কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে রোজার প্রথম দিন থেকেই কুড়িগ্রামে পরিবহণ সেক্টরে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। চাহিদামতো চাঁদা না পেলে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। বিশেষ করে আন্ত:জেলা মালবাহী পরিবহনগুলো বেশি শিকার হচ্ছে হয়রাণীর।
কুড়িগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই আমিরুলের নেতৃত্বে এই চাঁদাবাজির ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম শহরের ত্রিমোহণী চেকপোস্টে টিএসআই আমিরুল একটি ট্রাক আটক করে। যার নম্বর চট্টগ্রাম ন ৪২৯৮। নাটোর থেকে পাটালীগুড় বোঝাই এ ট্রাকটি কুড়িগ্রামে আসে। কতিপয় অসাধূ পুলিশ সদস্যের অপকর্মে ম্লান হয়ে যাচ্ছে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি।
ড্রাইভার পলাশ জানায়, নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় ট্রাকটির মামলা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সেলিম আহমেদের কাছে কাগজপত্র জমা আছে। আর সেই কেস স্লিপটি তার সঙ্গে ছিল। প্রচলিত আইন মোতাবেক কেস স্লিপের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সর্বোচ্চ জরিমানা ৫শ’ টাকা। কিন্তু টিএসআই আমিরুল আইনের তোয়াক্কা না করে পাঁচহাজার টাকা উৎকোচ দাবী করে। ড্রাইভার তাকে দু’হাজার টাকা দিলেও কেস স্লিপটি আটকিয়ে দেন। সাফ জানিয়ে দেন মাল আনলোড করে বাকি তিন হাজার টাকা দিয়ে কেস স্লিপ নিতে হবে। এ অবস্থায় ড্রাইভার পলাশ লোড গাড়ি নিয়ে কুড়িগ্রাম শহরের পুরাতন বাজারে সহিদুলের আড়তে এবং সেখান থেকে উলিপুর উপজেলা শহরে অবস্থিত লক্ষ্মীস্বরের আড়তে পাটালীগুড় আনলোড করে ট্রাক নিয়ে ফেরার পথে উলিপুর চেক পোস্টে সার্জেন্ট বায়েজিদের হাতে আটক হন। গাড়ির কাগজপত্র এবং কেস স্লিপ কোনটাই দেখাতে না পারায় সার্জেন্ট বায়েজিদ মামলা দিয়ে ট্রাকটি উলিপুর থানায় আটক করে। এরপরই শুরু হয় তোলপাড়। অভিযোগ ওঠে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে। তড়িঘড়ি করে ড্রাইভার পলাশকে ডেকে আনা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। ঘটে তুঘলকী কারবার। সাড়ে ৮ হাজার টাকা জরিমানার মামলা নিষ্পত্তি করা হয় মাত্র ১ হাজার টাকা দফারফায়।
ড্রাইভার পলাশ আক্ষেপ করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ টিএসআই আমিরুলের উৎকোচ দাবি ছিল ৫ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকা দিয়ে হাতে পায়ে ধরেও নিস্তার মেলেনি। নীলফামারীর পুলিশের কেস স্লিপটি তিনি আটকিয়ে দেন আরও অতিরিক্ত টাকার দাবিতে। অবশেষে আবারো পুলিশের মামলায় পরে জড়িমানা গুণতে হলো এক হাজার টাকা। সারাদিন ট্রাফিক পুলিশ, থানা ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে দৌঁড়ঝাপ করে বিকেল সাড়ে ৫টায় ফিরতে হচ্ছে বাড়ির পথে। এ চরম বিড়ম্বণা। সেই সাথে বাড়ল পরিবহন খরচ। বিষয়টি পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের কানে যাওয়ায় টিএসআই আমিরুল শাষিয়েছে মুখ না খুলতে। আর পরামর্শ দিয়েছে অন্যান্য গাড়ির মতো মাসিক চুক্তিবদ্ধ (মাসিক মাসোহারার আওতায়) হতে। আর তা না হলে এমন হয়রাণীর হাতে পরতে হবে বারবার।
সার্জেন্ট বায়েজিদ জানান, গাড়িতে কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিনি গাড়িটি আটক করে উলিপুর থানায় জমা দেন। এ ব্যাপারে একটি মামলাও রুজু করা হয়। এ জরিমানার পরিমান সাড়ে ৮ হাজার টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্রাইভার নীলফামারী পুলিশের কেস স্লিপটি টিএসআই আমিরুলের কাছে জব্দ দাবি করেন। কিন্তু ফোনে যোগাযোগ করলে আমিরুল তা অস্বীকার করায় আমি মামলা দিতে বাধ্য হই।
এ ব্যাপারে টিএসআই আমিরুল তার বিরুদ্ধে পরিবহণের চাঁদাবাজি ও উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,কুড়িগ্রাম শহরের ত্রিমোহনী চেকপোষ্টে সকালে ট্রাকটি আটক করলে ড্রাইভার পলাশ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। পরে তার কাছে থাকা নীলফামারী পুলিশের একটি কেস স্লিপ দেখান। কেস স্লিপটি ড্রাইভার স্বেচ্ছায় আমার কাছে রেখে যান। মালামাল আনলোড করে ফেরার পথে সেটি ফেরৎ নেয়ার কথা। এটি নিয়ে এত ঘটনা ঘটবে তা আমার জানা ছিল না।