মেধাবী মেহেদীকে হত্যা করার পর লাশ পুতে রাখে গোদাম ঘরে

0
273

ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি অপহৃত হওয়ার দুই মাস ১৭ দিন পর অবশেষে বুধবার রাতে উপজেলার কেশরগঞ্জ বাজারে ঘাতকের গোদাম ঘরের মেঝে খুড়ে সেই মেধাবী শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় গত বুধবার তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নাওগাঁও ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের প্রবাসী শাহাজাহন হোসেনের পুত্র মেহেদী হাসান বাবু এ বছর পলাশীহাটা স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। গত ৬ মার্চ দুপুরে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বন্ধু তুষার ও আল আমীন নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর দুই ঘাতক বন্ধু মিলে লাশ পুতে রেখে কেশরগঞ্জ বাজারের তুষারদের গোদাম ঘরে মেঝেতে। এরপর পর দুই বন্ধু মিলে অপহরণের নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি ঘাতক তুষার পরের দিন মেহেদীর মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় ঢাকায়। সেখান থেকে মেহেদী ফোন নাম্বার থেকে ২৪ ঘন্টার সময় দিয়ে তার মায়ের কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে মোবাইলে এসএমএস পাঠায়। মুক্তিপণ চেয়ে এসএমএস পাঠানোর পরের দিন মেহেদির মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড ভেঙ্গে ফেলে তুষার চলে আসে বাড়িতে।
গত ১২ মার্চ মেহেদীর মা মিনারা খাতুন অজ্ঞাতনামা আসামী করে ফুলবাড়ীয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তবার দেওয়া হয় ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশকে। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পলাশীহাটা স্কুল এন্ড কলেজের এইচ,এস,সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তুষারকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেন। তুষার এইচ এস সি পরীক্ষার্থী হওয়ায় আদালত ২৫ মে পর্যন্ত তাকে জামিন প্রদান করেন।
গত বুধবার দুপুরে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এস,আই পরিমল চন্দ্র দাস অন্য এক মামলা তুষারকে নাওগাঁও পলাশীহাটা গ্রাম থেকে ও ভালুকা উপজেলার সিষ্ঠুর এলকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ মামলায় আল আমিনকে তার বোনের বাসা থেকে আটক করেন। আটককৃত দুজনকে ডিবি কার্যালয়ে মুখোমুখি ব্যাপক জিঙ্গাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যা কান্ডের ঘটনা সম্পর্কে লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ঘাতক দুই বন্ধু। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘাতক দুই বন্ধুকে নিয়ে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কেশরগঞ্জ পশ্চিম বাজারের অভিযান চালায়। ঘাতকদের দেখিয়ে দেওয়া মতে তুষারের বড় ভাইয়ের গোদাম ঘরের মেঝে গর্ত করে মেধাবী মেহেদীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেন। এসময় তুষারের বড় ভাই উজ্জলকে গ্রেফতার করেন। মেহেদীর লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় মা মিনারা বেগম। আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় উপস্থিত সকলে চুখের জল ধরে রাখতে পারেনি। হত্যার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত আসামী উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের পলাশীহাটা গ্রামের আব্দুল গফুরের পুত্র ঘাতক তুষার ও তার বড় ভাই উজ্জ্বল এবং নিশিন্তপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র আল আমিন। এলাকাবাসী ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করেছেন।
মেহেদীর পিতা শাহজান হোসেন বলেন, আমার নিষ্পাপ মেধাবী সন্তানের খুনিদের দ্রæত ফাসি দাবী করছি, যাতে করে আর কোন বাবা মায়ের বুক এভাবে কেউ খালি করতে না পারে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনায় ঘাতক দুই বন্ধু মিলে ৬ মার্চ দুপুরে মেহেদীকে খবর দিয়ে নিয়ে আসে তুষারদের গোদাম ঘরে। সেখানে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পর রশি দিয়ে হাতা পা বেধে টিনসেট গোদাম ঘরে মেঝে প্রায় ৫ ফুট গর্ত করে পুতে রাখে লাশটি। এরপর মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়েছে ঘাতকরা।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, তুষার ও মেহেদীর এক মেয়ে বন্ধু রয়েছে। তুষার মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মেহেদী তাতে বাঁধা দেয়। এ কারনেই মেহেদীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। তদন্তে বের হয়ে আসবে ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি না।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here