বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যাওয়া প্রায় ৯৬ শতাংশ বাংলাদেশি শ্রমিক নানা ভাবে উচ্চঋণ ও শোষণে জর্জরিত। এ বিষয়ে চারটি সংস্থা ভেরিটে, শোভা কনসালট্যান্টস, বোমসা এবং ওয়ারবে-ডিএফ, তাদের পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ফোস্টারিং ফি অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যান্ড কস্ট ট্র্যাকিং (এফএফএসিটি)’ শিরোনামের এ গবেষণায় এমন ফল উপস্থাপন করা হয়েছে, যা মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর অর্পিত আর্থিক বোঝা এবং তাদের কর্মস্থলে শোষণকে তুলে ধরেছে। এছাড়া, ৮২ শতাংশ কর্মীকে দুই বা ততোধিক বার ঋণ করতে হয়েছে। আর প্রায় ৭৩ শতাংশ কর্মী তাদের মাসিক বেতনের ৫০ -১০০ ভাগ সেই ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যয় করছে বলে জানা গেছে।
মজুরি প্রতারণা ছিলো এ গবেষণায় চিহ্নিত আরেকটি প্রচলিত সমস্যা যা, প্রায় ৪৩ শতাংশ উত্তরদাতারা তাদের প্রতিশ্রুত বেতনের চেয়ে কম বেতন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন। জরিপকৃতদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ কর্মী ঋণ পরিশোধের জন্য বেশ উদ্বেগজনক অবস্থায় থাকে বলে জানিয়েছে এ সমীক্ষায় অংশ নেওয়া সাধারণ শ্রমিকরা।
১০ মে দেশটির অনলাইন, ফোকাস মালয়েশিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পরিচালিত এই সমীক্ষায় ৩৫৭টি সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং মালয়েশিয়ায় ২৪০ জন অভিবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা।
গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে, যা একজন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থানে এক বছরের মজুরির সমান।
শেভা কনসালট্যান্টস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সামারা খান অভিবাসী শ্রমিকদের ঋণ পরিশোধের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রায়ই অনানুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া কোনো রেকর্ড নেই। এই কারণে কোনো নির্ভরযোগ্য ডেটা উৎস নেই। তবে আমাদের সংস্থা প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে। শ্রমিকদের ঋণ পরিশোধের জন্য কমপক্ষে এক বছরের মজুরি প্রয়োজন। মালয়েশিয়ার কোম্পানি এবং ব্র্যান্ডগুলো (উৎপাদিত পণ্যের) নতুন মানবাধিকার ডিউ ডিলিজেন্স আইনের তদন্তের আওতায় আসে এবং সঠিক, ন্যায্য এবং স্বচ্ছ নিয়োগের জন্য একটি বড় আকারের চাহিদাও রয়েছে।
সমীক্ষাটিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশ শ্রম আইনের নির্দেশনা রয়েছে। নিয়োগকর্তাকে নিয়োগের মডেল মেনে চলা সহ বিদ্যমান সমস্যাগুলো মোকাবেলার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে।
এদিকে বিওএমএসএর সাধারণ সম্পাদক শেখ রুমানা তৃতীয় পক্ষের (মধ্যস্বত্বভোগী) লেনদেন ও অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের সাথে যুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্ক এবং কর্মীদের সচেতন করার জন্য দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচারণার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
ডব্লিউএআরবিইর উপপরিচালক শুহরাওয়ার্দী হুসেনের মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের সাপ্লাই চেইন অবশ্যই নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
সরকার যদি আবার মালয়েশিয়ায় সরকারী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়, তাহলে সমুদ্রপথে মানবপাচারের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।