খবর৭১ঃ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন ফের সহিংস হয়ে উঠেছে। রাখাইনের একটি পুলিশ ফাঁড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির দখল আর তাদের হাতে ১৯ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জেরে সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে খবর এসেছে।
মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতী এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাখাইনে গত বুধবার ‘সশস্ত্র’ সংগঠন আরাকান আর্মি ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এছাড়া রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াইয়ে থাকা বিদ্রোহী সংগঠনটি পুলিশ ফাঁড়িও দখল করে নিয়েছে।
আরাকান আর্মির এসব কর্মকাণ্ডের কড়া জবাব দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরই ধারবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় সংগঠনটিকে টার্গেট করে বিমান হামলা চালানো হচ্ছে বলে ইরাবতী প্রতিবেদনে দাবি করেছে।
ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মি গত ২ আগস্ট রাখাইনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ শুরু করে। সবশেষ বুধবার একটি ফাঁড়ি দখলের পাশাপাশি ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যায়।
মিয়ানামরের সৈন্যরা শক্তিবৃদ্ধি এবং কামান ব্যবহার করে ফাঁড়িটি পুনরায় দখল করতে নেমেছে। হামলার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা মংডু শহর এবং পার্শ্ববর্তী বুথিডাং টাউনশিপে পালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে শনিবার সকালে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে দুটি গোলা এসে পড়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রুতে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ওই এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে গোলা পড়ার ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর ওই সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নিরাপত্তা টহল জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের রেজু আমতলী বিজিবি বিওপির আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০ ও ৪১-এর মাঝামাঝি স্থানে ওপারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দুটি যুদ্ধবিমান এবং দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টার টহল দেয়।
এসময় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০টি গোলা আর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এর মধ্য থেকে দুটি গোলা এসে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে আনুমানিক ১২০ মিটার অভ্যন্তরে এসে পড়ে।
স্থানীয় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ চৌধুরী বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে বিদ্রোহী ও মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে। দিনে ২৫ থেকে ৪০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এতে আতংক বিরাজ করাটা স্বাভাবিক। তবে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি। ঘটনা নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান আছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) টানটু সাহা জানান, পরপর দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল মিয়ানমার থেকে উড়ে এসে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু জিরো পয়েন্ট সীমান্তে পড়ে।
গত রবিবারও মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল বান্দরবান সীমান্তের ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে পড়ে। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পরদিন সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, ‘মর্টার শেলগুলো হঠাৎ করে চলে এসেছে। তাদেরকে (মিয়ানমার) আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তারা ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলেছে।’
এদিকে শনিবার গোলা পড়ার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের আর কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে রবিবার তলব করা হয়েছে।