহরের সফরগুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হলেও কলকাতায় কেন এমনটি ঘটল সেটি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন গাভাস্কার। এ প্রসঙ্গে তিনি তার কলামে লেখেন, ‘অন্য সফরগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কলকাতাকে দোষারোপ করার আগে এটি যাচাই করা প্রয়োজন যে উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিকে ঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কি না।’