থ্যালাসেমিয়ার কারণে হরমোনজনিত সমস্যা, চিকিৎসা ও করণীয়

0
342

খবর৭১ঃ
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশানুক্রমিক রোগ, যাতে রক্তের হিমগ্লোবিন তৈরি হতে ব্যাপক সমস্যা থাকে। এ সমস্যা খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে, যখন কেউ থ্যালাসেমিয়া মেজর-এ আক্রান্ত হয়।

ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো- মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোয় এ সমস্যা বেশি থাকলেও গ্লোবালাইজেশনের কারণে এখন পৃথিবীর সব দেশেই এ রোগী পাওয়া যায়।

থ্যালাসেমিয়ার মেজরে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন লাগে, যার ফলশ্র“তিতে শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমতে থাকে। এ আয়রন জমার নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গ আছে, যার মধ্যে হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলো (এন্ডোক্রাইন গ্ল্যান্ড) অতীব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের কম বয়সি বা বেশি বয়সি যে কোনো অবস্থাতেই হরমোন ঘাটতিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। পর্যায়ক্রমে থ্যালাসেমিয়ার কারণে সংঘটিত হরমোনজনিত সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলো-
১। বামনত্ব
থ্যালাসেমিয়া মেজর খুব অল্প বয়সেই দেখা দেয় এবং এরপর নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। এসব শিশু-কিশোরদের অধিকাংশই কাক্সিক্ষত দৈহিক উচ্চতা অর্জনে ব্যর্থ হবে। আবার ২০-৩০ শতাংশ রোগী গ্রউথ হরমোন-এর ঘাটতিতে ভুগবে।
২। বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি
যেসব থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগী একটু পরে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে, তারা ক’বছর দেরিতে বয়ঃসন্ধি লাভ করতে পারে। এ দলে যেসব শিশু-কিশোরের কম পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়, তারাও আছে।
৩। হাইপোগনাডিজম
থ্যালাসেমিয়ার কারণে সংঘটিত অন্যতম মারাত্মক সমস্যা হলো- হাইপোগনাডিজম। এখানে পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন (প্রধানতম পুরুষ যৌন হরমোন) নিঃসরণ শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায় এবং নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন (প্রধানতম স্ত্রী যৌন হরমোন) ব্যাপকভাবে কমে যায়, যা প্রাকৃতিকভাবে বাড়ানোর আর কোনো সুযোগ থাকে না। ছেলেদের অণ্ডকোষে আয়রন জমে টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়ার আগেই গ্রন্থিটি এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে (প্রাইমারি হাইপোগনাডিজম)। আবার বয়ঃসন্ধিকালের পরে অণ্ডকোষে বেশি পরিমাণে আয়রন জমতে থাকলে তা ক্রমেই টেস্টোস্টেরন উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে (সেকেন্ডারি হাইপোগনাডিজম)। মেয়েদের ক্ষেত্রে তদ্রুপ মাসিক শুরু হওয়ার আগে ডিম্বাশয়ে বেশি পরিমাণে আয়রন জমা হলে মাসিক কোনো দিন শুরু না-ও হতে পারে (প্রাইমারি হাইপোগনাডিজম) এবং মাসিক শুরু হওয়ার পরে ধীরে ধীরে আয়রন জমে ডিম্বাশয়টি এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলতে পারে (সেকেন্ডারি হাইপোগনাডিজম)।
৪। ডায়াবেটিস
অন্যান্য অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মতো অগ্ন্যাশয়ের আইলেট্স কোষগুলোয়ও আয়রন জমতে থাকে এবং এর কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা দ্রুত প্রি-ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিস রোগীতে পরিণত হয়। থ্যালাসেমিয়ার রোগীর কমপক্ষে অর্ধেক ডায়াবেটিসে ভোগে।
৫। থায়রয়েড সমস্যা
থ্যালাসেমিয়া মেজরের ক্ষেত্রে আক্রান্ত গ্রন্থিগুলোর মাঝে আয়রন জমে কার্যকারিতা হারানোর তালিকায় থায়রয়েড গ্রন্থিও আছে। একই সঙ্গে অটো-ইমিউনিটি, যেটি থ্যালাসেমিয়া এবং থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতার সমস্যা- দু’টিই করতে পারে।
৬। হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম
প্যারা-থায়রয়েড হরমোনের ঘাটতি, এর ফলশ্র“তিতে রক্তে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের একটি দূরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা। সাধারণত ক্যালসিয়ামের ঘাটতিই প্রথমে নজরে আসে, যা পরবর্তী সময়ে হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখে। দেরিতে শনাক্ত হলেও এ সমস্যাটি অপরিসীম ভোগান্তির কারণ হবে।
৭। অ্যান্ড্রেনাল গ্রন্থির কার্যকারিতা হ্রাস
থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা বেশ পরে এসে অ্যান্ড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যায় আক্রান্ত হয়। তবে কর্টিসোল হরমোন গ্রন্থিটি অনেক সময় স্বাভাবিক মাত্রার কাছাকাছি থাকতে পারে। কিন্তু হরমোনগুলোর স্বাভাবিক আনুপাতিক মাত্রার তারতম্য হয়।
৮। হাড়ক্ষয়
থ্যালাসেমিয়ার শুরু থেকেই হাড়গুলো স্ফীত হতে থাকে এবং এদের ঘনত্ব কমতে থাকে। এর কারণগুলোর মধ্যে হাইপোগনাডিজম, ডায়াবেটিস, হাইপো-থায়রয়েডিজম, হাইপো-প্যারা-থায়রয়েডিজম ও অতিরিক্ত আয়রন সবই আছে। অপুষ্টি, শ্রমহীন জীবনযাপন, অ্যাড্রেনাল হরমোনের ঘাটতি ইত্যাদিও যোগ হয়। ক্রমেই মেরুদণ্ড ও নিতম্বের হাড়গুলো অধিক হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here