গবাদি পশুর কাঁচা দুধপানে ছড়িয়েছে ব্রুসেলোসিস

0
118

খবর ৭১: টেকনাফের একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ব্রুসেলোসিস রোগের সন্ধান পেয়েছেন আইসিডিডিআর,বি বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণায় আট জনের শরীরে ব্যাকটেরিয়াটি শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন ওই আট জন। রোগটি সাধারণত গবাদি পশুর হয়। তবে গরু, ছাগল বা মহিষের দুধ না ফুটিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পান করলে জীবাণুটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে টেকনাফ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এখনই রোগ প্রতিরোধে মানুষদের সচেতন না করলে এই ব্যাকটেরিয়া সবার মধ্যে ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গবাদি পশুর ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ ব্রুসেলোসিস। সম্প্রতি নতুন গবেষণায় টেকনাফে রেসপিরেটরি ডিজিজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ব্রুসেলোসিস শনাক্ত করা হয়েছে। ১৫৩ জনের মধ্যে আট জনের ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত হয়েছে।

আইসিডিডিআর,বির রেসপিরেটরি ডিজিজেস হাসপাতালের সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর ডা.জিয়াউল ইসলাম জানান, প্রায় ছয় মাস গবেষণার পর টেকনাফে আট জনের মধ্যে ব্রুসেলোসিস জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিন বছরের এক শিশুও রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও ক্লিনিক্যাল লিড ডা. তারেক মাহমুদ রাকিব ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী।

জিয়াউল ইসলাম জানান, ব্রুসেলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ এটি, যা সাধারণত গৃহপালিত গবাদি পশু যেমন গরু, ছাগল এবং মহিষের দুধে পরজীবী হিসেবে উপস্থিত থাকে। গরু, ছাগল বা মহিষের দুধ না ফুটিয়ে বা কাঁচা অবস্থায় পান করলে এর জীবাণু মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে। রোগটির প্রধান উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছ জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্ষুধাহীনতা ও দুর্বলতা।

তিনি জানান, আইসিডিডিআর,বি ও ইউনিসেফের যৌথ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় ২০২০ সালের আগস্ট থেকে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে ১২০ জন রোগী ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। প্রথমে কোভিড-১৯ সন্দেহ হলেও তাদের কেউই এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। পরে অন্যান্য রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণের কারণ নির্ণয়ে রক্তের ট্রিপল অ্যান্টিজেন্ট পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে সাত জনের নমুনায় প্রাথমিকভাবে ব্রুসেলোসিস জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। দুই মাস পরে তাদের আবরও পরীক্ষা করা হলে পাঁচ জনের মধ্যে একজনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি পাওয়া যায়।

আইসিডিডিআর,বির ইনফেকসাস ডিজিজস ডিভিশনের সহকারী বিজ্ঞানী ড. আইরিন সুলতানা শান্তার নেতৃত্বে ঢাকা থেকে একটি তদন্তকারী দল টেকনাফে আসে। অ্যান্টিজেন টেস্টে পজেটিভ পাওয়া সাত জনের মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষাৎকার নেন। এই পাঁচজনের সবার কাঁচা গরুর দুধ পানের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর আরও ৩৩ জন নতুন রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হলে সেখান থেকে আরও একজনের দেহে ব্রুসেলার উপস্থিতি দেখা যায়।

ড. আইরিন সুলতানা শান্তা বলেন, ‘কাঁচা দুধ খাওয়ার প্রবণতা থেকে টেকনাফের মানুষ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ব্রুসেলোসিস আক্রান্ত আট জন চিকিৎসা শেষে ভালো আছেন।’

গবেষণায় অন্তত ১৫ মিনিট দুধ ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করার সুপারিশ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here