রূপপুরে যুক্ত হচ্ছে ভারতও

0
264

খবর৭১:দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণে রাশিয়ার সাথে ভারতেরও যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাশিয়ায় তিন পক্ষের এক সমঝোতা স্মারকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহে ভারতের যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাশিয়ার মস্কোতে বাংলাদেশ, রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়।

বাংলাদেশের পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রাশিয়ার পক্ষে রোসাটম এবং ভারতের পক্ষে দেশটির পরমাণু বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। রোসাটমের পক্ষে এর উপ মহাপরিচালক নিকালাই স্পাসকি, বাংলাদেশের পক্ষে রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম সাইফুল হক এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ এতে সই করেন।

রোসাটম বাংলাদেশের পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী রাশিয়ার ঠিকাদারের সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প এগিয়ে নিতে কাজ করবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে তিন পক্ষ।

এই সমঝোতা অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং চুল্লি স্থাপন, মালামাল সরবরাহ এবং সরঞ্জাম সরবরাহে ভারতীয় কোম্পানিকে যুক্ত করা যাবে।

এই সমঝোতা স্মারককে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে রোসাটমের উপ মহাপরিচালক নিকোলাই স্পাসকি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই অঞ্চলে নতুন ধরনের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরিতে এই সমঝোতা স্মারক একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে বলেই আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

রোসাটম একটি বৈশ্বিক কোম্পানি এবং তারা পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে কাজ করছে-বলেন রোসাটম প্রধান।

গত ৩০ নভেম্বর পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে এটিই দেশের পথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর অংশ হিসেবেই এই সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

এই কেন্দ্র থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এই কেন্দ্রটি চালু হওয়ার সময় এই পরিমাণ দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ হবে।

এই কেন্দ্রে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি চুল্লি স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পে বেশিরভাগ অর্থই দিচ্ছে রাশিয়া। দেশটি এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে।

গত ৩০ নভেম্বর রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীদুই ইউনিট মিলিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।

রূপপুরে যে দুটি চুল্লি নির্মিত হবে তার প্রথমটি উৎপাদনে আসবে ২০২৩ সালে, দ্বিতীয়টি আসার কথা পরের বছর।

স্বাধীনতার আগে ১৯৬১ সালে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রূপপুরে জমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু কাজ করা হয়েছিল। পরে প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

স্বাধীনতার পর এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ওই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জামাতা শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়া। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্পটি আবার গতি পায়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি সরকারে আসার পর সেটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আবার আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর প্রকল্পটি এগিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here