সন্তান ও স্বামীর জীবন দিয়েও স্বীকৃতি মেলেনি ঝিনাইদহে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের

0
332

রাব্বুল ইসলাম, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: মাথা ও পিটে হানাদার পাক বাহিনীর ছোড়া গুলির ক্ষত চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে আনোয়ারা বেগমের। অসহ্য যন্ত্রনা তাতে। এই যন্ত্রনা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও তার নিহত স্বামী শামছদ্দিন মন্ডলের নাম মুৃক্তিযোদ্ধা হিসেবে অর্ন্তভুক্তি না হওয়ায়। অথচ নিজে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চোখের সামনে আনোয়ারা বেগম দেখেছেন স্বামী ও তার দুই সন্তান সিদ্দিকুর রহমান এবং মেয়ে জাহানারার করুন মৃত্যু। বিষয়খালী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দিকভ্রান্ত পাক বাহিনী বড়গড়িয়ালা গ্রামে ঢুকে তাদের হত্যা করে। হত্যার পর তাদের একটি গর্তে ফেলে রাখা হয়। লাশ আর ছোপ ছোপ রক্তের মৃত্যুকুপ থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান আনোয়ারা ও তার দুই শিশু সন্তান আবু সামা মন্ডল আর সিদ্দিকুর রহমান। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালীসহ আশপাশের নৃসিংহপুর, খড়িখালী ও গড়িয়ালা গ্রামের বহু মানুষ এই যুদ্ধে হতাহত হন। বিষয়খালী যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা তোয়াজ উদ্দীন, আনোয়ার হোসেন ও আব্দুস সোবাহানের দেয়া তথ্যমতে শামছদ্দিন মন্ডল ছিলেন তাদের সহযোগী। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ না নিলেও রসদ সরবরাহ করতেন। ঘটনার সময় তিনি বিষয়খালী বাজার থেকে বাড়ি যান দুপুরের খাবার খেতে। নিজ বাড়িতেই নিজের দুই সন্তানসহ নিহত হন তিনি। সেই হিসেবে শামছদ্দিন মন্ডলও একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ও তার দুই সন্তানের নাম রয়েছে বিষয়খালী বাজারে প্রতিষ্ঠিত একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য়্যে।এখানে গিয়ে দেখা যায় ৫ নং ক্রমিকে শামছদ্দিন মন্ডলের নাম, ৬ নং মেয়ে জাহানারা বেগম ও ৭ নং ছেলে সিদ্দিকুর রহমানের নাম লেখা। ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকারী ভাবে এই ভাস্কর্য়্যেটি তৈরী করে। অথচ এই পরিবারটির সদস্যরা একেবারেই হতদরিদ্র। ছেলেরা রাজমিস্ত্রি ও চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জরাজীর্ন ঘরবাড়ি। নেই বাড়িতে স্যানেটারি ল্যাট্রিন। সরকারী ভাবে এখনো কোন ভাতা এমনকি ভিজিডি ও ভিজিপিও দেওয়া হয় না। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে নেই কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান। গুলিবিদ্ধ আনোয়ারা বেগম ক’বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। এতে তার দুরাবস্থা ঘোচে না। প্রতি মাসে তার চিকিৎসা ব্যায় ৩ হাজার টাকা। স্ট্রোকে প্যারালাইজড হয়ে গেছে শরীর। দরিদ্র সন্তানরা তার চিকিৎসা ব্যায় মেটাতে গিয়ে নিজেদের সংসারও ঠিক মতো চালাতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকায় নাম ওঠাতে নেই কোন কাগজপত্র। একমাত্র স¤॥^ল কেবল বেঁচে থাকা এলাকার ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ডিসি, ইউএনও অফিস ও জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দারস্থ হয়েছেন। সহায়তা তো দুরের কথা ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের পর্যন্ত করে দিয়েছেন। অথচ পাক বাহিনীর সীমাহীন বর্বরতার শিকার এই পরিবারটির আত্মদানে আজ বাংলাদেশে ওড়ে লাল নীল পতাকা। স্বধীন ভুখন্ডে আমরা গেয়ে চলেছি সাম্যের গান। নিজস্ব মানচিত্রের বদৌলতে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে চলেছি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া-রুপসা থেকে পাথুরিয়া।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here