খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট

0
245

খবর৭১:এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর ॥
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে ফেরি চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে গত দুই মাস ধরে। এই সংকট নিরসনে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত থাকলেও কোনো উপকারই হচ্ছে না। ফলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সচল থাকা ফেরি চলাচলে গুরুতর ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

আবার কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ, সীমিত সংখ্যক ফেরি এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যানবাহন নিয়ে পাড়ি দেওয়ায় সীমাহীন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন চালক-শ্রমিকরা। এতে বিআইডব্লিউটিসি বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের। কয়েকদিন ধরে পারাপারের অপেক্ষায় থেকে ঘাট এলাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় পরিবহন খাত আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ রাখার পর শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছোট আকারের ৫টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল করে বিআইডব্লিউটিসি। নাব্য সংকটের কারণে ফেরি সার্ভিস আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। নাব্য সংকট এবং পদ্মায় প্রচন্ড ¯্রােত থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির কাঠালবাড়ি ঘাট সহকারী ম্যানেজার মোঃ জসিমউদ্দিন বলেন, ১৭টি ফেরির মধ্যে ছোট আকারের ৫টি ফেরি দিয়ে নৌরুট সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও ৪টি রো রো ফেরিসহ ১২টি ফেরি উভয়ঘাটে নোঙরে রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নাব্য সংকট নিরসনে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সিনোহাইড্রোর ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং শুরু করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার থেকে অত্যাধুনিক ড্রেজার দিয়ে চায়না চ্যানেলের এক প্রান্ত থেকে ড্রেজিং শুরু হয়েছে। গত রোববারও ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। তবে সিনোহাইড্রো কোম্পানির ড্রেজিং কার্যক্রম শেষে কবে নাগাদ ফেরি চলাচলে চ্যানেল খুলে দেওয়া হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ী কার্যালয়ের কর্মকতা মোঃ জসিমউদ্দিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নৌরুটের ফেরিবহরে ৪টি রো রো ফেরিসহ ১৮টি ফেরি রয়েছে। প্রতিটি ফেরি দিয়ে প্রতিদিন মোট ২২০০ গাড়ি পারাপার করা হতো। সাম্প্রতিক সময়ে নাব্য সংকটের কারণে সব ফেরি চলাচল করতে পারছে না। সর্বশেষ ৫ দিনের হিসাবে গত বুধবার ৪টি, বৃহস্পতিবার ৬টি, শনিবার ৫টি ও গত রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫টি ফেরি দিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সীমিত সংখ্যক গাড়ি লোড করে ফেরি চলাচল করে। বিকেল ৫টার পর ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নাব্য সংকটের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি সার্ভিস। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৪টি ফেরি পাটুরিয়া ও চাঁদপুরে পাঠানো হয়। এছাড়া প্রায় তিন মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় রাতে এবং দিনে ফেরি চলাচল সচল করার মধ্য দিয়েই নৌরুটে কার্যক্রম চলছিল বিআইডব্লিউটিসির।

বিআইডব্লিউটিসির এজিএম সৈয়দ শাহ বরকতউল্লাহ জানান, লৌহজং চ্যানেলে নাব্য সংকটের কারণে তিন মাস ধরে ফেরি চলাচল ব্যাপকভাবে বিঘিœত হচ্ছিল।
ডুবোচর জেগে ওঠায় একের পর এক আটকা পড়ে ফেরি। তলদেশের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ফেরির তলা ফেটে দুর্ঘটনায়ও পড়েছিল একটি টানা ফেরি। এরপর থেকে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করলেও গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টার বেশি।

তিনি আরও জানান, জুন মাসের শেষ দিক থেকে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একাধিক ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করলেও উজানে ব্যাপক নদীভাঙনের ফলে স্রোতের তোড়ে ভেসে আসা অসংখ্য পলিমাটি জড়ো হয়ে নতুন নতুন ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় নাব্য সংকট রয়েই যায়। লৌহজং চ্যানেলে কিছুটা নিরসন হলেও চায়না চ্যানেলে নাব্য সংকট রয়ে গেছে। সেখানে পানি একেবারেই কম। জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের অত্যাধুনিক ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং শুরু হওয়ায় আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই নাব্য সংকট নিরসন হয়ে যাবে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমান জানান, লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও বাইপাস চ্যানেলে ৯টি ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণ কাজ চলমান রয়েছে। গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়া ড্রেজিং কার্যক্রমে এ পর্যন্ত পলি অপসারণ করা হয়েছে ১০ লাখ ঘনমিটার।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বমোট ৩২ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হলে নাব্য সংকট নিরসন হবে।

জানতে চাইলে বলেন, জরিপ কাজে কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পদ্মায় মাত্রাতিরিক্ত পলি জমেছে। তাই বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিংয়ে পলি অপসারণ করেও নাব্য সংকট দূর করা যাচ্ছে না।

খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here