ঢাবিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছেঃ ক্যাম্পাস বন্ধের দাবি

0
814
ঢাবিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে

খবর৭১ঃ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দুই সদস্য। ফলে ডেঙ্গুর ভয়ে ভীত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই।

ইতিমধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে দাবি উঠেছে ক্যাম্পাস বন্ধের। তবে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা না করলেও ডেঙ্গু রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির স্বাধীনের। ফাইন্যান্স বিভাগের ১৩-১৪ সেশনের ২০তম ব্যাচের এ ছাত্রের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। এর কয়েকদিন আগে একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত এক নারী কর্মচারীও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফজলুল হক মুসলিম হলে ১১ জন, মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হলে ১২ জন, কবি জসীমউদদিন হলে চার জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৪ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৯ জন, সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায় থাকা ৯ জন, অমর একুশে হলে ১ জন, জগন্নাথ হলে ৫ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮ জন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৫ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ জন, এবং বিজয় ৭১ হলে ১৪ জন ছাত্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

অন্যদিকে মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে- ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১ জন, শামসুন নাহার হলে ২ জন এবং সুফিয়া কামাল হলে ৯ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

হাজী মুহাম্মদ মুহাসীন হলের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল বাকি বলেন, মূলত প্রশাসনের গাফিলতি ও পর্যাপ্ত মশক নিধন কার্যক্রম চালু না রাখার ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর দায় সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। পুরো ক্যাম্পাসে ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে এই ভাইরাসটি। তিনি ক্যাম্পাসে জরুরী অবস্থা জারি করে ঈদের ছুটির সাথে মিলিয়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার দাবি জানান।

এদিকে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পিছিয়ে নেই ডাকসু এবং হল সংসদও। তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনকেও সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া হল প্রাধ্যক্ষদের তাদের স্ব স্ব হলগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে এবং এর সম্ভাবনা দেখছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত জনবল এবং সরঞ্জামাদি না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিশাল লাইন হয়ে যায় সেখানে।

মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানান, সেখানে দৈনিক শতাধিক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা তাদের রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। এসময় তারা স্বীকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনেকেই বাইরের মেডিকেলে গিয়ে পরীক্ষা করাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা যাতে পর্যাপ্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারে সেজন্য আমাদের মেডিকেল সেন্টারে একটা নতুন মেশিন কেনা হয়েছে। আগামীকালই (রবিবার) এই মেশিন বসবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে যাতে শিক্ষার্থীদের কোন ধরণের বিড়ম্বনা না হয় সেজন্য মেডিকেল সেন্টারকে সব ধরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।