ডিটেইলড অ্যারিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ফার (FAR) এর প্রয়োজনীয় সংশোধন চান রিয়েল এস্টেট এবং হাউজিং খাতের ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে রিহ্যাব ও গৃহায়ন খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, মৌলিক চাহিদার অন্যতম গৃহায়ন সমস্যা সমাধানে সরকারের সাথে বড় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে আবাসন শিল্পের সদস্যদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান রিহ্যাব। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাসের ব্যবস্থা করাই রিহ্যাব সদস্য প্রতিষ্ঠান সমূহের লক্ষ্য। রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। আবাসন শিল্পের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে রড, সিমেন্ট, ইট, টাইলস, কেবল, রং, লিফট, খাই, স্যানেটারিসহ (সবার নাম বলতে পারছি না) প্রায় দুই শতাধিক সংশ্লিষ্ট শিল্প অর্থনীতির চাকা গতিশীল রেখেছে। ৪০ লাখ নাগরিকের কর্মসংস্থান এবং ২ কোটি লোকের খাদ্যের সংস্থান হয়েছে এই গৃহায়ন শিল্পকে ঘিরে। জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যমূলক ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবৎ আবাসন শিল্প মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এর সঙ্গে যুক্ত শিল্পগুলোর ওপর। ড্যাপে ফার (FAR) সমস্যাকে কেন্দ্র করে আমাদের ভবনের উচ্চতা এবং আয়তন একেবারে কমে গেছে। ফলে ২০২২ সালে ড্যাপ এর প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর জমির মালিকরা ডেভেলপ করার জন্য আমাদের কোনো ভূমি দিচ্ছেন না। যার কারণে ডেভেলপার কোম্পানিগুলো নতুন কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এতে লিংকেজ শিল্পগুলোর পণ্যের চাহিদাও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
‘আবাসন খাত ভালো থাকলে আমাদের সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পগুলো স্বাভাবিকভাবেই ভালো থাকার কথা। কিন্তু তারাও ভালো নেই। কারণ লিংকেজ শিল্পগুলোর সব শেষ ফিনিস প্রোডাক্ট এর বেশির ভাগ ক্রেতা ডেভেলপাররা’— বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব সভাপতি আরও বলেন, নির্মাণ উপকরণের সব চেয়ে বড় উপাদান রড। সেই রডের চাহিদা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। গেল বছরের শেষের দিকে রড শিল্পের কয়েকটা সংগঠন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল তাদের চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এরপর গেল চার পাঁচ মাসে রডের চাহিদা আরও কমেছে। একইভাবে চাহিদা কমেছে সিমেন্ট, ইটসহ অন্যান্য উপকরণের। চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে অনেকগুলো লিংকেজ শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তিন শিফটের উৎপাদন দুই শিফটে নামিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ সেটা এক শিফটে নামিয়ে এনেছেন। উৎপাদন কমানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থান এখানে সংকুচিত হয়েছে। অনেক লোকবল ছাঁটাই হয়েছে এবং অনেকে সেই পথে হাটছেন। এক কথায় বলতে গেলে বৈষম্যমূলক ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ফার (FAR) সংক্রান্ত সমস্যা এবং সরকারি বেসরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্পের গতি কমে যাওয়াতে আবাসন শিল্প ও সংশ্লিষ্ট লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিতে মারাত্মক স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থার উত্তোরণে প্রজ্ঞাপনের সংস্কার চান নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ন খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি এবং প্রতিনিধিরা।