সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার কিছু নথি পুড়ে যাওয়ার খবর নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, এই মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো কেস ডায়েরি বা নথি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার তদন্তে আরও ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সময় কিছু সংবাদমাধ্যমে ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়, যা সঠিক নয়। তার দাবি, আদালতে এই ধরনের কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
তবে একই দিনে হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ জানান, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ডিবি কার্যালয়ে আগুন লাগার ঘটনায় কিছু নথি নষ্ট হয়েছে। যদিও তিনি স্পষ্ট করে বলেননি ঠিক কোন ধরনের নথি পুড়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী—তদন্তকারী সংস্থার অধিকাংশ কর্মকর্তার বদলির কারণে আগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে পেতে সময় লাগছে।
রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে মামলার তদন্ত শেষ করতে নয় মাস সময় চাইলেও, বিচারক সবপক্ষের বক্তব্য শুনে ছয় মাস সময় বাড়ানোর মৌখিক আদেশ দেন। একই শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির তিন মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন।
এর আগে, হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে র্যাবকে তদন্ত থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেয়। পরে চার সদস্যের ওই টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান। টাস্কফোর্সে আরও রয়েছেন পুলিশ সদর দফতর, সিআইডি ও র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে আদালতের অবকাশকালীন ছুটির কারণে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত টাস্কফোর্সের তেমন কার্যকর অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন থানার একজন কর্মকর্তা। পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সংস্থা এখনো আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
২০১২ সালেই জনস্বার্থে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে। এরপর আদালত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না— এই মর্মে রুল জারি করে।
দীর্ঘ ১৩ বছরেও মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আদালত ও জনমনে উদ্বেগ বেড়েছে। তদন্তে ধীরগতির কারণে বারবার সময় চাইলেও, এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি।