বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগে রাস্তায় বসে ভূমিহীন অসহায় পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

0
223

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
উচ্ছেদ সংক্রান্ত নোটিশ এবং বাড়ির মালামাল সরানোর সুযোগ না দিয়েই মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০ বছর ধরে বসবাসরত বাড়ি থেকে একটি ভূমিহীন অসহায় পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১২ জুন) বিকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর দারুল উলুম মাদরাসা সড়কের উপর বসেই সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছে উচ্ছেদ হওয়া ভুক্তভোগী একটি পরিবার। তারা বাস্তুভিটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ঘরের জিনিসপত্র বের করে তালা লাগিয়ে বাড়ি দখল করায় বৃদ্ধ বাবা, চার বোন, ভাই, স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে গত দুইদিন যাবত রাস্তায় মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করছেন বলে জানান পরিবরের সদস্যরা। ওই এলাকার মো. সোহরাবের (৭৫) ছেলে মো. শাহাজাদা অভিযোগ করে বলেন, আমরা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাঙ্গালীপুর মৌজার জিএল নং ৩৮, খতিয়ান নং ৪০২, দাগ নং ২২৫ তফশিলভুক্ত শত্রু সম্পত্তির ৯ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক জমির উপর নির্মিত বাড়িতে বসবাস করছি। কয়েকবছর পূর্বে প্রতিবেশী হাফিজুল্লাহ র পুত্র ওয়াসিম পারভেজ এই জমি তার বলে দাবী করে আমাদের উচ্ছেদের জন্য অপচেষ্টা চালায়। তার কথায় বাড়ি ছেড়ে না দেয়ায় নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে।
এরই মাঝে গত ১০ জুন পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে এসে মাত্র ১ ঘন্টায় আমাদেরকে বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে জোরপূর্বক বের করে মালামাল রাস্তার উপর ফেলে বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এ সময় স্কুল পড়ুয়া তার ভাতিজিকে মারপিটসহ বাাড়ির মহিলাদেরও গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। বলা হয় আমরা এখন অসহায় অবস্থায় রাস্তায় দিনাতিপাত করছি। আমাদেরকে আগে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি বা মালামাল সরানোর জন্যও সময় দেয়নি। কিন্তু আমাদের দখলে থাকা ওই জমি আমাদের নামে বরাদ্দের আবেদন করা সত্বেও কিভাবে জমি তাঁর নামে হয়েছে? এখানে নিশ্চয়ই অনিয়ম বা দূর্নীতি করা হয়েছে দাবি করে বলা হয়
আমরা ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ। সরকারী বাস্তুভিটায় বসবাস করতাম। আমাদের মাথাগোঁজার সেই ঠাইটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের নিজে বাড়ি করে দিচ্ছেন। সেখানে আমার বৃদ্ধ বাবা, দুই ভাই ও তাদের স্ত্রী সন্তান ও চার বোনের বসবাসের একমাত্র সম্বলটাও দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী হাফিজুল্লাহ। এর প্রতিবাদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের গ্রেফতার করারও হুমকি দেওয়া হয়। উচ্ছেদ এবং বাড়ির মালামাল সরানোর ঘটনায় ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন সরাসরি জড়িত বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ সোহরাবের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিধায় তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কথামত বাড়ি থেকে বের হয়েছি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে বাড়ির সামনের রাস্তাতেই অবস্থান করছি। রোদ বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,বাস্তুভিটা ফিরে না পেলে আমরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো। তাই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে তিনি আমাদের অসহায়ত্ব ঘুচান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বৃদ্ধ সোহরাবের আরেক ছেলে শাহাবাজ (৫৫), তার স্ত্রী শাপলা আক্তার (৫০), ছেলে জুনায়েদ (০৫), চার বোন যথাক্রমে বিলকিস (৫৬), আফসানা (৪৫), সাবানা (৩৫), শাহজাদীসহ (৪০) এলাকাবাসী। তারা সবাই আর্তনাদ করে বলেন, আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন নয়তো বিষ দেন। যাতে মরে গিয়ে এই অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি পাই।
এদিকে উচ্ছেদের সাথে জড়িত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, ওই বাড়ির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা ছিল। ওই মামলায় রায় পান হাফিজুল্লাহ’র পুত্র ওয়াসিম পারভেজ।। পরে সোহরাবের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলেও সেখানেও হেরে যান তারা। যা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তিতে রায় পাওয়া ব্যক্তি ওয়াসিম পারভেজ উচ্ছেদের মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশনায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ১০ জুন তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়। ঘটনার দিন আত্মীয়তার সুত্রে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম মাত্র। এখানে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here