শ্রীলংকায় বাড়ছে ক্ষুধার্ত মুখ

0
278

খবর৭১ঃ শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোর একটি চার্চ হলের রান্নাঘর। মাত্রই রান্না শেষ হয়েছে। তাজা ভাত, মসুর ডাল আর পালংশাকের সুঘ্রাণে মৌ মৌ পুরো এলাকা।

লঙ্গরখানায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো কয়েক ডজন মানুষের খিদে যেন উগরে দিয়েছে সেই সুগন্ধি। সাহনার বয়স ৩৪ বছর। সন্তানসম্ভবা। ছোট তিন সন্তানসহ লঙ্গরখানার লাইনে দাঁড়িয়ে তিনিও।

ছোট বাচ্চার জন্য দুধ কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন। তাই নিজের ও বাচ্চাদের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে নিরুপায় হয়ে এসেছেন এখানে। দুধের বদলে বাচ্চার মুখে ক’টা ভাত গলিয়ে দিতে পারলেই খুশি সাহনা। বিবিসি।

লঙ্গরখানাটির বয়স খুব বেশি নয়। মাসখানেক। তিন দিন ধরে শুধু কাঁঠাল খেয়ে কাটিয়ে দেওয়া এক মায়ের দুর্দশা দেখে যাজক মোজেস আকাশ চালু করেন এ লঙ্গরখানা। এখানেই শিশুদের সঙ্গে নিয়ে থালা হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মায়েরা।

আর অপেক্ষায় আছেন কখন পাতে উঠবে সেই খাবার-যা হয়তো দিনে একবারই পাওয়া যাবে। চার সন্তানের মা চন্দ্রিকা মানেল বললেন, ‘আমরা এখানে, কারণ আমরা ক্ষুধার্ত।’ বাচ্চাদের একজনের মুখে তুলে দিতে ডাল আর শাকের সঙ্গে এক লোকমা ভাত মেশাতে মেশাতে তিনি বলছিলেন, ‘এক টুকরো রুটি কেনাও এখন ভয়াবহ সংগ্রামের। কেন এমনটি হলো! একটা সময় ছিল যখন আমি ওদের দুধভাত দিতে পারতাম। আর এখন কোনো সবজিও কপালে জোটে না।’

জীবনে এই প্রথম লঙ্গরখানায় এসেছেন চন্দ্রিকা। তিনি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় খুব বেশি। বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের ঋণ নিতে হচ্ছে।’ যাজক মোজেস বলেন, ‘আমরা এমন লোকও পেয়েছি-যারা চার মাসে দ্বিতীয় প্লেট ভাতের চেহারা দেখেননি।’

তার হিসাব অনুযায়ী, এই এক মাসের মধ্যেই এখন দিনে খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ানো মানুষের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়তে বাড়তে আড়াইশ পেরিয়ে গেছে। কেবল জুনেই খাবারের দাম ৮০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া দ্বীপদেশটিতে লঙ্গরখানা অতিআবশ্যকীয়। মোজেস বলেন, ‘আমি অনেক শিশুকে দেখেছি, যাদের অধিকাংশই অপুষ্টির শিকার।’

সাহনার শ্রমিক স্বামীর সাপ্তাহিক আয় ১০ ডলারের মতো। এ দিয়ে পুরো পরিবার চালানো এ মুহূর্তে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহনা বলেন, ‘আমাদের নেতারা ভালোভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের সন্তানরা ভালো থাকলে আমার সন্তানেরা ভালো নেই কেন?’ ক্ষোভ ঝাড়লেন সাহনা।

কলম্বোর মেয়র সম্প্রতি বলেছেন, রাজধানীতে খাদ্য মজুদ রয়েছে কেবল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জ্বালানি তেল ও রান্নার গ্যাসের ঘাটতি, প্রতিদিনকার লোডশেডিংয়ের কারণে শ্রীলঙ্কার লোকজন না পারছেন বাসায় গরম খাবার খেতে, না পারছেন বাইরে গিয়ে তা কিনে আনতে।

কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে পার করতে হচ্ছে ভয়াবহ করুণ সময়। কর কমিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার সংকুচিত করা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকেই অনেকে এই সংকটের দায়ী করছে। মহামারির কারণে পর্যটন খাতে ধস এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করেছে তুলেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here