বজ্রপাতে দেশের ছয় জেলায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৭ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজন, নওগাঁয় তিনজন, নাটোরে দুইজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন, দিনাজপুরে একজন এবং চট্টগ্রামে একজন মারা গেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে আলাদা বজ্রপাতে শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুন) দুপুরে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত হলে মারা যান তারা। শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আলিডাঙ্গা মহল্লার সুভাষ বোকতের স্ত্রী ববি বোকত (২২), পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়ার এরশাদ আলী ওরফে রাব্বুলের মেয়ে কবিতা খাতুন (১২) এবং ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাছি-হঠাৎপাড়ার এসলাম আলীর মেয়ে আমেনা খাতুন (১০)।
নওগাঁ: নওগাঁর বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে পত্নীতলা ও মান্দা উপজেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে নিহতরা হলেন- পত্নীতলা উপজেলার পাটিচড়া ইউনিয়নের নাগরগোলা গ্রামের দিশা মন্ডলের ছেলে খাদেমুল ইসলাম (৫৫), একই উপজেলার গাহন গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনিকা খাতুন (৩৪) এবং মান্দা উপজেলার ভোলাম গ্রামের ফইমদ্দিন মন্ডলের ছেলে শামসুল আলম (৩৪)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, উপজেলায় বিকেলের দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় বাড়ির পাশে একটি তালগাছে গরু বাঁধা ছিল। সেই গরু আনতে গিয়ে হঠাৎ সেখানে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিকা খাতুন। খাদেমুল ইসলাম মাঠে কাজ করার সময় বৃষ্টি শুরু হয়। তখন দৌড়ে বাড়িতে আসার সময় পাশের একটি তেঁতুল গাছের নিচে দাঁড়ালে সেখানে বজ্রপাতের ঘটনায় তিনি মারা যান।
এদিকে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, বিকেলে বাড়ির পাশের একটি মাঠে ধানের কাজ করছিলেন নিহত শামসুল আলম। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে আহত হন তিনি। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নাটোর: জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের কবরস্থান সংলগ্ন বারনই নদীতে দুপুরের দিকে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মো. কামরুল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন মো. মজনু (৪০) নামে একজন। নিহত কামরুল একই উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মো. লুৎফর রহমানের ছেলে। আর আহত মজনু একই গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান আকরামুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে জেলার গুরুদাসপুরে বজ্রপাতে আবেরা বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে পৌর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবেরা গুরুদাসপুর পৌরসভা শহরের আনন্দ নগর মহল্লার সাদ্দাদ হোসেনের স্ত্রী। গুরুদাসপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফজলুর রহমান ফজল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে বজ্রপাতে লিপি আক্তার (৩৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (০৭ জুন ) দুপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের রনশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পীরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিরাজ ঢাকা মেইলকে বলেন, লিপি আক্তার দুপুরে বাড়ির পাশে ভুট্টার গাছের খড়ি পলিথিন দিয়ে ঢাকতে গিয়েছিলেন। যাতে বৃষ্টির পানিতে খড়িগুলো ভিজে না যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে আহত হন তিনি। ওই অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দিনাজপুর: জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের লালঘাট এলাকায় বজ্রপাতে জুয়েল (১৯) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জুয়েল ওই এলাকার গোলজার হোসেনের ছেলে। তিনি আফতাবগঞ্জ সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশের একটি কালভার্টের ওপরে বসে ছিলেন জুয়েল। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আফতাবগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসাই) সিরাজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ফুটবল খেলে বাড়িতে ফেরার পথে বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
মৃত জয়নাল আবেদিন উপজেলার গাছুয়া হাদিয়ারগো বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার ছাত্র। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে সকালে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল জয়নাল আবেদিনসহ স্থানীয় কয়েকজন শিশু-কিশোর। খেলা শেষে বাড়িতে ফেরার সময় বেড়িবাঁধের কাছাকাছি এলাকায় বজ্রপাতে জয়নালের মৃত্যু হয়।