ছাতকে সরকারি জলমহালে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দুই গ্রামবাসী মুখোমুখি অবস্থানে

0
110

ছাতক প্রতিনিধিঃ
ছাতকে নোয়ারাই ইউনিয়নের লক্ষিবাউর ও কাড়ইল গাঁও গ্রামবাসী নাইন্দা জলমহালে বাঁধ দেয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। রবিবার বিকেলে দুইগ্রামের লোকজন সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিলে থানা পুলিশ ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এরপর সোমবার ৮মে সকালে দুই গ্রামের পক্ষ থেকে আবারো সংঘর্ষের ডাক দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ভোরে পুলিশ কাড়ইলগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করেছে। এ দিকে আটক সাজিদ আলী,সালেহ আহমদ, তোতা মিয়া,হরুপ আলীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০-৪৫ জনের বিরুদ্ধে সোমবার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন লক্ষিবাউর মৎস্যজীবি সমিতি সভাপতি মকতছির আলী। অভিযোগ প্রাপ্তি ও ৪ জন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাতক থানার এস আই নাজমুল হোসেন।

জানাগেছে বড় নাইন্দাহাওরের একটি বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে হাওরে বাঁধ নির্মাণে বাঁধা দেয়ায় লক্ষিবাউর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম,মকতছির আলী ও বুরহান উদ্দিনকে হাওরে মারপিট করে তাদেরকে বেঁধে নিয়ে যায় কাড়ইল গাঁও গ্রামের লোকজন। গ্রামের আব্দুস সহিদের বাড়িতে নিয়েও তাদেরকে মারপিট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন
জাহাঙ্গীর আলম। বিকেলে তাদেরকে ওই বাড়ি থেকে আটক অবস্থায় উদ্ধার করেছেন নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালেক রাজা,সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল আবেদিন আবুল, ছালিক মিয়া তালুকদার,আফতাব মিয়া তালুকদার,রাজু আহমেদসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা। আহত জাহাঙ্গীর আলমকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাতক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্য আহতরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন,জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বড়নাইন্দা হাওর চাকুরা গ্রুপ ২২৫ একর জলমহাল ১৪২৫ বাংলা সন হতে ১৪৩০ বাংলা সন পর্যন্ত উন্নয়ণ প্রকল্পের আওতায় ইজারা নেয় লক্ষিবাউর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। ওই জল মহালের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে কাড়ইলগাঁও গ্রামের লোকজন স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে।

শনিবার সমিতির লোকজন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিনকে মৌখিক ভাবে অবহিত করেন। তিনি তাদেরকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। রবিবার সকালে লিখিত অভিযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য তহশিলদার রমেন্দ্র নারায়ণ দাস ও সার্ভেয়ার আব্দুল্লা আল মামুনকে পঠান।

ওই সময় জলমহালের ইজারাদাররাও সেখানে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও মারামারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে কাড়ইলগাঁও গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে মাঠ থেকে ৩ জনকে ধরে নিয়ে যায়। বাড়িতে নিয়ে তাদেরকে মারপিট করা হয়।

তিনজন ছাড়া পাওয়ার পর দুই গ্রামের লোকজন সংঘর্ষের জন্য মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় থানা পুলিশ,সহকারি কমিশনার (ভুমি),ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসলাম,ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালেক রাজা,সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল আবেদিন আবুল,ইউপি সদস্য আসাদ আলী সহ লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এ দিকে সোমবার সকালে দুইগ্রামের লোকজন ফের সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন খবরে ভোরে থানা পুলিশ গ্রাম থেকে ৪ জনকে আটক করে।

ইউপি সদস্য সাদিক মিয়া,সাবেক সদস্য মনির উদ্দিন জানিয়েছেন সোমবার যাতে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে মারামারি না হয় সে লক্ষে কাজ করেছেন। বিষয়টি থানা পুলিশকেও অবহিত করা হলে পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ খান মোহাম্মদ মাঈনুল জাকির জানান,এঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মকতছির আলী। এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।

সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন জানান, হাওরের বাঁধ নির্মাণের বিয়য়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here