উপচে পড়ছে নদীর পানি

0
87

খবর৭১: টানা ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, সুরমা, সোমেশ্বরী ও পুরাতন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি পয়েন্টে সোমেশ্বরী, সুরমা আর পুরাতন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ কারণে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার কয়েকটি এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।

এফএফডব্লিউসির সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া যুগান্তরকে জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উজানে বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসতে পারে। বিশেষ করে মেঘালয় ও আসামসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বৃষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। এতে আপার মেঘনা অববাহিকা এবং ব্রহ্মপূত্র অববাহিকায় পানি প্রবাহ কমতে শুরু করবে। তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমতে আরও বেশি সময় লাগবে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে বৃষ্টি আরও দু’তিন দিন চলতে পারে। সেই পানি তিস্তাসহ অন্যসব নদীতে নেমে আসবে।

সংস্থাটি জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের ভেতরে ও উজানে ভারি থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৩১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময়ে জাফলংয়ে ২৪৫, পঞ্চগড়ে ২৩০, ছাতকে ২১৮, জারিয়াজঞ্জাইলে ১৭৫ ও সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সারা দেশে বৃষ্টিপ্রবণ ১৫টি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে ডালিয়ায় ৫৮ মিলিমিটার।

অন্যদিকে ভারতের পূর্বাঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির প্রবণতা কমেছে। জলপাইগুড়িতে ৫৬ আর শিলংয়ে ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এসব পানি বন্যা তৈরি করেছে।

এফএফডব্লিউসির সর্বশেষ বুলেটিনে দেখা যায়, ছাতক ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি সকাল ৯টায় বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরমধ্যে সুনামগঞ্জে ১৬ সেন্টিমিটার ও ছাতকে ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। একইসঙ্গে দিরাই উপজেলা পয়েন্টে পুরাতন সুরমার পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নেত্রকোনার কমলাকান্দায় সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের উপজেলা দোয়ারাবাজারের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একই অবস্থা তাহিরপুরে।

এফএফডব্লিউসি জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই ব্যতীত প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়ক ঝুঁকিতে পড়েছে। গোমাই সেতু থেকে পাবই মোড় পর্যন্ত তিনটি স্থানে সড়কের পাশের ব্লক ধ্বসে গেছে।

কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানান, কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার অর্ধশত বিদ্যালয়ের মাঠও পানিতে তলিয়ে আছে।

উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার কাঁচা-পাকা ১০-১৫টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা সড়ক, মন্তলা-ইসবপুর, উদয়পুর-বড়খাপন, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধারা, কলমাকান্দা-বিশরপাশা সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর তথ্যমতে, জেলায় রোববার বছরের সর্বোচ্চ ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সুনামগঞ্জে ১৭০ মিলিমিটার এবং ছাতকে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, খোয়াই করাঙ্গী ও সুতাং নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার খোয়াই নদীর পানি বাল­া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছ।

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, সোনাই নদী ও জুড়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাকালুকি হাওড়পাড়ে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। হাওড়পাড়ের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর, বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে টানা বৃষ্টিতে হাওরের পানি বাড়ছে। হাকালুকি পর্যটন এলাকার বনবিভাগের বিট অফিসের আশপাশ পানিতে তলিয়ে গেছে।

ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায়, ছয়দিনের ভারী বর্ষণে ময়মনসিংহ মহানগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের বলাশপুর ও ভাটিকাশর এলাকার রাস্তা ও বাসা-বাড়ি হাটু পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এলাকায় ২৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকাল আসলে এ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।

সোমবার দুপুরে সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সিটি মেয়র বলেন, তিনটি বড় ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে। এগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here