নড়াইলের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বনজ ও ফলদ গাছ কেটে অবৈধ চুল্লিতে পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হলেও প্রশাসন নীরব

0
469

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ কেটে অবৈধ্য চুল্লিতে কাঠের যোগান দিচ্ছে এক শ্রেনীর অসাধু চক্র। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। চুল্লির ধোয়ায় সব বয়সের মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের ব্যাধি। বিশেষ করে শিশুরা এসব চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার শিকার হচ্ছে বেশি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়ন, বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন ও জেলার কাশিপুর ইউনিয়নে দিনে ও রাতে ১৮টি চুল্লিতে হাজার হাজার মন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হলেও প্রশাসন নীরব। নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ চুল্লিতে দেদারসে কাঠ পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে কয়লা। আর এসব কয়লা দিনের আলোয় ট্রাক যোগে চালান করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিষয়টি ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করছেন তাঁরা। এমনটাই অভিযোগ এলাকার সচেতন মহলের। সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার বাশঁগ্রাম ইউনিয়নের শালিখা গ্রামে আঃ ছালাম শেখের ছেলে লাবলু শেখ ও তার সহোদর যৌথ ভাবে ৪টি কয়লা তৈরির চুলা নিয়ন্ত্রণ করে। আউড়িয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকায় ৯টি কয়লা তৈরির চুলা নিয়ন্ত্রন করে মশিউর রহমান ও তার জামাই শিবু খন্দকার। এছাড়া লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের শারুলিয়া গ্রামে আরও ৫টি চুলায় কাঠ পোড়ানো হয়। জানা গেছে, ওই শিবু খন্দকার ও তার শ্বশুর মশিউর রহমানসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই ৫টি চুলা নিয়ন্ত্রণ করে। শিবু খন্দকার গোয়াল বাতান গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। কয়লা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেওয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ২৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে চটের বস্তায় ভরে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান করা হয়। সালিখা গ্রামের চুলার মালিক অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ী লাবলু শেখ বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো অবৈধ হলেও কিছু করার নেই। অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ হয় তাই এ ব্যবসা করে যাচ্ছি। আগে কাঠের ব্যবসা করতাম। বর্তমানে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরিতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। তাই ৯টি চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছি। এমনটাই জানালেন দত্তপাড়া এলাকার চুলার মালিক পাইকমারি গ্রামের মৃত আবুল হোসেন শেখের ছেলে মশিউর রহমান। নড়াইল সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আসাদ-উজ-জামান মুন্সী নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ‘কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন নির্গত হয়। তাই এ চুল্লির ধোয়ায় মানুষের শ্বাস কষ্টজনিত রোগ, পাকস্থলির রোগ, স্নায়ুরোগ, এলার্জি সমস্যা ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগ হতে পারে। এছাড়া পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।’ স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইটভাটা ও কয়লার চুলার কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করায় ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।’ স্কুল ছাত্র মো. বাপ্পি বলেন, ‘চুল্লির ধোয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, কাশি লাগে। সন্ধ্যায় প্রচ- গন্ধে পড়া যায় না।’ নড়াইল জেলা প্রশাসক এমদাদুল হক চৌধুরী নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে এমন কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খবর৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here