অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার মতই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বাদ দিয়ে তারা অন্য কাজে যাচ্ছেন, কারণ তারা যদি সত্যি সততার উপর ভিত্তি করে কাজ করতেন তাহলে নির্বাচনের ডেটলাইন দিতেন— নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতেন। জনগণ ১৫ বছর যেখানে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যেখানে তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে সেই বঞ্চনা থেকে আজও তারা মুক্ত হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার মতই নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই কেন যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈশিষ্ট্য শেখ হাসিনার সাথে মিলে যাচ্ছে, এটা জনগণ কোনোভাবেই প্রত্যাশা করেনি।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের তেতুলতলা এলাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান-এর নির্দেশনায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত রাকিবুল হাসানের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি গায়ের জোরে নগরভবন বন্ধ রেখে আন্দোলন করছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এমন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন,’তিনি আমাদের চাইতে বয়সে অনেক ছোট। হঠাৎ রাষ্ট্রীয় একটা গুরুদায়িত্ব পেয়ে গেছেন এজন্য কথাবার্তার ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ইশরাক তো আদালতের রায় নিয়ে কাজ করছেন, তার শপথ নেয়ার কথা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে গায়ের জোর খাটানো হচ্ছে। তাহলে চট্টগ্রামে আমাদের শাহাদাত সে কী করে মেয়র হতে পারলো? সেও তো আদালতের রায় নিয়ে মেয়র হয়েছে। একই আইন তো সেখানেও। একই আইনে যদি চট্টগ্রামের মেয়র শাহাদাত হতে পারেন তাহলে ইশরাক কেন হতে পারবেন না? এটা আমার প্রশ্ন না বরং জনগণের জিজ্ঞাসা। তার কাছে তো আদালতের রায় আছে। আইনগত পদ্ধতিতে সে আগানোর পর দেখছে আদালতের আদেশ তার পক্ষে আছে তারপরেও সরকার গায়ের জোরে তাকে মেয়র হতে দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সেই আইনটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করার যথেষ্ট অধিকার রয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যাদের বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই বরং যারা কখনো কখনো ক্রিটিসাইজ করেছেন গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষদেরকে, তাদের অনেককেই উপদেষ্টা করা হয়েছে আমরা জানি। টকশোতেও তারা নানান কথা বলেন আমি সবার কথা বলছি না। যারা রাকিবুল ইসলাম, মুগ্ধ, আবু সাঈদ, আহনাফ-ওয়াসিমের রক্তের উপর দিয়ে সরকার গঠন করলেন তারা কি শুধুমাত্র গাড়িতে পতাকা উড়ানোর জন্য উপদেষ্টা হয়েছেন? নাকি কার্যকর কিছু কাজ করার জন্য হয়েছেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন আবাসনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যান তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় না বরং পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে টিয়ারশেল মারা হয় সাউন্ড গ্রেনেড মারা হয়। শেখ হাসিনাও টিকে থাকার জন্য বিগত ১৫ বছর এই সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছেন নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী মানুষদের উপরে। কারো চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন গুলি খেয়ে কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। ওইটার পুনরাবৃত্তি এখনো হবে কেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘কিছু মানুষ সুখে শান্তিতে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকবেন আর আজকে ২০ হাজার নেতাকর্মী যারা আহত এবং প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মী জীবন দিল তাদেরকে আপনারা ক্রমাগতভাবে ভুলে যাচ্ছেন। তাদের জন্যই বাজেটে বরাদ্দ কম আর আপনারা আপনাদের বাজেট কেন বৃদ্ধি করছেন এটা জনগণ জানতে চায়।
এখনো জুলাই আগস্টের সংগ্রামী অনেক নেতাকর্মী বিছানায় কাতরাচ্ছেন, আর আমরা দেখছি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যারা আছেন তারা সেখানে নানা ধরনের নাটক-বায়োস্কোপ জনগণকে দেখানোর চেষ্টা করছেন। জনগণের প্রকৃত মুক্তি যদি না ঘটে খাদ্য-বাসস্থানসহ, তাহলে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করবে না।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, মো. আবুল কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, মুস্তাকিম বিল্লাহ, ফরহাদ আলী সজীব, শাহাদত হোসেন প্রমুখ।