যশোরের বেনাপোল অটোমেশিন ও সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত হচ্ছে

0
295
জাহিরুল ইসলাম মিলন।।যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
অবশেষে অটোমেশন ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে বেনাপোল স্থলবন্দর। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এরই মধ্যে বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ব্যবসায়ী ও বন্দর কর্মকর্তাদের মতে, আধুনিক এসব ব্যবস্থা চালু হলে তা দেশের বৃহত্তম এ স্থলবন্দরে পণ্যের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৃহস্পতিবার বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য এরই মধ্যে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পণ্যাগার ও ওপেন ইয়ার্ডের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আমদানিকৃত পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। বাইপাস সড়ক নির্মাণের বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড এড়াতে বন্দরে ফায়ার স্টেশনের আধুনিকায়ন ও এর জনবল বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ ও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পুরো বন্দর এলাকাকে অটোমেশন পদ্ধতি ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে। শিগগিরই এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তখন এ পথে বাণিজ্য আরো বাড়বে। পাশাপাশি বেনাপোল স্থলবন্দর একটি মডেল বন্দর হিসেবে পরিচিতি পাবে।
তিনি আরো বলেন, ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। হয়রানি বন্ধে পেট্রাপোলের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর কিছু সমাধান এসেছে। তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তারা হাতে নিয়েছে। এসব উন্নয়নকাজের মধ্যে রয়েছে ইমিগ্রেশনে যাত্রীছাউনি, প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে যাত্রীদের আর কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ভৌগোলিক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৩ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। প্রতি বছর এ পথে ভারত থেকে প্রায় ২০ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়। এ থেকে সরকার বছরে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, শুরু থেকেই বন্দরের অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নাজুক। বলতে গেলে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়াই লাগেনি এখানে। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বন্দরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চরম ক্ষতির শিকার হয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা একে একে বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে আমদানিকৃত পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩৪টি পণ্যাগার রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ওপেন ইয়ার্ড ও ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা অপ্রতুল। সবসময়ই ধারণক্ষমতার চেয়ে চার গুণ বেশি পণ্য বন্দরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। আমদানিকৃত পণ্য খালাস কার্যক্রমের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমসের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ছয় শতাধিক। পণ্য ছাড় করানোর কাজ করছে ৭৫০টি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। এছাড়া রয়েছে সমসংখ্যক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। আরো রয়েছে ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বন্দরে পণ্য খালাসের জন্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। সব মিলিয়ে বন্দরে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ১১ লাখ ২৪ হাজার ১২৬ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। একই সময় ভারতে রফতানি করা হয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৬১ টন পণ্য। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন। এ সময়ে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য। সব মিলিয়ে গত পাঁচ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮০ টন পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়েছে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here