পরীক্ষা স্থগিতে হতাশা-ক্ষোভ জবি শিক্ষার্থীদের

0
393

জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন বর্ষের আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, কোনো পরীক্ষা না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন একই শিক্ষাবর্ষে অবস্থান করতে হচ্ছে তাদের। এমতাবস্থায় পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ক্লাসও করতে পারছেন না তারা। ইতোমধ্যেই সেশন জটের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কায় তারা হতাশা প্রকাশ করছেন।

ফেসবুক পোস্টে এক শিক্ষার্থী বলেন, “এর আগে আমাদের জুনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হলো, তারপর আবার জুলাইয়ে সর্বশেষ আগস্টে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এখন আবার স্থগিত করা হলো। পরীক্ষার ঘোষনা দিয়ে এভাবে বার বার ঢাকা আনা নেওয়া করে আমাদের বার বার হেনস্তা করার কোনো মানে হয়না।”

ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “এভাবে বার বার পরীক্ষার কথা বলা আমাদেএ হেনস্তা করার কোনো মানে হয়না। তারচেয়ে ভালো একেবারেই বলে দেন যে আমরা পরীক্ষা নেবো না। আমরা অন্য কিছু করে খাই। অনার্স চতুর্থ বর্ষে অবস্থান করতেছি প্রায় তিন বছর। পরীক্ষা না হওয়ায় চাকরিতে ঢুকতে পারতেছি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আজহার বলেন, “একই শিক্ষাবর্ষে অবস্থান করছি প্রায় তিন বছর। কবে নাগাদ অনার্স শেষ হবে তা জানিনা। যেটুকু আশায় ছিলাম যে আগস্টে পরীক্ষা হবে তাও স্থগিত করে দেওয়া হলো। অনার্স শেষ না করলে চাকরির জন্যও আবেদন করতে পারছি না।”

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীন বলেন, “পরীক্ষা না হওয়ায় আমরা হতাশায় পড়ে গেছি। পড়াশোনা বন্ধ,ভবিষ্যত ও অনিশ্চিত! চাকরীর বয়স তো আর থেমে নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তাদের মাস্টার্স ও শেষ আর আমরা তৃতীয় বর্ষের গন্ডি পেরোতে পারলাম না।”

বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, “পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করায় ঢাকায় এসে মেস নিলাম। এখন আবার স্থগিত ঘোষণা করা হলো। এমনিতেই আমরা জবি শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে মেস ভাড়া করে থাকি। তার মধ্যে এভাবে পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়ায় বিপদে পড়ে গেলাম।”

বিজনেস স্টাডিজ অনু্ষদের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রায় তিন বছর অনার্স চতুর্থ বর্ষে আছি। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না হওয়ায় অনার্স শেষ করতে পারছি না। পরিবার থেকে খুব চাপ দিচ্ছে। অনার্স শেষ না হওয়ায় চাকরির জন্য আবেদনও করতে পারছি না। আমরা যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, তারা চরম হতাশায় দিন পার করছি। আমাদের ভবিষ্যৎ একেবারেই অনিশ্চিত।”

ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “পরীক্ষাই যদি স্থগিত করা হবে, তাহলে কেন আমাদের পরীক্ষার ফি আগেই নেওয়া হলো? সেটা পরে নিলেও তো পারতো। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ঋণ করে পরীক্ষার ফি পরিশোধ করলাম পরীক্ষা হবে সেই আশায়। এখন তা স্থগিত করা হলো। আমাদের এভাবে হেনস্তা করার কোনো মানে হয়না।”

বার বার পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন ও শিক্ষার্থী হয়রানির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ডিনস কমিটির একাধিক সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে ও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এর আগে চলতি বছরের ১৩ জুন একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে ১০ আগস্ট থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আটকে থাকা সকল সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে অনলাইনে সেমিস্টারের সকল মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তার প্রায় এক মাস পর ১২ অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনদের এক জরুরী সভায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি বিবেচনায় ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here