মহিলাদের হজমের সমস্যা

0
837
মহিলাদের হজমের সমস্যা

খবরফ৭১ঃ

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মহিলাদের হজমের সমস্যা পুরুষদের তুলনায় চরিত্রগতভাবে আলাদা। সমস্যা ও সমাধান বিশ্লেষণ।

পুরুষ ও মহিলা—উভয়েরই গ্যাসট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্টের গঠনগত পার্থক্য না থাকলেও মহিলাদের শারীরিক গঠন আলাদা। তাই, হজমের কোনও সমস্যার ক্ষেত্রে উপসর্গগুলোও কিছুটা আলাদা। বেশিরভাগ মহিলার স্বাদকোরক তুলনায় বেশি সংবেদনশীল (হাইপারসেনসিটিভ)। পুরুষদের তুলনায় মিষ্টি ও তেতো খাবারের স্বাদ তাঁদের জিভে একটু বেশিই ঠেকে। তাই, অল্প পরিমাণ খাবার খেলেও খাবারের স্বাদ তাঁরা স্পষ্ট বুঝতে পারেন। মহিলাদের ইসোফেগাসের উপরিভাগে থাকা ভালভ পুরুষদের তুলনায় বেশি হাইপারসেনসিটিভ। ফলে গলায় কোনও কিছু দলা পাকিয়ে থাকলে তার অনুভূতি মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।

আবার পাকস্থলী আর ইসোফেগাসের মধ্যবর্তী ভালভটিও মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি দৃঢ় ও শক্তিশালী। তাই, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বুকজ্বালা বা রিফ্লাক্স সিম্পটম কমই হয়। কিন্তু যেহেতু মহিলাদের ভালভ বেশিই সংবেদনশীল, তাই বুকজ্বালা হলে তার অনুভূতিও বেশি টের পান এঁরা। কিন্তু অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য ইসোফেগাসের সেভাবে কোনও ক্ষতি হয় না। বুকজ্বালার পিছনে নানা কারণ দায়ী। অতিরিক্ত তেলমশলাযুক্ত খাবার, কফির প্রতি আসক্তি, একসঙ্গে বেশি খেয়ে ফেলা, মিষ্টি-চকোলেট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া, ওবিসিটি, খেয়েই ঘুমিয়ে পড়া ইত্যাদির ফলে বুকজ্বালা হতে পারে। চিকিৎসার শুরুতেই তাই এই বিষয়গুলো যাতে না ঘটে, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়। এতে কাজ না হলে ওষুধ দেওয়া হয়। দু’টোর কোনওটাতেই কাজ না হলে, রোগীকে এন্ডোস্কোপি করতে বলা হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসিড-সাপ্রেশন ড্রাগস খেলে অস্টিওপোরেসিসের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। যেহেতু মহিলারা (বিশেষত মেনোপজ়ের পরে) হাড়ের সমস্যায় বেশি ভোগেন, তাই এ ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

মহিলাদের হজমের সমস্যা

কাজ ও সংসারের চাপে অনেক মহিলাই দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকেন। ফলে, বমিবমিভাব, পেট ভার হয়ে থাকা, ব্লোটিং ইত্যাদি হতে পারে। এর সমাধানে ছোট ছোট মিল খান। একবারে বেশি না খেয়ে মাঝেমাঝে অল্প করে খান। ফ্যাটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শে প্রোকাইনেটিক গ্রুপের ওষুধ খেতে পারেন। কিন্তু খুব বেশিদিন এ ধরনের ওষুধ খেলে মহিলাদের হরমোনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনিয়মিত পিরিয়ড, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বৃহদান্ত্র (লার্জ ইনটেস্টিন) খালি হয় ধীরগতিতে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য তুলনায় বেশি হওয়ার পিছনে এই প্রক্রিয়াটিই দায়ী। এর সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যদি তাতেও না কমে তখনই একমাত্র ওষুধের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।

মহিলাদের অ্যানাল ক্যানাল স্ফিংটার পুরুষদের তুলনায় দৈর্ঘ্যে ছোট ও কম শক্তিশালী। তাঁদের রেক্টাম বেশি পরিমাণে স্টুল ধরে রাখতে অনুপযোগী। এ কারণে পুরুষরা ডায়রিয়া যত দ্রুত সামলাতে পারেন, মহিলারা অত দ্রুত তা পারেন না।

মহিলাদের হজমের সমস্যা

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের গলব্লাডার খালি হয় ধীরে। ফলে, গলব্লাডারে পাথরের আশঙ্কাও মহিলাদের বেশি। হরমোনগত কারণে বিশেষত প্রেগনেন্সির সময়ে মহিলাদের গলব্লাডার আরও দ্রুত খালি হয়। গলব্লাডার স্টোন প্রতিরোধের সেরকম কোনও নির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা, ঘড়ি ধরে ছোট ছোট মিল খাওয়া, দ্রুত ওজন কমানো, তেলমশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা এই সমস্যার সম্ভাবনা অনেকটাই কমাবে। খাওয়াদাওয়ার পরে আপার অ্যাবডমেনে ব্যথা, বমি, জন্ডিস ইত্যাদি হলে বুঝবেন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। চিকিৎসার উপায় বলতে সার্জারির মাধ্যমে গলব্লাডার স্টোন থেকে মুক্তি। এখন ল্যাপারোস্কোপিক বা কি-হোল সার্জারিই জনপ্রিয়। কিন্তু সার্জারির পরেও আবার নতুন করে গলব্লাডারে স্টোন হতেই পারে। তবে ওষুধের সাহায্যে এর চিকিৎসা সাধারণত সম্ভব নয়।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here