সুশাসন প্রতিষ্ঠার অবকাঠামোগত ও মানবিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ

0
422

খবর ৭১ঃ
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেঁনে হোলেনস্টাইন বলেছেন মানবাধিকারের ধারনা শুধুমাত্র রাজনৈতিক অধিকার নয়, দৈনন্দিন চাহিদা ও মৌলিক অত্যাবশ্যকীয় সামাজিক সেবার অধিকার গুলি অর্ন্তভুক্ত। পৃথিবীর অনেক দেশে রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হলে মানবাধিকার লংগণ বলে হৈ চৈ হয়। প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকার পরিস্কার ধারনা পেতে হলে সকল মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি সামাজিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকার গুলি সুরক্ষিত হতে হবে। অন্যদিকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই দেশ উন্নয়ন হয় না, মানবকি গুনাবলীর উন্নয়ন, অপরের মত, চিন্তা, বাকস্বাধীনতা ও অন্যের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও মর্যদা প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে মানবাধিকার সুরিক্ষত বলা যাবে না। তাই মানবিক উন্নয়ন বিষয়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ আরো জোরদার করার তাগিদ বিশ্বব্যাপী জোরালো হচ্ছে। জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকারের ৭০ বৎসর পুর্তি হলেও এখনও ইউএনএইচসিআরের ঘোষনা সম্পর্কে সাধারন জনগন, রাস্ট্রীয় দায়িত্বশীলরা সম্যক অবহিত নয়। সেকারনে মানবাধিকার বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তৃণমূল পর্যায়ে মানবাধিকার শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা ও মানবাধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে নেটওর্য়াকিং জোরদার করতে হবে। ৭ অক্টোবর ২০১৮ নগরীর চট্টগ্রামের জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম-সিএসডিএফ, স্টেপস টুয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্ট, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এন্ড ফোরাম অন হিউম্যান রাইটস্ জেনেভার উদ্যোগে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭০তম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

সিএসডিএফ’র চেয়ারপার্সন ও ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে স্টেপস্ টুয়ার্ডস্ ডেভেলপমেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার ও সিএসডিএফ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস’র সিনিয়র হিউম্যান রাইটস্ এডভাইজার হেইকে আলেফসন, প্যানেল আলোচক ছিলেন নাগরিক উদ্যোগ’র প্রধান নিবাহী জাকির হোসেন, মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু এবং তরুণদের প্রতিনিধি ইসমাইল মিন্টু ও সুবর্ণা সেলিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সুইজারল্যান্ড দুতাবাসের প্রতিনিধি সাবিনা ইয়াছমিন লুবনা, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিস’র জাহিদ হোসেন। মুক্ত আলোচনায় অংশনেন সরকারি সিটি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলেক্স আলীম, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম, সাবেক সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহেনা বেগম রানু, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা বেগম, আবিদা আজাদ, কাপাসগোলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা পাল, পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুমিনুল উন্নয়ন কর্মী এম এ সেলিম, মোঃ ওবায়েদুর রহমান, আলাউদ্দীন, সমাজ কর্মী নিশি আকতার, রুখসানা আখতারুন্নবী, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, হারুন গফুর ভুইয়া, আলমগীর বাদসা, নুরী মাহফুজা প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন ১৯৪৮ সালে সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষনা প্রণীত হলেও দেশের সংবিধানে রাজনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি মিললেও সামাজিক মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলি পুরোপুরো প্রতিফলন ঘটেনি। প্রতি চার বছর পর পর বিশ্ব মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রতিবেদন জাতিসংঘ মানবাধিকার ফোরামে উপস্থাপন করা হয়। অবকাঠামো, শিল্প উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও মানবিক উন্নয়ন, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হলে সত্যিকারের উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর সহজ হবে না। সেকারনে মানববিক উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বাড়ানোর খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। তা নাহলে ইয়াবা, জঙ্গিবাদ, ইন্টারনেটে অপব্যবহারসহ নানা সামাজিক ব্যাধির বিস্তার রোধ কঠিন হবে। সেকারনে মানবাধিকার শিক্ষায় তরুনদের বেশী করে সম্পৃক্ত করা, মানবাধিকার সুরক্ষায় নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা, সামাজিক শক্তিগুলির সক্ষমতা বৃদ্দির সুপারিশ করা হয়।

সভায় বলা হয় মানবাধিকারের নামে হাজার হাজার সংগঠন কাজ করলেও প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লংগন ঘটেই যাচ্ছে। অনেকেই মানবাধিকারের নামে নানা ধরনের অপকর্মেও যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনায় কি আছে তা সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। অথচ মানবাধিকার পদক ও সনদ বিতরণ করে যাচ্ছে। যার কারনে প্রকৃত মানবাধিকার কর্মীদের ত্যাগকে অবমুল্যায়িত হতে যাচ্ছে।

এর আগে কণ্যা শিশুর নির্যাতনের মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে প্রণীত স্বল্পদৈর্ঘ ডকুমেন্টারী সুনিতা প্রদর্শণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী বেসরকারী অফিস, জনপ্রতিনিধি, উন্নয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, মানবাধিকার, নারী অধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here